#_মায়ার_বাধঁন
১২তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

১২. ★★★★
আমার শাশুরী মা রাতের খাবার বাড়ছেন!আমি অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।উনি যেমন দেখতে পরিপাটি তেমনি তার ব্যবহার।এই মানুষটাকে কোনো এক অজানা কারনে নিজের মায়ের মতো লাগে আমার কাছে।উনার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো হলো আমার জীবনের বেস্ট স্মৃতি।মায়ের কথা মনে হলে,কষ্ট পেলে সেগুলো মনে করার চেষ্টা করি।কে বলেছে আমার মা নেই।হ্যা আমারও একজন মা আছে কিন্তু সমাজ তার আগে আরেকটি শব্দ জুরে দিয়েছে “শাশুরী মা”।হ্যা শাশুড়ী মা!এই শাশুরী মায়ের কারনেই আমি এখনো এ পরিবারে পড়ে আছি।সব শাশুরীরা এক রকম নয়।একজন খারাপ বলে আপনার চারপাশের সবই কিন্ত খারাপ না!মা উনার বাবার বাড়ি থেকে আসার পর সায়ান আমাদের আলাদা হওয়ার কথা বললে মা রেগে যান!মায়ের এক কথা উনি যতদিন বেচেঁ আছেন!এ পরিবারের সবাইকে একত্রে থাকতে হবে।সায়ান মায়ের রাগ দেখে আর কথা বাড়ান নি।মুহূর্তেই স্থান ত্যাগ করেন!
মা থাকলে সত্যিই ভালো লাগে নয়তো কেমন একা একা লাগে।
ইদানিং আমার ভেতরে কেমন জানি একটা হতাশা লাগে।মনটা অস্থির করে।কারোর সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে।
কান্নাও আসে না। শুধু আসে দীর্ঘশ্বাস
জীবনে চলার পথে যদি আপনার কোনো কিছু কঠিন মনে হয়!যদি মনে হয় ব্যাপারটা সহজ না। যেভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন চালিয়ে যান।
সাথে সুন্দর এই দু’আটা পড়ে নিয়েন ইনশাআল্লাহ। যখন খুশি তখনই পড়তে পারবেন। দু’আ করবেন আন্তরিকতার সাথে। মনে বিশ্বাস রাখবেন, যত কঠিন কাজই হোক, যত বড় বিপদই হোক। সেটা আপনার কাছে কঠিন লাগতে পারে। তবে আল্লাহর কাছে সহজ।
আপনার এই কঠিন কাজ,আপনার বিপদ দূর করে দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তাই কোনো কিছু কঠিন লাগলে, বিপদে পড়লে, চোখ বন্ধ করে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন দু’আর মাধ্যমে। সাথে নিজের চেষ্টা তো আছেই৷
কঠিন কাজ অথবা বিপদ থেকে মুক্তি লাভের দু’আঃ
اَللّٰهُمَّ لَا سَهْلَ إِلَّا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً، وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلاً
হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।
আল্লা-হুম্মা লা সাহ্‌লা ইল্লা মা জা‘আলতাহু সাহ্‌লান, ওয়া আনতা তাজ্‘আলুল হাযনা ইযা শি’তা সাহ্‌লান
[সহীহ ইবন হিব্বান ২৪২৭, (মাওয়ারিদ); ইবনুস সুন্নী, নং ৩৫১ আর হাফেয (ইবন হাজার) বলেন, এটি সহীহ হাদীস। তাছাড়া আবদুল কাদের আরনাউত ইমাম নওয়াবীর আযকার গ্রন্থের তাখরীজে পৃ. ১০৬, একে সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন।]

আমি বারান্দায় আনমনে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম!সানা এসে আমার পাশে দাড়িয়েছে।
আমি ওকে দেখে বললাম,
-কী রে কিছু লাগবে নাকী তোর?
ও আমার দিকে ফিরে বললো,
-আপু তুুই এখনো কিসের আশায় এখানে পড়ে আছিস?
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
– মানে!
আমার কথা শুনে ও রেগে উঠে বললো,
-মানে কত বছর এভাবে পড়ে থাকবি?
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
-কী বলতে চাস তুই?
আমার কথা শুনে ও তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
-আপু রে তুই খুব বোকা।
এ কথা বলে ও চলে গেলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না। ওর কথাগুলো শুনে আমার খারাপ লাগলেও মন কে বুঝালাম ও হিংসে করেই বলেছে কথাগুলো।
জানি আমার দূর্বলতা আমার এই অভাব নিয়ে অনেকেই উপরে আফসোস দেখালেও ভেতরে ভেতরে অনেক আনন্দ পায়! দুঃখিত হওয়ার ভান করে।
কিন্তু আমি ভেঙে পড়তে চাইনা। আমি তো জানি আল্লাহ বলেছেন,
“যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে,যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।
(সূরা আল ইমরান: ১৩৪),,
তাই আমি কারো সাথে রাগ করে আমার পুরষ্কার হারাতে চাইনা।
আর ওদের কথার প্রত্যুত্তর এ আল্লাহ বলেছেন,
“আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাকো।(আল আরাফ:১৯৯),,
এর চেয়ে বেশি আর কী লাগে মনের আঘাত কে শান্ত করতে?
আমি কষ্ট পেলেই এই কথাটি মনে করি,”যে তোমার সাথে শত্রুতা করে তাকেও ভালবাসো, আর যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার জন্যও দোয়া কর।(আবু বকর( রাঃ)।”

মধ্য রাত আমার চোঁখে ঘুম নেই।খুব মাথা ব্যাথা করছে!এই মাথা ব্যাথার মধ্যেও মাথায় ঘুরছে হাজারো চিন্তা।
এ পরিবারে টিকে থাকা আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে।আমি মনে প্রাণে চেষ্টা করি সবার মন জুগিয়ে চলার! কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস এতো চেস্টার পরও আমি সবার চোখের বালি!সায়ান তো এখন বেশীরভাগ সময় উনার অফিস নিয়েই বিজি থাকেন!পরিবারে কী হচ্ছে না হচ্ছে এটা দেখার সময় কই উনার!ছুটির দিনে যেটুকু সময় পান সানা ঐটুকু সময় উনাকে স্বস্তি দিলে তো উনি আমাকে নিয়ে পরিবারকে নিয়ে ভাবার সময় পেতেন।বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে যদিও আমাকে উনাদের সাথে যেতে বলেন কিন্ত আমি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরে পড়ি।আমি যথা সম্ভব উনাদের সামনে খুব কম পড়ার চেষ্টা করি।
আমার উনাদের সামনে পড়তে কী রকম লাগে!আমি মনমরা হয়ে কখনো বারান্দায় বসে কখনো বিছানায় শুয়ে দিন কাটাচ্ছি।ইদানিং কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছিলো কাউকে বলতেও পাচ্ছি না।মাকে বললে মাও কষ্ট পাবে। যত যাই হোক তবে উনার আর আমার সম্পর্ক টা এখন আর আগের মত নেই।এটা এখন দেখলেই বোঝা যায়।
এই শত মন খারাপের সময়েও কুরআন মাজীদের এই সুন্দর আয়াতটি আমার মন ভালো করে দিলো-“ইন্না আল্লাহা মাআস্ সাবিরিন
‘‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”
(আল বাকারাহ্ -১৫৩),,
আমার ঠোঁটে হাসি ফুঠে উঠলো।
আসলেই আমাদের জীবন সহজ না!জীবনকে সহজ বানিয়ে নিতে হয়! কখনো দোয়া করে,কখনো সবর করে,কখনো মাফ করে আবার কখনো বা এড়িয়ে চলে।”(তারিক জামিল)।
দু-রাকায়াত নামায পড়ে একটা এইচ ট্যাবলেট খেয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।ভেতরে অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছি।
সকালে ঝরঝরে অনুভূতি নিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো।রাতের ওষুধটা বেশ কাজে দিয়েছে।মাথা ব্যথাটা একদম সেরে গেছে।
মায়ের সাথে বসে কথা বলছিলাম।হঠাৎ মা আমার হাত ধরে বললেন,
-সাফা মা!আমি ফিরে আসার পর থেকে লক্ষ করছি!তুই কেমন মনমরা হয়ে থাকিস!তুই আর আগের মত আমাকে সময় দিস না!কী হয়েছে তোর আমাকে বল!তোর মনটা একটু হালকা হবে।
আমি স্লান হেসে বললাম,
-মা আমার আবার কী হবে!আমি তো একদম ঠিক আছি।
মা আমার কথা শুনে বললেন,
-আমি তোকে সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি।আমার চোখ ফাঁকি দেয়া এত সহজ না বুঝলি!শিউলি যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো আমার কপালে দুঃখ ছিলো!কত আশা করে বান্দবীর চোখের মনিকে আমার পুত্রবধু করেছিলাম!কিন্ত ওকে সুখী রাখতে পারলাম কই!কথাগুলো বলে মা কান্না করে দিলেন!
আমি মায়ের হাত ধরে বললাম,
-মা কান্না করবেন না প্লিজ! আপনি অযথা নিজেকে কেনো দোষী মনে করছেন।এসব কিছু আল্লাহর নির্দেশেই হচ্ছে।জানেনই তো আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না।আর মা! আল্লাহ আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন হয়তো এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে আরো ভালো কিছু দিবেন।
মা চোখের পানি মুছে বললেন,
-ঠিক বলেছিস রে মা।আল্লাহ ধৈর্যধারণ কারি দের খুব পছন্দ করেন।
[আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসেনা,আর যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস পোষন করে,তিনি তার অন্তর কে সঠিক পথের সন্ধান দেন।(সূরা তাগাবুন-১১)।]
-হ্যা মা আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত।মনে রাখা উচিত
“ধৈর্য ধরো, শক্ত হও, সময় সর্বদা এক অবস্থায় থাকেনা আর ভরসা করো সেই জীবিত স্বত্তার উপর যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।(আল ফুরকান-৫৮),,
শোন মা একটা কথা বলি তুই অপূর্ণ বল কখনো দুঃখ করিস না!আল্লাহ কাকে কোন নেয়ামত দেন তা কেউ জানে না।শুধু ভরসাটা অটুট রাখতে হবে।তুই ও দেখিস আল্লাহ কখন কিভাবে তোর কোল ভরে দিবে তুই টেরই পাবি না।
আমি মায়ের কথা শুনে মাকে জড়িয়ে ধরলাম আর মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম যাতে মায়ের কথাটি খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবে পরিনত হয়।


চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here