#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৪
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

বইটা বুকে জড়িয়ে নিয়েই নিচে নেমে এলাম আমি।
অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পরও ঘরের বাইরে ছিলাম বলে আমাকে না আবার কথা শুনতে হয়।
তাই দেরি না করেই রুমে চলে আসবো ঠিক তখনই শুনতে পেলাম মায়ের কণ্ঠ।
রুমে বসে বাবার সাথে কিছু একটা নিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে আছেন।
কথার মাঝখান থেকে শুনে প্রথমে আগাগোড়া কিছু বুঝতে না পারলেও পরে যা শুনলাম তাতে আমার মন আরো বিষিয়ে গেলো।

কাল আমার আমান ভাইয়া বাড়ি আসবে।
সেজন্যই মায়ের আনন্দের শেষ নেই।
স্বভাবতই সব বোনেরাই তার ভাইয়ের বাড়ি ফেরাতে খুশি হয়, কিন্তু আমি খুশি হয়েও কেনো যেনো ব্যপারটা এড়িয়ে গেলাম।

রুমে এসে বইটা টেবিলে রেখে চুপচাপ বিছানায় বসে আছি।
মনটা হুট করেই কেনো যেনো খারাপ হয়ে গেলো আমার, অথচ এখন আমার খুব খুশি হওয়ার কথা।
আমান ভাইয়া চট্টগ্রাম থেকে পড়াশোনা একেবারে শেষ করে তবেই বাড়ি ফিরছে।
সেই কোন মাসে দেখা হয়েছিল ভাইয়ার সাথে।
ভাবছি কাল থেকে বোধহয় আমার দিনগুলো আরো খারাপ যাবে।

🥀

চুপচাপ সবার সাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছি।
শুনেছি, যে ঘরের মানুষেরা আড্ডা দেয়া কিংবা একে অপরের সাথে কথা বলার সময় পায় না; তারা নাকি খাবার টাইমে একসাথে বসে আড্ডা দিয়ে তৃপ্তির খাবার খায়।
এসব শুধু শুনেছি আমি, নিজ চোখে দেখিনি কখনও।
মাঝে মাঝে মনে হয়, কোনো মানুষের সাথে থাকি না আমি; সবার কাজ আর কথা দেখে রোবট মনে হয়।
সে যাই হোক, আমারও কথা বলার সব ইচ্ছে মরে গেছে।
চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে চলে এলাম আমি, এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো আমার দম বুঝি এই বন্ধ হয়ে এলো।

রাতে শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করছিলাম।
মূলত রেহান ভাইয়ার আইডিটাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আমি।
মানুষটা বাস্তবে যেমন ভার্চুয়ালেও ঠিক তেমনই।
একদম নিরামিষ।
গুনে গুনে নয়টা কি দশটা পোস্ট খুঁজে পেলাম।
অথচ কতো পুরোনো আইডি উনার।
ভালো লাগার মতো একটা কথাও লেখা নেই কোথাও।
উনাকে দেখতে দেখতেই আমার চোখে ঘুম চলে এলো।
কখন ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও টের পাইনি।

__________________

আজকাল সব অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি।
আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি; কি যে স্বপ্ন দেখেছি সঠিক মনে নেই তবে স্বপ্নটা আরেকটু দেখলে বোধহয় ভালোই হতো।
খুব সম্ভবত রেহান ভাইয়াকে নিয়েই কিছু একটা দেখেছি।
ঘুমটা অবশ্য এমনি এমনি ভাঙ্গেনি, দরজায় কেউ একজন সেই কখন থেকে নক করে যাচ্ছে।
ঘুম ঘুম চোখেই আস্তে আস্তে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।
তখনও আমি চোখে ঝাপশা দেখছি, ঘুমের চোখ বলে কথা।

মনে হচ্ছে আমার সামনে রেহান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন।
ঘুমের রেশ বোধহয় আমার এখনও কাটেনি, তাই তো স্বপ্নেও উনাকে দেখেছি এখন আমার সামনেও।
হাত দিয়ে চোখ ঢলে ভালো করে তাকিয়ে দেখি সামনে রেহান ভাইয়াই দাঁড়িয়ে আছেন।
হা করে তাকিয়ে আছি আমি উনার দিকে।
আচ্ছা উনি কি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, নাকি পুরোটাই আমার স্বপ্ন!

আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি ইতস্তত করেই বললেন–

— কিরে আর কতো ঘুমোবি?
কয়টা বাজে সে খেয়াল কি রাখিস?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ দশটা বাজবে এখনই।

উনার হাতের ইশারায় আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই দশটা বাজতে চলছে।
আমি এতক্ষণ কি করে ঘুমালাম?
নিশ্চয়ই ঘড়ির ব্যাটারি বোধহয় নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তো উল্টা পাল্টা টাইম দেখাচ্ছে।
কিন্তু আমি ভাবছি রেহান ভাইয়ার কথা!
উনি এখানে কি করে এলেন!
নাকি সবটাই আমার ভ্রম?

— কিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হা করে কি দেখছিস?

বলেই উনি দরজা ঠেলে আমার রুমের ভেতরে প্রবেশ করে সোজা বিছানার উপর বসে পড়লেন।
আমতা আমতা করে নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন–

— উপমা, ফ্রেশ হয়ে নে।
তোর দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না।

উনার এমন কথায় আমি নিজের দিকে তাকিয়ে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।
গায়ে আমার হাতা কাটা গেঞ্জি আর প্লাজো, উড়নাটা চেয়ারের উপর রাখা।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ উনি কি এতক্ষণ আমাকে এভাবেই দেখছিলেন!
ইশশ কি সাংঘাতিক ঘটনা।
লজ্জায় আমার দেহ থেকে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

— কি হলো, এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা ফ্রেস হয়ে আয়।

লজ্জা শরম বোধহয় আমার সব লোপ পেয়েছে।
বেহায়ার মতো এখনও আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
চেয়ার থেকে উরনাটা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।
ছিঃ ছিঃ উনি কি ভাবছেন আমাকে!
যাচ্ছে তাই মুহূর্ত একটা।
কিন্তু উনি এখানে কি করছেন!
এই সকালে মানে প্রায় দুপুরে এ বাড়িতে আমার রুমে!
কাল সন্ধ্যায় কি তবে মা রেহান ভাইয়া আসার কথা বলছিলো?
আমি তো স্পষ্ট আমান ভাইয়ার নাম শুনতে পেয়েছি।

🥀

ওয়াশরুমের দরজার ছিটকিনিটা আস্তে আস্তে খুলে এক চোখ দিয়ে খুব গোপনে দেখার চেষ্টা করছি উনি এখনও আমার রুমে আছেন কিনা।
বিছানার দিকে তাকাতেই চোখ আমার কপালে উঠার উপক্রম।
এক দৌড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াতেই…..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here