#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১২
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
এই বুকে আরেকটি পৃথিবী নিয়ে প্রতিদিনের মতোই বেঁচে আছি আমি।
প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেছে অথচ আমার জীবনের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
সেই আগের মতোই রুটিন করে জীবন চলছে আমার।
ওমম চলছে বললে ভুল হবে, ঠিক চালিয়ে নিচ্ছি আমি।
পরীক্ষাটাও প্রায় হাতের কাছে চলে এসেছে আমার।
আজ বাড়ান্দায় বসে হাতে বই নিয়ে পড়ছিলাম ঠিক তখনই আমার পাশে মা এসে বসলেন।
একবার মায়ের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।
বুঝতেই পারছি কোনো জরুরি কথা বলবেন আমার সাথে।
একটু নড়েচড়ে বসে মাকে বললাম–
কিছু বলবে মা?
মা আমার পাশে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেন।
কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললেন–
তোর বিয়ের জন্য একটা ছেলে দেখছে তোর বাবা।
তোর ফোনে ছেলের বায়োডাটা পাঠিয়ে দিয়েছে দেখে নে, তারপর তোর মতামত জানাস।
মায়ের কথা শুনে আমি অবাক হলাম না মোটেও।
আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখে তারা যে আমার মতামত নেবে এটাই আমার ধারনায় ছিলো না।
বরং মাঝে মাঝে এটা মনে করেই অবাক হই, তারা আমাকে এখনও বিয়ে দিচ্ছেনা কেনো!
সে যাই হোক, পরীক্ষার আর মাস দুইএক বাকি আছে।
এ সময় বিয়ের চাপ নেয়াটা শুধু আমার জন্য কেনো, যে কোনো স্টুডেন্টের কাছেই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।
তাই দীর্ঘঃশ্বাসটা চেপে মাকে বললাম–
সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা।
এমন একটা মুহূর্তে তোমরা এসব কেনো করছে!
পরীক্ষাটা অন্তত আমাকে দিতে দাও।
মা আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলেন।
আমিও আর কিছু বলিনি মাকে।
কি লাভ বলে?
আমার কথা শুনলেই বা কি না শুনলেই বা কি?
তারা সবসময়ই তাদের লেভের কাজই করবেন।
আমি কি চাই না চাই এতো কিছু দেখার ফুরসত কি উনাদের আছে নাকি!
বাড়ান্দার গ্রিলে দু’হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভাবছি রেহান ভাইয়ার কথা।
আচ্ছা উনি যদি জানতে পারেন আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে তাহলে উনি কি করবেন?
উনার কি রাগ হবে? নাকি মন খারাপ হবে?
উনি কি পারেন না আমাকে একবার মনের কথা বলতে?
পারেন না সব বাঁধা পেছনে ফেলে নতুন করে বাঁচতে?
আচ্ছা উনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
কোথায়, কোনোদিনও তো এমন কিছু বলেন নি।
উনার চোখের ভাষা কিছুটা বুঝলেও উনি কি চান সেটা আমি কখনই বুঝতে পারি না।
মনকে হারিয়ে দিয়ে দুনিয়াকে জিতে যেতে নিজ চোখে দেখেছি।
কিন্তু নিজের সাথে এমনটা হোক সেটা কে চায়?
মাঝে মাঝে মনের আবদারগুলোর কথা ভেবে বড্ড হাসি পায়।
মন কি আর বাস্তবতার শান্তনা শুনতে চায়!
মন তো আকাশের মতো স্বচ্ছ, মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো আবদার করে বসে।
কেনো জানিনা আজ ফারজানা আপুর ঐ মন খারাপের দিনে কবিতাটা খুব মনে পরছে।
তোমার বারান্দার গ্রিল বেয়ে ওঠা শঙ্খলতা জানে,
আজ আমার মন খারাপের দিন।
অথচ সে কথা তুমি জানো না,
সে খবর তোমার অজানা।
আজকাল আমার সুখের ও অসুখ করে ভীষণ,
মন খারাপের রেশ কাটাতে সদ্য ধার্য হওয়া পুতুলের বিয়ে ভেঙেই দিয়েছি।
হৃদ অঞ্চলকে গ্রাস করা একরাশ বিষন্নতা নিয়ে তাকিয়ে দেখি-
আজ আকাশটা কেমন স্বচ্ছ,
বুঝেছি মেঘদল বাসা বেঁধেছে বুকে।
আজকাল আমার গোধূলির রক্তিম আকাশে দুঃখ ছুড়ে সন্ধ্যা নামে,
চায়ের কাপে ঠোঁট পুড়িয়ে,
বিরক্তির ছাপ মুখে টেনে তুমিহীনা বেশ মানিয়ে নিয়েছি।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্মৃতির পাতায় মুখ ডুবিয়ে,
বেঁচে থাকা হচ্ছে বেশ।
তুমিহীনা বেশ ভালোই আছি।
শুধু আজ আমার মন খারাপের দিন,
মন খারাপের পুরোটা জুড়ে একাই বাঁচি,
মন খারাপের তপ্ত অনলে পুড়ি কেবল একাই পুড়ি।
🥀
🥀
🥀
দিনগুলো কেমন যেনো নিয়ম করেই চলে যাচ্ছিলো।আমিও পড়াশোনা, ভাবনা, বিষন্নতা, মাঝে মাঝে আপন মানুষের কাছ থেকে সামান্য কারনেই যাচ্ছেতাই কথা শোনা আর এক সমুদ্র পরিমান অবহেলা নিয়েই দিন কাটাচ্ছিলাম।
ওমম অবহেলায় পরিমানটা না টানলেই বোধহয় সঠিক হবে।
আমিও খুব করে চাই আমার মা-বাবা আমাকে বাকি সন্তানের মতোই ভালোবাসুক।
কাছে টেনে এনে একটু সোহাগ মাখা কথা বলুক।
খুব করে চাই ভালোবেসে আমাকে শাসন করুক।
না চাইতেও বহু কিছু পেয়েছি, পাইনি শুধু সমতা।
🥀
গত এক মাস থেকেই কে যেনো প্রায় রাতেই আমায় ফোন করে বিরক্ত করে।
না পরিচয় না কোনো কথা।
ওপাশ থেকে শুধুই নিরবতা আর মাঝে মধ্যে দু’একবার দীর্ঘঃশ্বাসের শব্দ।
এতটুকুতেই আমি বিরক্ত হলেও কেমন অভ্যস্ত হয়ে পরেছি।
প্রতিদিন না, দু’দিন কিংবা তিনদিন পর পরই এমন অজানা একজন ব্যাক্তির ফোনকলের প্রতিক্ষায় না থাকলেও কানে নিয়ে নিস্তব্ধতা উপলব্ধি করতে আমার বেশ ভালো লাগে।
🥀
আস্তে আস্তে অপেক্ষার সময়গুলো কেমন ঘনিয়ে আসলো।
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে আজ তিনদিন হলো।
প্রথম দু’দিন বাবা নিজেই আমাকে কোনো কথা না বলেই হল পর্যন্ত পৌছে দিয়েছেন।
আজ আর তার কোনো হদিস নেই।
আমিও আর যেচে বাবাকে বলিনি ‘বাবা আমায় নিয়ে যাবে না?’
তবে আজ রিক্সা করে আসার সময় দেখলাম, একটা সিএনজি আমার পেছন পেছন আসছে।
প্রথমে পাত্তা না দিলেও শেষ পর্যন্ত যখন পাশাপাশি কিংবা পেছন পেছন আসছিলো তখন ঠিকই সন্দেহ হয়।
পরীক্ষা শেষে ফিরে আসার সময়ও একই অবস্থা।
🥀
বইয়ের উপর আমার গভীর মনযোগ।
এই মুহূর্তে ব্যাকরণের গভীর সংঙ্গা গুলো মনে রাখাই আমার উদ্দেশ্য।
সম্পূর্ণ ধ্যান যখন আমার বইয়ের ভেতর ঠিক তখনই…
চলবে….