লদরজা খুলতেই যখন রেহান ভাইয়াকে চোখের সামনে দেখতে পেলাম তখন আমার মুখের রং পরিবর্তন হয়ে গেলো।
আপনা আপনিই মুখ হা হয়ে গেলো আমার।
রেহান ভাইয়া মুচকি হেসে পাশে তাকালেন।
পাশ থেকে বড় খালামনি আমাকে বললেন-
— কিরে ভেতরে আসতে দিবি না আমাদেরকে?

দ্রুত সামনে থেকে সরে দাঁড়ালাম আমি।
আমি সরে দাঁড়াতেই খালামনি ভেতরে চলে গেলেন।
তখনও রেহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।
কাঁধে ব্যাগ আর এক হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বললেন–

— কেমন আছিস উপমা?

বিস্বয় কাটিয়ে আমি বললাম–

ভালো, কিন্তু আপনারা যে আসবেন সেটাতো আগে বলেন নি।

— কে বললো বলিনি?
আন্টি তোকে বলেনি আমরা আসবো!

বলেই একগাল হেসে ভেতরে চলে গেলেন রেহান ভাইয়া। আমিও আর দেরি না করে দরজা লাগিয়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলাম।
পরশু হোস্টেল থেকে একেবারের জন্য চলে এসেছি।
আর মাত্র চার মাস তারপরই আমার এইচ এস সি ফাইনাল পরীক্ষা।
পরীক্ষার আগের এই মাসগুলিতে বাসায় বসে বসেই পড়বো, তাই বেডিং পত্র গুছিয়ে পরশু বাবার সাথে বাসায় চলে এসেছি।
কিন্তু বাসায় এসেই যে এত বড় সারপ্রাইজ পাবো আমি ভাবতেও পারি নি।
এবার পড়াশোনা করা তো দূরের কথা রেহান ভাইয়াকে চোখের সামনে দেখলেই আমার সারাক্ষণ অস্থির লাগে।

রান্না ঘরে মায়ের কাছে গিয়ে চুপি চুপি জিজ্ঞেস করলাম–

আচ্ছা মা রেহান ভাইয়ারা এখানে কেনো এসেছে?

আমার কথা শুনে মা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
যেনো মস্তো বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি আমি।

আমিও বোকার মতো মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
এভাবে কেনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে?
আমি কি ভুল কিছু বলেছি নাকি?
রান্না ফেলে মা আমাকে বললো–

— কেনো আমার বোনেরা কি আমার বাড়িতে আসতে পারে না?
তোর রেহান ভাইয়ার জন্য এ বাড়িতে আসতে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে!

আমি কি সেভাবে বলেছি নাকি?
হঠাৎ এক বছর পর কেনো এলো সেটাই তো জিজ্ঞেসস করছি।

আবারও কড়া গলায় মা আমাকে বললো–

— তোর রেনু আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তাই তোর খালামনির ইচ্ছে এক সপ্তাহ্ আগেই যেনো আমরা ওখানে চলে যাই, আমাদের সাথে করে নিয়েই তবে তোর খালামনি ওবাড়িতে পা রাখবে।
এখন যা এখান থেকে, জামা কাপড় সব গুছিয়ে নে।
কাল সকালেই আমরা রওনা দেবো।

মায়ের কথা শুনে খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।
কাল আমি রেহান ভাইয়ার বাসায় যাবো বিশ্বাসই হচ্ছেনা আমার।
রুমে এসে আনন্দে বিছানায় লাফাচ্ছিলাম ঠিক তখনই রেহান ভাইয়া আমার রুমে প্রবেশ করে।
রেহান ভাইয়া আমাকে বিছানার উপর এভাবে লাফাতে দেখে দরজার হ্যান্ডেল ধরেই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এদিকে হুট করে এভাবে নক না করেই আমার রুমে রেহান ভাইয়া চলে আসায় আমি একদমই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।
গায়ের উড়নাটাও রেহান ভাইয়ার সামনে পড়ার টেবিলে পড়ে আছে।
কিছু একটা বুঝতে পেরে রেহান ভাইয়া পাশের ড্রেসিংটেবিলের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
সুযোগ পেয়ে আমিও পড়ার টেবিল থেকে উড়না গায়ে জড়িয়ে নিলাম।
ইশ কি লজ্জাজনক মুহূর্ত।
এভাবে যে আমি কোনোদিন রেহান ভাইয়ার চোখে পড়বো ভাবতেও পারিনি।
রেহান ভাইয়া দরজা থেকে সোজা আমার বিছানায় এসে শুয়ে পড়লেন।

🥀
🥀
🥀

মাথার নিচে দু’হাত রেখে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছেন রেহান ভাইয়া।
আর আমি লজ্জায় গুটিশুটি হয়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
না পারছি রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে আর না পারছি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।
আচ্ছা মানুষটা এমন কেনো?
যখনই দেখা হবে তখনই আমাকে লজ্জায় ফেলে দেবে।
আমাকে লজ্জায় ফেলার নিয়ম করে রেখেছেন নাকি?
রেহান ভাইয়ার প্রতি আমার আলাদা একটা আবেগ সবসময়ই কাজ করে।
সবকিছুই ঠিকাছে কিন্তু তার সামনে এলেই আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না।
কেমন যেনো হার্টবিট দ্রুত কাজ করে।
না চাইতেও বার বার ওনার কথা ভাবে, জোর করেও অন্য কিছু ভাবতে পারি না।
খুব খুব লজ্জা লাগে, লজ্জায় ওনার দিকে তাকাতেই পারি না আমি।
নিঃশ্বাস খুব দ্রুত চলে, মনে হয় যত তারাতারি সম্ভব উনার কাছ থরকে দৌড়ে পালিয়ে যাই।

রেহান ভাইয়া যে ক্রাশ খাওয়ার মতো চেহারার অধিকারি তা কিন্তু একদমই না।
গায়ের রংটাও চাপা স্বভাবের।
বলিষ্ঠ দেহের অধিকারিও না, একদমই হাড্ডিষাড়।
অবশ্য আগে থেকে একটু সাস্থ্য হয়েছে।
তবে হ্যাঁ লম্বায় একদম পারফেক্ট, মেপে দেখলে পাঁচ ফুট দশ কি এগারো ইঞ্চি তো হবেই।
মাথায় কোকড়া চুল, সব মিলিয়ে কোনো সুন্দরী মেয়েই তাকে জীবন সাথি হিসেবে পছন্দ করতে চাইবে না।
কিন্তু আমার সেসবের কিছুই মাথায় থাকে না যখন আমি রেহান ভাইয়ার আশে পাশে থাকি।
অবশ্য আমি নিজেকে কখনই সুন্দরী বলিনা।
আমি তো তার চেহারার মায়ায় বার বার আটকে যাই।
রেহান ভাইয়ার চেহারায় অদ্ভুত একটা মায়া আছে।
খুব নিষ্পাপ একটা ভাব আছে তার চেহারার।
বড় বড় চোখ দিয়ে যখন আমার দিকে তাকায় তখন সেই চোখে চোখ রাখার সাহস আমার কোনোদিনই হয়না।

হঠাৎ করেই চোখ খুলে বিছানায় উঠে বসে।
সাথে সাথেই আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ফেলি।
দু’হাত অনবরত ঘষছি আমি।
এই এক বড় সমস্যা আমার, উনার সামনে এলেই আমার হাতের যে কি হয়!

আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
দু’হাত পেছনে রেখে হাতের উপর শরীরের ভর দিয়ে হেলে আছেন।
দু’পা ভাজ করে আমাকে বললেন–

— এই উপমা তোর পরীক্ষা কবে রে?

উনার প্রশ্নের জবাব কি দেবো আমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
তোতলাতে তোতলাতে কোনোরকম বললাম–

চার মাস পর।

উনি একটু মুচকি হেসে বললেন–

কাল তৈরি থাকিস আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।
জানিস উপমা, রেনু আপুর হবু বরটা না অনেক সুন্দর।
আমার চেয়ে বহুগুণে সুন্দর।

উনার শেষের কথাটা শুনে আমার বুকে কেমন যেনো চিন চিন করে ব্যাথা হলো।
নিঃশ্বাস আপনা আপনিই দ্রুত হয়ে গেলো।
উনি সুন্দর না কে বলেছে?
উনি কি জানে উনাকে দেখে আমার কেমন অনুভব হয়?
কেউ কি নিজেকে এভাবে অসুন্দর বলে?
ভ্রু যুগল একসাথে করে বললাম–

আমার চেয়ে বহুগুণে সুন্দর এর মানে কি রেহান ভাইয়া?
আপনি কি বলতে চান আপনি সুন্দর না?
আপনি সুন্দর সুন্দর সুন্দর।
আপনি সুন্দর বলেই তো আমি আপ…

— কি হলো থেমে গেলি কেনো বল..!

সম্পূর্ন বাক্য শেষ করার সাহস হলো না আমার।
উনাকে কি করে বলি উনি সুন্দর।
কি করে বলি উনাকে আমি ভালোবাসি।

আমার উত্তর না পেয়ে উনি বিছানা থেকে উঠে আমার কাছে এলেন।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
দু’পায়ের আঙুল গুলো নাড়ছি।
আমার কাছে আসার কি প্রয়োজন ছিলো।
দূর থেকেই তো কথা বলা যায়।
উনি কি জানে উনি এত কাছে থাকলে আমার কেমন অনুভব হয়!

প্রায় এক হাত দুরত্ব আমার আর রেহান ভাইয়ার মাঝে। দু’হাত বুকে ভাজ করে আমাকে বললেন–

— আমি সুন্দর?

চুপ করে আছি আমি, কোনো উত্তর নেই আমার।
একে তো উনাকে দেখলেই আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়, তার উপর এমন প্রশ্নের কি করে উত্তর দেই আমি ?
তবুও জড়তা কাটিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই…..

চলবে…

#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয় 💔
#পর্ব_১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here