#হৃদয়_রেখেছি_জমা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৬

‘মাহমুদকে তুমি ভালোবাসো?’, কোনরকম ভনিতা ছাড়াই সোজাসুজি প্রশ্নটা করলো মেহরিন। এইমুহূর্তে তাঁর কেবিনে মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে আছে সে এবং এনা। দুজনেই ভেতরে ভেতরে নার্ভাস। লাঞ্চ আওয়ার। সবাই যার যার মত করে ব্যস্ত। তাই নিরিবিলিতে বসে এনার সঙ্গে বিষয়টা আলাপ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মেহরিন। তাঁর প্রশ্নের জবাবে এনা নিরস ভঙ্গিতে হাত ঘড়ি চেক করলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়েই শান্ত কন্ঠে বললো,’সে আমাকে ভালোবাসে না।’

যদিও একবাক্যেই জবাবটা দিয়েছে এনা, তথাপি ভাবপূর্ণ এই বাক্যটির সামগ্রিক অর্থ বুঝতে কোন অসুবিধে হলো না মেহরিনের। পাল্টা কোন প্রশ্ন করলো না সে। মুচকি হেসে বললো,’করবে, করবে! দরকার হলে আমি তোমাকে হেল্প করবো।’

এনা সামান্য হাসলো। তাতে বিশেষ কোন উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেলো না। বললো,’হেল্প? সেটা কেমন?’

-‘মাহমুদের পছন্দ অপছন্দ গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করবো তোমার সঙ্গে। তুমি জাস্ট আমাকে এফোর্ট দেবে। বাকিটা আমি দেখবো।’

-‘বিশেষ কোন লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।’

-‘ঠিক হবে। তোমাকে পছন্দ না করে সে যাবে কোথায়?’

-‘পছন্দ তো সে আমাকে এখনো করে। কিন্তু ভালোবাসা? সেটা কি আদৌ সম্ভব?’

-‘কেন সম্ভব নয়? পছন্দ যখন করে তখন ভালোও বাসবে।’ তারপর একটুখানি থেমে বললো,’বাই দ্যা ওয়ে? তুমি কি আমার কথা ভাবছো?’

এনা জবাব দিলো না। কারণটা তাই। মেহরিন ফের মুচকি হেসে বললো,’এটা ঠিক। ও হয়ত আমাকে সহজে ভুলতে পারবে না। কিন্তু চাইলে তোমাকে ভালোবাসা সম্ভব!’

-‘আমি মাহমুদকে চিনি। ও সেটা কখনোই চাইবে না।’

-‘এত সিউর হয়ে কিভাবে বলছো? হতেও তো পারে?’

এনা এবার খানিকটা শব্দ করে হাসলো। বললো,’আপনি কখনো মা হতে পারবেন না জেনেও যে মানুষটা আপনি বলতে দিশেহারা তাঁকে আপনি কেন এতটা দুর্বল ভাবছেন মেহরিন আপু? ইনফ্যাক্ট আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না আপনি হঠাৎ এসবের মধ্যে আমাকে কেন জড়াচ্ছেন?’

-‘কারণ তুমি মাহমুদকে ভালোবাসো। আমি চাই ও তোমাকে নিয়ে সুখি হোক।’

-‘সেটা কোনদিন সম্ভব না। মাহমুদের সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে শুধু আপনিই আছেন। আপনার জায়গা আমি কোনদিন নিতে পারবো না।’

-‘বেশ। তবে তোমার জন্যে নাহয় একটুখানি জায়গা তৈরী করে নাও?’

-‘চাইলেই কি সব সম্ভব? মাহমুদ আপনাকে পাগলের মত ভালোবাসে।’

মেহরিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আমি এখন ওর অতীত।’

-‘মোটেও না। এখনো আপনার কোন বিপদের কথা শুনলে ও পাগল হয়ে যায়। নিজের জীবনের পরোয়া পর্যন্ত করে না। আপনার অজান্তে সব সময় সেইফগার্ড হয়ে হয়ে আপনাকে রক্ষা করেছে। সেই মানুষটাকে আপনি আমাতে আকৃষ্ট করার কথা ভাবছেন শুনলে সে কতটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারছেন?’

বহু কষ্টে নিজের চোখের পানি সামনে নিলো মেহরিন। চাপা কন্ঠে বললো,’বাস্তবতা কত কঠিন তুমি জানো না এনা। একটা সন্তানের জন্য আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অথচ তারাও ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন!’

কথা শেষ করে কান্না আর চেপে রাখতে পারলো না মেহরিন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো। অবাক হলো এনা। এই প্রথম মেহরিনকে এমন অসহায় দেখছে সে। সদাগম্ভীর, বদমেজাজি, রাগী এই মেয়েটার এমন রূপ ক্ষণকালের জন্য বাক্যহারা করে দিলো তাঁকে। তারপর ধীরে ধীরে একটা হাত মেহরিনের মাথায় রেখে বললো,’আপনি কাঁদবেন না প্লিজ। সবাই এক রকম হয় না। তবুও আপনি যদি চান আমি আপনার কথা শুনবো।’
চোখ মুছে সোজা হয়ে বসলো মেহরিন। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললো,’সরি। একটু ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম। কিছু মনে করো না।’

এনাও আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললো,’লাঞ্চের সময় আর বেশিক্ষণ নেই। যাবেন না?’

-‘তুমি যাও। আমি আসছি।’

এনা বেরিয়ে গেলে চুপিচুপি পুনরায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মেহরিন। এই দুর্বিষহ জীবনটার প্রতি বিতৃষ্ণা ধরে গেছে তাঁর। কোন কিছুতেই এখন আর মন টেকে না। মাঝেমাঝে মরে যেতে মন চায়। কি লাভ বেঁচে থেকে? আবার মাঝেমাঝে মনে হয় সবছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারলে ভালো হতো। অন্তত মাহমুদের চোখের সামনে থেকে অনেক দূরে।

দুদিন পরের ঘটনা। সকাল বেলা নিজের চেম্বারে বসে আয়েশ করে নিউজপেপার পড়ছিলো মাহমুদ। আজকে হাতে বিশেষ কাজ নেই। অল্প কিছুক্ষন থেকে বাসায় ফিরে যাবে।
হঠাৎ দরজায় নক শুনে খবরের কাজ থেকে মুখ না তুলেই বললো,’কাম ইন।’

ফুলহাতা ব্লাউজের সঙ্গে গাঢ় সবুজ রংয়ের একটা কাতান শাড়ি পড়ে এসেছে এনা। সেই সাথে হালকা সাজ। চোখে কাজল, গাড় লাল লিপস্টিক। চুলগুলো খোঁপা বাধা। কানে সিলভার কালারের ইয়ারিংস। বেশ আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে। ভেতরে ঢুকে মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো। কিন্তু মাহমুদের দৃষ্টি তখনো খবরের কাগজে। এনার উপস্থিতি তখনো টের পায় নি সে।
অবশেষে পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে লাগতেই খবরের কাগজ থেকে মুখ ফেরালো। সামনে দণ্ডায়মান নারীমূর্তিটির সাজসজ্জার বহর দেখে ক্ষণকালের জন্য নির্বাক হয়ে গেলো। তারপর, বিস্ময় ভাব কাটিয়ে মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করলো,’হঠাৎ শাড়ি?’

-‘মেহরিন আপু পরিয়ে দিয়েছে। তোমাকে ইমপ্রেস করার জন্য।’, বলেই হেসে কুটিকুটি হলো এনা।

এমন অপ্রত্যাশিত জবাবে মাহমুদের হতবাক। চোখমুখে সীমাহীন বিস্ময় নিয়ে নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো এনার দিকে! তারপর আচমকাই হেসে দিয়ে বললো,’তোমার মেহরিন আপুকে বলে দিও তাঁর চেষ্টা সফল। আই অ্যাম ইম্প্রেসড! সত্যিই ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমাকে।’

-‘থ্যাংকস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট!’

-‘তারপর? শাড়ি পরেই কাজ করবে সারাদিন?’

-‘উঁহু। ছুটি নিয়েছি। বাসায় ফিরে যাবো।’

-‘ও আচ্ছা।’

-‘তার আগে একটু শপিংয়ে যাবো ভাবছি। তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে? তোমার সময় হবে?’, দ্বিধান্বিত কন্ঠস্বর এনার।

হাতে কাজ নেই। রাজি হয়ে গেলো মাহমুদ।সহাস্যে মাথা নাড়িয়ে বললো,’তোমার জন্য আমি সবসময়ই ফ্রি সুইটহার্ট!’ এনার সঙ্গে মজা করে প্রায়শই এই ধরনের কথাবার্তা বলে সে। অতএব সিরিয়াসলি নিলো না এনা। কিন্তু মনে মনে বেশ খুশি হলো।

-‘ঠিক আছে। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।’

দরজার আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিলো মেহরিন। আপনমনেই হেসে ফেললো। তাঁর চেষ্টা সফল! অথচ বিরহের বেদনায় চোখভর্তি পানি টলমল! এনা বেরোবে বুঝতে পেরে দ্রুত দরজার পাশ থেকে সরে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলো।

সারাদিন আর শত চেষ্টা করেও আর কাজে মন বসাতে পারলো না। রাত নটার দিকে নিজের চেম্বার থেকে যখন বেরোলো তখন অফিস মোটামুটি নিরব। সবাই বেরিয়ে গেছে। পকেট থেকে চাবি বের করলো রুমের তালা বন্ধ করার জন্য। তার আগেই কেউ একজন হেঁচকা টানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো তাঁকে। টাল সামলাতে না পেরে মানুষটার জ্যাকেটের হাতা শক্ত করে খিঁচে ধরলো সে। ভয়ে ভয়ে মাথা তুলে অবিশ্বাস্য কন্ঠে প্রশ্ন করলো,’তুমি?’

-‘হ্যাঁ আমি।’

-‘ছাড়ো আমাকে।’, ধাক্কা দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো মেহরিন।

-‘এনার মাথায় এসব উল্টোপাল্টা চিন্তাভাবনা কেন ঢোকাতে চাইছো?’

-‘আমি কিছু ঢোকাতে চাইনি। ও নিজেই তোমাকে ভালোবাসে।’

-‘এই কথা তোমাকে বলেছে ও?’

-‘হ্যাঁ।’

রাগে কথা বলতে পারলো না মাহমুদ। বেশকিছুক্ষণ সময় নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’তাহলে এখন আমার কি করণীয়?’

-‘ওকে বিয়ে করে সুখে সংসার করো।’

-‘তাই নাকি?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘ঠিক আছে করবো। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’

-‘কি শর্ত?’

-‘আমি এনাকে বিয়ে করবো। তুমি আমাকে বিয়ে করবে। সোহাগ তোমাকে বিয়ে করবে। এভাবে বিয়ে করতে করতে পুরো একটা সার্কেল তৈরী করে ফেলবো আমরা। কারণ এখানে আমরা চারজনই একে অপরকে ভালোবাসি।’

-‘এসবের মধ্যে সোহাগকে টানছো কেন?’

-‘কারণ সোহাগও তোমাকে ভালোবাসে।’

-‘সোহাগ সেটা একবারও বলেছে তোমাকে?’

-‘না বললেও বোঝা যায়।’

-‘হ্যাঁ। তুমিতো সব বুঝে বসে আছো।’

-‘সবই তোমার কৃপা। তুমিই তো আমার গুরু।’

-‘তাহলে বিয়েটা কেন করছো না?’

-‘আগে গুরু, তারপর শিষ্য!’

-‘আমি সোহাগকে বিয়ে করলে তুমি এনাকে বিয়ে করবে?’

-‘বিয়ে আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে করবো না।’, সরাসরি নাকচ করে দিলো মাহমুদ।

-‘লজ্জা করে না তোমার?’

-‘কিসের লজ্জা?’

-‘এই যে বারণ করার পরেও বেহায়ার মত আমার পেছনে পড়ে আছো?’

মাহমুদের মুখটা হঠাৎ করুণ হয়ে গেলো। অসহায়, মলিন মুখে বললো,’আমি বেহায়া? আমার ভালোবাসার এই মূল্য তোমার কাছে? শুধুমাত্র ভালোবাসি বলে এভাবে অপমান করতে পারলে আমাকে? একবারও আমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করলে না? কেন মেহরিন?’
মেহরিন জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েই রইলো। ইচ্ছে করে মাহমুদকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কথাগুলো বলেছে সে। কিন্তু তাঁকে অবাক করে আচকমকাই দিয়ে হো!হো! করে হেসে উঠলো মাহমুদ। হাসতে হাসতেই বললো,’কি ভেবেছিলে? সত্যি সত্যি বলছিলাম? হাহ্! নো! নেভার মিস মেহরিন শারাফাত! এই কথাগুলো আমি জীবনেও বলবো না তোমাকে। আমি তোমার মতন বেকুব আর মাথামোটা নই যে কেউ আমাকে খেপাতে চাইলেই খেপে যাবো। আই অ্যাম মাহমুদ সিদ্দিকি। আই নো মাই জব বেটার দ্যান এনি আদার!’

মনে মনে নিজের ওপর হতাশ হলো মেহরিন! সবাই তাঁকে একরোখো বলে অথচ তাঁর চাইতে অনেক বেশি একরোখা এবং জেদী মাহমুদ ! এতদিন এই কথাটা বুঝতে না পারলেও আজকে বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র মাহমুদ নয়। অতএব ঠান্ডা মাথায় কার্য সমাধানের চিন্তা করলো। কিন্তু ধ্যান ভঙ্গ হলো আচমকা কোমরে চাপ পড়ায়। ঠেলে তাঁকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেছে মাহমুদ। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে বললো,’মুখে বলো, ভালোবাসো না। অথচ আমার পছন্দ অপছন্দ তো সবই মনে রেখেছো? কিন্তু শাড়ি সঙ্গে সঙ্গে যে আমার তোমাকেও পছন্দ সেটা জানো না?’

নিজের এত কাছাকাছি মাহমুদকে দেখে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মেহরিনের। হৃদকম্পন অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে বাড়ছে। অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,’ছাড়ো আমাকে! আমার অস্বস্তি লাগছে।’

-‘লাগুক।’ তারপর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কোমল চুম্বনে তাঁর সমস্ত শরীরে ঘূর্ণিঝড় তুলে দিয়ে মিষ্টি করে হাসলো মাহমুদ।কানের কাছে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বললো ,’আই সয়্যার আই উইল কিল ইউ ইফ ইউ ট্রাই টু হার্ট মি নেক্সট টাইম।’

জবাবে ঠেলে তাঁকে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো মেহরিন। প্রচণ্ড রাগে ক্ষোভে চড় মারতে উদ্যত হলো সে। কিন্তু তার আগেই ধরে ফেললো নিকৃষ্টটা। ধরে রাখা হাতের তালুতে জোরপূর্বক চুমু খেয়ে বললো,’কথায় কথায় রাগ দেখানোর স্বভাবটা এবার একটু কমাও ডার্লিং। বয়সে আমি তোমার বড়। তারওপর হবু বর! গায়ে হাত তোলাটা কি ঠিক?’

-‘ছাড়ো, হাত ছাড়ো। অসভ্য, ইতর।’, ধমকে উঠলো মেহরিন।

-‘আদর করে বলো। নইলে ছাড়বো না।’

-‘একা পেয়ে সুযোগ নিচ্ছো?’

-‘যদি বলি নিচ্ছি? কি করবে? পারবে আমার সঙ্গে?’

-‘কি মনে হয় তোমার?’, রাগের চোটে মুখ লাল হয়ে গেলো মেহরিনের। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দিলো মাহমুদ। আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে হাত উপরে তোলে বললো,’আচ্ছা ঠিক আছে। বাদ দাও। চলো, তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই।’

-‘কোন দরকার নেই। তোমাকে মত অসভ্য, ইতরকে আমি একফোঁটাও বিশ্বাস করি না।’

-‘তাই নাকি?’, চট করে আবার কাছে এগিয়ে গেলো মাহমুদ।

কিন্তু এবার আর পূর্বের ন্যায় সুযোগ দিলো না মেহরিন। তৎক্ষণাৎ জোরেসোরে একটা ধাক্কা মারলো মাহমুদকে। ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দুহাত পিছনে গিয়ে পড়লো সে। চোখজোড়া বিস্মিত, হতবাক! মেহরিন এমন কাজ করবে সে ভাবতেই পারে নি। লোহার দরজার বন্ধ পাট্টার সাথে গিয়ে কনুইয়ে বাড়ি লাগলো! ব্যথায় চোখবন্ধ করে ব্যথায় অস্ফুটস্বরে কঁকিয়ে উঠলো সে। তথাপি হাত সোজা করে মালিশ করতে করতে বললো ,’ইউ নিড লাভ! দিনদিন ভায়োলেন্ট হয়ে যাচ্ছো তুমি!’
একফোঁটা রাগ যদি তাঁর কন্ঠে থাকতো! অসহ্য রাগে দাঁতেদাঁত ঘষলো মেহরিন। এমন বেহায়া, নির্লজ্জ মানুষ সে জীবনেও দেখে নি। মার খেয়েও ভালোবাসার কথা বলছে। হাতের ব্যাগটা মাটিতে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’তুমি আমাকে পিছু ছেড়ে দিলেই তো আমি নরমাল হয়ে যাই। আমার লাইফটাকে হেল করে দিচ্ছো তুমি! কতবার বলেছি, দরকার নেই আমার কারো ভালোবাসার। তবুও কেন পেছনে পড়ে আছো? একা আছি বেশ আছি।’

-‘আচ্ছা ঠিক আছে চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।’

-‘খবরদার একপা ও এগোবে না তুমি। আমি একাই যেতে পারবো।’

অতঃপর মাহমুদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গটগট করে একাই বেরিয়ে গেলো সে। মাহমুদ আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটা মালিশ করতে করতে পিছু নিলো। কিন্তু তাঁর পৌঁছানোর আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো মেহরিন। বাধ্য হয়ে নিজের গাড়ির কাছে ফিরে আসতে হলো মাহমুদকে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললো,’একেই বোধহয় চোরের মায়ের বড় গলা বলে।’
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here