#হৃদয়_রেখেছি_জমা
অরিত্রিকা আহানা।
পর্বঃ৫

গতকালই ফিরে এসেছে মাহমুদরা। মিশন সাকসেসফুল হওয়ায় তাদের অনারে আজকে সন্ধ্যায় নিজের বাসায় পার্টি রেখেছেন ইরফান আহমেদ। বিকেল থেকেই একে একে সবাই আসতে শুরু করলো। মাহমুদ এলো প্রায় রাত ন’টার দিকে।

গেটে সবার প্রথমে এনার সঙ্গেই দেখা হলো। তাঁকে দেখে দুহাত মেলে ভেতরে ঢুকতে বাধা দিলো এনা।
হালকা আকাশী রংয়ের সুন্দর একটা গাউন পরেছে সে। গাউনের ওপর দিকে সাদা জরিপাড় একটা শাল দুই কাধের ওপর দিয়ে আলতো করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। মাথা সাদা স্টোনের ক্রাউন। অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

-‘লুকিং বিউটিফুল!’, প্রশংসার দৃষ্টিতে চাইলো মাহমুদ।

এনা মিষ্টি হেসে ছদ্মগাম্ভীর্যের সুরে বললো,’আই অ্যাম দ্যা প্রিন্সেস অব দ্যা এমপায়্যার! ইউ নটি বয়! আস্ক মাই পারমিশন। অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দেবো না।’

তাঁর নাটকীয়তায় হেসে ফেললো মাহমুদ। খানিকটা ঝুঁকে কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে বললো,’উইথ ডিউ রেসপেক্ট প্রিন্সেস সাবরিনা এনা। আই দ্যা পুওর টিনি স্লেইভ, হাম্বলি বেগ ইউর মার্সি। মে আই হ্যাভ ইউর পারমিশন প্লিজ?’

-‘পারমিশন? ফর হোয়াট?’

-‘ফর এন্টারিং ইন ইউর হার্ট!’

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এনা। মাহমুদের ডানহাতটা চেপে ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,’ঠিক আছে। বিবেচনা করে দেখবো তবে আপাতত ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলো।’

-‘ধন্য হলাম।’

-‘এত দেরী করলে যে?’

-‘সন্ধ্যার পর বেশ একটা জরুরি কাজ ছিলো। সেটা সারতে সারতে দেরী হয়ে গেছে।’

কালো গেঞ্জির ওপর দিয়ে ছাইরঙা একটা ব্লেজার পরেছে মাহমুদ। অ্যাজ ইউজুয়্যাল দুর্দান্ত লাগছে। এনা তাঁর আপাদমস্তক একঝলক লক্ষ্য করে বললো,’বেশ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে তোমাকে!’

-‘থ্যাংক ইউ!’, সপ্রতিভ হাসলো মাহমুদ।

হাঁটতে হাঁটতে দুজন ভেতরে ঢুকলো। সহকর্মীরা গ্রুপ বেধে ছবি তুলছে। মাহমুদ অনিচ্ছা প্রকাশ করায় এনা গিয়ে একাই তাদের সঙ্গে যোগ দিলো।

খালি এটা টেবিলে বসে চুপচাপ গ্লাসে বিয়ার ঢালছে মাহমুদ। সিপ নেওয়ার আগেই সোহাগ এসে হাজির। মুখোমুখি বসে খানিকটা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো,’আপনি এখানে একা বসে আছেন। বস সেই সন্ধ্যা থেকে কতবার আপনার খোঁজ করেছে। আমাকে নাহলেও পঞ্চাশবার জিজ্ঞেস করেছে আপনি এসেছেন কি না? সামনে পেলেই বলছে মাহমুকে আবার ফোন দাও সোহাগ। এক্ষুনি আসতে বলো। বলো, আমি অর্ডার করেছি।’

মাহমুদ কৃত্রিম রাগে গরগর করে উঠলো। মুখ বিকৃত করে বললো,’ইহ্! আমি হুকুম করেছি। টাকলু! হুকুম করলেই আমাকে আসতে হবে? আমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাচ্ছি।’

সোহাগ মাথা দুলিয়ে হাসলো। উঠে যাওয়ার কোন লক্ষণ মাহমুদের মাঝে নেই। আক্ষেপের সুরে বললো,’বুঝলে সোহাগ, টাকলু হচ্ছে একটা এটম বোমা। পয়দা করেছে আরেক এটম বোমা। দুই এটম বোমা মিলে গোটা এনএসআই টা হয়ে গেছে একটা বোমা ফ্যাক্টরি। কথায় কথায় বুম!’ হাত দুটোকে গোল করে বোমা ফাটানোর ভঙ্গি করলো সে। তারপর না থেমেই বললো,’এদের দুজনকে যদি একসাথে বোমার মত ছুড়ে মারা যায় তবে দেখবে এরা ফাটার আগেই শত্রুপক্ষ ফেটে গেছে। বাম্পিংয়েরও প্রয়োজন হবে না।’

সোহাগ এবার বেশ শব্দ করেই হাসলো। মাহমুদ হাসলো না। যেন খুব সিরিয়াস হয়েই কথাগুলো বলেছে সে। এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি দিয়ে বললো,’আসে নি?’

-‘কে?’

-কে আবার? দ্যা গ্রেট এনএস আই এজেন্ট মিস মেহরিন শারাফাত। টাকলুর ফিমেইল ভার্সন।’

-‘উহুঁ। উনি আসবেন না।’

-‘বোরিং! লাইফে আনন্দ বলে কিচ্ছু নেই। পারে তো কেবল ঝগড়া করতে।’

যতই না বোঝার ভান করে থাকুক না কেন মাহমুদের দুর্বলতা ঠিক কোন জায়গায় ধরে ফেলেছে সোহাগ। চারদিকে এত সুন্দরী রমনীদের ভিড়ে একটা মানুষের সমস্ত এটেনশন কেবল এমন একটা মেয়ের দিকেই থাকে যার সঙ্গে তাঁর দুটো মিনিটও ঠিকমত বনিবনাত না। কেন? এর উত্তরটা জানা হয়ে গেছে সোহাগের। অতএব মাহমুদের ওপর পুরোনো রাগ আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে তাঁর।


মেহরিন এসেছে। বস্তুত, তাঁকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। ইরফান সাহেব একেকবার একেকজনের মাধ্যমে ফোন করিয়ে করিয়ে তাঁকে বিরক্ত করে ফেলেছেন। শেষমেশ বাধ্য হয়ে পৌনে দশটার দিকে পার্টি এটেন্ড করতে এসেছে বেচারি।

ডিনার শেষে মাহমুদ একটা টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ ড্রিংক করছিলো। খানিকবাদে লক্ষ্য করলো কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে সোহাগের সঙ্গে কথা বলছে মেহরিন। পরনে সাদা ফুলহাতা একটা শার্ট। কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পরেছে। পায়ে লালরঙ্গা পেন্সিল হীল। চুলগুলো বরাবরের মতনই ঝুঁটি বাধা। আপনমনেই হেসে ফেললো মাহমুদ।

কিন্তু মেহরিনের মুখে হাসি নেই। সোহাগের সঙ্গে কথা শেষে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে চাইলো সে। মাহমুদ একবার চোখ ফিরিয়ে নেয় তো আরেকবার তাকায়। মেহরিনের এভাবে চেয়ে থাকার কারণটা তাঁর কাছে অস্বাভাবিক। হঠাৎ কি কারণে তাঁর দিকে এভাবে চোখের বন্দুক তাঁক করিয়ে রেখেছে মেহরিন সেটা তাঁর বোধগম্য হলো না। এনাকে হাসি মুখে এগিয়ে আসতে দেখে বললো,’ডাকুরানী আমাকে এভাবে স্টেয়ার করছে কেন বলোতো? দেখে তো মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে।’

-‘তোমার গুনের শেষ আছে?’, ফোঁড়ন কাটলো এনা।

-‘সে তো আমিও জানি। কিন্তু ঠিক কোন গুনের কারণে তিনি আমার ওপর খেপে আছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। তুমি কি কিছু জানো?’

এনা ডানে বামে মাথা দোলালো। এর মানে সে জানে না। তাদের কথার মাঝখানেই বেরিয়ে গেলো মেহরিন। মাহমুদ ফোঁস করে এটা নিশ্বাস ছেড়ে হাতের গ্লাসের দিকে মনোযোগ দিলো।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here