#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
পর্ব_৩৮
©জারিন তামান্না
আচ্ছা,এভাবে কান্না কাটি করলে কিভাবে কি চলবে বলুন তো মৃন্ময়ী? এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট, সামান্য ইনজোর্ড হয়েছি জাস্ট, মরে তো যাইনি আমি।
_এই চুপ! কি সব আজে বাজে কথা বলতেছেন আপনি হ্যাঁ? ভাল্লাগে না আপনার? খুব ভাল্লাগে আমাকে কষ্ট দিতে। এই জন্য এভাবে বলেন আপনি। সিফাতের কপাল থেকে ঝট করে উঠে সোজা হয়ে বসলো পলক।ধমকের সুরে এভাবে বলতে বলতেই কান্নার বেগ আরও একচোট বেড়ে গেল তার।সেটা দেখে মুচকি হাসলো সিফাত। স্যালাইন পুশ করা হাতেই পলকের হাতটা ধরলো আলতো করে। আস্তে করে বললো,
_মৃন্ময়ী..
_কিইই? অভিমানে ভরপুর পলকের গলা।
_ভালোবাসি তো।
_হুহ!
পলকের এমন অভিমান দেখে হাসলো সিফাত। তার হাতের মুঠোয় থাকা পলকের হাতটায় দূর্বল শরীরের হালকা জোর নিয়েই খানিক শক্ত করে চাপ দিতেই আরও বেশি বেশি কেঁদে দিল পলক।এতদিনের জমানো কান্না বোধয় আজ সিফাতের সংস্পর্শে এসে বাঁধ ভেঙে উপচে পড়ছে একেবারে। সিফাত আর কিছুই বললো না। মুগ্ধ হয়ে দেখলো তার মৃন্ময়ীর অশ্রুময়ী ভালোবাসা!
__________________________________
৪ দিন আগে,
রশিদ ছুটিতে গেছে গ্রামের বাড়িতে। তাই আজ সিফাত নিজেই ড্রাইভ করে গিয়েছিল একটা অফিসিয়াল মিটিং এ্যাটেন করতে। ফেরার পথে হাইওয়েতে একটা ট্রাক বেসামাল হয়ে খুব জোরে ধাক্কা দিয়েছে সিফাতের গাড়িটাকে। বেশ ভালো রকম ড্যামেজ হয়েছে গাড়িটা। সিফাতেরও বেশ আঘাত লেগেছে। বিশেষ করে মাথায়। হাতে পায়েও খুব জোর লেগেছে। ৯ ঘন্টা লেগেছে সার্জারি করতে। বলতে গেলে মরতে মরতে বেঁচেছে সে। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে।আজ ৪ দিন পরে জ্ঞান ফিরেছে তার। ডাক্তার বলেছে পায়ে বেশ ভালো রকম আঘাত পেয়েছে। ২/৩ মাসের আগে হাঁটতে চলতে পারবে না । আর ব্রেনেও ইন্টারনাল ব্লিডিং হওয়ায় পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে তার।
সিফাতের এক্সিডেন্টের খবর পাওয়ার পর থেকে পলক একদম শান্ত ছিল। সবাই খুব অবাক হয়েছিল পলকের এমন শান্ত ব্যবহারে। কেউ কেউ বলেছে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা নেই,,টান নেই বলেই একটুও কাঁদেনি পলক। সিফাতের দাদী কত কি শুনিয়েছে পলককে এই নিয়ে।, রেহনুমাও অবাক হয়েছিল পলকের এমন আচরণে। সারাও অনেক কটু কথা শুনিয়েছে।এই চারদিনে তাকে হাসপাতাল থেকে টলানো যায়নি একটুও। প্রথম যেদিন জেদ করেছিল সে হাসপাতালেই থাকবে, সেদিন বাধ্য হয়ে রিহান একটা কেবিন বুক করেছিল সিফাতের নামে। এই চারদিন ধরে পলক সেই কেবিনেই আছে। প্রতিবেলায় সে আইসিইউর সামনে এসে সিফাতকে দেখে যায় আইসিইউ এর বাইরে থেকে। রুকু, রেহনুমা খাবার নিয়ে আসে। কিন্তু, সে খায় না ঠিকমত। কেবিনে এলেই বেশিরভাগ সময় তাকে জায়নামাযেই পড়ে থাকতে দেখে তারা। পলকের সামনে রেহনুমা প্রতিবারই কেঁদে কেটে অস্থির হলেও পলকের চোখ থেকে এক ফোঁটাও পানি পড়ে না। কিন্তু,,তার চোখগুলো থাকে ভীষণ ফোলা। সিফাতের জন্য সেও কাঁদে। তবে তা কেবল তার রবের দরবারে। জায়নামাযে…সিজদায়। নিশাত খুব অবাক হয়েছিল পলকের এমন আচরণে।কয়েকমাস আগে তাদের বাবার সময় পলক কি কান্না কাটিই না করেছিল। আর এই পলক কি শক্ত হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে। সবাইকে সিফাতের জন্য দো’য়া করতে বলছে বারবার। নিশাত একবার কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছিল,
_তুই এত শান্ত আছিস কি করে রে বুবু? ভাইয়ার জন্য কষ্ট লাগতেছে না তো একটুও?
জবাবে পলক বলেছিল, সব কষ্ট বাইরে প্রকাশ করতে নাই নিশু। বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখেই বিপদমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হয়। আমিও তাই করতেছি। এটাই শিখিয়েছে ওই মানুষটা আমাকে।
পলকের এহেন কথায় সেদিন নিশাত খুব করে বুঝেছিল সিফাত কতটা বদলে দিয়েছে তার এই বোনটাকে। ঠিক কতটা ভালোবাসা দিলে কেউ কাউকে নিজের মত গড়ে নিতে পারে,,বদলে দিতে পারে সেটা সিফাতের কাছে থাকা তার বোনকে দেখেই বুঝেছিল নিশাত।
আজ সিফাতের জ্ঞান ফিরার পরে তাকে কেবিনে শিফট করা হয়।একে একে সবাই দেখা করে গেছে। সবাই রুম থেকে যাওয়ার পরেও পলক রয়ে গেল ওখানেই। নার্স বলেছিল সিফাতের রেস্ট লাগবে।কিন্তু,,সিফাত জেদ করে পলককে এখানেই রেখেছে। তার বিছানাতেই বসিয়েছে তাকে। পলককে একা পেয়ে প্রথমেই সিফাত বলেছিল,
_ কেমন আছেন মৃন্ময়ী?
(পলক চুপ।)
_আমি ভালো আছি মৃন্ময়ী।
নিরবে কাঁদছে পলক। বলছেনা কিছুই।
_আচ্ছা,আমার ঘুমিয়ে থাকাটা কি আপনি জেগে পুষিয়ে দিয়েছেন মৃন্ময়ী?
(পলক চুপ। কাঁদছে নিরবে)
_দাদী বললো আপনি নাকি একটুও কাঁদেননি আমার জন্য! একদম শান্ত স্বাভাবিক ছিলেন।কষ্ট হয়নি আপনার তাহলে। আমি মরে গেলেও বোধয় কাঁদবেন না আপনি। সেটা অবশ্য ভালোই হবে। এমনিতেও মৃত মানুষের জন্য কান্না কাটি কিছু করতে নেই।
এতক্ষণ নিরবে কাঁদলেও এখন তার কান্না ফোঁপানোতে পরিণত হলো। কিন্তু, সিফাত থেমে নেই। সে নিজের মত বলেই যাচ্ছে।
_জানেন মৃন্ময়ী, এক্সিডেন্ট হওয়ার পরে আমি তো কলেমাও পড়ে ফেলেছিলাম। ভেবে ছিলাম এই যাত্রায় বোধয় ওপারেই ঠাঁই হবে সরাসরি। আফসোসও হচ্ছিল,,আপনাদের কাউকে শেষবারের জন্য না দেখেই যেতে হবে ভেবে। আপনার কপালে শেষবার আমার ভালোবাসা না ছুঁইয়েই বোধয় চোখ বুজতে হবে আমাকে চির..
এতক্ষণ সিফাতের পাশে বসে চুপচাপ শুনছিল সব পলক। একের পর এক সিফাতের এমন কথা শুনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেও ওটুকু বলার সাথে সাথে হামলে পড়লো সে একপ্রকার সিফাতের কপালে।প্রথমবারের মত খুব গভীরভাবে এঁকে দিল তার প্রেমময় স্পর্শ। সিফাত পুরো থতমত খেয়ে গেল আচমকা পলকের এমন আদুরে আক্রমণে। কয়েকসেকেন্ড সময় লাগলো তার ব্যাপারটায় ধাতস্ত হতে। ব্যাপরটা বুঝতেই মনে প্রাণে খুশির জোয়ার বয়ে গেল তার।শরীরে এত এত আঘাত আর ব্যান্ডেজ নিয়েও পরম সুখে আবিষ্ট হলো সিফাত। এক হাতে ব্যান্ডেজ করা। অন্যহাতে স্যালাইন পুশ করা। সেই হাতেই আলতো করে পলকের পিঠে হাত রাখলো সিফাত। পলক ওভাবেই লেপ্টে আছে সিফাতের সাথে। কাঁদছে প্রচুর। সিফাতের চোখ বেয়েও গড়িয়ে পড়ছে সুখজল। পলক মুখে কিছু না বললেও আজ তার এই কান্না,,এই স্পর্শ খুব ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিল, পলক তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
____________________________________
কিছুদিন পরে,
হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা হয়েছে সিফাতকে । পলক দিন রাত তার সেবা করে। তাকে গোসল করানো থেকে শুরু করে নিজ হাতে খাওয়ানো, মেডিসিন দেওয়া সবটা পলক নিজেই করে। বিভিন্ন কথা বলে, গল্প করে তাকে সঙ্গ দেয়। সিফাত বেশ কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছে পলক স্কুলে যাচ্ছে না। প্রথমে একবার জিজ্ঞেস করেছিল সে, কেন যাচ্ছে না স্কুলে। তখন পলক বলেছিল ইমার্জেন্সি লিভ নিয়েছে কয়েকদিনের। কিন্তু,বাড়ি ফিরে আসার ২ সপ্তাহ পরেও তাকে স্কুলে যেতে না দেখায় বেশ খটকা লাগলো সিফাতের। একদিন সকালে সিফাতকে খাইয়ে দিচ্ছিল পলক। খেতে খেতেই সিফাত জিজ্ঞেস করলো,
_মৃন্ময়ী?
_হুম।
_স্কুলে কেন যাচ্ছেন না আপনি? ইমার্জেন্সি লিভ তো এতদিন হয় না কখনো কারো।
সিফাতের এহেন প্রশ্নে কিছুসময় তার মুখের দিকে শান্তচোখে তাকিয়ে রইলো পলক। তারপর, খুব স্বাবাবিক স্বরেই বললো,
_চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি আমি।
_কিহ? বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো সিফাত।
_হ্যাঁ। বলেই আরেক চামুচ স্যুপ মুখে তুলে দিল সে সিফাতের। কিন্তু সিফাত সেটা সরিয়ে দিয়ে বললো,
_এটা কেন করেছেন আপনি? আপনাকে তো আমি চাকরি ছাড়তে মানা করেছিলাম বিয়ের আগেই। এটা আপনার নিজস্ব পরিচয় মৃন্ময়ী।
_আমার পরিচয় আপনি। বিয়ের পর আপনার পরিচয়ই যথেষ্ট আমার জন্য।
_What rubbish! এইসব টিপিক্যাল উমেন টাইপ কথা কবে থেকে বলেন আপনি মৃন্ময়ী? উত্তেজিত স্বরে বললো সিফাত।
_এখানে টিপিক্যাল উমেন হওয়ার কি আছে ক্যাপ্টেন! আপনার স্ত্রী আমি। আপনার এমন ক্রিটিকাল অস্থায় আপনাকে একা ফেলে চাকরি করতে নিশ্চয় যাবো না আমি!
_ও..তারমানে আমি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছি বলেই আপনি আমার সেবা করার জন্য চাকরিটা ছেড়েছেন!
আমার সেবা কে করতে বলছে আপনাকে? ডক্টর তো বলেছিল নার্স এপয়েন্ট করতে।তাহলে তখন কেন মানা করেছিলেন আপনি?
ঠিক তখনই সিফাতের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সিফাতের দাদী বললেন,
_অয় মানা করে নাই। আমিই না করতে কইছি। ঘরে তোর বিয়া করা বউ থাকতে বাইরের মাইয়া মানুষ আইয়া সেবা ক্যান করবো তোর?
দাদীর কথায় হতভম্ব হয়ে গেল সিফাত। তারমানে এই চাকরিটা পলক স্বেচ্ছায় ছাড়েনি।তাকে বাধ্য করা হয়েছে।
ভীষণ রকম রাগ উঠে গেল সিফাতের পলকের উপর। পলককে সে বারবার বলেছিল বিয়ের পরেও সে চাইলে চাকরিটা কন্টিনিউ করতে পারে। তাকে চাকরি ছাড়ার প্রয়োজন নেই। পলকও চেয়েছিল চাকরিটা করতে। এমনকি বিয়ের পরে সিফাতই তাকে বলেছিল যেন তার বেতনটা আগের মতই তার বাবার বাড়িতে দেয়। অন্তরা যেহেতু এখন কিছু করছে না,,এই টাকাটা তার কাজে লাগবে। যদিও পলাশ এতে খুব আপত্তি করেছিল, কারণ তার বেতনই যথেষ্ট এই পরিবারকে স্বচ্ছলভাবে চালিয়ে নিতে। তারপরেও সিফাত বলেছিল, পলক এই পরিবারের মেয়ে। তাকে শিক্ষা দিক্ষা দিয়ে এতখানি যোগ্য এই পরিবার করেছে। তাই এটা তার কর্তব্য যে সে তার আয় থেকে এই পরিবারে কন্ট্রিবিউট করবে। সিফাতের এমন কথায় পলাশ বা ওই পরিবারের কেউই আর আপত্তি করতে পারেনি। বরং, অভিভূত হয়েছিল সিফাতের এহেন চিন্তা ভাবনা দেখে। কিন্তু, সেই চাকরিটাই পলক ছেড়ে দিল। রাগে দুঃখে পলককে সে বললো,
_এসব নিয়ে যাও মৃন্ময়ী। খাবো না আমি আর।
_ক্যান,খাবি না ক্যান?
_খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি এখন যাও দাদী। আমি রেস্ট নিবো।
সিফাতের এমন কাঠকাঠ গলায় বলা কথা শুনে দাদী চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। কিন্তু,পলক নড়লো না। তা দেখে রাগী স্বরে সিফাত বললো,
_বসে আছো কেন,যাও। রেখে আসো এগুলা।
_আমি চাকরিটা দাদীর কথায় ছাড়িনি কিন্তু। নিজে থেকেই ছেড়েছি। আপনি হাসপাতালে থাকাকালীন সময়েই।
_কেন?
_কারণ, আপনার চাইতে, আমার পরিবারের চাইতে আমার চাকরি করাটা জরুরি না আমার কাছে। আল্লাহ তো আমাকে এমন কোন পরিস্থিতিতে ফেলেননি যে চাকরিটা আমাকে করতেই হতো। তাছাড়া সময়ের দাবীতে আমাদেরকে অনেক সময় অনেক কিছু ছাড়তে, নতুন করে গড়ে নিতে হয় জীবনে। আমার মনে হয়েছে এখন স্কুলে সময় দেওয়ার চাইতে আমার মানুষটাকে সময় দেওয়া বেশি জরুরি। কিন্তু, স্কুল তো আর আমাকে এতদিনের ছুটি দিবে না। তাই ছেড়ে দিয়েছি চাকরিটা।
_খারাপ লাগছে না আপনার?
_হুউউ,,খারাপ লেগেছিল।, ২ বছর ধরে করছিলাম চাকরিটা। কিন্তু, আফসোস হয়নি বিন্দুমাত্র। আজ একটা ছেড়েছি, অন্যটা খুঁজে নিবো পরে।
_এই দেশে চাকরি সোনার হরিণ মৃন্ময়ী।
সিফাতের এহেন কথায় মুচকি হাসলো পলক। তারপর,আবার একচামচ স্যুপ চামচে নিয়ে পলক বললো,
_আমি কেবল একটা চাকরি ছেড়েছি। নিজের পরিচয় নয়। আমি এখন assistant director of Alam Group of industry. I’m working behalf on Mr. Safwan Shifat.
_What? চমকে প্রশ্ন করলো সিফাত।
_হ্যাঁ। বাবা নিজেও চাননি আমি নিজের এই পরিচয়টা এভাবে ছেড়ে দেই। তাই উনিই আমাকে অফার করেছিলেন আপনার জায়গায় কাজ করার জন্য। আমি তো এখনো পারিনা আপনার মতো এত সুন্দর করে সবটা হ্যান্ডেল করতে, কিন্তু তারপরেও বাসায় বসে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি আপনার কাজটুকু সামাল দেওয়ার। আর তাছাড়া আপনিই তো বলেন, আমি মিসেস. সাফওয়ান সিফাত। তো তার জন্য তার হয়েই তো থাকবো আমি, তার সব ভালো খারাপ সময়ে, সব পরিস্থিতিতে…তাই না?
সিফাত পুরো অবাক। পলকের মুখে এমন কনফিডেন্ট আর ডেডিকেটেড কথাবার্তা শুনে। তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে এই শুনে যে ইশতিয়াক আলম যে কিনা পলককে পছন্দই করে না খুব একটা সে নিজেই পলককে তাদের ব্যবসায়, কোম্পানিতে জয়েন করতে বলেছে। পলককে Working woman হিসেবে নিজের পরিচয়টা ধরে রাখতে সাহায্য করছে।
_আপনি সুস্থ হওয়ার পরেও কিন্তু আমি এই জবটা কন্টিনিউ করবো। আপনি আপত্তি করবেন না নিশ্চয়? পলক বললো।
_ আপনাকে আমি ছাড়তে দিলে তো! বলেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো সে পলককে। ভীষণ খুশি সে। সত্যিই আল্লাহ কারো সাথে অবিচার করে না। বান্দার কাজ আর নিয়তের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তার বিপরীতে বান্দার জন্য তার রহমত সরূপ একটা না একটা ব্যবস্থা করেই দেয়। পলকের ধৈর্য্য, ভালো ব্যবহার, সিফাতের প্রতি, এই পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এই সব কিছু ইশতিয়াক আলমের মনেও ঠিক জায়গা করে দিয়েছে পলকের জন্য। তাই তো তিনি নিক থেকেই পলকের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাকে সাপোর্ট করেছে এভাবে! সত্যিই মানুষ তার কর্মের ফল ঠিকই পায়। সিফাত পেয়েছে পলকের ভালোবাসা, পলক পেয়েছে তার প্রাপ্য সম্মান, অধিকার আর জায়গাটা।
________________________________
২ মাস পরে,
সিফাত এখন পুরোপুরি সুস্থ। পলকের সেবা, ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট,মেডিসিন সব কিছুতে খুব দ্রুত রেস্পন্স করেছে সিফাতের শরীর। তাই এতটা ক্রিটিকাল অবস্থা থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২ মাসেই সুস্থ হয়ে উঠেছে সিফাত। দেখতে দেখতে সিফাত আর পলকের বিয়েরও ৫ মাস হয়ে গেছে। আজকাল সিফাত আর পলক দুজনেই একসাথে অফিসে যায়। সিফাত অসুস্থ থাকাকালীন সিফাতের সাহায্য নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সবটা সামলেছে পলক। পরিবারের সবাই বেশ খুশি পলকের অফিস জয়েন করায়।ইশতিয়াক আলমও বেশ সন্তুষ্ট আজকাল পলকের প্রতি। একসাথে কাজ করার সুবাদে পলকের সাথে বেশ ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে তার। এখন আর আগের মত দূরত্ব রেখে চলেন না তিনি। বেশ স্নেহ করেন পলককে তিনি।
_______________________________
আজ সিফাতের জন্মদিন।, এতবড় এক্সিডেন্টের পরে অনেক কঠিন সময় পাড় করেছে সবাই। বিশেষ করে পলক আর সিফাত। তাই সবার মন রিফ্রেশ করার জন্য রুকুর আইডিয়াতে সিফাতের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে একটা ছোটখাটো সেলিব্রেশনের আয়োজন করা হয়েছিল আজ। আইডিয়াটা অবশ্য রুকুই দিয়েছে। সিফাত হৈ হট্টগোল করে জন্মদিন পালন করাটা পছন্দ করেনা একদম। তাই রাতে রুকু,সারার শশুড়বাড়ির পরিবার, পলকের পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটা ফ্যামিলি ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল একটা রেস্টুরেন্টে। সিফাতের জন্মদিন উপলক্ষে ইয়ানাকে দিয়ে এই ট্রিটের ব্যবস্থা করেছে সবাই বুদ্ধি করে। কারণ, কারও কথা রাখুক না রাখুক ইয়ানার আবদার সে কখনোই ফেলতে পারে না। হলোও তাই। রাতে সবাই মিলে ডিনারে গিয়েছিলো।
বাড়ি ফেরার পর একটা প্রজেক্টের কাজের জন্য সিফাতকে এতক্ষণ স্টাডিরুমেই আটকে রেখেছিল রিহান। তাই কাজ শেষ করে ঘরে আসতে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে সিফাতের।
রাত ১১:২৭ মিনিট।
ঘরে এসে সিফাত দেখলো ঘরে ড্রিম লাইট জ্বালানো কেবল। ঘরও খালি। পলক নেই ঘরে। সিফাত ভাবলো হয় তো বেলকনিতে আছে। ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘরের আলোটাও জ্বালিয়ে দিল সে। গলার টাই খুলতে খুলতেই এগিয়ে গেল আলমারির দিকে। কিন্তু আলমারির কাছে যাওয়ার আগেই নিভে গেল ঘরের আলোটা। দাঁড়িয়ে গেল সে। লোড শেডিং হয়েছে। কিন্তু আই পি এস চালু হচ্ছে না। অবাক হলো সিফাত। ফ্ল্যাশ লাইট অন করার জন্য পকেট থেকে ফোনটা বের করতে যেতেই ঘরে হলুদ আভার রেশ দেখতে পেল সে। আলোর উৎস খুঁজে পেছনে তাকাতেই একরকম ঝটকা খেলো সিফাত। হাতে মোম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পলক। পড়নে তার সিফাতের দেওয়া সেই কালো জর্জেট শাড়িটা। গোল গলার হাফ হাতার ব্লাউজ। ব্লাউজটা কোমড়ের উপর থেকে দুই ইঞ্চি উপরে হওয়ায় শাড়ির ফাঁক গেলে বিছাটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পলকের শরীরে,পাতলা শাড়ির ভেতর একদম ফুঁটে উঠেছে ওটা। মোমের আলোয় যেন আরও বেশি ঝলমল করছে সেটা। চুলগুলো সামনে থেকে টেনে পেছনে খোপা করেছে পলক। খোপায় ধবধবে সাদা বেলিফুলের গাজরা।
হাতে রূপার একজোড়া বালা। নাকে সবসময়কার পড়া ডায়মন্ডের নাকফুলটা। মোমের আলোয় চিকচিক করছে সেটা।ব্যাস! আর তেমন কোন গয়না নেই পলকের গায়ে। মোমটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে সিফাতের সামনে এসে দাঁড়ালো পলক। সিফাতের মুখপানে চাইলো পলক। তার চোখ মুখে ছেঁয়ে আছে অন্য রকম এক আভা।সিফাত অবাক হয়ে দেখছে পলককে। কাছ থেকে আরও খেয়াল করে দেখলো সিফাত। চোখে মোটা করে কাজল টানা। পলককের শান্ত নিবিড় ওই চোখজোড়ায় এই কাজল যেন গোটা এক অর্ধচন্দ্র অমাবস্যার রাত নামিয়ে এনেছে। এতটাই মনোমুগ্ধকর লাগছে তাকে। ঠোঁটে কেবল ওয়াটার কালারের লিপগ্লস দেওয়া।জ্বলজ্বল করছে তার ঠোঁট জোড়া। মুখে আর কোন প্রসাধনী নেই। সিফাতকে এমন অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে পলক মৃদু হাসলো। সিফাতের কাছে একদম অন্যরকম লাগলো এই হাসিটা।এই হাসি, কাজল কালো চোখের ভাষা এই সব কিছুই পলককে আজ এক অদ্ভুত মোহনীয় রূপে সাজিয়ে তুলেছে।
_শুভ জন্মদিন, ক্যাপ্টেন! -পলকের কন্ঠস্বরও বড্ড গভীর শোনালো এই মূহুর্তে।
_মৃন্ময়ী! – ঘোর লাগানো কন্ঠে ডাকলো সিফাত।
সিফাতের এহেন ডাকে তার আরও খানিকটা কাছে এগিয়ে গেল পলক। একহাতে আলতো করে হাত রাখলো সিফাতের গালে। তার খুব কাছে গিয়ে পরম যত্নে আর ভীষণ গভীরভাবে সিফাতের অন্যগালে এঁকে দিলো নিজের প্রেমময় স্পর্শ। তারপর, সিফাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে অদ্ভুত ঘোর লাগানো কন্ঠে বললো,
_ ভালোবাসি প্রিয়!
সিফাতের চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। ভেতরকার খুশি আনন্দ সব উপচে পড়ছে তার ভুবন ভুলানো হাসিতে। একহাতে তার গালে রাখা পলকের হাতটা ধরলো সে। অন্যহাতে পলকের কোমড় জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। পলকের মুখপানে চেয়ে নেশা ধরে কন্ঠে বললো,
_আজ যদি অবাধ্য হই,
হই কোন বেপরোয়া প্রেমিক,
সব নিয়ম……সব অধিকারের গন্ডি পেরিয়ে
হই যদি কোন অশান্ত ঝড়,
তছনছ করে দেই প্রেমিকার
এতকালের সযত্নে রাখা প্রেমমহল,
যদি প্রেয়সীর কপালে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে
তার সর্বস্ব আমার করে নেই,
যদি প্রেমপিপাসী হয়ে ঠোঁটের পেয়ালায়
শুষে নেই তার সবটুকু প্রেম
যদি উপড়ে ফেলি সব দূরত্ব
সংকোচ, আর আঁড়াল
যদি পূর্ণতার চাদরে জড়িয়ে
আজ এক করি ভালোবাসা,
অনুমতি দেবেন কি আমায়,
আমার মৃন্ময়ী…প্রিয়তমা?!
এতক্ষণ মন্ত্রমগ্ধের মত শুনছিল পলক সিফাতের বলা প্রতিটা শব্দ,প্রতিটি কথা।মুগ্ধ নয়নে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মাতাল চোখে পলকের মুখপানে চেয়ে আছে সিফাতও। অপেক্ষার অবসান খুঁজছে সে, তার মৃন্ময়ীর সম্মতিতে। কিন্তু,পলক কিছু বললো না। সিফাতের বুকের বা পাশটায় হাত রেখে লাজুক হাসলো কেবল। সিফাতও মুচকি হেসে পলকের আঙুলের ফাঁক গেলে নিজের আঙুল জড়িয়ে শক্ত করে মুঠো বন্দি করে নিল তার মৃন্ময়ীকে। অগ্রসর হলো ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়ে।
____________________________________
ভোর ৫:১৯ মিনিট।
বেলকোনির রেলিং এ হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে পলক।তার কোমড় ছাপানো ঘন চুলগুলো থেকে বৃষ্টি ফোঁটার মত টপটপ করে পানি ঝরছে এখনো। এক অপার স্নিগ্ধতা বিজার করছে পলকের শরীরজুড়ে।পূর্ণতার স্বাদে পরিতৃপ্ত সমস্ত মন-প্রাণ। গতরাতে খুব কাছ থেকে অনুভব করেছে সে সিফাতকে। নিজের মাঝে ধারণ করেছে তার স্পর্শ, গন্ধ, অস্তিত্ব। নতুন করে জেনেছে ভালোবাসার অন্য এক রূপকে।
এখনো পৃথিবীর বুকে আলো ফোঁটেনি ঠিকভাবে। পরিপূর্ণতার রাত শেষে প্রথম ভোর দেখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে সে। আচমকা পেছন থেকে এক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল সিফাত।পলকের চুলে নাক ডুবিয়ে, শাড়ির ফাঁক গেলিয়ে হাত রাখলো পলকের পেটের উপর।অন্যহাতে পলকের সামনে এগিয়ে দিলো কফির মগটা। সিফাতের এহেন উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হাসলো পকল।হাত বাড়িয়ে নিল কফির মগটা। একটা চুমুক দিয়েই ওটা আবার বাড়িয়ে দিল সিফাতের কাছে।ঘাঁড় কাত করে মাথাটা এলিয়ে দিল সিফাতের বুকে। ধীরে ধীরে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।তার ঝলমলে আলো ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর কোণায় কোণায়। খানিকটা উষ্ণ আলো এসে জুড়ে বসলো সিফাত আর পলকের ছোট্ট বেলকনিতেও। কফিতে চুমুক দিতে দিতে পলককে নিয়েই এই নতুন ভোরের সূচনা দেখলো সিফাত। মনে মনে বললো, আলহামদুলিল্লাহ!
____________________________________
সকাল ৫ :৪০ মিনিট।
বিছানা বালিশ সব উল্টেপাল্টে দেখছে পলক। বাদ যায়নি বিছানার চাদরটাও। বিছানার নিচে, সাইড টেবিলের আশে পাশেও খোঁজা শেষ। একসময় ক্লান্ত হয়ে কোমড়ে দু হাত দিয়ে দাঁড়ালো সে। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো জিনিসটা ঠিক কোথায়! কিন্তু মনে পড়ছে না তার কিছুতেই। সোফায় বসে মোবাইলে কিছু একটা করছিল সিফাত। সেই সাথে দেখছিল পলকের এমন তোলপাড় করা তল্লাশি। মিটিমিটি হাসছে সে,পললের এমন হয়রানি দেখে।
শেষ চেষ্টা হিসেবে পলক আরও একবার বিছানার চাদরে হাত দিতেই সিফাত বললো,
_কিছু কি খুঁজছেন মৃন্ময়ী?
_আ..আব…হ্যাঁ।
_কি সেটা?
_ওই তো কোমড়ের বিছাটা। রাতে আপনি খুলে…একটুকু বলতেই পলক খেয়াল করলো সিফাত মিটমিটিয়ে হাসছে। তা দেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে পলক বললো,
_আপনি হাসছেন কেন বলুন তো?
_আমি??! আমি কোথায় হাসছি! আমি চুপচাপ বসে আছি। অপেক্ষা করছি আপনি কখন বেডসীট চেঞ্জ করে বিছানা গোছাবেন আর আমি ঘুমাবো। সারারাত তো ঘুমানোর সুযোগই পেলাম একটুও…বলেই পলককে দেখিয়ে মিথ্যামিথ্যি হাই তুললো সিফাত।
পলক পুরো অবাক সিফাতের মিথ্যাচার দেখে। একটু আগে এমন স্ট্রং করে খাওয়া কফির পরে তো কারও এমন ঘুম পাওয়ার কথাই না! আর সিফাত কি সুন্দর ঘুম পাওয়ার ভান করছে!! তা দেখে ভেংচি কাটলো পলক সিফাতকে। তারপর আবার পেছন ঘুরে আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। সিফাত আবারও হাসলো তা দেখে। সোফা ছেড়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পলককে। তার গালে চুমু দিয়ে বললো,
_আমার অধিকার ওটা।শুধুই আমার। তারপর, পলককে সামানে ফিরিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো সিফাত তার সামনে। হাতের মুঠোয় থাকা বিছাটা বের করে আজ নিজেই শাড়ির আঁচল সরিয়ে জড়িয়ে দিল ওটা পলকের কোমড়ে। পলকের কোমড়ে একদম ঝলমল করছে বিছাটা। তা দেখে মুচকি হাসলো সিফাত। উঠে দাঁড়িয়ে পলককে তাড়া দিল বিছানা রেডি করার জন্য। ঘন্টা ২ ঘুমিয়ে নেবে ওরা। তারপর ৯ টায় অফিসে যাবে।
বিছানায় গিয়ে সিফাত বালিশ ঠিকঠিক করে শুতে শুতে পলককে বললো ঘুমাতে আসার জন্য। পলক বিছানায় উঠেই আজ ঝট করে তার জন্য রাখা বালিশটা সরিয়ে দিল। তা দেখে অবাক হয়ে সিফাত বললো,
_বালিশ সরালেন কেন?
_কারণ আপনি থাকতে আজ থেকে ওটার আর কোন দরকার হবে না। বলেই চুলগুলো ঠিক করতে করতে সিফাতের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো পলক। সিফাত কিছু বললো না আর। মুচকি হাসলো কেবল। তার মৃন্ময়ী বুঝে গেছে বুকে ঠাই নেওয়ার পরে বুকের কাছে বালিশ রেখে শোয়ার প্রয়োজন নেই আর তার। পলকের কপালে গভীরভাবে চুমু দিয়ে রোজকার মতই জড়িয়ে ধরলো তাকে। চুলে বিলি কাটতে কাটতেই চোখ বুজলো সে। কিন্তু, একটু পরেই বুকের উপর উষ্ণ কিছুর অনুভূতি হতেই ঝট করে চোখ খুললো সিফাত। পলক কাঁদছে! কিন্তু কেন? চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করলো পলককে,
_মৃন্ময়ী!! কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন আপনি?
পলল কিছু বলছে না।
_এইইই মৃন্ময়ী? পলকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ডাকছে তাকে সিফাত। কিন্তু পলক চুপ। এভাবে কিছুই বুজতে পারছে না সিফাত কি হয়েছে। তাই আবারও প্রশ্ন করলো পলককে,
_আপনার কি ব্যাথা করছে মৃন্ময়ী? কষ্ট হচ্ছে বেশি? উঠুন,,ডাক্তারের কাছে যাই চলুন। বলেই পলককে বুকে নিয়ে উঠে বসতে যাচ্ছিল সিফাত। তখনই পলক মুখ খুললো। বললো,
_যদি কখনো জানতে পারেন আমি আপনার থেকে আমার কোন অতীত লুকিয়েছি, যেটা বিয়ের আগেই জেনে নেওয়াটা আপনার অধিকার ছিল,আর আমি সেই অধিকারটা ক্ষুণ্ণ করেছি..তখন কি করবেন আপনি?সিফাতের বুকে মাথা রেখে এক হাতে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো পলক।
সিফাত ঠিক বুঝলো না পলক তার কোন অতীতের কথা বলছে। তবে আন্দাজ করে নিল কিছুটা। পলকের মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বললো,
_ভেবে দেখবো আগে…আপনার না বলার কারণ কি ছিল। লুকিয়ে যাওয়াটাই বা কতটা যুক্তি সংগত ছিল। যদি মেনে নেওয়ার মত হয় মেনে নেবো, নয় তো কষ্ট পাবো একাই। তবে,, পরবর্তীতে আপনাকে কাছে টানতে না পারলেও ছাড়তেও পারবো না কোনমতেই। কিন্তু, আজ এসব কথা কেন বলছেন আপনি আমাকে?
কতক্ষণ চুপ করেই শুয়ে রইলো পলক। তারপর খুব অপরাধী কন্ঠে বললো, তিয়ানের সাথে রিলেশনশিপে ছিলাম আমি ২ বছর। কিন্তু, সেসময় তিয়ান জাপানে ছিল।গ্রেজুয়েশনের জন্য।ওই বিয়েটার জন্য আমরা ব্রেকআপ করি। বিয়ের আগেই বলতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু,বলতে পারিনি। কষ্ট দিতে চাইনি আপনাকে। কিন্তু,আজ জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে এত এত ভালোবাসার যোগ্য হয় তো নই আমি একজন প্রতারক আমি।
_জানি আমি । – বলতেই ঝট করে উঠে বসলো পলক সিফাতের বুকের উপর থেকে। তার চোখে ঠিকড়ে পড়ছে রাজ্যের বিস্ময়। সিফাত সব জানে এটা তার কল্পনাতীত ছিল। পলকের চোখে এহেন বিস্ময় হতভম্বিতা দেখে মুচকি হাসলো সিফাত। তারপর পলকের কুনুই ধরে টান দিয়ে তাকে আবার নিজের বুকের উপর এনে ফেললো সে। আচমকা টানে বেশ কিছু চুল এসে ঝাপটে পড়লো পলকের মুখের উপর। আলতো হাতে সযত্নে সেগুলো সরিয়ে তার কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বললো সিফাত,
_আমি সবটা জেনেই আপনাকে ভালোবেসেছি মৃন্ময়ী। তিন কবুল বলে বিয়ে করে আপনাকে নিজের স্ত্রী…নিজের অস্তিত্বের অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তাই, অতীত যা ছিল, ছিলই। বর্তমান আর ভবিষ্যৎটা হবে আমাদের। শুধুমাত্র আমাদের।
_আপনি এসব জানতেন তবুও কেন কিছু বললেননি আমাকে? আর কে বলেছে এসব আপনাকে?
_বিথি বলেছে।
_বিথু! অবাক হয়ে বললো পলক।
_হ্যাঁ। আমিই জিজ্ঞেস করেছিলাম একদিন কথায় কথায়। তিয়ানের চোখে আমি ভালোবাসা দেখেছি আপনার জন্য। এবং সেটা অবশ্যই বন্ধুত্বের চাইতেও বেশি। কিন্তু, প্রথম আমার খটকাটা সেদিনই লেগেছিল যেদিন শপিংমলে তিয়ানকে দেখার পরে আপনি অস্থির হয়ে উঠেছিলেন ভেতর ভেতর। প্রথমে তেমন পাত্তা না দিলেও আপনাদের পহেলা ফাল্গুণের ছবিগুলো দেখেই বুঝে গেছিলাম তিয়ান ভালোবাসে আপনাকে। তিয়ানের চোখে আপনার জন্য যে মুগ্ধতা ছিল তা একজন প্রেমিকের মুগ্ধতা তার প্রেয়সীর জন্য। ভালো তো আমিও বেসেছি আপনাকে। এটা বুঝতে পারাটা খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না আমার জন্য। আর বিথির পার্টিতে আপনার সাথে ডান্স করার সময় তিয়ানের চোখে যে রুক্ষতা আমি দেখেছিলাম সেটা ছিল জেলাসি।আপনাকে পাওয়ার জেদ,নেশা। পরে তো সে নিজেই স্বীকার করেছিল সে আপনাকে ভালোবসে। সবার কাছে সেই ভালোবাসার নাম বন্ধুত্ব হলেও তিয়ানের চোখে সেই ভালোবাসার নাম ছিল প্রেম। এরপর বিথিকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি।সে আমায় ভরসা করে সত্যিটাই বলেছিল।
_আপনি সব জেনে বুঝেও বিয়ে করলেন আমাকে? একটুও ঘৃণা হলো না আপনার আমাকে? এভাবে ঠকানোর পরেও কেউ কাউকে এতটা ভালো কি করে বাসতে পারে ক্যাপ্টেন?
বলতে বলতে সিফাতকে আঁকড়ে ধরেই ঝরঝর করে কেঁদে দিল পলক।কিন্তু সিফাত তাকে থামালো না। কাঁদতে দিল। বরং আরও পরম যত্নে বিলি কাটতে লাগলো তার মাথায়। বললো,
_আপনি তো আমাকে ঠকাননি মৃন্ময়ী। তিয়ান আপনাকে প্রেমিকের মত ভালোবাসলেও আপনার চোখে আমি তার জন্য সেই ভালোবাসা দেখিনি। বরং সেখানে আমি প্রতিবারই আমাকে খুঁজে পেতাম। আপনি না বুঝলেও আপনার অনুভূতির শহরে আমার প্রবেশ কিন্তু ঠিকই ঘটে গিয়েছিল মৃন্ময়ী। আর তিয়ান আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে মৃন্ময়ী। তাই আপনার চাওয়াটাকে সম্মান করেই আপনাকে আমার হতে দিয়েছে।আমি নিজেও রেসপেক্ট করি তিয়ানের এই ভালোবাসাকে। আর, আপনি যখন সব ভুলে কেবল আমার হতে প্রস্তুত হয়েছিলেন তাহলে কেন আমি আপনাকে গ্রহণ করতাম না বলুন তো? তাছাড়া কথায় বলে, “প্রেমের মরা জলে ডোবে না। ” তাই নিজেকে ছাড়লেও আপনাকে ছাড়তে পারবো না আমি। আমার আপনাকেই চাই,,,শুধুমাত্র আমার মৃন্ময়ীকেই চাই আমার।
_আপনি এত ভালো কেন? কাঁদতে কাঁদতেই আজ আবারও এই প্রশ্নটা করলো পলক। তা শুনে এবার সজোরেই হেসে দিল সিফাত। তারপর পলককে তুলে চোখ মুছিয়ে দিল তার। আবার বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
_ভালোবাসি যে, মৃন্ময়ী!
চলবে…