#তোমাতে_মাতোয়ারা ১৫তম পর্ব
_আরশিয়া জান্নাত
হাইওয়েতে আপন গতিতে গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশ্যে।ঐন্দ্রিলা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে,তাঁর পরম নির্ভরশীল মানুষটার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নিরবের হাত ঐন্দ্রিলার দুহাত দিয়ে জড়িয়ে রাখা,কান্না শেষে চেহারায় ভর করেছে স্বর্গীয় সৌন্দর্য ।চোখের নীচে লেপ্টে যাওয়া কাজল ,টানা নথটা খুলে গলার কাছে ঝুলে আছে,একটু পরপর তাঁর চোখের পাতা কেঁপে উঠছে,এ সবকিছুই যেন অন্য রকম এক ঐন্দ্রিলাকে আবিষ্কার করতে বাধ্য করছে।
এক সপ্তাহ মানুষের সমাগমে পূর্ণ বাড়িটায় একরাশ শূন্যতা ভর করেছে,একজনের বিদায়েই যেন সবকিছু নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে।ডেকোরেশনের লোকেরা ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে নিয়ে যাচ্ছে।আগামীকাল সবাই যাঁর যার গন্তব্যে রওয়ানা হবে,সকলেই বেশ ক্লান্ত।ইশতিয়াক ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছোটবোনের স্মৃতিচারণে ব্যস্ত।অতি আদরের বোনটা এখন অতিথির ন্যায় দু চার দিনের জন্য বেড়াতে আসবে,চাইলেই যখন তখন চায়ের আবদার করতে পারবেনা।বলতে পারবেনা “যা তো মজার কিছু একটা রেঁধে আন প্রচুর খিদে পেয়েছে” ম্যাসেজের টিউন শুনে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো দিয়ার টেক্সট,
“”মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকবেন না প্লিজ,আমাদের বাড়ির দরজা আপনাদের জন্য সবসময়ই খোলা থাকবে।যখন ইচ্ছে হয় ভাবীকে এসে দেখে যাবেন।সবাইকে সামলানোর পাশাপাশি নিজেকেও সামলে নিন।Take care..”
আকাশপানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইশতিয়াক।
চৈতি ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত।আসবার সময় যতোটা উচ্ছাসিত হয়ে ব্যাগ গুছিয়েছিল যাওয়ার বেলা ততোটাই মন খারাপ লাগছে।বিয়ে বাড়িতে কনে বিদায়ের পরের মুহূর্ত এমন পিনপতন নিরবতা হয় জানা ছিল না তাঁর।এতো মানুষ অথচ সবাই কেমন নেতিয়ে পড়েছে!
ইতু–তোমাকে খুব মিস করবো।অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি এ কদিন,আশা করি ফের দেখা হবে।
চৈতি–ঐন্দ্রিলার বিয়েতে না আসলে জানতে পারতাম না ওর পরিবারের সবাই এতো ভালো।আমার একটিবার ও মনে হয়নি আমি এই প্রথম তোমাদের সবাইকে দেখেছি।আমার জীবনের বেস্ট মেমোরির মধ্যে এটা একটা।তোমাদের সবাইকে খুব মিস করবো আমি।
পুষ্পি–আমি অনেক কিছু মিস করেছি!ওর বিয়েটা কেন যে আমার আগে হলোনা।
চৈতি আনমনে বললো,ঐন্দ্রিলা সবসময় চুপচাপ এক কোণে পড়ে থাকে অথচ দেখ যাওয়ার পর বুঝলাম কতটা জায়গা জুড়ে ছিল!এই বাড়ির সকলের প্রাণভোমরা কি না!
টয়া–নিরব ভাইয়া নিশ্চয়ই আপুকে খুব আগলে রাখবে তাইনা?
তারিন–ইনশাআল্লাহ!
নাঈমা রশিদ বাড়িতে ঢুকেই পুত্রবধূকে বরণ করার জন্য তৈরি হয়ে গেলেন।তারেকরা সবাই বাজি ফুটিয়ে জানান দিলো ঐন্দ্রিলা আর নিরব চলে এসেছে।কেক কেটে নিরবের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো ঐন্দ্রিলা।
তাহজীব সাহেব প্রফুল্ল গলায় বললো,যাক অবশেষে আমার ঘরে আরেকটা জান্নাত এলো।এখন আমি তিন জান্নাতের মালিক!
দিয়া মামণি বৌমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
দিয়া ঐন্দ্রিলাকে নিজের রুমে নিয়ে বললো,ভাবী তুমি এখানে ফ্রেশ হয়ে নাও,তোমাদের রুম সাজানো হচ্ছে।
ঐন্দ্রিলাকে চুপচাপ দেখে দিয়া বললো,ভাবী মন খারাপ লাগছে?চিন্তা করোনা পরশু তো রিসিপশন রিসিপশনের পরেই তোমার বাসায় যাওয়া হবে।
ঐন্দ্রিলা ম্লান করে হেসে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
_______
আকাশে আজ ভরা পূর্ণিমা।ফুলে ফুলে সাজানো ঘরটায় বসে আছে ঐন্দ্রিলা।বিয়ের ভারী সাজ বদলে লাল শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজিয়ে দিয়েছে দিয়া।বেশ কিছুক্ষণ পর তাইয়্যেবা আর দিয়া এলো খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে।টেবিলে সব রেখে চলে গেল তাঁরা।নিরব হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এসে বললো,বিয়ে করা কত্ত প্রেশারের কাজ!একদম সরকারী মেডিক্যাল এর মতো,প্রতিটা ধাপে টাকা !
ঐন্দ্রিলা বোকার মতো নিরবের কথা শুনলো।সরকারী মেডিক্যাল এর সাথে বিয়ের তুলনা!
নিরব ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এসে বললো,বাসায় ফোন করেছিলে?
ঐন্দ্রিলা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।
নিরব হেসে বললো,ভেরি গুড।এবার উঠে এসো ডিনার করে নাও।
ওপস স্যরি!বাসর ঘরে তো আবার কিছু ট্রেডেশন আছে।আচ্ছা আমি কি এখন তোমার ঘোমটা তুলে চেহারা দেখবো?নাকি তুমি উঠে এসে আমাকে সালাম করবে?
ঐন্দ্রিলা নিরবের কথায় হেসে ফেললো।নিরব বললো,হেসোনা।পূর্বপরিচিত হলে এই এক সমস্যা।তখন চাইলেই ফর্মাল আলাপ করা যায় না।
যাই হোক তোমাকে পায়ে ধরে সালাম করতে হবেনা মুখে বললেই চলবে।
ঐন্দ্রিলা সালাম দিলো।নিরব হেসে সালামের উত্তর দিয়ে হাত বাড়িয়ে ঐন্দ্রিলাকে বেড থেকে নামতে বললো।তারপর এক প্লেটে খাবার বেড়ে বললো,হাজবেন্ড ওয়াইফ এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে,আর যদি ওয়াইফকে লোকমা তুলে মুখে দেওয়া হয় প্রতিটি লোকমা সাদকারুপে আমলনামায় যোগ হবে।দেখেছো ঐন্দ্রিলা বিয়েতে কত বেনিফিট!তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও সওয়াব।আহা আমার তো লাভই লাভ ,
বলতে বলতেই ঐন্দ্রিলার গালে লোকমা তুলে দিল।
এরকম নানা কথা বলতে বলতে নিরব ঐন্দ্রিলাকে খাইয়ে দিতে লাগলো,এক পর্যায়ে ঐন্দ্রিলা বললো,শুধু আমাকেই খাওয়াচ্ছেন?আপনি খাবেন না?
–জেনেশুনে আনরোমান্টিক মেয়ে বিয়ে করলে যা হয় আর কি!এতোকিছু বলার পরও বৌ আমার নিজ হাতে লোকমা তুলে দিলো না!এতক্ষণে মনে পড়লো স্বামী বেচারার কথা?
ঐন্দ্রিলা হাত ধুয়ে প্লেট থেকে লোকমা তুলে নিরবকে খাইয়ে দিলো।
–সবসময় আনরোমান্টিক বলে বলে খোঁটা দেবেন না।আপনিই তো কথা বলে যাচ্ছিলেন আর একটার পর একটা লোকমা দিচ্ছিলেন।কথা বলা শুরু করলে অপরজন কিছু বলার জো আছে?
নিরব কিছু একটা বলতে নিলে ঐন্দ্রিলা বললো,হুস আর একটা কথাও না।এবার চুপচাপ খাবার শেষ করুন।
—আমি তোমার মতো চুপচাপ খেতে পারিনা।হয় কথা বলবো নাহয় শুনবো।
–ঠিক আছে আমি কথা বলছি আপনি শুনুন।
নিরব জোরে হেসে বললো,তুমি কথা বলবে?বেশ বেশ বলো।
ঐন্দ্রিলা বলল,কি ভাবেন আপনি আমি কথা বলতে পারিনা?
–না না তা কেন ভাববো?আমি জানিতো তুমি অনেক কথা বলো শুধু কেউ শুনতে পায়না এই আর কি।
ঐন্দ্রিলা নিরবের পিঞ্চকে পাত্তা না দিয়ে খুব যত্ন করে নিরবকে খাইয়ে দিতে লাগলো।খাওয়া শেষ করে নিরব ঐন্দ্রিলার হাত ধরে টেনে বেলকনীতে
নিয়ে গেল।সেখানে পেতে রাখা সিঙেল জাজিমের আসনটায় ঐন্দ্রিলা বসিয়ে বললো,
–ঐন্দ্রিলা জানো আমার খুব ইচ্ছে ছিল ভরা পূর্ণিমাতে বিয়ে করার।কিন্তু আমাদের বিয়েতে চাঁদের হিসেব করে দেখিনি,ভাগ্য দেখো ভরা পূর্ণিমাতেই হয়েছে।
–বিয়ে নিয়ে আপনার ফ্যান্টাসির অভাব ছিল না দেখছি!
— তা আর বলতে?সকালে ভেবেছিলাম আজ বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হবে অনেক ক্লান্ত থাকবো তাই আর বাসর করবোনা,কিন্তু তুমি যেভাবে ঘুমিয়ে নিয়েছ আশা করি প্রবলেম হবেনা।
ঐন্দ্রিলা বিরক্তিতে বলল,আপনার মুখে কিছু আটকায় না !
নিরব ঐন্দ্রিলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল,বৌয়ের সামনে লজ্জা পেলে ফ্যামিলি আর এগোবে না!
ঐন্দ্রিলা নিরবের চুলে বিলি কেটে আপনমনে বললো,আমার ইচ্ছে ছিল বিয়ের প্রথমরাত গল্প করে কাটাবো,গান শোনাবো বরকে।
নিরব উঠে বললো,আরেহ হ্যাঁ ভুলেই তো গিয়েছিলাম আজ তোমার গান শোনানোর কথা ছিল!শোনাবেনা??
ঐন্দ্রিলা নিরবের আঙুলে আঙুল জড়িয়ে গাইতে লাগলো,
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
ভালোবেসে আমি বারে বার
তোমারি ওই মনে হারাবো
এ জীবনে আমি যে তোমার
মরনেও তোমারি রবো
তুমি ভুলোনা আমার নাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম…..
নিরব মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ঐন্দ্রিলার গান শুনলো।মুষ্টিবদ্ধ করা হাতের উল্টোপিঠে অধোর ছুঁইয়ে বলল,অনেক অনেক ভালোবাসি ঐন্দ্রিলা!Thank you so much..
ঐন্দ্রিলা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো।
নিরব ওর লজ্জামাখা মুখে চেয়ে চিবুক তুলে গাইলো,
Mujhe haq hai
Tujhko jee bhar ke main dekhun
Mujhe haq hai
Bas yooh hi dekhta jaaun
Mujhe haq hai
Piya.. piya…
Piya piya bole mere jiya
Tumhein haq hai..
Dhal rahi, pighal rahi
Yeh raat dheere dheere
Badh rahi hai pyaar ki
Baat dheere dheere
Choodiyan gunguna ke kya kahein sanjna
Yeh choodiyan gunguna ke kya kahein sanjna
Raat ki raat jagaaun
Mujhe haq hai
Chand poonan ka churaun
Mujhe haq hai,,,,,,,
গান শেষ করে নিরব বললো আরেহ তোমার গিফট ই তো দেওয়া হলো না।আজ সবকিছু কেমন ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে।কত কি প্ল্যান করেছিলাম জানো?কিন্তু ধাপে ধাপে কিছুই করতে পারছিনা।আগে পিছে এলোমেলো হয়ে গেছে।তুমি ভেতরে গিয়ে বসো আমি আসছি।
ঐন্দ্রিলা ভেতরে গিয়ে রুমের সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলো,নিরব ওর জন্য রুমের ডেকোরেশন বদলেছে শুনেছিল দিয়ার থেকে।বেশ গোছানো রুম,একপাশে ছোট্ট বুকসেলফ রাখা,সেই দেওয়ালে ঐন্দ্রিলার রুমের মতো LED colourful light দিয়ে সাজানো।বেলকনীতে অনেকগুলো ইনডোর প্ল্যান্ট।নিরবের ক্রেস,সার্টিফিকেট,গিটার সব খুটিয়ে দেখল।হঠাৎ একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল ,বীচে বসে ওর ঝিনুক কোড়ানোর ছবি নিরবের কাছে!অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই সে তো সেখান থেকেই ওকে ভালোবেসেছে।আনমনেই হাসলো ঐন্দ্রিলা।
খানিক বাদে নিরব এলো বেশকিছু শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে।
ঐন্দ্রিলার হাতে একটা জার দিয়ে লাইট অফ করে বললো,খুলো।
ঐন্দ্রিলা জার খুলতেই এক ঝাঁক জোনাকি পোকা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো।ঐন্দ্রিলা উচ্ছাসিত গলায় বললো, ওয়াও!!
মুগ্ধ হয়ে টিপটিপ করে জ্বলা আলো দেখতে লাগলো।ধীরে ধীরে জানলা দিয়ে সব চলে যাওয়ার পর নিরব প্রজেক্টর লাইটের পাওয়ার অন করলো।
পুরো সিলিং এ স্টার আর মুন শো করলো যেন এক টুকরো আকাশ তাঁর ঘরে।
বেড এ পড়ে থাকা দামী শাড়ি,গয়নার চেয়ে ঐন্দ্রিলা এসব দেখেই যেন বেশি আনন্দিত হয়েছে।
কপালে ভালোবাসার পরশ পেতেই তাঁর চোখে পানি চলে এলো।নিরব ভ্রু কুঁচকে বললো,এখানে কান্নার কি হলো!তোমার চোখে কি বঙ্গোপসাগরের কানেকশন আছে?একটু মনমতো ভালোবাসলেই ট্যাপ ছেড়ে দাও!
ঐন্দ্রিলা চোখ মুছে বললো,সেসব আপনি বুঝবেন না।
—না বুঝলে বোঝাও।মনে নেই কি বলেছিলাম?
প্রতিটি চোখের পানির হিসেব নেবো।
ঐন্দ্রিলা হেসে নিরবের বুকে মাথা রেখে বললো,
হুম সবকিছুর পই পই করে হিসেব রাখবেন।
নিরব জোরে হেসে ফেললো।
ঐন্দ্রিলা মনে মনে বললো,এই দিনটা আমার মনে সুখ দুঃখের মিশ্রনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।অনেক অনেক শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে।
।
মনোয়ারা বেগম বিছানা হাতড়ে স্বামীকে না পেয়ে বেলকনীর দিকে তাকালেন,রকিং চেয়ারে আবছা অবয়ব দেখে উঠে সেখানে গেলেন।তাঁকে দেখে
ইরফাজ সাহেব বললেন,তুমি উঠলা ক্যান।প্রেশারের ঔষুধ খাইছো না!ঘুমাও গিয়া।
মনোয়ারা স্বামীর কাঁধে হাত রেখে বললেন,চান্নির লাই পরাণ পড়ে?
ইরফাজ কাঁপা গলায় বললেন,মনুরাণী চান্নিপহরের কান্দন ভুলতে পারতেছিনা।চোখ বন্ধ করলেই বারবার মুখটা ভাসে।
–চিন্তা কইরোনা।ও ঠিক আছে,কথা কইছো তো ।এখন ঘুমাইতো চলো কাল আবার হেরা সবাই চইলা যাইবো।
–তুমি যাও আমি একটু পরে আইতাছি।
ইমরান গ্যালারিতে থাকা ঐন্দ্রিলার ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,নাহার আমার রাজকুমারী চলেই গেল অবশেষে!
নাহার বললো,এভাবে বলোনা।আসবে যাবে এভাবেই তো চলবে তাইনা!
—আমার মেয়ে এখন থেকে অতিথির মতো আসবে।একটা সময় সংসার নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে যাবে বছরে একবার ও আসবে না।
—এসব ভেবোনাতো।মেয়েটা তোমাদের কথা ভেবেই এতো কষ্ট পাচ্ছিল।
—ও সুখী হবে তো নাহার?শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতে পারবে?
—ইনশাআল্লাহ পারবে।দোআ করো যেন আমাদের মেয়ে অনেক সুখী হয়।
_______
দিয়া মাথায় পানি ঢেলে শান্ত হবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।বারবার মনে পড়ছে ইশতিয়াকের কথা,বেহায়া মনটা তাঁকে ফোন করার জন্য উতলা হয়ে আছে।কিন্তু সে ফোন করবেনা।অন্যের ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেওয়ার মতো অন্যায় সে করবেনা।নিজেকে বুঝ দিতে বললো,মেসেজ দেখেও যে রিপ্লাই করেনি তাঁকে সেধে ফোন করে নীচু হবি কেন!
আবার ভেতরটা বলছে,নীচু হলেও কি!ভালোবাসার মানুষের সামনে নীচু হলেও কিছু হয়না।
দ্বিধাদন্ডে ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ হয়ে আসছে।ভেতরটা ঢুকরে বলছে ,কেন তাঁর অন্যজন আছে!কি এমন হতো সে আমার হলে??
চার পাঁচটা ঘুমের ট্যাবলেট হাতে নিয়ে যেই না মুখে দিতে যাবে তখনই ইশতিয়াকের মেসেজ এলো,
“”অনেক সময় আমরা যা শুনি তা বর্তমান কিনা জানতে পারিনা।উপর থেকে যাকে বেশ পরিপাটি মনে হয়,তাঁর ভেতরটা কতটা ক্ষতবিক্ষত সে খবর জানেনা কেউ!
তবে একসময় সেই মানুষটা ফের স্বপ্ন দেখে।ভেতরের সব যন্ত্রণা হাওয়ায় ভাসিয়ে নতুন করে সব শুরু করার উৎসাহ পায়।সুযোগ হলে সরাসরি সবটা শোনাবো তোমায়।তবে একটা অনুরোধ সেই অবধি ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিওনা যেন!””
দিয়া বেশ কয়েকবার মেসেজটা পড়লো।কিন্তু কিছুই বুঝলোনা।ট্যাবলেটগুলো ডাস্টবিনে ফেলে ফুরফুরে মনে ঘুমাতে গেল।প্রিয় মানুষটার পাজেল টাইপ টেক্সটেও যে কারো মন এতোটা ভালো হতে পারে জানা ছিল না তাঁর! চোখভেঙে ঘুম চলে আসছে,
ইশতিয়াকের মেসেজ কি ঘুমের ঔষধ??
চলবে,,
(তোমাতে_মাতোয়ারা শেষের দিকে চলে এসেছে,আর দু এক পর্বেই শেষ করে দিবো ইনশাআল্লাহ।গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না।হ্যাপি রিডিং)