#তোমাতে_মাতোয়ারা ১১তম পর্ব

_আরশিয়া জান্নাত

রাতের আকাশে তিনদিনের নতুন চাঁদ উঠেছে।ঐন্দ্রিলা জানলার পাশে বসে আছে,রুমের দেয়ালে LED লাইটের মৃদু আলোতে পরিবারে সবার ছবি দেখা যাচ্ছে।বাতাসে ক্রিস্টেল বার্ড স্টিলের উইন্ডো বেল এ টুংটাং শব্দ করছে,পুরো বিকেল ঘুমিয়ে এখন ঐন্দ্রিলার একটুও ঘুম আসছেনা।ঐন্দ্রিলা রুমটাকে ভালোমতো দেখলো,আজ তাঁর এই রুমে শেষ রাত।এরপর যখন আসবে নিরব তাঁর সঙ্গী হবে।বেলকনীর দরজা খুলে ফ্লোরে বসে পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছে।নিরব অভিমান করে ফোন করেনি,হয়তো ভেবেছে ঐন্দ্রিলা তাকে ফোন করে মান ভাঙাবে।কিন্তু ঐন্দ্রিলা আপন ভুবনে এতোটাই ডুবে গেল নিরবকে ফোন করার কথা মাথায়ই এলোনা।ফোনে এসএমএসের টিউন বাজতেই ঐন্দ্রিলা ফোন হাতে নিলো,
“”কাল দিয়া তোমাদের সাথে যাবে।আমি সকালে ওকে ড্রপ করতে আসবো।””
ঐন্দ্রিলা হেসে কল করলো নিরবকে,সে ভালো করেই জানে নিরব অভিমানে ফোন করছেনা কিন্তু কথা না বলে ঘুমাতেও পারছেনা।মেসেজটা জাস্ট একটা বাহানা ছিল।
___________________

সকালে সবাই ব্রেকফাস্ট করেই ব্যাগপত্র সব গাড়িতে তোলা শুরু করলো।ইশতিয়াক এখুনি ছুটি নেয়নি,সে আরো ক’দিন পর যাবে।ইমরান ড্রাইভারকে ভালোমতো পৌছে দেওয়ার কথা বলে নাহারকে বললেন,শোনো দিয়া যাচ্ছে,ওকে দেখেশুনে রেখো কোনো অযত্ন করোনা।আমি দুইদিন আগেই ইশতিয়াককে নিয়ে চলে আসবো।কোনোকিছু বাকি থাকলে ফোনে বলে দিও।
—আহা এতো টেনশন করোনা তো।তুমি টাইমলি মেডিসিন নিও,আর ওদেরকে এড্রেসটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিও।

চৈতি এসেই বললো,হ্যালো গাইজ আমি এসে গেছি।
ঐন্দ্রিলা চৈতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,ভালো হয়েছে তুই এসেছিস।রাকিবরা কেউ আসেনি?
চৈতি– ওরা পুষ্পির সাথে হলুদের দিন আসবে।বিয়ে হয়ে গেলে এই এক সমস্যা,বেচারি এখনই আসতে পারছেনা।
ঐন্দ্রিলা মন খারাপ করে বললো,পুষ্পিকে মিস করবো।
চৈতি–আমি আসছি আমার কদর নাই!
নাহার–তুই এসেছিস আমি অনেক খুবি হয়েছি।কিরে দিয়া কোথায় এখনো আসেনি যে?ইশতিয়াক নিরবকে ফোন করতো।
ইশতিয়াক ফোন করবার আগেই দিয়া আর নিরব এসে হাজির।
ইতু–এবার দারুণ মজা হবে,আমরা সবাই একসঙ্গে দৌলতপুর কাঁপিয়ে ফেলবো।
ইশতিয়াক—যাই করিস বাড়ির বাইরে যাবিনা বেশি।গ্রামের মানুষ যেন কথা শোনানোর সুযোগ না পায়।
টয়া–ওহো ভাইয়া আমরা অতোটাও অবুঝ না।
নাহার–দেখি সবাই এবার গাড়িতে উঠো।নিরব তুমি ভেতরে চলো একটু কিছু খেয়ে নাও?
নিরব— না না আন্টি আমি খেয়েই এসেছি,ব্যস্ত হবেন না।
নাহার–তোমরা সাবধানে চলে এসো,ইশতিয়াক আর তোমার আঙ্কেল পরে যাবে,প্রয়োজনে ওদের সাথে করে চলে এসো।
সবাই গাড়িতে উঠার পর ঐন্দ্রিলা নিরবের শার্টের তিন নম্বর বোতাম লাগিয়ে বলল,এতোগুলো বোতাম খুলে সবাইকে দেখানোর মানে কি?
ওখানে কিন্তু ভুলেও এই সাদা শার্ট পড়বেন না।
নিরব মাথা চুলকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো,ঐন্দ্রিলা গাড়িতে উঠে ঝাপসা চোখে ব্যাক গ্লাসে নিরবের দিকে চেয়ে রইলো,”ইশ এতো কষ্ট কেন লাগছে?”
দিয়া ইশতিয়াকের দিকে চেয়ে ফ্লাইং কিস দিতেই ইশতিয়াক কাশতে শুরু করলো,দিয়া হাসতে হাসতে গাড়িটা অনেক দূর চলে গেল।

ইতু–শোনো সবাই ওখানে গিয়ে আমাদের ফাস্ট কাজ হবে নাচের প্র্যাকটিস করা,সবাইকে নাচতে হবে।কোনো বাহানা শুনবোনা।
টয়া–সেটা তো হবেই।আমি ভাবছি একটা গ্রুপ ডান্স ও দিবো কোন গানটা সিলেক্ট করা যায়?
তারিন–সেটা ঠিক করার দায়িত্ব আমার।দিয়া তুমি কিছু বলছো না যে?
দিয়া–হলুদ ফাংশন একসঙ্গে হবে?একসঙ্গে না হলে আমি কি করবো!
ইতু–সেটাও তো কথা।আচ্ছা দেখি কি হয়।তবে এখন তো অনেক বিয়েতেই দু পক্ষের একসঙ্গে হয়।
চৈতি–হ্যাঁ যেহেতু সবকিছু দৌলতপুর হচ্ছে হলুদ ও হয়তো একসঙ্গে হবে।
এরকম দুনিয়ার গল্পতে পাঁচ মেয়ে মেতে রইলো,ঐন্দ্রিলা বরাবরের মতো কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো।তবে এবার তাঁর মিউজিক লিস্টে কেবল নিরবের গান,,,,,,

সকাল থেকেই মনোয়ারা বেগমে মনে কু ডাকছে।তিনি ফজরের নামায পড়ে জায়নামাজ ছেড়ে উঠেননি।ইশরাকের নামায পড়ে কোরআন শরীফ পড়লেন,তাও মন শান্ত হচ্ছেনা।ইরফাজ সাহেব এসে বললেন,কিগো মনুরাণী আজ কি জায়নামাজ ছাইড়া উঠবানা?কি হইছে তোমার?
মনোয়ারা বেগম থমথমে গলায় বললো,ওরা কি রওয়ানা দিছে?ফোন করছিলা?
ইরফাজ সাহেব মনোয়ারার গলা শুনে বললেন,মনু তোমার মন কু গাইতাছে?
–হু
–আরেহ এসব ভাইবো না তো।যা ভাববা তাই হইবো।আল্লাহর হাওলা।ওরা সবাই সহীহ সালামতভাবে আইবো ইনশাআল্লাহ।
–বড় বৌমা তোমার বাপেরে নাস্তা দাও।তুমি গিয়া বও আমি নফল নামায পইড়া আইতাছি।
ইরফাজ সাহেব মুখে সান্ত্বনা দিলেও মনে মনে তিনিও ভয় পাচ্ছেন।মনোয়ারা বেগমের সিক্সথ সেন্স খুব প্রখর।তাঁর মনের কু ডাক অবহেলা করার সাহস ইরফাজের নেই,এর আগে যতোবার বলেছে ততোবারই ফলেছে।
“”ইয়া আল্লাহ বিপদাপদ থেইকা রক্ষা করো”

তিন ঘন্টা জার্নি করার পর ঐন্দ্রিলাদের গাড়ি একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে বিরতিতে থামে।সবাই হালকা নাস্তা করতে গাড়ি থেকে নামলো।ঐন্দ্রিলা আড়মোড়া ভেঙে গাড়ি থেকে নামে।
চৈতি–ওয়াও দোস্ত জায়গাটা তো বেশ সুন্দর,আমার কত্তদিনের শখ এমন হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার।বাঁধন থাকলে সেই হতো।
দিয়া–আমি আছি না।আমি তুলে দিচ্ছি ছবি তুমি গিয়ে দাঁড়াও
টয়া–হ্যাঁ রাস্তায় গাড়িও তেমন নেই তুমি গিয়ে দাঁড়াও দুই মিনিটে ছবি তুলে চলে আসবা।
চৈতি ভালোমতো তাকিয়ে দেখলো একটা দুটো ছাড়া তেমন কোনো গাড়ি নেই।এতোদিনের সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ করার এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর হয়না।
চৈতি আর দিয়া ছবি তোলার জন্য হাইওয়ের ওদিকে গেল,ঐন্দ্রিলা তখন দূর্বাঘাসের উপর বসে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।ওরা দুজন ছবি তুলতে তুলতে রাস্তার মাঝখানে চলে গেল,উল্টোপথে দ্রুতগামী মাইক্রো দেখে ঐন্দ্রিলা উঠে গিয়ে ওদের ডেকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসলো।ধমকের সুরে বললো,চৈতি তুই ও না একদম বেশি,হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবি ভালো কথা তাই বলে এমন মাঝরাস্তায় চলে যাবি?হাইওয়েতে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি কত জোরে চলে জানিস?দিয়া তুমিও ওর সাথে পাগল হলে??
ওরা দুজন মাথা নীচু করে ঐন্দ্রিলার বকা হজম করতে লাগলো,আসলেই দুজনের একদম হুশ ছিল না ছবি তোলায় এতোটা মগ্ন হয়ে গেছিল এসব কথা মনেই ছিলনা।
এমন সময় হঠাৎ ঐন্দ্রিলার চিৎকারে তাঁরা মাথা তুলে দেখে ঐন্দ্রিলা পিচ ঢালা পথটায় ছিটকে পড়ে গেছে,,,
দিয়া আর চৈতি খুব জোরে ঐন্দ্রিলা বলে চিৎকার দিলো।গাড়ির বিকট ক্র্যাশের আওয়াজে বাকি সবাই দৌড়ে এলো।কিছু দূরে বিলবোর্ডের খুঁটিতে গাড়িটা ধাক্কা খেয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে গেছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ বুঝতেই পারলোনা কি ঘটলো এখানে,ঐন্দ্রিলার রক্তাক্ত মুখ দেখে নাহার চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।ঐন্দ্রিলার ছোট মামা চটজলদি এম্বুলেন্সে ফোন করলো,এলাকার মানুষ পুলিশকে খবর দিয়ে গাড়িতে থাকা মানুষটাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে,সবাই মিলে ধরে ঐন্দ্রিলাকে তুলে বেঞ্চিতে শুইয়ে দিলো।হাতে বেশ খানিকটা জায়গায় ছিলে গেছে,কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।ঐন্দ্রিলার চোখমুখে পানি ছিটানোর পরও সেন্স ফিরলোনা।সবাই টেনশনে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।
এম্বুলেন্সে করে ঐন্দ্রিলাকে হসপিটালে নেওয়া হলো।ঐন্দ্রিলার ছোট মামা পলাশ ড্রাইভারদের বললো সবাইকে দৌলতপুর নিয়ে যেতে।মাঝরাস্তায় এতো মানুষ আটকে পড়লে ঠিক হবেনা।
নাহারের হুশ ফিরতেই ঐন্দ্রিলাকে না দেখে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন,আমার ঐন্দ্রিলা কই?তোরা ঐন্দ্রিলাকে কোথায় পাঠিয়েছিস।পলাশ ঐন্দ্রিলা কই?আমার মেয়ে বেঁচে আছে তো?
সাদ–ফুপী শান্ত হও ঐন্দ্রিলা আপুর কিছু হয়নাই,ও ঠিক আছে।ওকে হসপিটাল নিয়ে গেছে।
নাহার–তোরা মিথ্যে বলছিস?আমাকে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে চল।
নাহারের কান্নাকাটিতে আকাশবাতাস যেন ভারী হয়ে উঠলো।
সাদ তাঁর দুই ফুপীকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে গেল,বাকি সবাই বাধ্য হয়ে দৌলতপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।চৈতির কান্নাই থামছেনা,এই সব কিছুর জন্য সে নিজেকে দোষী ভেবে কেঁদেই চলেছে।আজ যদি ঐন্দ্রিলার কিছু হয়ে যায় সে কখনওই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।
দিয়া ভেবেই পাচ্ছেনা রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এই এক্সিডেন্টটা হলো।
_________
ইরফাজ সাহেব হাঁক ছেড়ে বললেন ,মনুরাণী উইঠা আসো ওদের গাড়ি আইসা পড়ছে।এখন তো শান্ত হও।কইরে তোরা সবাই এদিকে আয়।
সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গাড়ি থামতেই একে একে সবাই বের হলো,সকলের ভারাক্রান্ত মুখ দেখে ইরফাজ সাহেবের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো,জিজ্ঞাসু চোখে বারবার ঐন্দ্রিলাকে খুঁজে চলেছে যতক্ষণ না ঐন্দ্রিলাকে দেখবেন তাঁর মন শান্ত হবেনা।
মনোয়ারা বেগম বাইরে এসে ধরা গলায় বললো,চান্নিপহর কই?আমার চান্নিপহর কই, ছোট বৌমা ও ছোট বৌমা।চান্নিপহর কই বেয়াইন?
সকলের থমথমে মুখ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না খারাপ কিছুই ঘটেছে,ও ইসহাকের বাপ আমি কইছিলাম না আমার মন কু ডাকতাছে।দেখছোনি হেরা সবাই কেমনে চুপ কইরা আছে।ওগোরে কও মুখ খুলতে।
নূরজাহান এগিয়ে এসে মনোয়ারা বেগমকে ধরে বললো,বেয়াইন শান্ত হোন।নানুভাইয়ের কিচ্ছু হইবোনা,আল্লাহ ওরে সুস্থ কইরা দিবো।
—সুস্থ কইরা দিবো মানে কি হইছে আমার চান্নির??
–ঐন্দ্রিলার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
মনোয়ারা বেগম সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
মনোয়ারা বেগমকে ভেতরে নিয়ে ইরফাজ সাহেব গম্ভীর গলায় বললো,বড় বৌমা মেহমানদেরকে ভেতরে নিয়ে যাও।
তারপর পলাশকে ফোন করে হসপিটালের নাম জিজ্ঞাসা করে বড় ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।

নিরব সেই কখন থেকে ঐন্দ্রিলাকে ফোন করছে কিন্তু ফোন রিসিভ হবার নামই নেই।দিয়াকে কয়েকবার ফোন করার পর দিয়া ফোন রিসিভ করলো।
—কখন থেকে কল করছি কল রিসিভ করছিস না কেন?
—ভাইয়া ওয়াশরুমে ছিলাম।
—ঐন্দ্রিলা কোথায়? সে নিশ্চয়ই ফোনটা রেখে বাগানে চলে গেছে?পৌঁছে একবার ফোন করবিনা?ঠিকঠাক গেছিস তো রাস্তায় কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
দিয়া বুঝে পেল না নিরবকে বলবে নাকি বলবেনা।
—ভাইয়া আমি একটু বিজি আছি পরে ফোন করছি।আর শোনো আমরা ঠিকঠাক পৌঁছেছি চিন্তা করোনা।
পুলিশ এসে বললো,সেই কারের মালিক কবির আহমেদ স্পট ডেথ,কার চেক করে বোঝা গেছে গাড়িটার ব্রেক ফেইল করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিল,আনফরচুনেটলি মিস ঐন্দ্রিলার দিকে এসে এক্সিডেন্টটা হয়। যেহেতু যে ড্রাইভ করছিল সে মৃত এখানে কেইস ফাইল করার মানে হয়না।যাই হোক আমরা দোআ করি মিস ঐন্দ্রিলা সুস্থ হয়ে উঠুক।
পলাশ–আপা দুলাভাইকে কি ফোন করবো?
নাহার–আমি কিচ্ছু জানিনা।ডাক্তার কি বলে আমার ঐন্দ্রিলা কেমন আছে?
এমন সময় নার্স এসে বললো,মিস ঐন্দ্রিলার লোক কোথায়?
পলাশ–হ্যাঁ বলুন।ঐন্দ্রিলা কেমন আছে?
–টেনশনের কোনো কারণ নেই।একটু পর উনার সেন্স ফিরবে আপনারা চাইলে তাঁকে নিয়ে যেতে পারবেন।
—আলহামদুলিল্লাহ।

ইরফাজ সাহেব এসে নাতনির শিয়রে বসে রইলেন,
ঐন্দ্রিলা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাঁর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।
ইরফাজ সাহেব ঐন্দ্রিলার হাসি দেখে কেঁদে ফেললেন।ঐন্দ্রিলা হাত বাড়িয়ে আস্তে করে বললো,দাদাই কেঁদো না আমি ঠিক আছি।
ইরফাজ–আল্লাহর কাছে লাখ শোকর আমার দাদুভাইয়ের কিছু হয়নাই।ছোটবৌমা এদিকে আসো দেখো আমার নাতনী কতো স্ট্রং,মরার মুখ থেইকা বাঁইচা ফিইরা কেমন হাসে!
।।
গাড়ি থেকে নেমে ধীর গতিতে দাদাইয়ের হাত ধরে ধরে ঐন্দ্রিলা বাড়ির ভেতরে ঢুকলো,কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ করা।
সবাই ঐন্দ্রিলাকে সুস্থ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,কত বড় এক বিপদ এসেছিল আজ,আল্লাহ বাঁচাইছে।
–মনুরাণী উঠো দেখো তোমার চান্নিপহর আইছে।
মনোয়ারা বেগম উঠে ঐন্দ্রিলাকে ধরে কান্না করে দিলো।সে তো ধরেই নিয়েছিল নাতনীকে আর দেখবেন না।
ইরফাজ–তোর দাদী সকাল থেইকা যেমনে আল্লাহর দরবারে পইড়া আছিল,সেই দোআ ঢাল হয়ে তোরে বাঁচাইছে বুবু।
ঐন্দ্রিলা দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললো,তোমাদের দোআ যতদিন আমার মাথার উপর আছে আল্লাহ ঠিকই আমার রক্ষা করবেন।
চৈতি এসে কাঁদো গলায় বললো–আমি আর জীবনেও ছবি তুলবোনা।আল্লাহরে আল্লাহ কত্ত বড় বিপদ গেছে।
ঐন্দ্রিলা–এসব বলে তো লাভ হবেনা, আমার বিয়েতে উড়াধুরা সেলফি তুলতে হবে না?
মনোয়ারা–আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন,এখন এসব বাদ দাও।কত কাম পইড়া আছে এক হপ্তাহ বাকি নাই বিয়ার।দেখি যাই শোকরানার নামাযটা পড়ি আগে।

ঐন্দ্রিলা রুমে গিয়ে শুতেই দিয়া এসে বললো,ভাবী ভাইয়াকে আমি ভয়ে কিছু বলিনাই।তুমি ফোন করে কথা বলবে একবার?
ঐন্দ্রিলা–ভালো করেছ বলোনাই।নাহয় সে দৌড়ে চলে আসতো।
—ভাবী তুমি ঠিক আছো তো অনেক ব্যথা পেয়েছ তাইনা?
–আরে না আমি একদম ঠিক আছি।দিয়া কিছু খেয়েছ?এই প্রথম আমার দাদাবাড়ি এলে অথচ ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারিনি।
–তুমিও না ভাবী কত পর ভাবো!তোমার বড় মা না খাইয়ে রেখেছে?জোর করে সবাইকে খাবার খাইয়েছে।আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি যাই।
ঐন্দ্রিলা চোখ বন্ধ করে সেই মুহূর্তের কথা ভাবতে লাগলো,চোখ মেলে যে আবার সবাইকে দেখতে পারবে কল্পনাই করেনি সে।অন্তিমকালে সকলের হাসিমুখটাই ভেসে উঠেছিল মস্তিষ্কে।বারবার মনে হচ্ছিল সবাইকে বলে দিতে,”নিরবকে কেউ খবর দিও না যেন।সে শুনলে পাগল হয়ে যাবে,,,,”

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here