সারারাত না ঘুমিয়ে ভোরেই ব্যাগ গোছানো শুরু করলো ঐন্দ্রিলা।এই প্রথম সে ফ্যামিলি ছাড়া ট্যুরে যাবে সেই খুশিতে একটুও ঘুম হয়নি তাঁর।সকাল সাতটার ট্রেনে তাঁরা চিটাগং যাবে ওখান থেকে কক্সবাজার।সমুদ্রতটে পা ভেজাবে ভাবতেই কি দারুণ লাগছে তাঁর!
ঐন্দ্রিলার মা নাহার মেয়ের ব্যাগে ড্রাই ফুড আর স্ন্যাকস রাখতে রাখতে বললেন,পানি দেখে আত্মহারা হয়ে যাস না কিন্তু।বেশি ঝাপাঝাপির দরকার নেই।গ্রুপের সাথেই থাকবি,একা একা ঝাউবনে যাবিনা।
:আহা মা আমি এখন টুয়েন্টি ওয়ান।এখনো বাচ্চাদের মতো ট্রিট করছো?আমি জানিতো কি কি করা উচিত।টেনশন নিওনা তো।
:সন্তান বুড়ো হয়ে গেলেও মা বাবার কাছে ছোট্ট খুকিই থাকে।আর মেয়েদের বেলা টেনশন একটু বেশিই থাকে।যতোই বল মডার্ন হয়েছে সবকিছু নিউজ দেখলে আত্মায় প্রাণ থাকেনা।রোজ ধর্ষণ গুম তো চলছেই,,
“আহা নাহার অলুক্ষণে কথা ছাড়ো তো।মেয়েটা এই প্রথম ট্যুরে যাচ্ছে কোথায় আল্লাহর হাওলা করে বিদায় দিবে তা না!
শোনো মামণি নিজের সেইফটি নিজেকেই মেইনটেইন করতে হবে।আশা করি আমার মেয়ে এটা খুব ভালোভাবেই করতে পারবে।তবুও মায়ের কথাগুলো মাথায় রেখো কেমন?”
পাশ থেকে বললেন ঐন্দ্রিলার বাবা ইমরান সাহেব।
ঐন্দ্রিলাকে ট্রেনে তুলে দিতে তাঁর ভাই ইশতিয়াক তাঁকে নিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।পথিমধ্যে কক্সবাজারের কিছু স্পটের বিশেষ আইটেমগুলোর নাম বলতে ভুললো না।ইশতিয়াক খুব ভোজনরসিক,তাঁর hobby হচ্ছে বিখ্যাত জায়গার খাবার টেস্ট করা এই পর্যন্ত সে বাংলাদেশের ষোলোটা জেলায় ঘোরার সুযোগ পেয়েছে।তাঁকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় এরমধ্যে সবচেয়ে পছন্দের ডিশ কোন টা সে শত চেষ্টা করেও বলতে পারবেনা।তাঁর ভাষ্যমতে প্রতিটি কোনো না কোনো দিকে বেস্ট।একটাকে স্পেসিফিক করে বলা মানে অন্যগুলোকে হেয় করা।
স্টেশনে এসে দেখলো ঐন্দ্রিলার ফ্রেন্ড দিয়া,চৈতি,বাঁধন,পুষ্পি,রাকিব অলরেডি চলে এসেছে।কিন্তু গ্রুপের বাকি মেম্বাররা এখনো আসেনি।
চৈতি:কিরে দোস্ত আমরা কি এক্সাইটমেন্টে আগে আগে চলে আসছি নাকি গ্রুপের গাইড-ম্যানেজার কেউই তো এখনো এলোনা?
রাকিবঃ দাঁড়া কল করে দেখি।
কল করবার আগেই “ইচ্ছেঘুড়ি” ট্যুর গ্রুপের বাকি মেম্বাররা চলে এসেছে।
সবাই হৈচৈ করে ট্রেনে উঠে পড়লো।ইশতিয়াক পানির বোতল আর চাটনী কিনে দিয়ে বললো,বাসে উঠলে একটু কেয়ারফুল থাকিস কিন্তু।বাঁধন আর রাকিব তোরা কিন্তু ওদের দেখে রাখবি।
রাকিবঃ ডোন্ট ওরি ভাইয়া আমরা আছিতো আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন।
ইশতিয়াক ম্যানেজার নাদিম কে খেয়াল রাখতে বলে নেমে গেল।
ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো ।

গাইড পিয়াস গলা ঝেড়ে বললো,
এটেনশন প্লিজ।”ইচ্ছেঘুড়ি” ট্যুর গ্রুপের জার্নিতে সবাইকে স্বাগতম।আপনারা সবাই জানেন আমরা প্রথমে চেয়েছিলাম বাসে করে চিটাগং যেতে,কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত কিছু কারণে সেটা সম্ভব হয়নি তাই আমরা ট্রেনে যাচ্ছি।তাছাড়া ট্রেনজার্নিটা বেশ রোমাঞ্চকর এবং আরামদায়ক।এনিওয়ে আমি পিয়াস আপনাদের গাইড হিসেবে সঙ্গে আছি,আমার এসিসটেন্ট হিমাদ্রি, আর আমাদের গ্রুপ ম্যানেজার নাদিম।আপনাদের যেকোনো সমস্যায় আমাদের তিনজনকে পাবেন হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে।প্রথমেই বলে রাখছি এখান থেকে আমরা সবাই চিটাগং যাবো সেখানে খাওয়া দাওয়া করে বাসে করে কক্সবাজার যাবো।কক্সবাজার পৌঁছাতে আমাদের রাত হয়ে যাবে।তাই আজ বীচে যাওয়া সম্ভব হবেনা।সবাই এই লং জার্নি শেষে আজকের রাতটা ঘুমিয়ে কাটাবো।তবে হ্যাঁ আগামীকাল ভোরে আমরা সানরাইজ দেখবো ইনশাআল্লাহ।
আপনারা সবাই সবার জিনিসপত্র কেয়ারফুলি রাখবেন,একে অপরের সহযোগিতা করবেন।যেহেতু আমরা চারদিনের ট্যুরে আছি তাই সবাই একটা ফ্যামিলির মতো থাকবো।হ্যাপি জার্নি।

বিশজন মেম্বার নিয়ে ছুটে চললো “ইচ্ছেঘুড়ি”,,,

ঐন্দ্রিলা কানে ইয়ারফোন গুজে জানলার বাইরেই প্রকৃতি দেখতে লাগলো।চৈতিরা সবাই গল্পগুজবে ব্যস্ত।কিছুক্ষণ পর চৈতির ধাক্কায় ইয়ারফোন খুলতেই চৈতি বললো,কানে ইয়ারফোন না গুজে লাইভ গান শোন।
ঐন্দ্রিলা খেয়াল করে দেখলো সামনে এক ছেলে টুংটাং করে গিটারে সুর তুলছে।সবাই তাঁরদিকে ফোকাসড।
তখন পাশ থেকে পুষ্পি বললো,শুনেছি উনি নাকি খুব ভালো গান গায়।আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র।
নাম সাহিল ইবনান নিরব।দারুণ মেধাবী ছাত্র ক্যাম্পাসের জাতীয় ক্রাশ।
রাকিবঃতুই এত খবর জানিস কি করে?
চৈতিঃ পুষ্পির আর কাজ কি সব হ্যান্ডসাম ছেলের খবর ওর কাছে থাকে।
পুষ্পি রেখে বললোঃতোরাও না যা তা।ইনি আমার বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড।উনার দিকে আমি ভুলেও ওরকম নজর দেইনি।যা এটিটিউড!
ঐন্দ্রিলা তাঁর গান না শুনে ইয়ারফোনে হাই ভলিউমে গান ছেড়ে দিলো।যাঁকে সবাই মাথায় তুলে রাখে ঐন্দ্রিলা তাঁদের কে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলে।ওর ধারণা এমন মানুষের অহঙ্কার বেশি থাকে,দাম পেতে পেতে এদের এটিটিউড বেড়ে যায়।
দুপুর তিনটায় তাঁরা চিটাগং স্টেশনে এসে পৌছালো।ট্রেন থেকে নেমে সবাই লাঞ্চ সেরে নিলো।তারপর বাস ধরে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।চিটাগং শহরটা খুব সুন্দর।ঢাকা থেকে যাঁরা প্রথমবার এখানে আসবে তাঁদের চোখ একেবারে ধাঁধিয়ে যাবে।চারদিকে সবুজ গাছপালা,আর পাহাড়ের পর পাহাড়।প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভুমি এই বাংলাদেশটাকে যতো দেখি ততোই যেন মুগ্ধ হই।পুরোটা সময় অন্যরকম ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিল সে।
হোটেল লাবণী তে চৈতি ,পুষ্পি,দিয়া আর ঐন্দ্রিলা এক রুমে উঠলো।প্রতি চারজনের জন্য একটি করে রুম।কেউ যদি একা থাকতে চায় তবে আলাদা পেমেন্ট করে থাকতে পারবে।চৈতিরা সবাই ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লো।ঐন্দ্রিলা বেলকনীতে গিয়ে রাতের সমুদ্রটা দেখার চেষ্টা করলো।ঢেউয়ের আছড়ে পড়া গর্জন স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে।ঐন্দ্রিলার খুব ইচ্ছে রাতের বেলা বীচে হাঁটার।কিন্তু সাহসে দিলোনা।অচেনা জায়গায় এটা রিস্কি তো বটে!
দুধের স্বাদ গোলে মেটাতে বেলকনীতেই শুয়ে পড়লো।চোখ বন্ধ করে শুনতে লাগলো শো শো করা বাতাস আর সাগরের গর্জন।
তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো খেয়াল নেই তাঁর।রাত নয়টায় দিয়ার ডাকে ঘুম ভেঙে নীচে গেল ডিনার করতে।
নাদিমঃতোমরা এই গ্রুপের সবচেয়ে জুনিয়র মেম্বার।আশা করছি এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি?
রাকিবঃ না ভাইয়া কোনো সমস্যা হয়নি।
তারপর ওরা সবাই ডিনার করে যাঁর যাঁর রুমে চলে গেল।

ভোর পাঁচটায় ফজর নামায পড়েই ঐন্দ্রিলা আর পুষ্পি সূর্যোদয় দেখতে নীচে নামলো।গ্রুপের মাত্র সাতজন এতো ভোরে উঠেছে।বাকিরা সব ঘুমে মত্ত।ওরা লাবণী পয়েন্টে গিয়ে বীচে দাঁড়িয়ে রক্তিম সূর্যোদয় দেখলো।আকাশটা হালকা লাল আভায় ছেয়ে গিয়ে কি সুন্দর লাল টকটকে সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে।সাগরের নীচ থেকে যেন উদয় হচ্ছে তাঁর! বাতাস আর সাগরের ঢেউয়ের শব্দে মনে হচ্ছে প্রকৃতির একদম নিকটে তাঁরা!
সূর্যের মৃদু আলো ছড়াতেই ঐন্দ্রিলা দু”চোখ বুঁজে ফেললো,যেন মিষ্টি রোদ পুরোটা সে মুখে মেখে নিতে চাইছে।
ঠিক তখনই নিরবের দৃষ্টি পড়লো রক্তিম রশ্মিতে মুগ্ধতায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে।খুশির ঝিলিক তাঁর পুরো মুখে ছড়িয়ে গেছে,চোখের পাতাগুলিও যেন আনন্দে হালকা কাঁপছে।কপালে ছড়িয়ে থাকা এলোচুলগুলো মৃদু বাতাসে হালকা উড়ছে,মায়াবী মুখের মিষ্টি মেয়েটা কখন চোখ খুলবে সেই প্রতীক্ষায় যেন চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে সে!
ঐন্দ্রিলা চোখ মেলতেই নিরবের ধ্যান ভাঙলো।চটজলদি অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলো।পুষ্পি আর ঐন্দ্রিলা ততক্ষণে জুতোজোড়া খুলে নরম বালিতে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে।নিরব দূর থেকে মায়াবিনীকে দেখে গেল পুরোটা সময়।
সকলে ঘুম থেকে উঠার পর সারাদিনের প্ল্যান তৈরি করা হলো,আজ হিমছড়ি আর ইনানী বীচ যাওয়া হবে।কক্সবাজার থেকে 12 কি.মি. দূরে হিমছড়ি,হিমছড়ি থেকে 8/10 কি.মি দূরে ইনানী বীচ।হিমছড়িতে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বিশাল জলরাশি দেখা স্বর্গীয় দৃশ্য।
মোট কথা কক্সবাজার থেকে 22কি.মি এর মধ্যে দুটো আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান দেখা হবে আজকে।
ব্রেকফাস্ট করে সবাই কলাতলী থেকে জিপ ভাড়া করে রওয়ানা হলো।
ইনানীতে গিয়ে হিমাদ্রি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো,
গার্লস এখানে আজ কেউ পানিতে নামবে না।এখানে রেড সিগন্যাল দেওয়া অর্থাৎ ভাটা চলছে।ভাটার সময় পানিতে নামলে তলিয়ে যাবে।আমাদের ব্যাড লাক আমরা এতো সুন্দর জলরাশিতে আজ ভিজতে পারবোনা।সমস্যা নেই আমরা মেইন বীচে নিশ্চয়ই সুযোগ পাবো।
দিয়া মন খারাপ করে বললো,ধুর আমাদের বেলা সবকিছুতে বাঁধা পড়ে ভাল্লাগেনা।আমি আরো এক্সট্রা কাপড় এনেছি ভিজবো ভেবে!
চৈতি:থাক মন খারাপ করিস না,সবে তো এসেছি।

দুপুরে সবাই শুটকি ভর্তা,রুপচাদা মাছের ফ্রাই দিয়ে ভাত খেলো।ঐন্দ্রিলা এক্সট্রা করে ছুরি মাছও নিলো।ইশতিয়াক বলেছে ছুরি শুটকি সবসময় খেয়েছিস ওখানে গেলে মাছটা অবশ্যই টেস্ট করবি।সারাদিন অনেক মজায় কেটেছে।বাঁধন খুব ভালো ফটোগ্রাফার,প্রতিটি ফ্রেন্ড সার্কেলে একজন ফটোগ্রাফার থাকে।বাঁধন হচ্ছে সেইজন।
এভাবে একেকদিন একেক জায়গায় ঘুরে দিন কাটলো তাঁদের।বীচে বসে বালির প্রাসাদ বানানো,কখনো বা বালিতে নাম লেখা, ঢেউয়ের সাথে দৌড়ে প্রতিযোগিতা করা,পানিতে পা ভিজিয়ে হেঁটে চলা,ঝিনুক কুড়ানো! সবমিলিয়ে অসাধারণ সময় কাটলো তাঁদের।কক্সবাজার এসে তাঁর এতো ভালো লেগেছে যে সে ঠিক করেছে আবার নিশ্চয়ই আসবে।
ঢাকায় ব্যাক করবার আগেরদিন সবাই বার্মিজ মার্কেটে গেল।ঐন্দ্রিলা টুকটাক কেনাকাটা করলো।ঝিনুকের কলমদানি,কাঠের তৈরি আয়না,আচার। রাতে বীচে ফায়ারক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হলো।হিমাদ্রি ,নিতু,নাদিম,দিপু মিলে বারবিকিউ করছে।
ফায়ারক্যাম্পের সামনে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, ঐন্দ্রিলা খানিকটা দূরে বাঁধনের সাথে দাঁড়িয়ে রাতের সমুদ্র দেখছে।যাক তাঁর এই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়ে গেল!
কিছুক্ষণ পর নিরব গাইতে শুরু করলো,

হঠাৎ এসেছিলে চোখের আলোতে

হারিয়ে ফেলেছি এক ঝলকে

তবুও তুমি ছিলে চোখের কোণে

আগলে রেখেছি বড় যতনে

ভালোবেসেছি তোমাকে প্রথম

চোখের আলোতে এসেছ যখন

ছিলে হৃদয় জুড়ে প্রতিক্ষণে

ভালবাসা তো হয়না মনের বিপরীতে।

বাসায় ফিরে ঐন্দ্রিলা সেই চারদিনের সব ঘটনা ডায়েরিতে লিখে রাখলো।তাঁর জীবনের বেস্ট পার্ট টা চিটাগং এ কেঁটেছে।কক্সবাজারের গল্প আগ্রহভরে নাহারকে কয়েক দফা শুনিয়ে ফেলেছে।
“জানোনা মা যখন ঢেউ আছড়ে কিনারায় পড়বে এতো সুন্দর লাগে!ঝিনুকগুলো এতো সুন্দর ইচ্ছে করে সব
নিয়ে আসি!!”
ঐদিকে নিরব ঢাকায় ফেরার পর থেকেই অশান্তিতে আছে।ঐন্দ্রিলার কথা মাথা থেকে সরাতেই পারছেনা, তাঁর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে গেছ যেন!বারবার শুধু তাঁর মুখ চোখে ভাসছে।মেয়েটা নজরকাড়া সুন্দরী নয়,তবে অপূর্ব দেখতে।হালকা শ্যামবর্ণের মায়াবতী!
বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো বেশ ঘন,পিঠ গড়িয়ে রেশমি কালো চুল,হাসলে ঠোঁটের বা’পাশটায় কি সুন্দর টোল পড়ে! কথা খুব একটা বলে না তবে যখন বলে মনে হয় মুক্তো ঝরছে।অল্প কথায় যে কাউকে আকৃষ্ট করার দারুণ ক্ষমতা আছে তাঁর।
কোনো এক মহৎ ব্যক্তি ঠিকই বলেছেন,শ্যাম বর্ণের মেয়েরা হচ্ছে বর্ণচোরা।এদের সৌন্দর্য একেক সময় একেক রকম হয়। এ ক’দিনে ঐন্দ্রিলাকে সে যতো দেখেছে ততোই মুগ্ধ হয়েছে।মেয়েটার মাঝে স্পেশাল কিছু তো অবশ্যই আছে না হয় নিরবকে ঘায়েল করা এতো সহজ? ক্যাম্পাসের হার্টথ্রোভ নিরবের আগেপিছে কত মেয়ে রূপসী ঘুরে।কই কারো দিকে তো মনটা এভাবে থমকে যায়নি!
না এভাবে বসে থেকে লাভ হবেনা,ঐন্দ্রিলাকে মনের কথাটা জানাতে হবে।কিন্তু এতে যদি ও ছোট হয়ে যায়?ঐন্দ্রিলা যদি রিজেক্ট করে দেয় পেস্টিজ থাকবেনা একটুও।এরকম যদি -ময় চিন্তায় ছটফট করেই রাতটা গেল তাঁর।

ঐন্দ্রিলা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই চৈতি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,দোস্ত তুই এতক্ষণে আসছোস।তাড়াতাড়ি চল নিরব ভাই তোকে খুঁজতেছে।
ঐন্দ্রিলা অবাক হয়ে বললো,কোন নিরব ভাই? আর আমাকে কি দরকার?
:আরেহ ভুইলা গেলি পুষ্পি যে বলছিল?আমাদের সাথে ট্যুরে ছিল যে,
:ওহ!
ঐন্দ্রিলা ভেবে পায় না এই লোকের ওর সাথে কি কানেকশন।কেনই বা ওর খোঁজ করছে!ক্যাম্পাসের সিনিয়ার ভাই মানেই উটকো ভেজাল।কখন কোন ফরমায়েশ দিয়ে বসে আল্লাহ জানে।উফ সকালে যে কার মুখ দেখে উঠেছি!!
ঐন্দ্রিলা গিয়ে দাঁড়াতেই নিরবের ফ্রেন্ড ফরহাদ(পুষ্পির ভাই) বললো,কিরে তোরা এখানে কিছু বলবি?
চৈতি:নিরব ভাইয়া ঐন্দ্রিলাকে খুঁজছিল তাই…
ফরহাদ:ওহ।নিরব কেন ডেকেছিস ওদের?
নিরব ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে বললো,শুনেছি ঐন্দ্রিলা খুব ভালো গান গায়।ওর অডিশন নিতে ডেকেছি।
ঐন্দ্রিলা:আমি তো গান গাইতে পারি না।সেখানে অডিশন দেওয়ার কথা আসবে কেন?
চৈতি:কি বলোস দোস্ত তোর গানের গলা তো দারুণ কলেজ ফাংশনে সবসময় তোর ডাক…..(ঐন্দ্রিলা জোরে চিমটি কেটে চৈতিকে চুপ করালো)
নিরব সেটা দেখেও না দেখার ভান করে বললো,আমি কারো পারমিশন বা অপিনিয়ন জিজ্ঞাসা করিনি,অর্ডার করেছি। নেক্সট মান্থে আমাদের ভার্সিটিতে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হবে।সেখানে মিউজিক সেক্টরের দায়িত্বে আমি আছি।সো আমি ডিসাইড করবো কে কে পার্টিসিপেট করবে।
ঐন্দ্রিলা রেগে চৈতির দিকে তাকালো।চৈতি মেকি হাসি দিয়ে বললো,ভাইয়া আমাদের ইমপরট্যান্ট ক্লাস আছে যাই এখন?
নিরব:হুম যাও।এন্ড লিসেন ক্লাস শেষে অডিশন দিতে ভুলো না(ঐন্দ্রিলার দিকে চেয়ে বললো)।
ওরা চলে যাওয়ার পর ফরহাদ বললো,তোর টিমে তো অনেক সিঙ্গার আছে।সবসময় ওরাই তো সব সামলায়।তো অন্য কারো অডিশন নিতে হচ্ছে কেন?
:সবসময় তো আমরাই করি,নতুনদের সুযোগ দিতে হবেনা?
নিরব বাঁকা হাসি দিয়ে মনে মনে বললো,থ্যাঙ্কস টু চৈতি।সকালে ও গানের কথা না বললে জানতেই পারতাম না আমার মায়াবিনী গান ও গাইতে পারে,আর তাঁর রাগী লুকটাও দেখা হতোনা।এবার দেখবে সাহিল ইবনান নিরব কি কি করে।Get ready My love!

চলবে,

#তোমাতে_মাতোয়ারা

_আরশিয়া জান্নাত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here