#হলদে_চিঠির_প্রেম
#পর্ব_০৩
#রিয়াদ_আহম্মদ_ভূঁঞা
বাহারি সব খাবারে টেবিল সাজানো হয়েছে। খাসি, গরু আর মুরগির গোশতের তরকারির বাটিগুলো যেনো উপচে পড়ছে। রান্না করা হয়েছে মাছ, সবজি ও ডালও। আরে বাহ্! পায়েসও আছে দেখছি! আমার বেশ পছন্দের খাবার এটা। তবে সব ছেড়ে নজর কেড়েছে টেবিলের ঠিক মাঝখানে রাখা বালিশ মিষ্টিগুলো। আহা! নেত্রকোনার গয়নাথ ঘোষের ছানা, ময়দা আর চিনি উপাদানের অনবদ্য সৃষ্টিতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টির জগৎ জুড়ে খ্যাতি রয়েছে। এর নাম শুনলেই যেখানে আমার জিভে পানি চলে আসে সেখানে তো এখন সামনেই রাখা আছে। জিভের পানি সামলাতে পারছি না আর। সাদিক সাহেবকে বললাম,
– আরে বাহ্! বালিশ মিষ্টি দেখছি! কি করে আনা হলো এতদূর থেকে?
তিনি একগাল হেসে বললেন,
– হাঁড়িতে করে আনা হয়েছে। অনেকদিন হয় নেত্রকোনায় যাওয়া হয়না। আর গেলে বালিশ মিষ্টি না খেয়ে আসা হয়না। খুব পছন্দ করি আমি। আমাদের পরিবারের সবার কাছেই এই মিষ্টি খুব পছন্দের। তো বসে না থেকে শুরু করা যাক নাকি।
সাদিক সাহেব খাবার শুরু করতে তাগিদ দিলেন। উনিও বসেছেন। আপাতত মনে হচ্ছে না আর কেউ বসবে বলে। তথাপি বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে জিজ্ঞেস করলাম,
– আমরাই কেবল, আর কেউ কি বসবেন না?
– না। ওরা আরো পরে খাবে। নাস্তা করেছে এসে। তুমি শুরু করতে পারো।
হাসের গোশতের কথা বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এতো গুলো প্রিয় খাবার একসাথে সামনে থাকায় কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবো বুঝে উঠতে পারছি না আসলে। অনেকেই হাসের গোশত খেতে পারেন না কারণ, এর তরকারিতে একটা আলাদা গন্ধ থেকে যায় যা সকলে সহ্য করতে পারেন না। তবে, সেভাবে রান্না করা গেলে এর জবাব নেই। অসাধারণ স্বাদ। আমার মা খুব ভালো রান্না করতে পারেন এটা। বাড়িতে আমাদের পরিবারে কেবল আমিই হাসের গোশত খেতে পছন্দ করি। এতোসব মুখরোচক খাবারের গন্ধে যেনো হুঁশ নেই। অবস্থা এমন, খাবারের শুরুতে পড়ার যে দোয়া মসজিদের ইমাম সাহেবের থেকে শিখেছিলাম সেটা পড়তেও ভুলে গেছি। খাওয়ার মাঝে কিছুক্ষণ পর পর আঙ্গুল আর হাতের তালু চেটেপুটে খেতে হচ্ছে অতিরিক্ত মসলা ও ঝোলের কারণে। সাদিক সাহেব বিষয়টা লক্ষ্য করলেন। বললেন,
– রান্না কেমন হয়েছে?
আমি মুরগির রানে কামড় বসাচ্ছিলাম তখন। খাবার মাঝে কথা বলা পছন্দ করি না। প্রশ্নের জবাব দিতে তড়িঘড়ি করে চিবিয়ে মুখগহ্বর কিছুটা খালি করে নিয়ে বললাম,
– লা জওয়াব! দারুণ হয়েছে।
– বলেছিলাম না তোমাকে আমার মায়ের রান্নার হাতের কোন জবাব ছিলো না।
উনার কথায় কিছুটা অবাক হলাম। বললাম,
– আপনার মায়ের হাতের রান্না বলতে!
– মা আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু আমার বড় মেয়ে তো আছে। সে সবকিছু শিখেছে তার দাদির কাছ থেকে। বলতে পারো, আমার বড় মেয়ের হাতের রান্নাই আমার মায়ের হাতের রান্না। বুঝেছ।
আমি মুচকি হাসলাম। তারপর খাবারে মনযোগ দিলাম। ভোজনরসিক মানুষ আমি। নিজের লিখালিখির বাইরে ঘুম আর খাওয়া আমার বেশ পছন্দের। এসবে বিঘ্ন ঘটলে দিনদুনিয়া যেনো ওলট-পালট মনে হয়। খাচ্ছি তো খাচ্ছি। খেয়েই চলেছি। অমনি মনে পড়লো। ইমাম সাহেব তো বিকল্প আরো একটি দোয়ার কথা বলেছিলেন, খেতে বসে দোয়া ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ্’ পড়তে ভুলে গেলে খাবার মাঝে যখনি স্বরণ হবে তখনি ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ’ পড়ে নিতে। বিড়বিড় করে সেটা পড়ে নিলাম এবার। এতক্ষণে মনে হলো খাবারে যেনো পূর্ণতা পেলো!
ততক্ষণে পেট ভরে গেছে। সবশেষ বালিশ মিষ্টি খেয়ে ভোজের সমাপ্তি টানলাম। খাওয়ার মাঝে সাদিক সাহেব আমাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন সেটা বুঝতে পারছি। উনি একবারের বেশী ভাত নেন নি। তরকারিও দেখছি আমি যা নিয়েছি তাই খালি আছে। উনার আঙুলগুলোয় মশলা ঝোলের ছাপ নেই বললেই চলে। ডাইনিংয়ে পিনপতন নিরবতা তখন। এমন সময় সাদিক সাহেব জগ থেকে গ্লাসে পানি নিলেন। কলকল শব্দে নিরবতা ভেঙে গেলো। পানি পান শেষে আমার ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিলেন তিনি। বলতে লাগলেন,
– আমার বাবা খুব মিশুক মানুষ ছিলেন। উনি মেহমানের খুব কদর করতেন। বলতেন, মেহমান হলো মেজবানের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে রহমত স্বরূপ। বাড়িতে কখনো মেহমান আসলে নাকি নারাজ হতে নেই। এমনকি কোনোরকম নারাজি প্রকাশও করতে নেই। সারাবছর আমাদের ঘরে মেহমানের আসা-যাওয়া লেগেই থাকতো। দেখেছি, এসবে বাবা কোনদিন নারাজ হন নি। আনন্দের সাথেই মেহমানদারি করেছেন। আমাদেরকেও সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। আল্লাহর কৃপায় এখন আমার যথেষ্ট অর্থ সম্পদ রয়েছে। যদিও এর সিংহভাগই পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। আজ পর্যন্ত কম মেহমানদারি করি নি। তবে তোমার মতো কাউকে এতো যত্নসহকারে খাবার খেতে দেখি নি আমি। এটা সত্যিই আমাকে বিস্মিত করেছে।
সাদিক সাহেব স্পষ্টভাষী মানুষ। আমি কি ভাববো না ভাববো তা তিনি আমলে না নিয়ে অকপটে কথাগুলো বলে দিয়েছেন। তবে ভালো লেগেছে আমার। বললাম,
– আমাকে আমার মা শিখিয়েছেন এভাবে খেতে। তিনি সবসময় আমাকে বলেন, যেখানেই যাবি খাবার খেতে বসে লজ্জা পাবি না। খাবার নষ্ট করবি না। অপচয় করবি না। আল্লাহর দেয়া রিজিককে সম্মান দিবি। তবেই বরকত হবে।
তিনি আমার কথাগুলো শুনে হাসলেন। বললেন,
– হ্যা, তোমার মা ঠিকই বলেছেন।
এমন সময় ভেতরের কক্ষ থেকে চিৎকার চেচামেচি ভেসে আসলো। আমি প্রথমে আঁতকে উঠলাম। পরক্ষণেই তায়েফের কণ্ঠে, ‘আমার ছক্কা উঠেছে, আমার ছক্কা উঠেছে’ শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে ওরা লুডু খেলতে বসেছে। আমিও খেলতাম ছোটবেলায়। খেলায় প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে কাঁচা গুটি পাকা বানিয়ে ফেলতাম নিমিষেই। টেরও পেতো না কেউ। আর পেলেও ঝগড়া লেগে সব গুটি এলোমেলো করে দিতাম ভোঁদৌড়। চুরিতে পারদর্শী হওয়ায় খুব কম মানুষই আমাকে হারাতে পারতো। এক কথায় লুডু খেলায় ওস্তাদ ছিলাম। চোরও বটে।
সাদিক সাহেব ওদের কক্ষের দিকে উঠে যেতে চাইলেন। আমি থামিয়ে দিলাম। বললাম,
– আমাকে একটু বেরুতে হবে।
– চলে যাবে। আরেকটু বসে যাও না হয়।
আর কিছু বললাম না। মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলাম উনার কথায়। বললেন,
– তুমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসো। আমি এদিকটা দেখে আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে।
– জ্বী আচ্ছা।
ফিরে গেলাম ড্রয়িংরুমে। সোফায় বসে আছি। মনে শান্তি নেই। নিদারুণ অস্বস্তি কাজ করছে। এ যেনো এক মধুর বেদনা। হলদে পাখিকেই খুজছিলো চোখ দুটো। কিন্ত তাকে দেখবো কিভাবে। পাবো কোথায়। সে তো দেখা দিচ্ছে না নিজে থেকে। এখনো তার নামটিও পর্যন্ত বলে নি। মেঝের দিকে তাকিয়ে ভাবছি এসব। এমন সময় কেউ একজন তড়িঘড়ি করে ড্রয়িংরুমের দিকে মুখ করে থাকা ডাইনিং রুমের জানালাটি আটকে দিলো। সেই শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। তাকালাম সেদিকে। কাপড়ের অংশ বিশেষ ঝুলে আছে জানালার নিচের দিকে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আটকে গেছে মনে হলো।
উঠে দাঁড়ালাম আমি। হ্যা, ঠিকই ভেবেছি। কেউ জানালাটা ফাঁক করতে চাইছে। পরিহিতার টানে কাপড়টা নড়ছে। কিন্তু নিতে পারছে না। কিছু একটায় গেঁথে গেছে হয়তো। যেই হোক সে খুব সতর্ক আমাকে নিয়ে। জানে এখানে বসে আছি। তাই কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁক রেখেই কাপড়টা ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে। আমিও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, যাই হয়ে যাক, নড়ছি না আজ। মিনিট দুয়েক কেটে গেলো এভাবে। এখন খুব জোড়ালো ভাবেই টানছে। ছিঁড়েই ফেলবে যেনো। এগিয়ে গেলাম আমি। কাঠের উপরিভাগে সুচের মতো লোহার অংশ বিশেষে সুতো পেঁচিয়ে আঁটকে গেছে। জানি না ওপাশে কে। নিচু স্বরে বললাম,
– টানবেন না। ছিঁড়ে যাবে। দাঁড়ান ছাড়িয়ে দিচ্ছি।
টান থেমে গেলো। কিন্তু কোন কথা বললো না। কাপড়টি ছাড়িয়ে দিলাম। কাছ থেকে দেখে মনে হয়েছে ওড়না ছিলো এটা। লাল রঙের ওড়না।
সোফায় বসে অপেক্ষা করছিলাম সাদিক সাহেবের জন্য। তিনি আসলেন। যেহেতু মেহমান হিসেবেই আছি তাই আর উনার আসাতে উঠে দাঁড়ালাম না এবার। উনি বসলেন। তারপর এক টুকরো সুপারি মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বললেন,
– তা তোমার বাবা কি করেন বললে না তো।
– উনি ব্যবসা করেন।
– পরিবারে আর কে কে আছেন?
– মা আর একটা ছোটবোন।
– ছোট পরিবার।
– জ্বী।
– বিয়ে-শাদির বিষয়ে ভেবেছ?
– না। এসব নিয়ে এখনো ভাবি নি।
– কি বলো! আমি তো তোমার মতো বয়সে এক মেয়ের বাবা হয়ে গিয়েছিলাম। হা! হা!
এবার উনি একটু উচ্চস্বরেই হাসলেন। লজ্জা পেলাম খুব। বিয়ে-শাদি নিয়ে এভাবে কেউ কথা বললে চোখে চোখ রাখতে পারি না। নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝতে পেরেছেন আমি লজ্জাবোধ করছি। বললেন,
– যাক তোমার সময় নষ্ট করব না আর। যখনি সময় পাবে চলে এসো। ভালো লাগবে আমার।
আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম,
– জ্বী আচ্ছা। এখন আসি তাহলে।
– এসো।
কক্ষে গিয়ে পাঞ্জাবিটা বদলে নিলাম। বেড়িয়ে গেলাম আবার। ফিরলাম সেই রাতে। এগারোটার দিকে। দরজা খুলে বাল্ব জ্বালাতেই মেঝেতে চোখে পড়লো ভাজ করা একটি হলদে রঙের কাগজ। এটা অনেকটা ভেতরের দিকে রেখে গেছে। হয়তো কাঠি বা অন্যকিছু একটার সাহায্যে ঠেলে রাখা হয়েছে। হাতে নিলাম কাগজটা। টেবিলের উপর রেখে দিলাম। আগে হাতমুখ ধুয়ে নিতে হবে। তাড়া নেই কোন।
বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম এবার। চশমাটা পরে নিলাম। আবছা দেখাচ্ছে। ওহ্ ধুলো লেগে আছে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীটাকে পরনের গেঞ্জির অংশ বিশেষ পরিয়ে আলতোভাবে ঘষে নিলাম কাঁচগুলো। তারপর বসিয়ে দিলাম নাকের উপর। হ্যা, এখন স্পষ্ট দেখাচ্ছে সব। কাগজটি নিয়ে ভাজগুলো খুললাম এবার। লিখাগুলো দেখে মনে হলো তাড়াহুড়ো করে লিখেছে। পড়তে লাগলাম,
‘এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয়! আরো আগে ফিরলেই তো পারেন। আর দেরি করে ফিরবেন না এভাবে। জানেন, আজ খুব ভালো লাগছে আমার। কেন ভালো লাগছে জানেন। ভালো লাগছে কারণ, আজ আপনাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে পেরেছি। সত্যি, কতো ভালো লাগছে লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। আর হ্যা, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি তখন এগিয়ে না এলে ওড়নাটা হয়তো ছিঁড়েই যেতো। এটা খুব পছন্দের একটা ওড়না আমার। বাবা কিনে দিয়েছিলেন। শুনুন, আপনাকে ছাদে যাওয়ার দাওয়াত দিচ্ছি। যাবেন কিন্ত একবার সময় করে। ঘুরে-ঘুরে দেখবেন সবকিছু। আর তারপর, তারপর আমাকে বড় করে একটা চিঠি লিখবেন। এখন ঘুমান। দেখবেন আবার চশমা পরেই ঘুমিয়ে যান না যেনো। শুভরাত্রি।
ইতি
হলদে পাখি’
উনি আমার সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সেটাও খুব নিখুঁতভাবে। বিষয়টি বিস্মিয়ের সৃষ্টি করছিলো মনে। চিঠিটা ভাজ করে বালিশের নিচে রেখে দিয়ে উঠে বসলাম। টেবিলটা খাটের সাথে লাগোয়া হওয়ায় বিছানায় বসেই চিঠি লিখতে শুরু করলাম। লিখলাম,
‘হলদে পাখি,
আপনার রান্নার হাত বেশ ভালো। শেষবার বাড়িতে মায়ের হাতের রান্নায় এভাবে পেটভরে খেয়েছিলাম। বলতে লজ্জার কিছু নেই, আপনার রান্না এতোই ভালো হয়েছিল যে সত্যিই আমি অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। রাতে খেতে পারি ďনি আর। পেট ভরে আছে। হ্যা, ছাদে যাব একবার। শুধু একবার নয়, বহুবার যাবো। এটা টানছে আমাকে। সেখানে কারোর পদচারণা রয়েছে খুব। যেকারণে আমাকে টানছে। যাবো আমি। কিছু মনে করবেন না। আপনার নামটা জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারছি না। জানাবেন যদি ইচ্ছে হয়। উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।
ইতি
সীমাহীন গগন’
রাতে বৃষ্টি হলো খুব। ফজরেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিলো। সাথে ধমকা বাতাস। আজ আজান শুনতে পাই নি। তবে ঘুম ভেঙে গেছে ঠিকই। আমার ছাতা নেই। কিনি নি। এতদিন প্রয়োজন হয় নি। মসজিদে আর যাওয়া হলো না। ঘরেই নামাজ পড়ে সাহিত্য চর্চা শুরু করে দিলাম। অভাগা আমি। অভাগা কারণ, এতো বড় হয়েছি অথচ দেখে দেখে কোরআন পড়তে জানি না। যে কয়টা সূরা কালাম শিখেছি সব মুখস্থ। একারণে মায়ের বকুনি শুনেছি অনেক। এখনো শুনি। ছোটবেলায় আমাকে মক্তবে পাঠাতো আর আমি পালিয়ে আসতাম। পালিয়ে আসতাম হুজুরের মারের ভয়ে। তবে এখানে মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে শেখার ইরাদা করেছি। শেখা হয়ে গেলে ফজরের পর রোজ সূরা ইয়াসিন পড়বো যেমনটি আমার মা পড়েন।
বিল্ডিংটি পূর্ব মুখো। সকালের সূর্য উঠলেই বেলকনিতে এসে রোদ পড়ে। তবে, গত দেড় মাসে খুব কম দিনই সেসময়টাতে আমি বাসায় থেকেছি। আজ বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় আট টার দিকে রোদ উঠলো। বেলকনিতে গেলাম আমি। বাসার সামনের দিকটায় অনেক পানি জমে আছে। মনে হচ্ছে যেনো ছোটখাটো একটি পুকুর। এমন সময় সাদিক সাহেব সেখানে পৌছুলেন। কোমরে গামছা বাঁধা। হাতে বালতি। আমাকে দেখে বললেন,
– পানি সেঁচতে হবে। নয়তো ভিজে ভিজে সবাইকে জায়গাটা পার হতে হবে।
আমি এমনিই সৌজন্যতার খাতিরে বললাম,
– আমি কি আসবো আপনাকে সাহায্য করতে?
উনি মুখের উপর বলে দিলেন,
– তাহলে তো খুব ভালো হয়। চলে এসো।
লুঙ্গি পরে নেমে গেলাম নিচে। হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। এরইমধ্যে তিনি আরেকটি বালতি নিয়ে এলেন। পানি সেঁচতে লাগলাম আমরা। হঠাৎ কানে ভেসে আসলো তায়েফের কণ্ঠে, ‘বাবা, আমিও আসবো কি?’
ছাদের দিক থেকে আসলো আওয়াজটা। আমি তাকালাম সেদিকে। তায়েফের মুখ চেপে ধরে আছে একজন। ওর কন্ঠরোধ করতে চাইছে। চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের। দেখে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এ আমি কি দেখছি; মানুষ নাকি পরী!
——–চলবে——-
#গল্পটি একইসাথে বিভিন্ন গ্রুপেও পোস্ট করা হয়। পরবর্তী পর্বগুলো সহজেই পেতে আমার আইডি ফলো অথবা ফ্রেন্ড করে রাখতে পারেন।