#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_১৯

দিনের আলোর সমাপ্তি ঘটে আফীফের জন্য শুরু হয়েছে আরেকটি বিষন্নতার সন্ধ্যা।সামী,মৌ সবাই আমানের রুমে আড্ডার আসর জমাতে ব্যস্ত তখনি রুমে প্রবেশ করে আফীফ।তাকে দেখে বসা অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আমান।
– আরে ভাইয়া তুমি আমার রুমে?
– দেখতে এলাম তোরা কি করিস।

আফীফ কথা শেষ করেই সামীর পাশে বসে পড়ে।সামীর দিকে তাকিয়ে মিহি হাসে আফীফ।তার প্রত্যুত্তরে সামীও হাসলো।
– এখানে দিন কাল কেমন কাটছে সামী?
– খুব ভালো ভাইয়া।চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের সবাইকে মিস করবো।
– আমরাও তোমায় মিস করবো।তোমাকে কিছু প্রশ্ন করি আই মিন আমার তোমার পরিবার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে।তুমি কি আমায় প্রশ্ন গুলোর উওর দিয়ে সাহায্য করবে?
– অবশ্যই ভাইয়া বলো কি জানতে চাও।
– না তেমন কিছু না পরিবারের মাঝে তোমার প্রিয় ব্যক্তি কে?
– বাবা-মা,ফুফি, আপুনি সবাই আমার প্রিয় তাদের ছাড়া আমার আর কে বা আছে।
– তোমাদের পরিবারে সবচেয়ে রাগী সদস্য কে?
– আমার পাপা!
– কেন তোমার আপুনি না?
– সেহেরিশ আপু তো রাগারাগি করে না।সারাদিন প্রফুল্ল থাকে।মাঝে মাঝে রাগে তবে আবার ঠিক হয়ে যায়।তবে যানো সেদিন…

সামী থেমে যায় তার মুখটা কেমন চুপসে গেছে।আফীফ তার চুপসে যাওয়া ভাবটা ধরতে পেরে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
– সেদিন কি হয়েছিল সামী?
– পাপা যখন বিডিতে আসার কথা বললো তখন আপুনি হঠাৎ রেগে যায়।পাপার সাথে মিস বিহেভ করে। কিন্তু আপুনি এর আগে কখনো এমন করে নি।সেদিনের কান্ডে আমরা সবাই অবাক হয়েছিলাম।সে কিছুতেই গ্রামে আসবে না।যদিও ফুফির কথায় রাজি হয়ে আসলো তখন অনন্তপুর থেকে কিছুতেই এই গ্রামে আসবে না।

সামীর কথায় আফীফ বেশ ভালো করেই সেহেরিশের সম্পর্কে উপলব্ধি করেছে।

‘প্রসঙ্গ যখন বারুদ আফীফ দেওয়ান,সেহেরিশ তখন আগুন হয়ে দাউদাউ করে জ্বলে উঠে।’
এই আগুন আর বারুদ এক সঙ্গে থাকলে নির্ঘাত
বিষ্ফোরণ হবে।একদিকে সেহেরিশের বিরোধ ভাব অনুভূতি অন্যদিকে আফীফের হৃদয়ের অব্যক্ত ভালোবাসা কি করে প্রকাশ করবে সে!
যদি বিষ্ফোরণ থেকে আফীফের হৃদজমিনে ভালোবাসা নেমে আসে তবে বিষ্ফোরণি হোক!

___

আজ দুপুরের পর মেয়েকে দু-চোখে না দেখে মনটা খচখচ করছে খুরশীদ আনওয়ারের।ফাহমিদাকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে মেয়ে রুমেই আছে।তাই তিনি সেহেরিশকে দেখার উদ্দেশ্য তার রুমে পা বাড়ায়।

লালাটুকটুকে শাড়িটি এখনো সেহেরিশের গায়ে।গায়ে কম্বোল জড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে।তার পাশে তুন্দ্র এবং কেইন অপরাধী মুখ করে বসে আছে।
– আ’ম সরি সেহেরিশ।শাড়ি পড়া নিয়ে তোর উপর জোরাজোরি করা আমার মোটেও উচিত হয়নি।
– আহ্ তুন্দ্র এবার আমার ভীষণ রাগ লাগছে কতবার বলেছি নিজেকে অপরাধী বলবি না।আমি তো রেডি হয়ে ছিলাম মাঝ থেকে কি হয়ে গেলো নিজেও জানি না।।
– কিন্তু সবটা তো আমার কারনেই হয়ছে।

তুন্দ্রের কথায় পাত্তা দিলো না কেইন বরং সেহেরিশের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
– তুন্দ্র তুই চুপ থাক।সেহেরিশ তুই তখন হাতে এই ভাবে বারি দিলি কেন?তুই জানিস আঙ্কেল আন্টি জানলে আজ রক্ষে থাকবে না।
সেহেরিশ থতমত মুখ করে তাকিয়ে আছে অন্যদিকে।এই মূহুর্তে কি বলবে সে?মিথ্যা প্রশ্ন সাজিয়ে সোজাসাপটা বলতে থাকে,

– আসলে এত চুড়ি ধীরে ধীরে খুলতে অসহ্য লাগছে তাই আছাড় মেরে ভেঙ্গে দিয়েছি।
– বোকার মতো কথা বলবি না।হাতে যে এতটা কেটেছে কষ্টটা এবার সহ্য কর।

– কার হাত কেটেছে?

দরজার পাশ থেকে খুরশীদ আনওয়ারের কথায় লাফিয়ে উঠে তুন্দ্র এবং কেইন।সেহেরিশ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে।
– কি রে তোরা এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
– আ..আঙ্কেল ভেতরে আসুন।আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম।
খুরশীদ রুমে প্রবেশ করেই সেহেরিশের দিকে চোখ বুলায়।মেয়েটির কান্নারত ফোলা নাক মুখ চোখ দেখে তিনি বুঝেই যান কিছু একটা চলছে এই তিনজনের মাঝে।
– কি রে আম্মু তুই এইভাবে বসে আছিস কেন?
– কিছু না পাপা।হঠাৎ আমার খোঁজে কোন জরুরি কথা আছে নাকি?
– না তোকে দেখতে এলাম।

মুরশীদ মেয়ের পাশে বসেন।হাত বাড়িয়ে সেহেরিশের কপালে হাত রাখতেই ভ্রু যুগল কুচকে নেয়।
– তোর গায়ে তো জ্বর।আমাদের বলিসনি কেন?
– আমি মেডিসিন নিয়েছি পাপা।সমস্যা নেই।বলছিলাম কি আর কয়দিন থাকবো এখানে চলো না ফিরে যাই আমরা।
সেহেরিশের কথায় তাল মেলালো কেইন।
– ইয়েস আঙ্কেল সেহেরিশ ঠিক বলছে।ডিসেম্বর শেষ হয়ে এলো আমার ক্রিসমাস আছে।আমাকে তো মাস্ট ফিরতে হবে।
– শুনেছি রমিজ মিয়া দুই সাপ্তাহ পর আসছে।মানে কি বুঝতে পারছো বাবা, কাটায় কাটায় ৩ তারিখে তিনি আসছেন তখনি আমাদের আলাপ-আলোচনা শুরু হবে।তোমার অনুষ্ঠান পচিঁশ তারিখ।কিছু না মনে করলে একটা কথা বলি।তুমি থেকে যাও বাবা।সেদিন বরং তোমরা ঢাকায় চলে যাবে ঘুরবে ফিরবে দিনটি উর্যাপন করবে দিনটি।

মুরশীদের কথায় সহমত জানালো কেইন।মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করে নিজের রুমে ফিরে যান খুরশীদ আনওয়ার।তার বাবা হাতের ব্যান্ডিজ না দেখায় সেহেরিশ যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।

রাতের খাওয়ারে সেহেরিশ আর নিচে নামলো না।ক্লান্ত শরীর নিয়েই ঘুমিয়ে গেলো।কেইন যাওয়ার আগে সেহেরিশের দরজা ভিড়িয়ে চলে যায় আর সেহেরিশ মগ্ন গভীর ঘুমে।দরজা খোলা পেয়ে সেহেরিশের রুমে ঢুকে যায় অজ্ঞাত কোন ব্যাক্তি।পিলপিল পায়ে এগিয়ে এসে থমকে দাঁড়ায় বিছানার সামনে নিয়ন বাতির আলোয় সেহেরিশের মায়াবী মুখ মন্ডল তাকে অন্যরকম ঘোরে টানছে।
– ইসস কি যে মায়া এই মুখে সহযে আকৃষ্ট করে।আই নিউ ইউ সেহেরিশ।তবে সম্মুখে তোমায় চাইবার বহিঃপ্রকাশ আমি করতে পারবো না।যা করবো সব আড়ালে।আমি অপেক্ষায়!

অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রাত তিনটার কাছাকাছি।আফীফ আজ দু-চোখের পাতা কিছুতেই এক করতে পারেনি।আহনাফ দেওয়ান তাকে খুব অল্প সময় দিয়েছে সেহেরিশকে মানাতে কিন্তু কি করে করবে সে।গায়ের চাদরটা জড়িয়ে আফীফ নিঃশব্দে সেহেরিশের রুমে প্রবেশ করে।ড্রিম লাইটের আলো চারিদিকে স্তব্ধ নিরিবিলি পরিবেশে কোথাও যেন ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ।আফীফ সর্তক হয় চারিদিকে আবারো চোখ বুলায় ফিফফিসে আওয়াজের উৎস খুঁজতে গিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।

রাতে হঠাৎ ঘুম কেটে যাওয়ায় ঘুমন্ত জুহিকে ফোন করে বসে সেহেরিশ।শুরু হয়ে যায় দুজনের ফুসুরফাসুর।কম্বোলের নিচে গুটিসুটি মেরে কথা বলছিল সেহেরিশ।হঠাৎ ঘাড়ের কাছে কারো তপ্ত শ্বাসে নড়ে সে।তড়াক করে পেছনে ঘুরে তাকাতেই কম্বোলের নিচে আফীফকে দেখে লাফিয়ে উঠে।তাকে বসতে দেখে আফীফ দ্রুত সেহেরিশের ফোন হাতে নিয়ে নেয়।মোবাইল চেক করতেই আফীফ বুঝতে পারে এটি ফাহমিদার ফোন।সেহেরিশের ফোন তখন আফীফ নিজেই ভেঙ্গেছিল।
– এই আমার ফোন দিন অসভ্যতার লিমিট ক্রস করছেন আপনি।
ভিডিও কলে জুহি অন্ধকারের মাঝে কিছুই বুঝতে পারছে না।আফীফ তড়িৎ গতিতে রুমের লাইট অন করতেই সেহেরিশকে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়।সেহেরিশ নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত কম্বোল গায়ে জড়িয়ে নেয়।আফীফ চোখ বন্ধ করে ছোট্ট করে শ্বাস ছাড়ে।

“আরে হচ্ছে টা কি?এই যে আপনি কে”

ভিডিও কলে জুহির প্রশ্নে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে আফীফ।
– হেই মাই শালিকা।
– শালিকা?
– ইয়েস তোমার জিজু হই।সেহেরিশ তোমার ফ্রেন্ড আমার হবু বউ খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করছি।

আফীফের বেল্লিক কথায় রেগে যায় সেহেরিশ।
– কি হচ্ছে কি আপনি এইসব কি বলছেন।একদম উলটা পালটা কথা বলবেন না।

আফীফ সেহেরিশের কথায় পাত্তা দিলো না বরং জুহির সাথে কথা চালিয়ে গেলো।
– তুমি জানো না শালিকা।সেহেরিশ হয়তো লজ্জায় বলেনি।
– কি বলেন এইসব আমি কিছুই জানলাম না।কেইন তুন্দ্র আমাকে কিছু বলেনি।
– আরে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছি।তাদের বলার দরকার নেই।তোমার ফ্রেন্ড আমার সাথে রেগে আছে বুঝলে এখন বলছে বিয়ে করবে না।একটু বুঝিয়ে বলো আমার মতো সুদর্শন ছেলেকে বিয়ে না করে থাকা যায়?
– হেই সেহেরিশ তুই বিয়ে করিস না।ছেলেটাকে আমার দিকে ছুড়ে মার।

জুহির কথায় ফোন কেটে দিলো আফীফ।সেহেরিশের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
– দেখলে তোমার ফ্রেন্ড আমায় দেখে ফিদা আর তুমি আমায় পাত্তা দাও না। হাউ ফানি।
– এইসব পাগল ছাগলকে দেখলে কোন ভালো মেয়ে ফিদা হয় না যত্তসব।এত রাতে আমার রুমে কি?
– দেখতে এলাম তুমি কি করছো।
– দেখা হয়েছে এবার যান।

আফীফ গেলো না বরং সেহেরিশের সামনে এগিয়ে আসলো।
– বলেছিলাম শাড়িটা চেঞ্জ করতে তবে এখনো পরে আছো কেন?একটু আগে তো আমার হাট এট্রাক করিয়ে ছাড়তে।
– ইচ্ছে হয়নি তাই করিনি।
– তখন হাতে এইভাবে চুড়ি গুলো আছাড় দেওয়ার কারন কি বুঝাতে চাইছো তুমি রাগী তোমার রাগ বেশি?
সেহেরিশ উওর দিলো না বরং আফীফের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো,
– আপনার দাদাকে আমি বিচার দেবো।কেমন নাতি তার রাত দুপুরে অন্য মেয়ের রুমে না বলে চলে আসে।
– আমার দাদাজান কি বলেছে জানো?বলেছে তোমায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে যেন বাড়িতে আনি।আর যদি তোমার বাবা রাজি না হয় তবে তোমাকে আর তোমার বাবাকে তুলে আনবে বিয়ের আসরে।

সেহেরিশ উওর দিলো না।রাগ দেখিয়ে কম্বোল টেনে বিছানায় শুয়ে যায়।হঠাৎ করেই মাথাটা ধরেছে ভীষণ তাই এই মূহুর্তে সেহেরিশের তর্ক করার মুড নেই।আফীফ সেহেরিশের পাশে সটান হয়ে শুয়ে যায়।
– এসব কি এখানে শুয়ে আছেন কেন?
– তোমার হাতটা দাও।
সেহেরিশ ভ্রু কুচকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।তৎক্ষনাৎ আফীফ তার পাচঁ আঙুল সেহেরিশের আঙুলে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
– আর একটা সাউন্ড করলে তোমার আম্মুর মোবাইলটাও ভেঙ্গে দেবো চুপচাপ ঘুমাও!
– ইডিয়ট।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here