#উরন্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_৩
#কলমে_অপরাজিতা_ইসলাম

রুদ্ধ রাগে শুধু এপাশ আর ওপাশ করছে।ওর ইচ্ছে করছে প্রজ্ঞাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিতে।আর প্রজ্ঞা?সে তো আরামে ঘুমাচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা—-

“এই রুদ্ধ একটু ওঠ তো।”

“কেন?”

“আরে একটু ওঠ না প্লিজ।”

রুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে শোয়া থেকে উঠে বসল।আর ঠিক তখনই প্রজ্ঞা রুদ্ধ যে বালিশে শুয়ে ছিল সেটা নিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরল।রুদ্ধর বালিশকে কোল বালিশ বানিয়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেল।এই পুরোটা সময় রুদ্ধ আহাম্মকের মতো চেয়ে ছিল প্রজ্ঞার দিকে।একটু পর প্রজ্ঞাকে ডাকতে গিয়ে দেখল ওও বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন।এটা দেখে রুদ্ধ আরো রেগে গেল।পরে নিজের কোলবালিশ কোনো রকম মাথায় দিয়ে রাগে এপাশ আর ওপাশ করতে করতেই ঘুমিয়ে পরলো।

______________________________

সকাল আটটার দিকে প্রেমা আর রুদ্ধর দুজন কাজিন রুদ্ধর রুমের সামনে এসে ওদেরকে ডাকতে লাগলো।

প্রজ্ঞা চোখ-মুখ কুঁচকে রুদ্ধকে ডেকে বললো,

“এই রুদ্ধ দেখ না কে এসেছে!”

রুদ্ধ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বললো,

“উফ আমি পারবো না।তুই দেখ গিয়ে যা।”

“আমি তো ঘুমাচ্ছি,তুই যা প্লিজ।”

“তুই খুললে খোল নাহলে নাই।”

প্রজ্ঞা রুদ্ধর পিঠে একটা চর মেরে ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলতে চলে গেল।দরজা খোলার সাথে সাথেই চিৎকারের আওয়াজে প্রজ্ঞার ঘুম ছুটে পালালো।রুদ্ধ ও লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।প্রেমা আর রুদ্ধর কাজিনরা এখনো চিৎকার করছে,

“ভূতততততততত”

“আম্মু বাঁচাও।ভাইয়ার রুমে ভূতততততত।”

প্রজ্ঞা ওদের চিৎকার শুনে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালো।ওদেরকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের তাকিয়ে আসল কারণটা বুঝতে পারলো।

“আরে আমি তো কাল রাতে যেভাবে সেজেছিলাম ওইভাবেই ঘুমিয়ে গেছিলাম।এজন্যই ওরা ভূত ভূত বলে চিৎকার করছে।”

কথাটা মনে মনে বলেই প্রজ্ঞা এক ধমক দিয়ে বললো,

“এই চুপ সবাই।আমি ভূত না।আমি প্রজ্ঞা।”

রুদ্ধ উঠে এসে প্রজ্ঞার মাথায় একটা থাপ্পর মেরে বললো,

“এমন শাঁকচুন্নি সেজে থাকলে যে কেউই ভয় পাবে।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”

“উফফফ যাচ্ছি তো।এতে মারার কি আছে শয়তান।”

এটুকু বলেই প্রজ্ঞা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

আর বেচারির দল!ওরা সবাই হা করে চেয়ে আছে।একবার রুদ্ধর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার প্রজ্ঞার দিকে তাকাচ্ছে।

রুদ্ধ ওদের দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দিল।

“এত অবাক হওয়ার কিছুই নাই।একটা শাঁকচুন্নির সাথে আমার বিয়ে দিয়েছিস কিনা তোরা।ওও যেমন সবার থেকে আলাদা রকমের মেয়ে।তেমনি ওর ব্যবহার গুলোও আলাদা।আর কাজ-কর্ম গুলোও আলাদা বুঝলি?এখন তোরা যা।আমি ফ্রেশ হয়ে ওকে নিয়ে নিচে আসছি।

এটা বলেই রুদ্ধ ভেতরে চলে গেল।

” কিরে প্রেমা প্রজ্ঞা আপু বাসর রাতে শাঁকচুন্নি সেজে বসে ছিল?এটাও মানা যায়?”

রুদ্ধর ফুপাতো বোন সারার কথায় প্রেমা হাসলো।

“আপু আমার অনলি এক পিস।ওর কাজ কর্ম গুলোও অনেক আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক তাইনা?”

রুদ্ধর আরেক কাজিন মিথি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,

“হুমমমম।এজন্যই প্রজ্ঞাকে আমার এত বেশি ভালো লাগে।ভার্সিটিতে ওও ওর দুষ্টুমি আর পড়াশোনার জন্যই ফেমাস।সবাইকে যেমন হাসাতে পারে।ঠিক তেমনি কেউ ভুল করলে তাকে নাকানিচুবানি ও খাওয়াতে পারে।”

মিথির কথায় ওরা তিনজনই হেসে ডাংনিং প্লেসে চলে গেল।

“কিরে রুদ্ধ আর প্রজ্ঞা কোথায়?”

রুদ্ধর চাচিমা মিসেস রুবিনার কথায় মিথি বললো,

“ওরা ফ্রেশ হচ্ছে মা।একটু পরেই আসবে।”

“ওহ আচ্ছা।তোরা গিয়ে বস তাহলে।আমি তোদেরকে একটু পর খাবার দিচ্ছি।”

“ওকে”

কিছুক্ষণ পর রুদ্ধ আর প্রজ্ঞা নিচে নেমে আসলো।প্রজ্ঞা একটা হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ি পড়েছে।চুলগুলো খোঁপা করা।আর ঠোটে শুধু লিপবাম লাগানো।তাতেই ওকে বেশ সুন্দর লাগছে।যদিও প্রজ্ঞা তেমন ফর্সা না।তারপরেও ওর মায়াবী চেহারার দিকে তাকালে আলাদা এক রকমের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়।

রুদ্ধ টেবিলে বসার পর প্রজ্ঞাকে দেখছে।এমন সময় রুদ্ধর মামাতো ভাই শান্ত এসে রুদ্ধর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।রুদ্ধর আরেক পাশে মিথি বসে আছে।তাই প্রজ্ঞা গিয়ে সারার পাশে বসে পরলো।রুদ্ধ মুখ গোমড়া করে ওর কাজিনদের দিকে তাকিয়ে দেখল ওরা ঠোঁট চেপে হাসছে।তার মানে এগুলো সব শয়তানি।এটা ভেবেই রুদ্ধ একবার প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে খেতে শুরু করল।খাওয়ার মধ্যেই নানা রকম দুষ্টুমি করতে লাগলো সবাই।হঠাৎই রুদ্ধ বিষম খাওয়ায় মিথি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,

“কি ভাইয়া হুটহাট বিষম খাওয়া শুরু করলে কবে থেকে?”

এটা বলেই মিথি মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলল।ওর দেখাদেখি বাকি সবাই ও হেসে উঠল।রুদ্ধ সবার দিকে রাগি চোখে তাকালো।তা দেখে শান্ত চোখ টিপ দিল।প্রজ্ঞা শুধু সবার কাজগুলো দেখছে।প্রেমা মিথি পাশেই বসে আছে।ওও রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,

“জিজু গতকাল কি রোমান্স কম গয়ে গিয়েছিল?তাই এখন এখানেও রোমান্স করা শুরু করলে নাকি?”

এটা বলেই ওরা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

আসলে রুদ্ধ খাওয়ার সময় শান্ত ইচ্ছে করেই রুদ্ধর পায়ে সুরসুরি দিচ্ছিল।রুদ্ধ ভেবেছিল ওটা হয়তো প্রজ্ঞা।কিন্তু টেবিলের নিচে তাকিয়ে শান্তর পা দেখে বেচারা রুদ্ধ বিষম খেয়ে গেছে।

এভাবেই হাসি-ঠাট্টার মাঝে ওরা খাওয়া শেষ করে সবাই মিলে কিসের জানি প্ল্যান করতে লাগলো।প্রজ্ঞা একা একা বসে বোর ফিল করছিল।তাই রুদ্ধর ফুপাতো ভাই অভ্রর সাথে গল্প করছিল।রুদ্ধ প্রজ্ঞার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রজ্ঞা আর অভ্রকে এমন হাসাহাসি করতে দেখে কিছু না বলেই চলে গেল।

“এই প্রজ্ঞা আমার না একটা জরুরি কল এসেছে।আমি একটু পর আসছি ওকে?”

“হুম হুম জরুরি কল তো হবেই।জিএফ ফোন দিয়েছে কিনা।”

এটা বলেই প্রজ্ঞা অভ্রর দিকে তাকিয়ে হেসে বসা থেকে উঠে পরলো।

অভ্র কিছু না বলে মুচকি হেসে অন্যদিকে চলে গেল।

প্রজ্ঞা ও রুমের দিকে যেতেই কেউ একজন ওর হাত ধরে একটানে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সেখানেই প্রজ্ঞার হাত দুটো চেপে ধরলো।প্রজ্ঞা কিছু বলবে তার আগেই……..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here