#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১৬ (বোনাস পার্ট)

সিঁড়ির শেষ ধাপ পার হতেই সাদিদ স্যারের চোখে চোখ পড়লো রোদেলার!মুহুর্তে বুকের ধড়ফড়ানি আরো বেড়ে গেল।সে এগিয়ে যেতেই ছিনজা দৌঁড়ে এসে তার কোলে উঠলো।

রোদেলা আড়ষ্ট ভঙ্গিতে একটু হাসার চেষ্টা করলো।ছিনজার কপালে চুমু দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিল দুজনকে।বরাবরের মতো সাদিদ স্যার এবারও তার সালামের উত্তর দিল না।ছিনজার দাদু রোদেলাকে দেখেই হাসিমুখে বলল,

—“ওয়ালাইকুম সালাম মা!কেমন আছো মা গো?”

—“আমি ভালো আঙ্কেল!আপনি কেমন আছেন?”

—“আমিও অনেক ভালো।পাশে এসে বসো তো!”

রোদেলা মৃদু হেসে ছিনজাকে কোলে নিয়ে পাশে গিয়ে বসলো।সাদিদ স্যার হুট করে পরিবার সাথে নিয়ে কেন তার বাসায় এসেছে তার সমীকরণ মেলাতে পারছে না রোদেলা!

সবাই চুপচাপ নিরবতা পালন করে যাচ্ছে যেন!হঠাৎ রান্নাঘর থেকে শাহিনুর এসে সামনের সোফায় বসলো।ছিনজার দাদুকে প্রশ্ন করলো,

—“দাদা,আমি রোদেলার মা!”

—“আমি দেখেই চিনতে পেরেছি।রোদেলার সাথে আপনার চেহারার অনেক মিল আছে!”

রোদেলার মায়ের মুখ চুপসে গেল।পরক্ষণে তিনি হাসার চেষ্টা করে বললেন,

—“জ্বি দাদা!”

—“আমি এনামুল হক!আর কাউকে দেখছি না।আপনার ছেলে, তারপর রোদেলার বাবা!এরা কোথায়?”

—“রোদেলার বাবা আজ অফিস থেকে ফিরেই হাঁটতে বের হয়েছে।আর ছেলেটা আমার ছোট বোনের বাড়ি গেছে।অফিস থেকে বাড়ি আসেনি।কি একটা দরকারে যেন ও বাড়ি গেছে।এসে পড়বে সবাই!”

কুটি রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে।রোদেলার কোলে মিষ্টি বাচ্চা দেখেই তার লোভ জাগলো।একটু কোলে নেয়ার লোভ!

রোদেলা ছিনজাকে নিয়ে উঠে পড়লো।ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে ছিনজার হাতে দিয়ে বলল,

—“আজ আন্টি এতো চুপচাপ কেন?”

ছিনজা মুখ ফুলিয়ে বলল,

—“আন্টি পঁচা।আমি আন্টির সাথে কথা বলবো না।”

—“কেন মা?আন্টি কি করেছে?”

—“আন্টি সেদিন আসার সময় বলেছিল যে রোজ আমার সাথে দেখা করবে।আমাদের বাসায় যাবে।কিন্তু সে যায় নি।সে পঁচা।কারণ পাপা বলেছে যে কথা দিয়ে কথা রাখে না সে পঁচা!”

রোদেলা হেসে ফেলল।এতটুকু একটা মেয়ে।কিন্তু কি সুন্দর পাকনা পাকনা কথা বলে।এটা অবশ্য সত্যি যে সে সেদিন ছিনজাকে অনেক বুঝিয়ে তবে ছাড়া পেয়েছিল।আজ দুই সপ্তাহের মতো হলো সে ছিনজার সাথে আর দেখা করেনি।মেয়েটার রাগ করারই কথা!মেয়েটা কেন জানি তার বাধক হয়ে গেছে।

রোদেলা ছিনজার গাল টেনে বলল,

—“পাপা বলেনি,যারা রাগ করে তারাও পঁচা!কিন্তু তুমি তো লক্ষী মেয়ে।”

—“তাহলে আমি আর রাগ করবো না।”

—“আন্টি কিভাবে বুঝবে যে তুমি আর রাগ করবে না?”

ছিনজা রোদেলাকে জড়িয়ে তার গালে একটা চুমু দিয়ে দিল।তারপর হেসে বলল,

—“আমি আর রাগ করে নেই!তুমি আমায় নামিয়ে দাও।আমি আইসক্রিম খাব।”

রোদেলা নামিয়ে দিতেই কুটি তাকে লুফে নিল।কোলে নিয়ে বলল,

—“বাবু,কাঁদে না।ওলে লে!চলো,আমরা সোফায় বইসা তোমারে গল্প শোনাই!”

কুটি ছিনজাকে কোলে নিয়ে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসলো।রোদেলা সেদিকে পা রাখতে সাদিদ পেছন থেকে গলার স্বর খাদে নামিয়ে ডাক দিল।

—“মিস রোদেলা!”

—“জ্বি,বলুন!”

—“আমার একটু ইমার্জেন্সি!যেতেই হবে!”

রোদেলা অবাক হয়ে বলল,

—“কোথায় যাবেন স্যার?কোনো মিটিং পড়েছে?অবশ্যই যান!আমাকে বলতে হবে কেন?”

সাদিদ ইতস্তত করে চারপাশে এক নজর তাকিয়ে বলল,

—“একটু ওয়াশরুমে যাব মিস রোদেলা।আপনার বুদ্ধি তো দেখি ছিনজার থেকেও কম!”

রোদেলা ভীষণ লজ্জা পেল।তারপর বলল,

—“উপরে আসুন!”

সাদিদ যেন এটার অপেক্ষাই করছিল।সে রোদেলার পেছন পেছন দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল।রোদেলার রোদ্দুরের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

—“এটাতে যান।নিচেও আছে।কিন্তু পরিষ্কার আছে কি না জানা নেই!”

—“এটা কি আপনার রুম?”

—“জ্বি না।এটা আমার ছোট ভাইয়ের।”

সাদিদ ঢুকতে নিয়ে থেমে গেল।দু একবার খুকখুক করে কেশে বলল,

—“মিস রোদেলা!আপনি কি আমায় আপনার রুমটাতে নিয়ে যাবেন?ইট’স ইমার্জেন্সি!”

—“কিন্তু আমার রুম বোধ হয় একদম অগোছালো।আ…..”

—“আমি কোনো দিকে তাকাব না।সোজা আপনার ওয়াশরুমে ঢুকে যাব!”

রোদেলা আর বাঁধা দিল না।সাদিদকে নিজের রুম দেখিয়ে চলে আসতে নিতে সাদিদ বলল,

—“মিস রোদেলা জান্নাত!নিচে যাবেন না।একটু ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করুন প্লিজ!আমি আসছি।কিছু কথা আছে!”

রোদেলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। একূল ওকূল ভাবতে ভাবতে ছাদে উঠে গেল।

উত্তর দিকের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল রোদেলা।সন্ধ্যা হবে হবে!সূর্য ডুবে গেছে পশ্চিম কোণে।কিন্তু অন্ধকার এখনো চারপাশ ঘেরাও করতে পারেনি!

তার মাথায় প্রচুর প্রশ্নেরা এসে জড়ো হচ্ছে।সাদিদ স্যার তাকে কি বলতে পারে?কি এমন বলবে যে নিরিবিলি আসতে বলল?

সাদিদের জন্য রোদেলার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চায় না।সে ছটফট করতে থাকে!ছাদের এ মাথা থেকে ও মাথা চক্কর দিতে থাকে।তার নিজের মাথা ঘোরা শুরু হয় কিন্তু সাদিদ ছাদে আসে না!ভুলে গেছে নাকি?

অনেক চিন্তা করে যখন রোদেলা সিদ্ধান্ত নিল নিচে নেমে যাবে তখন সাদিদের দেখা মিলল।সাদিদের দিকে চোখ পড়তে রোদেলা কেঁপে উঠলো।একি অবস্থা উনার?মাথার চুল সম্পূর্ণ ভেজা।বোঝা যাচ্ছে এতক্ষণ মাথায় পানি ঢেলেছে নিজে নিজে।চোখ গুলো লাল লাল।চুলের পানিতে আকাশি রঙের শার্টটার অনেকখানি ভিজে গেছে।শার্টের ইন টিন কিচ্ছু ঠিক নেই।

রোদেলা বিস্মিত কন্ঠে বলল,

—“স্যার, আর ইউ অলরাইট?”

সাদিদ এগিয়ে এসে বলল,

—“আমি ঠিক নেই!আপনাকে আজ কিছু কথা বলবো।সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম।মিস রোদেলা,আপনি কি আপনার ওড়নার এক অংশ দিয়ে একটু মাথা মুছতে দিবেন?”

—“কি!”

—“আসলে আমার সাইনোসাইটিসের সমস্যা আছে।ভেজা চুলে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

—“রুমে তো টাওয়াল ছিল!”

—“এত কিছু খেয়াল করিনি।ওয়াশরুমে খুঁজলাম পেলাম না।”

রোদেলা অনিচ্ছা নিয়ে নিজের ওড়নার ডান অংশ এগিয়ে ধরলো।সাদিদ চোখ বন্ধ করে মাথাটা মুছে নিল।রোদেলার বুক কাঁপে!সাদিদ স্যার এমন কিছু বলবে না তো,যা সে মেনে নিতে পারবে না?

ধীরে ধীরে সাদিদের অবয়ব ঝাপসা হতে লাগলো।কারন চারপাশ ক্রমেই অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।সাদিদ রেলিং এ হাত রেখে সামনে দৃষ্টি মেলল।রুদ্ধ কন্ঠে বলল,

—“রোদেলা তোমাকে আমার জীবনের কিছু গল্প শোনাই!

রোদেলার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল।সাদিদ স্যার তাকে কত গুলো বছর পর তুমি করে বলল!সে রেলিং শক্ত হাতে চেপে ধরে!

সাদিদ ফের বলে,

—“আমি পড়াশোনা করি ঢাকাতে হলে থেকে।বাবা মা সিলেট থাকতো। ফিজিক্সে অনার্স,মাস্টার্স করে কানাডা চলে যাই উচ্চ শিক্ষার জন্য।আমি হলাম বাবা-মার একমাত্র সন্তান।আমার স্কুল শিক্ষক বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকে বিদেশে পড়ানোর।তার সেই স্বপ্ন নিজের মধ্যে লালন করে বিদেশ চলে যাই!বিদেশে সময় গুলো অনেক ভালো কাটছিলো।পার্ট টাইম জব করি।প্রচুর টাকা ইনকাম করি।নিজের খরচ বাদে সব বাসায় পাঠাই।ভার্সিটি যাই আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি।সময় গুলো কেমন দ্রুত কাটছিলো।

আজ থেকে ছয় বছর আগে আমার ইউনিভার্সিটিতে ইমার্জেন্সি কল করে দেশে আসতে বলা হয়।আমি কিছু জানতাম না।আমার ইউনিভার্সিটির প্রক্টর আমার হাতে পাসপোর্ট আর টিকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,’ইমার্জেন্সি দেশ থেকে ঘুরে আসো!’ সঙ্গে সঙ্গে আমার রক্ত শীতল হয়ে যায়।আমি বুঝে যাই,বাসায় কিছু একটা হয়েছে।সেই কিছু একটা যে এতটা কষ্টকর কিছু ধারণাতে ছিল না।

দেশে ফিরে দেখি আমার মা মারা গেছে।সাত দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল মা।কিন্তু আমি চিন্তা করবো বলে আমাকে জানানো হয়নি।”

সাদিদ থেমে যায়।তার গলা ধরে এসেছে।রোদেলার চোখ ঝাপসা হয়েছে অনেক আগে।সে একটু এগিয়ে এসে সাদিদের পাশে দাঁড়ায়।খুব ইচ্ছে হয় সাদিদের হাতটি শক্ত করে ধরে সান্ত্বনা দেয়ার।কিন্তু সাহসে কুলায় না।

সাদিদ নিজেকে সামলে আবার মুখ খুলে,

—“মাকে নিজ হাতে দাফন করে আসি।নিজে একটু বুক উজাড় করে কান্না করার ফুরসত পাই না।আমি ভেঙ্গে পড়লে বাবাকে সামলাবে কে?নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে বাবাকে সামলাই।এর মধ্যে ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করে পনেরো দিনের ছুটি ম্যানেজ করি।কিন্তু তবুও মনে চিন্তা হতে থাকে।পনেরো দিন তো দেখতে দেখতে চলে যাবে।আমি চলে গেলে বাবাকে দেখবে কে?এর মধ্যে বাবার মাথায় কোনো আত্মীয় আমায় বিয়ে করানোর পোকা ঢুকিয়ে দেয়।একদিন সন্ধ্যা বেলা বাবা এসে আবদার করে নতুন বউ ঘরে তোলার।বাবার মুখের দিকে চেয়ে হ্যাঁ বলে দিই।বাবার পাত্রী আগে থেকেই ঠিক করা ছিল হয়তো।কারণ সে রাতেই ঘরোয়া ভাবে পিতৃ-মাতৃহীন একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।

বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বাচ্চা একটা মেয়ে।বয়স পনেরো-ষোলো!সদ্য দশম শ্রেণীতে উঠেছে।আমার বড্ড মন খারাপ হয়ে যায়।মনে মনে ভাবি আর মাত্র সাতদিন পর তো চলে যাব।এতটুকু একটা মেয়ে কিভাবে সব সামলাবে?

সেদিন আমি বিছানায় বসে তার নাম জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে গঙ্গা বানিয়ে ফেলে!ভয়ে আর ঘাটি না।পরের দিন বাবার মুখে থেকে তার নাম শুনি।ওর নাম ছিল ছিত্তিমা।ছয়দিন আমরা দুজন দু গ্রহের প্রাণীর মতো থাকি।সে শুধু আমাকে ভয় পায়,আমার থেকে আড়ালে থাকে।কিন্তু আমার বাবার সাথে ঠিকই ভাব জমে।

আগামীকাল রাত তিনটেয় আমার কানাডার ফ্লাইট।তখন আমরা গ্রামের বাড়ি থাকতাম।সকাল দশটাতে আমাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।সেই রাতে তাকে সাহস করে বললাম,’কাল আমি চলে যাব।তুমি বাবার সাথে থেকো।আর বাবার যত্ন নিয়ো।আমি রেগুলার ফোনে কথা বলবো।’এটুকু বলে আমি কাপড় চোপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।হঠাৎ করে দমকা হাওয়ার মতো ছিত্তিমা এসে আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে কেঁদে দিল।আমি এত পরিমাণ অবাক হলাম যে আমার হাত থেকে গোছানো কাপড় খসে পড়ে গেল।আমি ঘুরে তাকে পরম যত্নে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

সেই রাতে আমার আর কাপড় গোছানো হলো না।আমাদের মধ্যে অন্য কিছু হলো।একদম অন্য কিছু!নতুন এবং গভীর কিছু।সেই রাতের সাক্ষী হিসেবেই আজকের ছোট্ট ছিনজা!”

রোদেলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।কেন করছে সে জানে না।সাদিদের হয়তো সেদিকে নজর নেই।রোদেলা কান্না করতে করতে বলল,

—“তারপর?ছিত্তিমার কি হলো?”

—“পরেরদিন দশটায় আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।রওনা হওয়ার আগে বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম।আর আমার পিচ্চি বউটার ভেজা চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বিদায় নিলাম।কানাডা পৌঁছে আমার কি যেন হয়ে গেল।অনেক চেঞ্জ হয়ে গেলাম।সবসময় ফুরফুরে মেজাজে থাকি।দেশে নিয়মিত যোগাযোগ করি।বাবা আর ছিত্তিমার সাথে সবসময় কানেক্টেড থাকি।বিদেশে যাওয়ার পর বুঝতে পারি আমি আমার পিচ্চি বউয়ের কাছে কিছু একটা রেখে গেছি।সেই কিছু একটা হলো আমার ‘মন’।বুঝতে পারি আমি তাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি।

এর প্রায় তিন মাস পরেই আমার জন্য আরো একটা সুখবর অপেক্ষা করছিল।সেদিন কানাডাতে প্রচুর তুষাড় পড়ছিল।রাস্তা ঘাটে কয়েক মিটার উঁচু হয়ে তুষাড় জমেছে।আশপাশের বাড়িঘর বরফ খনির মতো মনে হচ্ছে।তুষাঢ় ঝরা সেই সন্ধ্যায় ছিত্তিমা আমায় ফোন করে চুপিচুপি বলে,’আপনি বাবা হতে চলেছেন!”‘ ব্যস!আমার খুশি আর ধরে কে!কেমন অন্য রকম অনুভূতি।ছিত্তিমার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়।যেন পারলে আমি তাকে আমার জীবন দিয়ে দেই!

এর পরের সময়টাতে আমি প্রচুর পরিশ্রম করতে থাকি।টাকা জমাতে থাকি।কাগজাদি ঠিক করতে থাকি।বাচ্চা হলেই বাবাকে আর ছিত্তিমাকে কানাডা নিয়ে আসবো।ছিত্তিমার ডেলিভারির আনুমানিক ডেট মাথায় রেখে টিকেট কেটে রাখি দেশে ফেরার।ওই সময়টাতে তার পাশে থাকতে হবে যে!

অক্টোবর মাসের সতেরো তারিখ আমি দেশে ফিরি।এয়ারপোর্টে নেমে চারপাশে খুঁজে বাবাকে পাই না।বাবার সাথে কথা হয়েছিল যে তিনি কার ভাড়া করে রেডি থাকবেন।কিন্তু বাবা আসেনি!বুকের ভেতর পাথর চাপা কষ্ট হয়।আট ঘন্টার ট্রেন জার্নি করে সিলেট পৌঁছাই।বাসায় গিয়ে শুনি ছিত্তিমাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে।মুহুর্তে আমি দু চোখে অন্ধকার দেখি।জিনিসপত্র সব ফেলে হসপিটালে দৌঁড়াই।

গিয়ে দেখি ছিত্তিমাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে।তার নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে না।ফিটাসে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।বাবা এনামুল হক উদ্ভ্রান্তের মতো অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছে।বাবাকে জড়িয়ে ধরে আমি হাউমাউ করে কান্না করতে থাকি।কেন করি জানি না। হয়তো আমার মন জেনে গিয়েছিল যে ছিত্তিমাকেও মায়ের মতো হারাতে বসেছি!

রাত ন’টার সময় ছিত্তিমাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।ততক্ষণে আমার সব ভরসা শেষ।কারন ইতোমধ্যে ডাক্তার রা বলে দিয়েছে যে, অল্প বয়সে প্রেগনেন্সির জন্য তার শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।ছিত্তিমার শরীর ব্লাড গ্রহণ করছে না।কিন্তু জ্ঞান আছে।

আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আকগেই।উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে গেছি।কেউ একজন আমাকে বলল,চাঁদের মতো আপনার একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে।আমি সেদিকেে নজর দেই না।পাগলের মতো ছুটে ছিত্তিমার কাছে যাই।কি বিধ্বস্ত চেহারা হয়েছে ওর!মনে হচ্ছে একদিনে বয়স বেড়ে গেছে।ওর মুখে এক গাদা নল লাগানো।আমি কাঁদতে কাঁদতে ওর মুক্ত হাত টা বুকে জড়ালাম।ছিত্তিমার দু চোখের কার্নিশ বেয়ে জল ঝরছে।আমি দুহাতে মুছে দিয়ে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।ইশারায় বুঝালাম,তোমার কিচ্ছু হবে না।আমি এসে গেছি।

তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।মুখের মাস্ক খুলে আমায় শেষ বারের মতো কিছু বলে অন্য ভুবনে চলে গেল।”

সাদিদ ফ্লোরে বসে পড়েছে।সে কান্না করছে।বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।ক্ষণে ক্ষণে তার শরীর কেঁপে উঠছে।

(চলবে)

😓😓😓😓

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here