#গল্পের_নাম: পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_১০ (বোনাস পার্ট)
রোদ্দুর ভাই পাঠায়নি তো?অহির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চিন্তায়।হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে নিজের ম্যাসেন্জারে ঢুকলো।উদ্দেশ্য রোদ্দুর ভাইকে পাঠানো মেসেজ চেক সিন করেছে কি না দেখা।
ম্যাসেন্জারে ঢুকে অহির মাথায় চিন্তার ছোট খাটো একটা পাহাড় জমে গেল।কারণ রোদ্দুর ভাই মেসেজ এখনো সিন করেনি!তাহলে এটা কার কাজ?
এই মেসেজ যে সে রোদ্দুর ভাইকে পাঠিয়েছে সেটা তো সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ জানে না!এমনকি রোদেলা আপুও না!
এই রহস্যের সমাধান করার জন্য রোদ্দুর ভাইকে লাগবে।অহি আবারো রোদ্দুর ভাইদের বাসায় যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছানো শুরু করলো।আজ দুটো বইও সঙ্গে নিল।কিছুদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা!সে মনে মনে ঠিক করে রাখলো রোদ্দুর ভাই যেমন ব্যবহারই করুক না কেন,কিছুদিন সে থাকবেই!
রোদ্দুর ভাই সেই যে তার জন্মদিনের পরের দিন ভোরে চলে গেছে আর তার সাথে দেখা হয়নি।আজ এগারো দিন হতে চলল তার!
——————–
রোদ্দুর ভাইদের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল অহির।আজ সে একা নয়।সাথে অপূর্ব এসেছে।সদর দরজার সামনে দাঁড়াতেই অপূর্ব হাত উঁচিয়ে বলল,
—“বুবু,দেখো!খালুজি নিশ্চিন্ত ভবনের জায়গা কি লিখেছে!”
অহি তাকালো।দরজার একদম উপরে লেখা,” পাগল হইতে সাবধান”।তার নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা,’এ বাড়ির একজন কিছুদিন হলো মেন্টালি সিক।তাহার হইতে সাবধান।’
অহি কলিং বেলে চাপ দিয়ে বলল,
—“অপূর্ব রে।খালু মেন্টালি সিক বলতে তাকে বুঝিয়েছে?খালামণিকে?”
—“আমার তো তাই মনে হয় বুবু।হয়তো খালামণির সাথে খালুর আবার ঝগড়া হয়েছে।সেজন্য ইচ্ছে করে এসব লাগিয়েছে।”
এটুকু বলেই অপূর্ব ফিক করে হেসে ফেলল।অহি কিছু বলার আগেই দরজা খুলে গেল।দরজা খুলেছে ফজিলা।
অহি সোফায় বসতেই তার খালামণি এসে দফায় দফায় কান্না করলো।প্রথম দফায় খালুর নামে হাজারো নালিশ।এটা নতুন কিছু নয়!আর দ্বিতীয় দফায় যেটা বলল সেটা শুনে অহি নিজেও চমকে উঠলো।
জন্মদিনের সময় অহিদের বাসা থেকে ফেরার পর থেকেই রোদ্দুর ভাই নাকি কেমন জানি আচরণ করছে।মাঝে মাঝে একা বিড়বিড় করে।হুট করে আনমনা হয়ে যায়।কখনো আবার গুনগুন করে গান গায়।
অপূর্ব ফিক করে আবারো হেসে দিল।শাহিনুর রাগী চোখে তাকাতেই সে আমতা আমতা করে বলল,
—“খালামণি,রোদ্দুর ভাই কি গান গায়?”
শাহিনুর বুঝদারের মতো বলল,
—“আমি কি অত বুঝি নাকি?তবে কুটি বলেছে রোমান্টিক গান গায়।কিন্তু ও তো আগে কোনোদিন গান গাইতো না!সত্যি সত্যি হয়তো জ্বীনে ভর করেছে।কিন্তু আমি পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছি ও রাজি হচ্ছে না।”
—“বাহ!রোদ্দুর ভাইয়ের থেকে আজ রাতেই গান শুনবো।কি বলো বুবু?”
অহি চোখ পাকিয়ে অপূর্বকে উপরে পাঠিয়ে দিল।শাহিনুর আবার বলল,
—“ছেলেটার যে হঠাৎ করে কি হলো রে অহি?আমার সোনার টুকরো ছেলে!”
শাহিনুর আঁচল চেপে আবার কান্না শুরু করলো।অহি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
—“খালামনি,তুমি কান্না করবে না একদম।আমরা সবাই এসেছি।দেখি ব্যাপারটা কি!রোদ্দুর ভাই কি বাসায়? ”
—“না!অফিস থেকে ফিরেনি।তোর খালুও আসেনি।”
—“অফিস তাহলে ঠিক ঠাক করছে।এটা ভালো! ”
—“অহি রে।তোকে একটা কথা বলি।কাউকে বলবি না কিন্তু।আমি কাউকে না জানিয়ে গুলিস্তানের এক পীর সাহেবের কাছে গেছিলাম।উনি বলেছে একটা মাঝারি দেখে গরু জবাই করে ফকির খাওয়ালে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
—“সে কি!”
—“হ্যাঁ রে!কি করা যায় বল তো?পীর সাহেবের কথা বলে কথা!ফেলনা কিছু নয়।”
অহি খালার পিঠে হাত রেখে বলল,
—“খালামণি,তুমি একদম চিন্তা করবে না।রোদ্দুর ভাইয়ের সুস্থতা বলে কথা।এক গরু কেন,প্রয়োজনে দুই গুরু জবাই হবে।”
শাহিনুর সন্দেহের দৃষ্টিতে বলল,
—“তুই বলছিস?তোরা তো আবার দু পাতা ইংলিশ শিখে পীর টীর মানিস না!”
—“কে বলেছে মানি না!আলবাত মানি।হাজার বার মানি।তুমি বরং আমাকে একবার তোমার পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যেয়ো।”
শাহিনুর খুশিতে ঝলমল করছে।অহিকে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিল।আজ রাতের ডিনারে দেখা যাবে, খালা অহির স্পেশাল ডিশ রান্না করেছে।
অহি মুচকি হেসে উপরে চলে গেল।রোদেলা আপু নাকি ঘুমাচ্ছে।কলেজ থেকে মাথা ব্যথা নিয়ে আজ নাকি ফিরেছে।
——————
রোদ্দুর অফিস থেকে ফিরে সোজা নিজের রুমে ঢুকলো।আজ বড্ড ক্লান্ত।হাতের ফাইলটা টেবিলের উপর রাখলো।গলার টাই খুলে বিছানায় ঢিল দিতেই সেদিকে চোখ পড়লো।অহি গুটিশুটি হয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
রোদ্দুর অবাক হলো না।শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বলল,
—“এতক্ষণ অফিসে জ্বালাচ্ছিলি এখন সোজা বেডরুমে চলে এসেছিস?থাক!তোকে পড়োয়া করে কে!সেখানে খুশি সেখানে থাক।”
বলেই রোদ্দুর নিজের শার্ট খুলে অহির মুখে ছুঁড়ে মারলো।অহি ঘর্মাক্ত শার্টটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নাক সিঁটকে বলল,
—“রোদ্দুর ভাই, আপনি তো দেখি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছেন?এমন আচরণ করছেন কেন?”
রোদ্দুরের অহির সম্পূর্ণ কথা কানে গেলো না।গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জিটা একটানে খুলে অহির দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
—“বাহ!তোর কত উন্নতি হয়েছে রে অজান্তা!এতদিন শুধু হুটহাট, যেখানে সেখানে তোর চেহারা ভেসে উঠতো।এখন তো দেখি মুখে বুলিও ফুটেছে।”
অহি রোদ্দুরের উদাম শরীর দেখে লজ্জায় মিইয়ে গেল।রোদ্দুর ভাই কি সত্যিই তাকে মেয়ে মনে করে না?এতটুকু লাজ লজ্জা নেই? অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—“রোদ্দুর ভাই, আপনি আমার সামনে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন?”
—“তুই না আমার স্বপ্নে খালি গায়ে নাচানাচি করিস তার বেলা?এখন আমার খালি গা দেখে লজ্জা পাওয়ার ভান ধরছিস কেন?তুই তো নির্লজ্জ!”
অহি দু হাতে মুখ ঢেকে বলল,
—“ছি!”
রোদ্দুর নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে বলল,
—“ছি ছি করা?এখন আমি প্যান্টও খুলবো।দেখি তুই এরপরো কিভাবে আমার সামনে থাকিস!”
বলেই একটানে প্যান্টের জিপার খুলে ফেলল।অহি সমস্ত শক্তি দিয়ে এক চিৎকারে রুম থেকে বের হয়ে গেল।দরজা এখনো নড়ছে।অহির চিৎকারের শব্দ এখনো কানে আসছে।রোদ্দুর অবাক হয়ে ভাবল,এটা কি হলো?অজান্তার তো অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কথা।এর আগে তো এতদিন তাই ঘটেছে।চিৎকার চেঁচামেচি করলেই নাই হয়ে যেত।আজ হঠাৎ দরজা দিয়ে পালাল কেন?দরজা তো এখনো নড়ছে?তাহলে কি অজান্তা সত্যি সত্যি এখানে ছিল?শিট…….
রোদ্দুর এক নজর নিজের দিকে তাকিয়ে বিছানায় ঝাপ দিল।বিছানার চাদর টেনে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলল।ছি!অহি ওকে এখন কি না কি ভাবছে!অহিকে এখন মুখ দেখাবে কি করে এখন?
নিচে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।রোদ্দুর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চোখে মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে বের হলো।হাতের কাছে রাখা ফুল হাতা টিশার্টটা গায়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো।
মুখের দিকে ভালো করে এক নজর দেখে নিচের দিকে তাকালো।নাহ!প্যান্টের জিপার লাগানো আছে।তারপর বেশ স্বাভাবিক ভাবে নিচে নামলো।
ড্রয়িং রুমে ভিড় জমে গেছে।অহিকে ঘিরে ছোটখাটো একটা জটলা।পিএইচডি ধারী থেকে শুরু করে পড়াশোনার প না জানা সবাই।সবার মাঝে সোফায় শাহিনুরকে জড়িয়ে অনবরত চোখের জল ফেলছে অহি।রোদেলা একপাশে থেকে অহির পিঠে হাত বুলাচ্ছে।
রোদ্দুর কাছে গিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
—“এখানে কিসের জটলা?”
কেউ উত্তর দিল না।তবে অহি বাদে বাকি সবাই এক জোড়া করে চোখ দিয়ে রোদ্দুরকে গিলে ফেলল।
রোদ্দুর কপাল কুঁচকেই বলল,
—“সবাই আমার দিকে এভাবে কেন তাকাচ্ছো?আমি কি করেছি?”
হঠাৎ অপূর্বর দিকে চোখ পড়তে হেসে বলল,
—“আরে অপূর্ব যে!হোয়াটসঅ্যাপ ব্রো!কেমন আছিস?”
অপূর্ব মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।রোদেলা নিরবতা ভেঙে বলল,
—“রোদ্দুর, অহিকে কিছু বলেছিস?তোর রুম থেকে ভয় পেয়ে দৌঁড়ে বের হয়েছে।কিছু জিজ্ঞেস করছি।বলছেও না।কিছু করেছিস?”
—“হে হে হে।আমি কি করবো রোদ আপু?ও তো তেলাপোকা দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়েছে।তাই না রে অজান্তা?”
অজান্তা কিছু বললো না।রোদেলা বলল,
—“রোদ্দুর।আমি জানি অহি তেলাপোকা ভয় পায় না।তাছাড়া ও প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছে।দুদিন পর পর জীবন্ত তেলাপোকা কাটে।”
রোদ্দুর আমতা আমতা করে বলল,
—“তাই তো!আগে তো ভেবে দেখিনি।ও হ্যাঁ!আপু ও আসলে ভূত দেখে ভয় পেয়েছে।তাই না রে অজান্তা?”
(চলবে)