#গল্পের_নাম : পরিশিষ্ট
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_০৮ (বোনাস পার্ট)
অহি ওয়াশরুমের দরজার এপাশ থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিন্তিত গলায় বলল,
—“রোদ্দুর ভাই, আপনার আবার কি হলো?এমন করছেন কেন?”
রোদ্দুর ওপাশে থেকে আস্তে করে বলল,
—“তুই হঠাৎ এত সুন্দর হয়ে গেলি কিভাবে?ইটস মিরাকল!ও মাই গড!”
অহি শুনতে পেলো না।চেঁচিয়ে বলল,
—“কি বলছেন শুনতে পাচ্ছি না।জোরে বলুন।”
রোদ্দুর উত্তর দিল না।দরজা ধরে উঠে বেসিনের সামনে দাঁড়ালো।আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল।আপনা-আপনি ডান হাত নিজের গালে চলে গেল।একি!তার গালদুটো মেয়েদের মতো লাল হয়ে গেছে কেন?
হন্তদন্ত হয়ে ট্যাপ খুলে চোখে মুখে পানি দিল।তারপর আয়নার দিকে তাকালো।কি সাংঘাতিক!লাল আভা যাচ্ছে না কেন?এভাবে নতুন বউদের মতো লাল টুকটুকে গাল নিয়ে সে বাইরে বের হবে কিভাবে?
এত গরম লাগছে কেন?বাম হাতে সে শার্টের উপরের দুটো বাটন খুললো।কই?গরম ভাব তো তাও যাচ্ছে না।কেমন হাঁসফাঁস লাগছে।হাত বাড়িয়ে ঝরনা ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়াল সে!
মিনিট চল্লিশেক পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ কানে আসলো অহির।সে দরজা খোলার অপেক্ষাই করছে।ইতোমধ্যে দু বার নিচে থেকে ঘুরে এসে দরজা ধাক্কিয়েছে।কিন্তু রোদ্দুর ভাই দরজা খুলেনি। ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে সে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।
রোদ্দুরের কাহিল অবস্থা।কালো রঙের শার্টটা শরীরে লেপ্টে আছে।চুলগুলো বেয়ে বেয়ে পানি পরছে।বুকের বেশ খানিকটা উদাম।মাথা, টাথা কিচ্ছু মুছেনি।ভেজা কাপড়ের পানিতে ফ্লোরে বন্যা হয়ে যাচ্ছে।
অহি বিস্ফারিত নয়নে মুখে হাত রেখে চেয়ে রইলো।এর আবার হঠাৎ করে কি হলো?এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শার্ট, প্যান্ট পরেই শাওয়ার নিয়ে নিল?
অহি অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
—“একি অবস্থা আপনার?”
রোদ্দুর উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকালো।সে ভেবে রেখেছে, যতক্ষণ এ বাসায় থাকবে অহির দিকে আর তাকাবে না।
—“একি!আপনার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে কেন রোদ্দুর ভাই?এতক্ষণ এভাবে কেউ শাওয়ার নেয়?কবে আপনার সুবুদ্ধি হবে?দেখি,জ্বর এসে গেছে কি না!”
অহি পায়ের উপর ভর দিয়ে সামান্য উঁচু হয়ে রোদ্দুরের কপালে হাত রাখতে নিতেই সে ছিটকে দু পা পিছনে সরে গেল।তোতলানো স্বরে বলল,
—“কথায় কথায় গায়ে হাত দিতে চাস কেন অজান্তা?এক চড়ে মুন্ডু ঘুরিয়ে দিব।গায়ে হাত দিবি না খবরদার।আমি ছোট রয়েছি নাকি?”
—“কি?”
—“কি কি করছিস কেন?তুই একটা বেয়াদব,বেশরম মেয়ে।তোর মতো বেহায়া মেয়ে আমি দুটো পৃথিবীতে দেখিনি।তুই একটা গায়ে পড়া মেয়ে।”
—“আমি আবার কার গায়ে,কখন পড়লাম?আজব!”
—“এক্ষুনি তো পড়তে নিয়েছিলি!”
—“সে কি!কখন?আচ্ছা বাদ দিন!আমি যেমন হই না কেন,তাতে আপনার কোনোদিন কিচ্ছু আসবে, যাবে না।কিন্তু আপনি এই ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকলে নির্ঘাত জ্বর আসবে।চেঞ্জ করুন।”
—“করবো না!জ্বর আসে আসুক।তাতে তোর কি!আমি আজ সারা রাত এভাবে থাকবো।তাতে তোর সমস্যা আছে?”
—“রোদ্দুর ভাই, আপনি পাগল হয়ে গেছেন।কি বলছেন এসব?”
—“হুঁ,আমি তো পাগলই।আর তুই সুস্থ মানুষ হয়ে পেত্নীদের মতো সাজ দিয়েছিস।তোকে দেখতে কি বিশ্রী লাগছে!ইয়াক থু!”
বলেই বড়ো বড়ো পা ফেলে বাইরে বের হয়ে গেল রোদ্দুর।অার অহি হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।এসব কি হচ্ছে চারপাশে?
——————
সন্ধ্যার পর পরই রোদ্দুরের হাড়গোড় কাঁপিয়ে জ্বর আসলো।হুট করে এভাবে জ্বর আসায় সবাই চিন্তিত।থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখা গেল জ্বর ১০৪° এর কাছাকাছি।
ডিনারের আগে বেলুন ফুটিয়ে, স্প্রে করে অহি তার বাইশ তম জন্মদিনের কেক কাটলো।রোদ্দুর উপস্থিত রইল না তাতে।সবাই যার যার মতো উইশ করলো।কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে গেছে।সবাই থমকে থমকে অানমনা হয়ে যাচ্ছে।
সবাই হালকা পাতলা করে ডিনার সারলো।ডিনার শেষে ঘরোয়া ভাবে গানের আয়োজন করার প্লান ছিল।সেটা আপাতত স্থগিত রাখা হলো।
অহির বাবা বেশ কয়েকবার ডাক্তার ডাকার কথা বললো।কিন্তু রোদ্দুর বেগ ধরেছে।পৃথিবীর পাখা গজিয়ে উড়া শুরু করলেও সে ডাক্তার দেখাবে না।তার নাকি কঠিন অসুখ হয়েছে।এ অসুখ ডাক্তারে সাড়বে না।পরে কেউ আর জোর করেনি।
রাতের বেলা অহির মা শাহানা জোর করে রোদ্দুরকে স্যুপ করে খাওয়ালো।তারপর মেডিসিন খাইয়ে দিল।রোদ্দুর খালার হাত ধরে বলল,
—“খালা,আমার কঠিন অসুখ হয়েছে।আমি হয়তো মরে যাব!”
শাহানা রোদ্দুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—“বাবা!এসব বলতে হয় না।তোমার কিচ্ছু হবে না।এই যে ওষুধ খাইয়ে দিলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বর থাকবে না।তুই ঘুমা তো!”
—“খালা,আমার হুট করে কি যেন হয়ে গেছে।আমাকে নিশ্চিত পরী থুক্কু জ্বীনে ভর করেছে।তুমি বরং কাল সকালে কবিরাজ ডেকে ঝাড় ফুঁকের ব্যবস্থা করো।”
—“আচ্ছা,ঠিক আছে।সকালে দেখা যাবে।তুই ঘুমা এখন।”
রোদ্দুর সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করলো।হঠাৎ মনে পড়ায় চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
—“খালা,খেয়াল রেখো!কোনো পরী টরী যেন রুমের ভেতরে না ঢুকে।এ বাসায় আর আসা যাবে না।হুট করে চোখের পলকে আমায় ফুস করে ধরে পরীস্থানে নিয়ে যাবে!ফুস!”
শাহানার বড্ড মায়া হলো।তিনি তিন বার আয়াতুল কুরসী পড়ে রোদ্দুরের মাথায় ফু দিল। ছেলেটা জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকছে।আহারে!
অহি দরজায় হালকা শব্দ করে ভেতরে ঢুকলো।ছোট বেলা থেকে তার অভ্যাস হয়ে গেছে অন্য রুমে প্রবেশ করার আগে মৃদু শব্দ করা।সে অলরেডি ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে।কফি কালারের সূতির থ্রি পিস গায়ে।ওড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে এগিয়ে আসলো।
রোদ্দুরের দিকে চেয়ে শাহানাকে বলল,
—“রোদ্দুর ভাইয়ের সাথে ঘুমাবে কে মা?”
শাহানা বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,
—“কেন?কেউ না ঘুমালে তুই ঘুমাবি নাকি?”
—“মা!তুমিও কি রোদ্দুর ভাইয়ের মতো পাগল হয়ে গেলে?”
—“এই,আমাকে একদম পাগল বলবি না!তোর বাপের থেকে শিক্ষা পেয়েছিস, না?দিনের ভেতর হাজার বার নিজে পাগল বলে শান্তি পায় না,এখন মেয়েকে দিয়েও বলাবে?এরকম হলে কিন্তু আমি এ বাড়ি থাকবো না।আগেই বলে রাখলাম।”
—“মা,চেঁচামেচি করবে না প্লিজ।বাবা গরম জল চাচ্ছে।দিয়ে আসো।আমি এখানে আছি!”
—“দাঁড়া!গরম জল এখন তোর বাপের পাছায় ঢালবো।আমায় দাসী পেয়েছে?চব্বিশ ঘন্টা হুকুম করবে!”
—“মা,কিসব ভাষা ইউজ করছো?রোদ্দুর ভাই আছে এখানে!”
—“থাকুক!তোর বাপ কি করেছে জানিস?গতকাল রাতে একটু বলছিলাম,ওগো!টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি দাও তো!আমায় বলে কি জানিস?বলে,উঠে গিয়ে খেয়ে নাও!নড়াচড়া না করে তো শুধু ভুড়ি বাড়াচ্ছো!কি বজ্জাত দেখেছিস!”
অহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—“হ্যাঁ,দেখলাম।তুমি এখন যাও তো মা।”
শাহানা অনিচ্ছা নিয়ে চলে গেল।অহি একটা চেয়ার টেনে রোদ্দুরের শিয়রের পাশে বসলো।রোদ্দুর এখন অপূর্বর রুমে শুয়েছে।অপূর্বকে আশপাশে দেখা যাচ্ছে না।অন্য রুমে ঘুমিয়ে গেল নাকি?
রোদ্দুর ঘুমাচ্ছে।মুখটা পান্ডুর মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।অহি ডান হাতটা হালকা করে রোদ্দুরের কপালে রাখতেই চমকে গেল।গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।মেডিসিন খাওয়ার পরেও কমছে না কেন?ছেলেটা কি যে করে না!কি দরকার ছিল ওতক্ষণ ভেজার?
বাটিতে অল্প পানি নিয়ে তাতে এক টুকরো কাপড় ভিজিয়ে রোদ্দুরের কপালে দিল।রোদ্দুর ঘুমের ঘোরে শিউরে উঠলো।
রোদ্দুর ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল।অহি কান পেতেও তা বুঝতো পারলো না।
————————
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই নিজের মাথা চেপে ধরলো রোদ্দুর।মাথার ভেতর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।বিছানায় উঠে বসে পাশে তাকালো।
পাশে কেউ নেই।সে বেলকনির কাচের ফোঁকর দিয়ে বাইরে দৃষ্টি মেলল।সূর্য এখনো উঠেনি!
রোদ্দুর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক একদম।সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।হুট করেই তার মাথায় অস্পষ্ট একটা দৃশ্য ভেসে উঠে।রাতের বেলা সে যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন অহি তার দিকে ঝুঁকে কিছু একটা করছিল।হ্যাঁ!তার সারামুখে এলোপাতাড়ি চুমু খেয়েছে!কি সাংঘাতিক!
রোদ্দুর এক টানে গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে অহির রুমের দিকে পা বাড়াল।অহিকে আজ উচিত শিক্ষা দিতে হবে।তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে….
অহির রুমের দরজা খোলা।রোদ্দুর ভেতরে ঢুকে চারিদিক তাকাল।অহি রুমে নেই।সে তবুও চেঁচিয়ে বললো,
—“অজান্তা!সাহস থাকলে সামনে আয়!আমার জ্বরের সুযোগ নিয়ে চুমু খাওয়া!তোর চুমুর আমি দফারফা না করলে আমার নামও রোদ্দুর হিম নয়!তোর কলিজা কত বড়ো, আমি সেটা আজ দেখেই ছাড়বো!বের হ!বের হ বলছি!”
ওয়াশরুমের দরজা খুলে রোদেলা বের হলো।তার চোখে মুখে পানি।কপাল কুঁচকে বলল,
—“এত্তো ভোরে চিল্লাফাল্লা করছিস কেন রোদ্দুর?তোর কবে যে জ্ঞান হবে!ছাড়!কি যেন বলছিলি?অহি তোকে চুমু টুমু খেয়েছে না কি যেন?”
রোদ্দুর মিইয়ে গেল।রোদেলা আপু এ রুমে কি করছে?অহি কোথায়?সে মিনমিন করে বলল,
—“ইয়ে মানে আপু।মনে হচ্ছিল অহির মতো দেখতে কেউ আমার ঘুমের ঘোরে…… ”
—“এক রাতের জ্বরে দেখি তোর সম্পূর্ণ মাথা আউলে গেছে।অহি তো সারারাত আমার সাথে ছিল।আমরা দুজন গেস্ট রুমে একসাথে ঘুমিয়েছি।এ রুমে অপূর্ব ছিল রাতে।”
—“তার মানে আমি স্বপ্নে দেখেছি অহি……ও মাই গড!”
রোদ্দুর এক দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।যাওয়ার সময় দরজার সাথে একটা বাড়িও খেল।কিন্তু তার খেয়াল নেই।দ্বিকবিদিক হারিয়ে এক দৌঁড়ে অপূর্বর রুমে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেল! এদিকে
(চলবে