#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২৪
-মেঘ!একটু এদিকে আসবা?
শুভ্রের ডাক শুনে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াই আমি।গিয়ে দেখি কেমন ভেজা বেড়ালের মতো কাচুমাচু হয়ে আছে।
-কি হয়েছে?
আমার কথার জবাবে শুভ্র আঙুল দিয়ে ইশারা করে কিছু দেখায়।আমি বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকাই।আরেহ এটা তো তেলাপোকা! এটা নিয়ে এমন ঢং করার কি আছে?
-তেলাপোকা।
-তা তো আমিও জানি।একটু তাড়িয়ে দাও না!আমি ওয়াশরুমে যেতে পারছিনা তেলাপোকা জন্য।
শুভ্রের কথা শুনে আমি ভেংচি কাটি।এহ!ঢং!তেলাপোকার জন্য ওয়াশরুমে যেতে পারছিনা!এই লোকটাকে না দেখলে হয়তো জানতেই পারতাম না ছেলেরাও তেলাপোকাকে ভয় পায়।বিরক্তি নিয়ে ঝাড়ু আনতে যাই তেলাপোকা মারার জন্য।ঝাড়ু নিয়ে এসে দেখি তেলাপোকা বালতির চিপায় লুকিয়েছে।কোনো রকমে চিপা থেকে বের করে আনতে পারলেই ঝাড়ুর এক বারিতে খতম করবো বেটাকে।
-আয় আয় আয়
-আরেহ মেঘ এটা তেলাপোকা মুরগী না।
-চুপ!তেলাপোকাকে ভয় পায় আবার আসছে জ্ঞান দিতে।চুপচাপ দাঁড়ায় থাকো।
ঝাড়ি দিয়ে বলি শুভ্রকে।আমার ঝাড়ি খেয়ে বেচারা মুখে আঙুল দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।অবশেষে তেলাপোকা মহাশয় বের হয়।আমি ঝাড়ু দিয়ে বারি মেরে মারতে যাবো ঠিক সেইসময় বেটা উড়াল দেয়।
-আম্মু বাঁচাও তেলাপোকা
আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড় দিই।আমার পেছন পেছন শুভ্রও দৌড় দেয়।সেও চিৎকার করে বলে,,
-এই মেঘ আমায় রেখে কই যাও
একদৌড়ে আমরা দুজন ড্রয়িংরুমে চলে আসি।আমি হাঁপিয়ে ওঠে ঠাস করে সোফায় বসে পড়ি।শুভ্র ভয় কাটাতে দুই দুই গ্লাস পানি খেয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।এই মুহুর্তে আমার মন চাচ্ছে লোকটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।কোথায় সিনেমা সিরিয়ালের মতো আমি তেলাপোকা দেখে ভয় পাবো আর উনি আমায় বাঁচাবেন, তা না!উলটা আমায় ডাকে তেলাপোকা মারার জন্য।অনেকে হয়তো ভাববে আমি তেলাপোকা দেখে ভয় পাই।ব্যাপারটা আসলে তা নয়।তেলাপোকা দেখলে আমার কেমন যেন গা ঘিনঘিন করে।মারতে পারবো।কিন্তু উড়াল দিলেই আমার যত সমস্যা।বাই এনি চান্স গায়ের ওপর যদি এসে বসে!ইশ!ভাবতেই কেমন লাগে।
শুভ্র এখনো গামছা গলায় ঝুলিয়ে বসে আছে।আড়াইটা বাজে গোসলের নাম নেই।
-এখন তো আর বাথরুমে তেলাপোকা নাই।তো এখানে বসে আছো কেন?যাও বাথরুমে যাও।
-যদি থাকে তেলাপোকা?
-তোমায় খেয়ে ফেলবে না।যাও গোসলে যাও।
শুভ্র গোসলে যায়।আমি চুলটা হাত
খোঁপা করে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াই।
★
ডিসেম্বরের শুরুর দিক।বেশ ঠান্ডা পড়েছে।তারওপর বৃষ্টি।মেঘালয়ের কাছে হওয়ায় সিলেটে প্রায় সারাবছরই বৃষ্টি হয়।এই বৃষ্টিটা ঠান্ডাকে বোধহয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।শুভ্র আর আমি সোফায় বসে আছি।ও খেলা দেখছে আর আমি পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়ে ফোন টিপছি আর কফি খাচ্ছি।প্রায় দেড় ঘন্টার মতো আমি এভাবেই বসে আছি কিন্তু পা গরম হওয়ার কোনো নাম নেই।ছোট থাকতে ভাইয়ার জামার ভেতর পা ঢুকিয়ে পা গরম করতাম।আমার শীতল পায়ের স্পর্শ পেয়ে ভাইয়া কি চিৎকারটাই না দিতো!এর প্রতিশোধ নিতে আবার ভাইয়া আমার জামার ভেতর বরফ ঢুকিয়ে দিতো।এই নিয়ে মারামারিও কম হতো না!কে জানতো সেগুলো একসময় স্মৃতি হয়ে যাবে!দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি।
হঠাৎ করেই মনে শয়তান কুড়াকুড়ানি দিতে লাগলো।আচ্ছা ছোট বেলার মতো যদি এখন শুভ্রের জামার ভেতর পা ঢুকিয়ে দিই কেমন হবে?দিয়েই দেখি কেমন প্রতিক্রিয়া করে শ্বাশুমার ছেলে।
যেই ভাবনা সেই কাজ।আমার হিমশীতল পা তার জামার ভেতর ঢুকিয়ে দিতেই শীতল স্পর্শে উনি লাফ দিয়ে উঠেন।
-আল্লাহ গো!
চিৎকার দিয়ে কথাটা বলে আমার দিকে তাকায় শুভ্র।আমি শয়তানি হাসি দিই।বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
-Megh this is too much! বাচ্চা নাকি তুমি?এখনো ছেলেমানুষী করো।
-আগে কি বলেছিলাম?
-কি বলেছিলে?
-মাথামোটা!কিছুই মনে থাকে না।বলেছিলাম আমায় সামলাতে পারবেন না আপনি।তখন তুমি বলেছিলে পারবো।কিন্তু আজ দেখো!
-ওয়েট!তুমি আগে আপনি তুমি ব্যাপারটা ঠিক করো।
-আমার জামাই।আমি যখন যাই খুশী তাই ডাকবো!
-ডাকিয়ো প্রবলেম নাই!কিন্তু খোদার দোহাই লাগে!পা বের করো।
-উহু!আমার জামাই আমি যা খুশী তাই করবো!
-অহ আচ্ছা!তাহলে আমার বউয়ের সাথে আমিও যা খুশী তাই করবো।
কথাটা বলেই শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে শুভ্র।আমি ঘাবড়ে যাই।তোতলাতে তোতলাতে বলি,,
-একদম না।কম্বল উঁচু করবেন না।ঠান্ডা বাতাস ঢুকবে।
কে শোনে কার কথা!উনি জোর করেই কম্বল উঁচু করে কম্বলের ভেতর ঢোকেন।ঢুকে আমায় জাপটে জড়িয়ে ধরে।ঠান্ডা আবহওয়ায় শুভ্রের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে আমিও ওকে জড়িয়ে ধরি।
-জানো?আমার না একটা জিনিস করতে খুব মন চাচ্ছে!
শুভ্রকে জড়িয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলি আমি।শুভ্র বোধহয় আমার চিন্তাভাবনার কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো।সন্দিহান দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
-মানে?
আমি তার কথার জবাব দিই না।হিমশীতল হাত দুটো দিয়ে শুভ্রের গাল টিপে বলি,,,
-আমার কুচুপু জামাই।
আমার এমন আচরণের মানে খুঁজে পায় না শুভ্র।সে জানে আমি তারসাথে ঝাঁঝালো গলায় কথা বলতে ভালোবাসি।হঠাৎ করে যদি আদুরে গলায় কথা বলি তাহলে নিশ্চয়ই কোনো দুষ্টুমি ফাজলামো করবো।
-মেঘ তোমার মনে কি ঘুরছে আমি জানি না। খারাপ কিছু ঘুরছে তা আমি ভালো করেই জানি।
কাঁপা কন্ঠে শুভ্র বলে।আমি ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বলি,,,,
-কালকে না ইউটিউবে একটা মেকাপ টিউটোরিয়াল দেখলাম।
-দে…দে..দেখছো ভালো কথা।আমায় বলো কেন?
-কারণ তোমার ওপর সেই টিউটোরিয়াল এপ্লাই করবো।
শুভ্র লাফ দিয়ে সরে যায় আমার থেকে।কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
-ম্যাডাম মাফও চাই দোয়াও চাই।
-দোয়া করলাম।কিন্তু মাফ করতে পারলাম না।
কথাটা বলেই আমি শুভ্রের দিকে এগিয়ে যাই।ও ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,,,,
-আমার সাথেই কেন?
-তো কার সাথে করবো?জামাই কি আমার সত্তুরটা ?তুমি বসো।আমি মেকাপ নিয়ে আসছি।যদি না মানো তাহলে বলে দিলাম কথা বলবো না
কথাটা বলে আমি ঘরে যাই মেকাপ আনতে।আমি জানি আমার চুপ থাকাটাই শুভ্রের দুর্বলতা।কোনো কিছু নিয়ে জেদ করার পরও যদি শুভ্র না মানে তখন বলি কথা বলা বন্ধ করে দেবো।ব্যস শুভ্র গলে যায়। মেকাপের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট কখনোই ছিলো না।বিয়ের আগে ওই কাজল, লিপস্টিক, আইলাইনার, টিপ দিয়ে বিয়েবাড়ি পার করতাম।কিন্তু বিয়ের পর দেখি শুভ্রই বিভিন্ন নামি-দামি ব্যান্ডের মেকাপ প্রোডাক্ট কিনে দেয়।বলে ছিলাম আমি মেকাপ করতে পাই না।বলেছিলো ইউটিউব দেখে দেখে দেখে সাজতে।অগত্যা!ইউটিউবের মেকাপ টিউটোরিয়াল সব শুভ্রের ওপর এপ্লাই করেছি।শুধু শুধু রিস্ক নিয়ে নিজের ন্যাচারাল ফেইসকে ভুত সাজানোর মানে দেখি না।
প্রায় দুই ঘন্টা ধরে শুভ্রকে সাজাই আমি।আমার ব্ল্যাকমেইলে পড়ে সেও চুপচাপ বসে থাকে।তখন শুধু লিপস্টিক দিতে বাকী।এমন সময় আমার ফোনটা বেজে ওঠে।ভাইয়া ফোন দিয়েছে।
-কিরে পেত্নী?
-আমার একটা সুন্দর নাম আছে।আমায় ঐ নামে ডাকলেই খুশী হবো।
-আমার ঠেকা।তা কেমন আছিস তোরা?
-এইতো ভালোই।তোমার বোন জামাইকে সাজিয়ে দিচ্ছি। ভালো না থেকে উপায় আছে?
আমার কথা শেষ হতে না হতেই শুভ্র আমার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে যায়।আমার নামে ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে লাগে সে।
-ভাইয়া আপনার বোন আমায় জাস্ট জ্বালায় মারছে।শুধু শুধু বাচ্চাদের মতো জিদ করে রাগ করে।
-বিয়ের সময় ভাইয়া আমার হাত তোমার হাতে দিয়ে বলেছিলো পেত্নীকে হাতে তুলে দিলাম।সামলিও তার তান্ডব।
কথাটা বলে আমি ফোন কেড়ে নিই।
-তুই এখনো ওইগুলো কাজ করিস?
-আমার এই বাজে স্বভাব কোনো দিন যাবে না।
-জানি তো!সাধে কি আম্মু তোকে বান্দর বলে?যেটার জন্য ফোন দিছিলাম বলি।আমি দেশে আসছি ছুটিতে।তো আমরা মানে আমি,আব্বু,আম্মু,দাদি আর তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন সবাই মিলে সিলেট যেতে চাচ্ছি।সব গুছিয়ে রাখিস।
-আচ্ছা আসিও।আমারও একা থাকতে ভালোলাগে না।তোমরা আসলে বাসাটাও ভরা ভরা লাগবে।আর তোমাদের উছিলায় যদি ঘুরতে পারি!শুভ্র তো সময়ই পায় না।আর পেলেও শুধু শুয়ে বসে সময়টুকু পার করে।কোথাও নিয়ে যায় না।তাড়াতাড়ি আসো তোমরা।
ভাইয়া আর কিছু বলে না ফোন কেটে দেয়।এই শীতের দিনে?গরমের দিনে আসলে তাও কথা ছিলো।শীতের দিনে থাকা নিয়ে প্রবলেম হতে পারে।তাও ইনশাআল্লাহ সব মেনেজ করে নেবো।আমি কথা বলার ফাঁকে শুভ্র গিয়ে সব মেকাপ উঠিয়ে ফেলেছে।ইশ আমার পরিশ্রমটাই বৃথা হলো।ভেবেছিলাম একটু ছবি তুলবো!তা আর হলো কই!
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ