#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৮

ক্লাসে ঢুকেই দেখি বুশরা আর ওর সাঙ্গপাঙ্গরা একসাথে গুটি মেরে ফোনে কি যেন দেখছে।চুপিসারে কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি শুভ্রর ছবি।মানে?এই মেয়ে আবার আমার জিনিসের ওপর নজর দিলো নাকি?বুঝেও না বুঝার ভান করে ওদের কাছে যাই।অবুঝ গলায় বলি,,,

-তোমরা যার ছবি দেখছো এ কে গো?
-ওমা তুমি এনাকে চিনো না?

অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে শিলা।আমি শান্ত গলায় উত্তর দিই,,

-নাহ, কে ইনি?
-ইনি ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই।রাজনীতির সাথে যুক্ত তিনি।কেউ তার মুখ দেখেনি।তবে অনেক মেয়েই তার ওপর ক্রাশড।

ওয়াও।মুড অফ করে দেওয়ার মতো ভালোই কথা ছাড়লো বুশরা।আমি আর কিছু বললাম না।এদের সাথে কথা বলতে গেলে শুধু কথা বাড়বেই।আমার জানামতে সব গুলোর বয়ফ্রেন্ড আছে শুধু বুশরার বাদে।এই মেয়ে আবার শুভ্রর দিকে নজর দিলো না তো?কেন যেন এই মেয়েকে দেখলে মনে হয় এর সাথে আমার হাজার বছরের শত্রুতা।ডিপার্টমেন্টে শুনলাম নতুন স্যার এসেছে।বেশ ইয়াং।এই নিয়ে মেয়েদের কৌতুহলের শেষ নেই।একসময় আমারও ইয়াং টিচারদের নিয়ে প্রচুর কৌতুহল আগ্রহ ছিলো।কিন্তু হঠাৎ করে কোনো এক কারণে এদের প্রতি আগের মতো আগ্রহ নেই।বেশ আগ্রহ নিয়েই বাকীরা নতুন স্যারের ক্লাস করলো।শুধু আমিই বোধহয় ক্লাসে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম।ক্লাস শেষে ফুলের সাথে ক্যান্টিনে যাই।আজ ফুলের জন্মদিন। একজন্য সে ট্রিট দেবে।আমি শুধু ক্যান্টিনে যাবো।ও বাকীদের ট্রিট দেবে আমি তাকিয়ে দেখবো।আগে থেকেই বলে দিয়েছি আমায় আলাদা খাওয়াতে হবে।মেয়ে রাজি হয়েছে।বাকীদের খাওয়ানো শেষ হলে সে স্পেশাল করে আমায় ট্রিট দেবে।বাকীদের খাওয়ানো হয়ে গেলে ওকে নিয়ে যাই ফুচকার দোকানে।ফুল ফুচকাওয়ালা মামাকে এক প্লেট ফুচকা বানাতে বলে।এত কিপটে কেন মেয়েটা?একপ্লেটে না ভরে মন না ভরে প্লেট।বাহুতে থাপ্পড় মেরে বলি,,,

-কিসের একপ্লেট?এত কিপটেমি করিস কেন?
-দুই প্লেট খাবি?আচ্ছা,মামা দুইপ্লেট ফুচকা বানান।
-উহু।পাঁচ প্লেট।

আমার কথা শুনে ফুল যেন আকাশ থেকে পড়ে।বড় বড় চোখ নিয়ে বলে,,,,

-আর ইউ সিরিয়াস?কুলোতে পারবি বোম্বাই মরিচের পাঁচ প্লেট ফুচকা খেয়ে?পেট খারাপ হয় যদি?
-কিচ্ছু হবে না চিল।

মামা ফুচকা বানাতে লাগেন।আমি আর ফুল ফুটপাতের এক জায়গায় ঝেড়ে বসি।ফেসবুকে হাজারো শুভেচ্ছার রিপ্লাই দিতে ব্যস্ত ফুল আর আমি আমি ফুচকার অপেক্ষায়।কিছুক্ষণ বাদেই মামা ফুচকা হাতে দেন।আমি নিমিষেই দু প্লেট ফুচকা সাবাড় করে দেই।ঝালের চোটে নাক মুখ দিয়ে রীতিমতো পানি বের হচ্ছে।আমার এই রকম অবস্থা দেখে ফুল বেশ ভালোই মজা পাচ্ছে।হাসতে হাসতে বলে,,,

-আরও খাবি?
-খাবো না কেন?অবশ্যই খাবো।

ঝালের জন্য হুশ হুশ করতেছি।এরই মধ্যে চোখের পলকে কেউ একজন আমার সামনে পানির বোতল ধরে।ঘাড় ঘুরিয়ে শুভ্রকে দেখতে পাই।উনাকে দেখে আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে ফুল।লাফ দিয়ে উঠে উত্তেজনার সাথে বলতে লাগে,,,

-omg omg..!আমি স্বপ্ন দেখছি না ত?আমার সামনে শেখ শুভ্র!আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

শুভ্র ফুলের কথার কর্ণপাত করে না।আমার দিকে পানি বোতল এগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,,,

-খাও।

আমি আর কিছু বলি না।কাঁপা হাতে উনার থেকে পানির বোতল নিই।উনি আমায় পানির বোতল হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।কিন্তু ফুল!মেয়ে উনার সাথে সেল্ফি তোলার জন্য লাফাচ্ছে।পরে শেষে দেখলাম উনিও বাধ্য হয়ে ফুলের সাথে সেল্ফি তুললেন।যখন দুটোকে পাশাপাশি একসাথে দেখলাম না!মনটা বলছিলো দুটোকে হারপিক খাইয়ে দিয়ে আমি মরে যাই।ওয়েট!আমি এমন জেলাসি ফিল করছি কেন?আমার তো জেলাসি নামের কোনো ফিলিংই ছিলো না।তবে আজ কেন এত জেলাসি ফিল করছি আমি!হঠাৎই এশার বলা কথাটা কানে বেজে উঠলো,,

-প্রেমে পড়লে মানুষ জেলাসি ফিল করতে শেখে!

অজান্তেই মুচকী হেসে দিই।

ফুচকা খেয়ে যখন দুজন হলে যাচ্ছিলাম তখন ফুলের আকষ্মিক প্রশ্নে আমি থেমে যাই।প্রশ্নটা হচ্ছে কেন শেখ শুভ্র আমার দিকে পানি এগিয়ে দিলেন।আর এমন ভাবে খেতে বললেন না জানি আমরা কতদিনের চেনাপরিচিত।আমি কি বলবো খুঁজে পাই না।এড়িয়ে যাই ফুলের প্রশ্নকে।


রাত একটা ছুঁই ছুঁই।কিন্তু উনার অনলাইনে আসার খবর নেই।কেমন যেন লাগছে আমার।ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন উনি।বলেছিলো কখনো যদি দরকার হয় তাহলে ফোন করতে।ফোন করার সাহস পাচ্ছি না।একটা ছোট্ট মেসেজ দিই।ভেবেছিলাম রিপ্লাই দেবেন।কিন্তু আমি রিপ্লাই পাই না।ওয়াইফাই অফ করে ঘুমোতে যাবো ঠিক সেই সময় উনি মেসেজ দে,,,

-সরি, লেট হয়ে গেলো আজকে।
-হতেই পারে।প্রবলেম নাই।
-রাগ করেছো?
-রাগ করবো কেন?রাগ করার আমি কে?
-তারমানে রাগ করেছো।বললাম তো সরি।

আরেহ এই লোক বড়ই অদ্ভুত দেখছি।বললাম রাগ করি নাই।তাও কেমন করছে!এমন ভাবে মেসেজ গুলো দিচ্ছেন যেন আমি তার গার্লফ্রেন্ড। আমি রাগের চোটে ওয়াইফাই অফ করে ঘুম দিই।


ইমন ভাইয়ার কাছ থেকে শুনলাম শুভ্র আমায় ডেকেছেন।কেন ডেকেছেন আল্লাহই জানেন।সেই প্রথম দিনের মতো রুম নাম্বার একশো এগারোয় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে।পুরো রুম অন্ধকার। আমি প্রবেশ করতেই ধুম করে সব লাইট জ্বলে ওঠে।ব্যানারে আমার ছবি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা হ্যাপি বার্থডে মাই কুইন।ঘরের এক কোণ থেকে শুভ্র আসেন।আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন।হাতে জবা ফুল।উনাকে বলেছিলা লাল জবা ফুল আমার খুব পছন্দ।তবে উনার হাতের জবাটা সাদা রঙের। শান্ত গলায় বলেন,,

-I love you.Do you love me?

এভাবে প্রপোজ পাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের ছিলো।ভাবতে পারিনি যে আমার আমার ইচ্ছাটা এভাবে পূরণ হবে।ফিলিং সেলিব্রিটি। খুশীতে নাচতে ইচ্ছা করছে আমার।কিন্তু বেশি লাফালে বুঝে যাবে।একটু ভাব নেওয়া লাগবে!একটা মুচকী হাসি দিয়ে বলি,,,

-থ্যাংক ইউ ভাইয়া সারপ্রাইজের জন্য।

আমার কথা শুনে বাকিরা হো হো করে হেসে উঠে।আমার কথায় যে উনি খুব অপমানিত বোধ করেছেন তা উনার চোখই বলে দিচ্ছে।টেবিলের ওপর কেক আর কিছু চকলেট ছিলো।সেখান থেকে দুটো চকলেট নিয়ে এসে বাকিদের বলি,,,

-আপনারা ইঞ্জয় করুন।চকলেটের জন্য আবার থ্যাংক ইউ।

কথাটা বলে চলে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ শুভ্র পেছন থেকে ডাক দে,,,

-মেঘ!

আমি থেমে যাই।পিছন ঘুরে তাকাই।উনি করুনার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার চাহনিতে আমিও দুর্বল হয়ে পড়ি।অসহায় কন্ঠে উনি বলেন,,,

-লাল জবা পাই নাই।তাই বলে এভাবে চলে যাবা?
অন্তত কেকটা কাটো।
-ইটস হারাম ব্রো।এটা বিধর্মীদের নীতি।
-হালাল আয়োজনও করেছি।ক্লাস শেষে দেখা করিও।আর কেক আমি না ইমন, আসিফ, রোদ ওরা এনেছে।

কেক কেটে না গেলে এখন একটু বেশি ভাব নেওয়া হবে।যা আমার কাছে বেমানান।গিয়ে কেক কাটি।উনারা সবাই তালির সাথে একযোগে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ভাবি ‘ বলে আমায় উইশ করেন।আমি চলে যাই।আবার পেছন থেকে শুভ্র ডাক দেন,,

-আমার উত্তর কিন্তু আমি পাই নি মেঘ।

আমি কিছু বলি না।চলে যাই।উনি দূর থেকে চিৎকার করে বলেন,,,

-নিরবতা সম্মতীর লক্ষণ।


ক্লাস শেষে উনার কথা মতো আমি উনার সাথে দেখা করি।উনি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।পেছনে ব্যাগে কিছু একটা হয়তো আছে।আমি তাকে প্রশ্ন করি ব্যাগে কি?উনি উত্তর দেন,,,

-খিঁচুরি আর কিছু চকলেট আছে।তোমার বার্থডে তো তাই এইসবের আয়োজন।
-প্রায়ই দেখি এগুলো করেন।টাকা লাগে তো এগুলো করতে। পান কই এত টাকা?
-আমাদের ফান্ড আছে।ভার্সিটির সবাই যে যার সাধ্যমতো ঐ ফান্ডে টাকা জমা দেয়।তবে তোমার জন্মদিন উপলক্ষে যা করা সব নিজেই করেছি আমি।ফান্ড থেকে কিছু নিই নি।অনেক হয়েছে প্রশ্নোত্তর। এবার বাইকে ওঠো।

আমি আর কিছু বলি না।উনার কথা মতো বাইকে উঠি।উনি আমায় বাইক দিয়ে ঘুরে ঘুরে ক্যাম্পাস আর তার আছে পাশে ছিন্নমুল মানুষদের খাবার দেন।আমি ভাবতেও পারিনি কেউ আমার জন্মদিন এভাবে পালন করবে।লোকটার কাজের জন্য বার বার আমি লোকটার প্রেমে পরে যাচ্ছি।কিন্তু আমার জন্মদিন তো অনলি মি করা। উনি জানলেন কিভাবে?

-আমি তো ফেসবুকে আমার ডেট অফ বার্থ অনলি মি করে রেখেছি।আপনি জানলেন কিভাবে?

আমার কথায় উনি ফিক করে হেসে দেন।আমি কৌতুহল নিয়ে তাকাই।উনি বলেন,,

-মনে করে দেখো।একবার জিজ্ঞাস করছিলাম আমি তোমার ডেট অফ বার্থ কবে!

চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here