নিজের ছোট বোনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার রিপোর্ট লিখাতে এসে আমার বিয়ে হয়ে যাবে এটা আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি।
ফ্ল্যাশব্যাক-
– অফিসার, আমার ছোট বোন কাল রাত থেকে নিখোঁজ আর আপনারা বলছেন রিপোর্ট লিখবেন না।
-আমরা বলছিনা যে রিপোর্ট লিখব না। শুধু একটু অপেক্ষা করতে বলছি।
-অপেক্ষা! গত তিন ঘণ্টা যাবত আমি অপেক্ষা করছি এখানে অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।(প্রচণ্ড রেগে)
-আর একটু অপেক্ষা করুন।
কথাটা শুনেই আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কিছু বলতে যাবো তার আগেই পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।
-আর অপেক্ষা করতে হবে না। আমি এসে গেছি।
কণ্ঠস্বর শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি দেশের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট আহিয়ান আহনাফ দাঁড়িয়ে আছেন। ৫ফিট ৯ইঞ্চি উচ্চতা, ফর্সা চেহারায় ছোট ছোট দাঁড়ি আর ডান গালের মাঝখানটায় কালো কুচকুচে ছোট্ট একটা তিলটায় যেন তাকে আরো আকর্ষণীয় দেখতে লাগছে। কিছুক্ষণ সেই সুদর্শন পুরুষটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে পুলিশ অফিসারের কথায় আমার ধ্যান ভাঙে।
-স্যার আপনি চলে এসেছেন। প্লিজ স্যার বসুন।
আহিয়ান চেয়ারে বসতে বসতে আমার উদ্দেশ্যে বললেন
-মিস ঈশা, ছোট বোনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছে আপনাকে।
-আমার বোন কাল রাত থেকে বাড়ি ফেরেনি। তাকে কোথাও খুঁজেও পাচ্ছি না। আমার কি দুশ্চিন্তা করা উচিত নয় বলুন?(অস্থির হয়ে বললাম)
হ্যাঁ, অবশ্যই উচিত। তবে এখন আর হতে হবে না। আপনার বোন সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। আসাদ ছবিটা তোমার ম্যামকে দেখাও।(তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার অ্যাসিস্টেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন)
আসাদ নামের লোকটা আমার দিকে একটা ছবি এগিয়ে দিলেন। ছবিতে আমার বোনকে হাত-পা বেধে একটি চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
-তারমানে নিশাকে আপনিই কিডন্যাপ করেছেন।
-হ্যাঁ। (নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন)
-অফিসার আপনার সামনে এই লোকটা বলছে সে আমার বোনকে কিডন্যাপ করেছে। ছবিও দেখালো। অথচ আপনারা কিছুই করছেন না।(উত্তেজিত হয়ে বললাম)
-ম্যাডাম আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না। স্যারের কথা আগে শুনুন।
-কি শোনার আছে আর? আপনারা সকলে মিলে আমার বোনকে আটকে রেখেছেন। কী চান আপনারা আমাদের থেকে?(বলতে বলতে কেঁদেই দিলাম)
আহিয়ান চেয়ার থেকে উঠে আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন।
-কিছুই চাই না। আপনার বোনকেও সুরক্ষিত অবস্থায় আপনার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। তবে একটা সর্ত আছে।
-সর্ত? (কান্না থামিয়ে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি)
-আপনাকে বিয়ে করতে হবে আমাকে।
আহিয়ানের কথা শুনে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে?
-এসব কি বলছেন আপনি? আপনার মাথা ঠিক আছে? আমি কেন আপনাকে বিয়ে করতে যাবো?
-আমি ঠিকই বলছি। আপনার কাছে পাঁচ মিনিট সময় আছে মিস ঈশা। ভেবে দেখুন আমাকে বিয়ে করবেন নাকি আপনার বোনের লাশ চান আপনি। সিদ্ধান্ত আপনার।
-অফিসার আপনার সামনে লোকটা আমাকে যা নয় তাই বলছে। আমার বোনকে আটকে রেখেছে অথচ আপনি কিছুই করছেন না।
দেখলাম অফিসার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না সবই আহিয়ানের কাজ। উপায়ান্তর না পেয়ে রাজি হয়ে গেলাম।
(আমি ঈশা আহমেদ। পরিবার বলতে শুধু ছোট বোন নিশা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হলেও সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বোনের জন্মের সময় মা মারা যান। আর আমার যখন ৯বছর বয়স তখন বাবাও এক্সিডেন্ট এ মারা যান। তাকে শেষ দেখাও দেখতে পাইনি কেননা তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে এতক্ষণ যে কাণ্ড ঘটালো সে আহিয়ান আহনাফ। মা আফসানা বেগম ও বোন আরিয়াকে নিয়ে তার পরিবার। তার বাবা আফজাল আহনাফ আজ থেকে প্রায় ১৭বছর আগে মারা গেছেন।)
বর্তমানে বউয়ের সাজে আহিয়ানের পাশে তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি এটা বাড়ি নাকি প্রাসাদ। আহিয়ান বলে উঠলেন-
-আমার পরিবারের কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। যদি কারো সামনে নিজের মুখ খোলো তার ফল খুব খারাপ হবে।
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম। এরপর বাড়ির ভেতর ঢুকতেই আমি চরম অবাক। এ আমি কি দেখছি!
চলবে?
#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০১
#সামিয়া_মেহেরিন