#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১৬

অনেক্ষন ধরে সুযোগ খুঁজছিল সাব্বির সাফার সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু পাচ্ছিলো না।তাই জিহানকে বলে সাফাকে ফোন দিয়ে বাড়ির লনের সুমিংপুল সাইডে ডেকে আনালো সাব্বির।জিহান ফোন দিল সাফাকে আর মনে মনে এইটা ভেবে খুশি হলো যে সাব্বির এখন সাফাকে নিয়ে ভাবছে।জিহানের ফোন পেয়ে সুমিংপুল সাইডে এসেছে সাফা।কিন্তু জিহানের বদলে সাব্বিরকে দেখে চমকে গেলল সে।পরে সে চলে যেতে নিলেই ডাক দিলো সাব্বির।

“দাড়াও।”

“আমাকে বলছেন?”

“এখানে তুমি ছাড়া কি আর কেউ আছে?”

“হ্যা আছে তো।”

সাব্বির আশেপাশে খেয়াল করল। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি।তাই বলল,”কই আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।”

“কেন?এইযে এতো বড় সুমিংপুল আছে।বাগানে এতগুলো ফুল গাছ আছে।আপনার পিছনে এত বড় নারিকেল গাছ আছে।আর…”

“চুপ!!এদেরকে আমি দাঁড়াতে বলবো কেন?এদের সাথে কি আমার কোন কথা আছে নাকী?পাগল কোথাকার!”

“না মানে আপনিতে আমাকে আবার চোখে দেখেন না।আমি তো আবার অদৃশ্য আপনার জন্য।তাই বলছিলাম আরকি!!”

“এতো কথা বলতে কে বলেছে তোমাকে?”

“তাহলে কেন দাঁড়াতে বললেন আমাকে।বিনা কারনে এইভাবে ঝাড়ি দেওয়ার জন্য।”

“একটা কথা বলার ছিলো।কিন্তু বরাবর তোমার বেশি কথার প্যাঁচালে সব উল্টা পাল্টা হয়ে যায়।”

“কি কথা বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন।আমার আবার এতো সময় নেই।”

সাফার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলল সাব্বির।আজ সাফার ব্যবহার তার কাছে অন্যরকম লাগচ্ছে।

“কি হলো বলেন?”

“হুম….বলছিলাম যে…”

“শুনচ্ছি বলেন।”

“আই এ্যাম সরি।”খানিকটা ইস্তত করে বলল সাব্বির।
সাফা যেন নিজ কানে বিশ্বাস করতে পারলোনা।

“কি….কি…বলেন আপনি?”

“আই এ্যাম সরি বলেছি।কান কি নষ্ট হয়ে গেছে তোমার।”

“না মানে…..আপনি….আবার সরি…মানে সরি কেন?”

“সকালের ব্যবহারের জন্য।”

“ওহ…আর কিছু।”

আজ মেয়েটা এমন করছে কেন?যেন আমার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছাও নেই।সবসময় তো ফোন দিয়ে বিরক্ত বানিয়ে ফেলতো।আজকে কি হলো তার।মনে মনে ভাবলো সাব্বির।

“আর কিছু কি বলবেন?”

“কেউ সরি বললে তাকে ইটস ওকে বলতে হয়।নুন্যতম মেনার্স নেই তোমার মধ্যে।

“ওওও আচ্ছা।ইটস ওকে।হয়েছে।এবার আমি আসি।”কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল সাফা।

“এবার বুঝবেন অবহেলা কাকে বলে। ভালোবাসার ভাষা তো বুঝেননা।এইবার অবহেলার ভাষায় আপনার স্টাইলে বুঝাবো আপনাকে।অবহেলার দায় শুধু আমি কেন একা সহ্য করবো।এইবার কিছুটা আপনি করেন।”মুচকি হেসে মনে মনে ভাবলো সাফা।

______________________________

রাতে ফিরতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল সপ্না চৌধুরী ও মিনহাজ চৌধুরির।দুতলা বিশিষ্ট এই বিলাসবহুল বাড়ীতে পুরো পরিবার নিয়ে থাকেন মিনহাজ চৌধুরি।
শহরের নামী দামী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন তিনি।বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান কানাডাতে।সেখানে তিনি টেক্সটাইলের বিজনেস করতেন।তুলির জন্ম হয়েছিল কানাডাতে।তুলির বয়স যখন ষোল বছর তখন তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন।কয়েক বছরের মধ্যে নিজের টেক্সটাইলের বিজনেস দাড় করালেন বাংলাদেশে।এই বাড়িটাও কিনেছিলেন তখন।সেই থেকে এখানে বসবাস মিনহাজ চৌধুরি ও তার পরিবারের।ছয় বছর আগে একটি অঘটন ঘটার ফলে নিজের বোনের মেয়েকে নিজের সাথে করে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

“যা তো তুলি,দেখে আয় তোর আপু ডিনার করেছে কিনা।”

“ওকে আম্মু।”

“আচ্ছা এমন কেন হয়?যাদের আমরা অনেক খুঁজে বেড়ায় তাদের আমরা পাইনা।অথচ একসময় তারা আমাদের কতটা কাছে ছিল।তারা হারিয়ে গেলে কেন তাদের অভাব অনুভূত হয় এইভাবে।যারা ভাগ্যের পরিহাসে হারিয়ে যায় তাদের কি আর কখনো দেখা মিলে।আজ ছয়টা বছর ধরে আপনাকে খুঁজে চলছি ডাক্তারসাহেব!কেন খুঁজচ্ছি জানিনা।শুধু মনে হচ্ছে আপনাকে খুঁজে বের করতেই হবে।এইভাবে কিভাবে হারিয়ে গেলেন আপনি?আচ্ছা যদি কখনো আপনার দেখা পেয়ে যায় আর আপনি যদি জিজ্ঞেসা করেন, কেন খুঁজচ্ছিলে আমাকে?তখন কি জবাব দিবো আমি।আসলেই তো আপনাকে কেন খুঁজছি আমি?এর কারন কি হতে পারে?আমার কি বলতেই হবে এই কারন নাকী আপনি আমার নিশ্চুপিতা থেকে শব্দ নিয়ে বুঝে যাবেন যেমনটা ছয়বছর আগে বুঝেছিলেন।”

“আপু আসবো।”

তুলির ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকালো রাবেয়া।টোলপড়া হাসিটা দিয়ে বলল,”আয়,ভিতরে আয়।”

“কি করছিলে।”

“তেমন কিছু না।” ডায়রিটা বন্ধ করে বলল রাবেয়া।

“ওহ..আম্মু জিজ্ঞাসা করতে বললো তুমি ডিনার করেছো কিনা।”

“হ্যা বাবা করেছি।তো কেমন কাটলো তোর সন্ধ্য।”

“ইট ওয়াস অসাম!!কিন্তু সাফা রাগ করে আছে তোমার উপর।”

“তুই ওকে বলিসনি আমার না যাওয়ার কারন।”

“বলেছি তো।তবুও তুমিতো জানো ও কিরকম।”

“হুম জানি তোরা দুইটায় হলো পাগলি।”

“হা হা হা….!”

“যা অনেক রাত হয়েছে।ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।কাল কলেজ আছে না।”

“হ্যা আছে।আচ্ছা যাচ্ছি।”কথাটা বলে চলে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এসে রাবেয়ার সামনে দাড়ালো তুলি আর বলল,”আপু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিলো।”

“হ্যা বলল না।”

“আজকে কি তুমি ঢাকা কলেজ গিয়েছিলে?”

তুলির মুখে ঢাকা কলেজের নাম শুনে চমকে গেল রাবেয়া।
“হ্যা…মানে..গিয়েছিলাম তো।কেন?”

“ওই যে তুহিন আছেনা।সে তো ওই কলেজে পড়ে।তোমাকে নাকি কলেজের অফিসের সামনে পিয়নের সাথে কথা বলতে দেখেছে।তোমার সাথে কথা বলতে আসছিলো কিন্তু ততক্ষনে নাকি তুমি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলে।পরে আমাকে ফোন করে বলল।কেন গিয়েছিলে আপু?কোন কাজ ছিলো নাকী?”

“হ্যা একটা জরুরি কাজ ছিলো।”

“কি কাজ আপু?”

“তোকে পাঠিয়েছিলাম মিষ্টির খবর নিতে আর তুই এখানে বসে আড্ডা দিতে শুরু করলি।” স্বপ্না চৌধুরির কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালো দুই বোন।

“সরি আম্মু।ভুলেই গিয়েছিলাম।”

“বোনকে পেলে দুনিয়াদারির আর কোন খবর থাকেনা।যা গিয়ে শুয়ে পড়।”

“ওকে বাবা।আল্লাহ হাফেজ আপু।কাল সকালে একসাথে বের হবো আপু।ওকে।”

“ওকে।আল্লাহ হাফেজ।”

তুলি চলে গেলে রাবেয়ার কাছে এসে বসলেন স্বপ্ন চৌধুরি।”কিরে মা কিছু খেয়েছিস?”

“হ্যা মামী খেয়েছে।এতো চিন্তা কেন করো বলতো?”

“আমার মেয়ের জন্য আমি চিন্তা করবোনা তো কে করবে শুনি?” স্বপ্ন চৌধুরির এই কথা শুনে রাবেয়ার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।দুই চোখে পানি এসে ভীড় জমালো তার।স্বপ্ন চৌধুরি রাবেয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,”তোকে না বলেছিলাম আর কখনো কাঁদবিনা।”

“সেদিন তোমরা না এলে তো আজ এই চোখের পানি আমার নিত্যদিনের সঙী হতো মামী।”চোখের পানি মুছে বলল রাবেয়া।

চলবে….
®নওশিন সালসাবিল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here