#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০২

তেজী রোদ্র দিনে ঝুম বৃষ্টি নামার মতো ঝংকার দিয়ে উঠল সেই পুরুষালী কন্ঠ রাবেয়ার কানে। কন্ঠকে অনুসরণ করে পিছনে তাকাতে গিয়ে দেখতে পেল ফর্মাল ড্রেসআপে একজন শ্যাম বর্ণের সুদর্শন পুরুষ তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

“কত টাকা ক্ষতিপূরণ লাগবে আপনার” মোটরবাইক আরোহীকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল পুরুষটি।

“পাঁচ হাজার টেহা। এক টেহাও কম লমুনা আমি কইয়্যা দিলাম।”

“সামান্য হেডলাইটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। সকাল সকাল কি নেশা করে বাইরে বেড়িয়েছেন?” শান্ত কন্ঠ বলল পুরুষটি।

“ঐ মিয়া কন কি হ্যা?নেশা করুম কিলাইগ্গা হ্যা?আজিরা কথা কন ক্যারে?” আমতা আমতা করে বলল লোকটি।

রাবেয়া চোখ তুলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শ্যাম বর্নের পুরুষটির দিকে। না,ঠিক শ্যাম বর্ণ না উজ্বল শ্যাম বর্ণ বলা যায় এমন গায়ের রং তার। ব্ল্যাক কর্লারের টি-শার্টের সাথে অফ হোয়াইট এর জিন্স। শার্টের হাত কুনই পর্যন্ত ফোল্ড করা। বাম হাতে ম্যান ওয়াচ।ওয়াচটার ব্র্যান্ড ঠিক জানা নেয় রাবেয়ার। পায়ে ব্ল্যাক সু। একদম ফর্মাল গেটআপ যাকে বলে আরকি।

পুরুষটি ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি রেখে বলল,”নেশা না করলে এইভাবে নিয়ন্ত্রন না হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটাতেন না আর এই রিকশাওয়ালার সাথে এত বাজে ব্যবহারও করতেন না।” কথাটা বলেই পুরুষটির চোখ গেল রিকশাওয়ালার উপর আর তার পাশে দাড়িয়ে থাকা নিকাবে আবৃত মানবীর উপর। মুহূর্তেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুইজোড়া চোখের। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল পুরুষটি।

মোটরবাইক আরোহী এই কথার জবাব দেওয়ার আগেই পুরুষটি পুনরায় বলে ওঠল,”এই নেন পাঁচশত টাকা,হেডলাইট ঠিক করে নিবেন আর বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে লেবুর শরবত খেয়ে নিবেন।এতে করে আপনার নেশা কেটে যাবে।”

পুরুষটির শান্তকন্ঠেও কেমন যেন কঠোরতা ছিল।যেমন একরাশ মেঘের বিক্ষিপ্ত গর্জনের ন্যায়। তা রাবেয়া ভালো করে বুঝতে পারল। তার সাথে বুঝতে পারলো মোটরবাইক আরোহীও। তাই সে পাঁচশত টাকার নোটটি নিয়ে মোটরবাইক তুলে উল্টো পথে রওনা দিল।

এত লোক থাকতে কেউ এলোনা সাহায্য করতে অথচ উনি চলে এলেন। ঝরো হাওয়ার মতো এসেই তিনি পরিবেশটাকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিলেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সুশিক্ষিত লোক। তা না হলে তিনি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতেন না। অথচ আমাদের আশেপাশে উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে কত অশিক্ষিত লোক ঘুরে বেড়াছে। যাদের মধ্যে মানুষদের সাহায্য করার নূন্যতম বিচারবোধটুকু নেই।
রাবেয়া ভাবনা থেকে বের হয়ে এলো তার সামনে কারো হাত নাড়ানো দেখে।

“এই যে মিস,আপনাকে ডাকছি। মিস আমাকে কি শুনতে পারছেন আপনি? হ্যালো!”

“জ্বি…জ্বি..!” কাপা কাপা কন্ঠে জবাব দিল রাবেয়া।

“ওনার হাটুতে অনেক ব্যথা পেয়েছেন। তাড়াতাড়ি হসপিটালাইজড করতে হবে।তাই বলছিলাম যে…….”

“ও হ্যা,আমি নিয়ে যাব ওনাকে।ধন্যবাদ আপনাকে এইভাবে অপরিচিতদের সাহায্য করার জন্য।”

পুরুষটি মৃদু হেসে বলল,”সাহায্য করার মধ্যে পরিচিত বা অপরিচিত বলতে কোন শব্দ নেই। সাহায্য ইজ সাহায্য।”

রাবেয়া পুরুষটির সেই শান্ত হাসিটির দিকে চেয়ে রইল।পরে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল,”আচ্ছা আমরা তাহলে আসি। চাচা চলেন।”

রাবেয়া একটা রিকশা ডেকে নিয়ে সেই বৃদ্ধলোক কে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।সেইখানে দাড়িয়ে এক জোড়া চোখ চেয়ে রইল রিকশাটি যাওয়ার দিকে।ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে সে বললে ওঠল,”আবার দেখা হবে মায়াবতী।”

রিকশা এসে থামল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সামনে। হাসপাতালটি কাছে বলে এখানে এসেছে রাবেয়া। বৃদ্ধলোকটিকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো সে।

“চাচা আপনি এখানে বসেন। আমি কোন ডাক্তারর বা নার্স পাই কিনা দেখি।”

তখনই বৃদ্ধ চাচা বলে উঠলেন,”আম্মা আপনি আমার জন্য এত কিছু কইরতাছেন,আপনারে কি কইয়া শুকরিয়া জানামু বুইজতে পারতাছিনা।”

“চাচা শুকরিয়া জানাতে হলে আল্লাহ রাব্বুলল আলামিন কে জানান আমাকে নই।কেননা তিনি আমাদের এই বিপদ হতে রক্ষা করছেন।”

“হ আম্মা হ।”

রাবেয়া আসে পাসশ চোখ ঘুরাল। তারপর রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল কোন ডাক্তার আছে কিনা।জানতে পরলো কিছুক্ষন পর আসবে ডাক্তার। একটু ওয়েট করতে হবে।

যেখানে চাচাকে বসিয়ে রেখেছিল সেখানে গিয়ে দেখতে পেল একজন সাদা এপ্রোন পরিহিত ডাক্তার চাচার হাটু ভালোভাবে পর্যাবেক্ষণ করছিলো। দ্রুত পায়ে হেটে গেল সেদিকে। সেখানে গিয়ে এক পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে। মনে হলো এই কন্ঠস্বর সে আগেও শুনেছে।

“চাচা, ক্ষতটা একটু বেশি তবে চিন্তা করবেন না। ঔষুধ আর বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবেন তাড়াতাড়ি।”

“স্যার আপনে তহনও আমাগোরে সাহায্য করছেন এহনও করতাছেন কেমনে যে শুকরিয়া করি।”

“চাচা এখানে শুকরিয়া জানানোর মতো কিছু নেই।” কথাটা বলেই বসা থেকে উঠে ফিরে দাড়ালো ডাক্তারটি।

রাবেয়া বিস্মিত চোখে চেয়ে রইল সামনের মানুষটির দিকে।

“আপনি!” অতি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিল রাবেয়া সামনের মানুষটির দিকে।

চলবে…

®নওশিন সালসাবিল

[ “আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাহর সাহায্য করেন, যতোক্ষণ সে তার ভাইকে সহযোগীতা করে।”

– সহীহ মুসলিম♥

“কোন কাজগুলো সর্বোত্তম? – মানুষের মনে খুশির সৃষ্টি করা, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়া, পঙ্গু ও অসুস্থদের সাহায্য করা, দু:খীদের দু:খকে হাল্কা করা, এবং আহতের যন্ত্রণাকে লাঘব করা”

– বুখারী♥ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here