#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৮
#ফারজানা_আক্তার
হ্যাঁ আমি।
হেসে হেসে বলল নিহান।
~আপনি হঠাৎ মানে কি বলবো আমি?
কাচুমাচু করে বলে শিরুফা।
~কিছু বলতে হবেনা তোমার। আমি ভাবির জন্য শাড়ী নিয়ে এসেছি।
~ওও তো সকালে সবার সাথে আসেননি কেনো?
~সকালে একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম তাই।
~ও আসুন।
~চলো।
‘
‘
‘
নিহান শিরুফার সাথে ঘরে প্রবেশ করতেই সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়, আদিবার মা বাবা তো নিহানকে কোথায় বসতে দিবে আর কি দিবে না দিবে সেটা নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পরে।
আদিবার দিকে কাপড়ের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে নিহান বলে “Thanks ভাবি”
~এ্যাঁ
আদিবা অবাক হয়ে বলে।
রাহিল আদিবার দিকে তাকিয়ে বলে “কথায় কথায় এ্যাঁ এ্যাঁ করো কেন? নিহানকে আমিই বলেছি শাড়ী নিয়ে আসতে।
~নাহ, নিহান ভাই আমাকে Thanks বলল কেন? Thanks তো ওকে আমার দেওয়া দরকার।
একই প্রশ্ন শোভাও করে।
নিহান কিছু না বলে চুপ হয়ে আছে, কি বলবে সে, সে তো Thanks দিয়েছে ওকে এখানে আাসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। শিরুফাকে দেখার জন্য চোখ দুটো যে বড্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে ছিলো।
শিরুফা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতেছে, কারণ ও কিছুটা বুঝতে পেরেছে।
‘
‘
‘
বিকালে সবাই পুকুর পাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো, তুলি ওদের পাশে বসে খেলা করছিলো আর সবাই হৈ হুল্লোড় করতেছিলো, কিন্তু রাহিল বেশ মনমরা হয়ে আছে, চোখ এড়ালো না আদিবার।
সন্ধ্যার আগে ওরা বাসায় চলে আসে। সাথে শিরুফাকেও নিয়ে আসে কয়দিনের জন্য। করোনার জন্য স্কুলটাও বন্ধ ওর।
নিহান তো বড্ড খুশি।
ঘরে এসে সবাই হলরুমে সোফায় বসে পড়ে। তুলি দৌড়ে গিয়ে রোকেয়া বেগম এর কোলে উঠে যায়। আর রাহিল সোজা রুমে চলে যায়। বেশ ক্লান্ত সবাই।
আদিবা কিছুক্ষণ ওদের সাথে বসে এক কাপ কফি নিয়ে রুমে গেলো, রুমে গিয়ে দেখে রাহিল কাপড় চেঞ্জ না করেই ঘুমিয়ে পরেছে।
সে কফি নিয়ে আবার নিচে আসতেই রোকেয়া বেগম জিজ্ঞেস করে ” কিরে কফি নিয়ে আসলে যে আবার?
~মা উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন, ভীষণ ক্লান্ত উনি তাই আর ডাকিনি, আর উনি না বললেও আমি বুঝতে পারছি আমাদের ওখানে উনার খুব কষ্ট হয়েছে, উনার তো ওইরকম পরিবেশে থাকার অভ্যাস নেই।
মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বলে আদিবা।
~অভ্যাস হয়ে যাবে, এ নিয়ে মন খারাপ করে থেকোনা মা। যাও তুমিও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও। তুলি আমার কাছে থাকবে।
এটা বলে রোকেয়া বেগম তুলিকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
সবাই নিজ নিজ রুমে চলে যায়, শিরুফা শোভার সাথে ওর রুমে যায়। নিহান তো রুমে গিয়েই একটা ঝিংকু ডান্স দেয়। শিরুফা আজকে আসবে ওদের সাথে এটা তার ভাবনার বাহিরে ছিলো।
শিরুফা আর শোভা কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বলতেই পারবেনা।
আদিবা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোজা বেলকনিতে চলে যায়, করাণ আজকে বিছানায় রাহিল ঘুমিয়েছিলো।
আদিবা নিচে একটা ওড়না বিছিয়ে সেটাতে শুয়ে পরলো, রুমে এসে একটা বালিশও নিয়ে গেছে। সবাই ক্লান্ত যে যার মতো ঘুমিয়ে পরেছে এই সন্ধ্যা বেলায় কিন্তু ঘুম নেই আদিবার চোখে, সে কিছুতেই চোখ বন্ধ করতে পারছেনা। আজ দুপুরে খাওয়ার পর থেকে রাহিলের আচরণগুলো খুব ভাবাচ্ছে আদিবাকে।
“উনি হঠাৎ এভাবে আচরণ করছে কেন? আমাদের ভাঙাচোরা বাসায় মনে হয় বেশিই কষ্ট হয়েছে উনার? নাকি বিষয় অন্য? হয়তো আর কখনো আমাকে মেনে নিতে পারবেননা উনি, ছবিতে দেখলাম রেশমা আপু পরির মতো সুন্দর আর আমি তো শ্যামবর্ণের।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে আমার চোখ লেগে আসছিলো বুঝতেই পারিনি।
‘
‘
‘
হঠাৎ কারো চিল্লানিতে ঘুম ভাঙে আমার, আর এই কণ্ঠস্বর টা অন্যকারো নয় আমার বুইরা বরের।
দ্রুত শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালাম। উনার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ লাল হয়ে আছে চোখগুলো, ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম।
~এতো বড় রুম রেখে বেলকনিতে ঘুমাচ্ছিলে কেনো?
গিজগিজ করতে করতে বলে রাহিল।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা, উনি আসলে কি চাই? উনার আচরণগুলো বেশ ভাবায় আমায়। ঘুমের ঘোর ভালো করে কাটেনি তবুও চোখমুখ শক্ত করে বললাম ” আমার ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে হয় আমার আমি সেখানেই ঘুমাবো। আপনার কি তাতে?
~মানে কি হ্যাঁ? যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুমাবে মানে কি এসবের?
এক পা আদিবার দিকে এগিয়ে বলল রাহিল, আদিবা ভয়ে এক পা পিঁছিয়ে যায়।
~আপনি আর এক পা সামনে এগুলে ভালো হবেনা কিন্তু।
চোখমুখ খিঁচে ঠাস করে উনার মুখের উপর বলে দিলাম কথাটি।
~আচ্ছা কি করবে তুমি? নাও এবার তো তুমিই আমার সাথে মিশে গেলে।
আদিবাকে একটানে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেই রাহিল, আর কানে কানে ফিস ফিস করে বলে কথাটি।
উনি হঠাৎ এমন কিছু করবে ভাবনার বাহিরে ছিলো আমার। অনেক চেষ্টা করেও একটুও সরাতে পারছিনা উনাকে, আমি যতই উনাকে দৌড়ে সরানোর চেষ্টা করি উনি ততই আমাকে আরো শক্ত করে ধরে, শেষমেশ আর উপায় না পেয়ে চুপ হয়ে উনার বুকে মাথা ঠেকালাম। ইচ্ছে করছে মুহুর্তটাকে এখানেই থামিয়ে দিতে কিন্তু এটা কি আদৌও সম্ভব? আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি উনি হঠাৎ এক ঝাটখায় উনার বুক থেকে সরিয়ে দিলেন আমায়, আমি অবাক চোখে তাকালাম একবার উনার দিকে তারপর আর কিছু না বলে ফ্লোর থেকে ওড়না আর বালিশটা কুড়িয়ে নিচ্ছিলাম তখনই উনি হনহন করে রুমে চলে গেলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম আমি।
রাহিল বেলকনি থেকে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়, ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের কোণে জমাট হওয়া পানিগুলো মুছে নিলো।
সরি রেশমা, আমি, আমি জানিনা এই মেয়ের সামনে গেলে কি হয়ে যায় আমার, মাঝে মাঝে মন হয় যেন ওর মাঝেই তুমি বেঁচে আছো, সত্যিই বলছি গো ওর মাঝেই যেন তোমাকে খুঁজে পাই আমি। আমার প্রতিটি নিশ্বাসে অনুভবে শুধু তুমিই আছো। তোমার প্রতিচ্ছবি আদিবা। হ্যাঁ জান বুঝতে পেরেছি আমি ওর মাঝেই তুমি ফিরে এসেছো আবার আমার কাছে। আর দূরত্ব নয়, আজকেই তোমাকে পুনরায় করে নিবো আমার।
কথাগুলো বন্ধ চোখেই বলে রাহিল। চোখ খুলে দেখে ঝাপসা চারিদিকে কারণ ওর চোখদুটো যে ভিজে গেছে।
আমি নিচে গিয়ে দেখি সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বাজে। বেশ অবাক হলাম আমি, এতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি সেই সন্ধ্যা থেকে। এর আগে এমনটা আর কখনো হয়নি।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখি শ্বাশুড়ি আম্মা তুলিকে কোলে নিয়ে ফ্রীজ থেকে পানি নিচ্ছে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমি দৌড়ে গিয়ে নিয়ে দিলাম পানি। তুলিকে চাইলাম কিন্তু দিলোনা। তুলি নাকি উনার কাছে থাকলে উনার ঘুৃম ভালো হয়। তাই আর কথা বাড়ালাম নাহ আমি।
আম্মু যাওয়ার সময় বলে গেলেন আমার আর তুলির আব্বুর খাবার উপরেই নিয়ে যেতাম। তাই আমি খাবার নিয়ে উপরে রুমে চলে এলাম। রুমে এসেই দেখি উনি খালি গায়ে একটা টাউজার পরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কি জানি করছে। আমি উনাকে বললাম “ভাত খেতে আসুন” এটা বলেই আমি টেবিলে খাবার রেখে টেবিল সাজাতে লাগলাম। উনি হঠাৎ দ্রুত পায়ে আমার খুব কাছে চলে এলেন, আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ঠোঁট দুটো উনি নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। আমি শুধু চটপট করছিলাম কিন্তু উনি এর কোনো রেসপন্সই করছিলেন নাহ, তাই আমিও উনার সাথে মেতে উঠলাম গভীর আলিঙ্গনে।
প্রায় ১৫মিনিট পর উনি আমায় ছেড়ে দিলেন, হাঁপাতে লাগলাম দুজনে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না,বসে পড়লাম সোফায়। উনিও দেখি আমার পাশে সোফায় চোখ দু’টো বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসলেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। উনার হাতটা ধীরে ধীরে আমার কোমরের দিকে আসতে দেখে পট করে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি, উনিও আর দেরি না করে চট করে দাঁড়িয়ে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমায়, থুতনিটা আমার কাঁধে রাখে। কেঁপে উঠি আমি, সারা অঙ্গের লোম যেনো কাড়া হয়ে গেছে আমার।।
~প্লীজ রেশমা এভাবে দূরে চলে যেওনা বারবার, তোমার শরীরের গন্ধটা মাতাল করে আমায়।
নেশালো কন্ঠে বলে রাহিল।
এবার বেশ বুঝতে পারলাম উনি আমাকে নয় উনার ভালোবাসা রেশমা আপুকেই আদর দিচ্ছিলো আমাকে নয়, চোখ দু’টো ভিজে আসছে হঠাৎ। কেনো উনি আমার অনুভুতি নিয়ে খেলছেন? আমি চাই উনি আমাকে কাছে টেনে নিক আমি রুপে অন্যকাউকে নয়। বেশ কষ্ট হচ্ছে ভেতরটা যেন জ্বলেপুরে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
এবার আর উনার ছোঁয়া সহ্য করতে পারলাম না, এক ঝাটখায় উনাকে সরিয়ে দিলাম আমার কাছ থেকে। উনি শুধু ঢেব ঢেব চোখ করে তাকালো আমার দিকে। আমি সেখান থেকে যেতে নিলেই হাতে টান অনুভব করলাম। উনি এভাবে আবার আমায় কাছে টেনে নিবে ভাবিনি আমি। উনার নিশ্বাসের শব্দ গুলো যেন আমার কষ্ট দ্বিগুন করে দিচ্ছে।
~এতো সাহস হয় কি করে তোমার?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাহিল।
~আমি রেশমা আপু নয়। এভাবে রেশমা আপুকে ভেবে আমাকে কেন ব্যবহার করতেছেন? খেলার পুতুল নাকি আমি?
বুকে সাহস রেখে ঠুস করে বলে ফেললাম কথাগুলো একদম উনার চোখের দিকে তাকিয়ে।
~খুব ডানা গজেছে তোমার,, ওয়েট আজকেই কাটবো ডানাগুলো। আমাকে রাগানোর ফলাফল পেতেই হবে তোমার। আজকেই বুঝিয়ে দেবো রাহিল আহমেদ এর সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার পানিসমেন্ট কত ভয়াবহ হতে পারে।।
উনার মুখে এসব কথা শুনে শুকনো ঢুক গিললাম। ভয়ে হাত পা শরীর কাঁপতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। হঠাৎ উনি আমাকে এক ধাক্কায় ____
#চলবে_ইনশাআল্লাহ