#প্রমত্ততা_তুই
#আফসানা_মিমি
||১৪তম পর্ব ||

খোলা আকাশের নিচে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা। আর যদি সেটা হয় প্রিয় মানুষের হাতের তাহলে তো তুলনাই হয় না। জারিফদের বাগানে ছোট্ট টি-টেবিল,চেয়ার পাতা রয়েছে যেখানে সকালের পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। একটু আগে আয়না এসে চা দিয়ে গিয়েছে।

চা পান করতে করতে জারিফের চোখ যায় জারিফের কক্ষের বারান্দাতে। যেখানে শাড়ি পরিহিত এক সাদা পরীকে দেখা যাচ্ছে ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি টেনে জারিফের পানেই তাকিয়ে আছে। আর জারিফ সে তো বরাবরের মতই গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। আয়না সবেমাত্র ফ্রেস হয়ে কাপড় পাল্টে জারিফের মায়ের দেয়া শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিল। জ্বরের কারনে শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা তাই ফ্রেস হয়ে নিলো। আয়না ভাবছে কিছুক্ষণ আগের কথা। কিছুক্ষণ আগে জারিফ আয়নার কথা শুনে কাশতে শুরু করে। হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করে নেয়।

– এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো!

আয়না হাসতে হাসতে শোয়া থেকে উঠে উওর দেয়।

– হ্যাঁ ঠিক আছে, এমনকি আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তাইতো বললাম চলুন বাসর করে ফেলি। সকাল হয়েছে তো কি হয়েছে বাসর তো বাসরই তাই না!

আয়নার লাগামহীন কথায় জারিফ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে তাই খানিকটা চোখ রাঙিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। কারন এই মেয়ের সামনে আরো কিছুক্ষণ থাকলে না যেন বাসরই সেরে ফেলে এই আশংকায়। আর এদিকে আয়না জারিফের কর্মে মুচকি হাসে।

জরিফের মা আয়নির সাথে কথা বলছেন সোফায় বসে। সামনের সোফায় সাজিয়া হাত পা ছড়িয়ে ফোনে গেম খেলছে। বিয়ে যেমনভাবেই হোক না কেন জারিফের মা আয়না আর জারিফের বিয়ের রিসেপশনের ব্যবস্থা করছেন। আয়না জারিফের মায়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ঠিক তখনই জারিফ বাহির থেকে ভেতরে এসে ধপ করে সাজিয়ার পাশে বসে যায়। সাজিয়ার গেমে বেঘাত ঘটায় তাই চিল্লিয়ে উঠে,

– উফ ভাইয়ু, বিয়ে করে ভেবেছিলাম এবার আমাকে জ্বালানো বাদ দিয়ে বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু কই, সেই এখনও আমাকে জ্বালিয়ে মারছো।

– ওরে আমার পাকনি বুড়ি, বিয়ে করেছি বলে কী আগের অভ্যাস বাদ দিয়ে দিবো? ছোট বোনকে আদর করব না? ঐ রকম চিপ ভাই আমি না। আমি আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনই আছি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি এই বিয়ে মানি না। এই মেয়েটা ভুলিয়ে-ভালিয়ে তোমাদের জাদু করে আমকে বিয়ে করেছে।

জারিফ ছোট বোনকে এতটুকু কথা বলে আয়নার পানে তাকাল। আয়না এতক্ষণ ভাই বোনের খুনসুটি দেখছিল আর দর্পণের কথা ভাবছিলো। আয়নার ভাই ও তো এমন, জীবনের চেয়েও বেশি সে তাঁর আপাইদের ভালোবাসে। জারিফের শেষের কথাগুলো শুনে আয়না বাঁকা হেসে উঠল। আয়না বুঝতে পেরেছে শেষের কথাগুলো জারিফ কেন বলেছে। জারিফদের এমন কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠে। ‘ আমি দেখছি’ বলে আয়না বসা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো।

– আপাই, আই মিস ইউ সো মাচ।

চোখ বন্ধ করে ছোট ভাইয়ের আদর গ্রহণ করছে আয়না। হুট করে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে আয়নাকে অবগত না করে তা জানা ছিল না আয়নার। কাউকে না জানিয়ে জারিফের ঘরে উঠেছে তা মনে করে আয়না ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে মনে মনে কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করছে না।

– আই মিস ইউ টু কলিজার ভাই।

– হ্যাঁ রে আয়না এমন গুন্ডামি করা ভালো না বুঝলি? একটা ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেললি ভাবা যায়? তুই মেয়ে হয়ে এ কাজটা কিভাবে করতে পারলি রে লজ্জা লাগেনি?

আয়নার বড় বোন ফারিয়া কিছুটা রাগান্বিত স্বরে আয়নাকে ধমকাচ্ছেন। ফারিয়ার পেছন থেকে আয়নার দুলাভাই বলতে বলতে আসছে।

– শালিটা কার দেখতে হবে না! নিজের ভালোবাসা আদায় করার জন্য এমন গুন্ডামি করা উচিত না হলে কিভাবে বুঝব যে এটা আমার শালিকা?

আয়নার পরিবারের আগমনে জারিফের মা, জারিফ পেছনে সাজিয়া এগিয়ে আসে। দর্পণ কে দেখা মাত্রই সাজিয়া হা করে তাকিয়ে থাকে। দর্পণের সাথে চোখাচোখি হতেই দুজনে একসাথে বলে উঠে।

-তুমি?

সাজিয়া কিছুদিন আগে শপিং মলে দেখা হওয়ার ঘটনা ভুলেনি তাই রেগে দর্পণের দিকে তেড়ে আসে।

– কত্ত বড় সাহস আমাদের বাসায় এসেছেন বের হন বের হন বলছি।

– এই যে চার ফুট দুই ইঞ্চ এটা আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি ওকে ! আমি এখানে যখন ইচ্ছে আসতে পারি বরঞ্চ তুমি যেখানে খুশি যাও।

– ইশ বোনের শ্বশুরবাড়ি, এটা আমার বাড়ি আমার বাবার বাড়ি এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বের হবেন নয়তো আপনাকে আমি লম্বু রোগা ভাইয়া থেকে পাতলা রোগা ভাইয়া বানিয়ে দেবো।

দর্পণ সাজিয়ার এরকম গায়ে পড়ে ঝগড়া দেখে দুই পরিবার বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে। আকস্মিক দুজনের ঝগড়া লেগে যাওয়ায় দর্পনকে ফারিয়া টেনে নিয়ে আসে আর সাজিয়াকে জারিফের মা টেনে নিয়ে আসে।

– মা ছাড়ো, তুমি জানো ঐদিন শপিংমলে এই লম্বো রোগা ভাইয়াটা কত ঝামেলা করেছিল আমার সাথে?

-আমি কোন ঝামেলা করিনি। এই চার ফুট দুই ইঞ্চ মিথ্যা কথা বলে।

দর্পণ সাজিয়ার ঝগড়া দেখে আয়না বাঁকা হেসে বলতে শুরু করে।

– হয়েছে দর্পণ থাম এবার।

এতটুকু বলে আয়না থেমে জারিফের উদ্দেশ্যে বলে।

-দেখেছেন জামাই সাহেব, ভাগ্যের কি খেলা! আগে থেকেই আপনার শালা সাহেব আর আমার ননদের মন কষাকষি হয়েছে। তারমানে প্রকৃতিও চেয়েছিল আমি যেন আপনার বউ হই। আর এখন দেখেন এই যে আমি আপনার বউ হয়ে এই বাড়িতে চলে আসলাম। এখন আরো ভালো করে মন কষাকষি আদান-প্রদান করতে পারবে আমার ভাই। কি বলিস দর্পণ?

ছোটভাই দর্পণের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে ফেলল আয়না। আর এদিকে আয়নার কথা শোনে জারিফের মা সহ উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যায়। জারিফের মা তো রীতিমত ঢোক গিলছে এমন লাগামহীন ছেলের বউকে দেখে।

সবার হাসি মাজার মাঝেই জারিফের মা ফারিয়া, ফারিয়ার হাসবেন্ড এবং দর্পণকে স্বাগতম জানালেন।

– আমি এখনই আপনাদের খবর পাঠাতাম ওঁদের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য।

– তার আগেই যে আপনার গুণধর ছেলে আমাদের খবর পাঠিয়ে দিয়েছে।

জারিফের মায়ের কথার প্রত্যুওরে আয়নার দুলাভাই দুষ্ট হেসে বলল।

এদিকে জারি দুলাভাইয়ের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নত করে ফেলল। আয়না জারিফের লজ্জামাখা চেহারা দেখে ভীষণ মজা পাচ্ছে তাই জারিফের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল।

– জামাই সাহেব, আপনাকে দিয়ে দেখছি কিচ্ছু হবে না। কই ভেবেছিলাম আপনি একটু আকটু রোমান্স করবেন আর আমি এভাবে লাজুক হাসি দেবো। কিন্তু হলো কি! তার উল্টো, আপনি এদিকে দুলাভাইয়ের কথা শুনে লাজুক হাসছেন আর আমি এদিকে অসহায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখছি। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কখন আমার পরিবারকে খবর দিলেন? হুম বুঝেছি! বাহ জামাই সাহেব আপনি দেখি সব দিক থেকে এগিয়ে আছেন। তাহলে রোম্যান্সের বেলায় কে,,,

– একদম চুপ বোম্বাইমরিচ, আমি শুধু তাদেরকে জানিয়েছি যে তাদের গুনধর কন্যা এমন একটা বাজে কাজ করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে ব্যাস আর কিছু না।
– হয়েছে হয়েছে জামাই সাহেব, আর বলতে হবে না। আপনি যে আমার প্রতি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সেটা আমি অনেক আগে থেকে জানি। ঐ যে সেদিন ভার্সিটিতে প্রপোজ করলেন এরপর থেকেই তো আমি আপনার উপর ফিদা হয়ে গিয়েছি। আমাকে যদি পছন্দ না করতেন তাহলে কি আর প্রকাশ করতেন? আপনার প্রপোজ করাটা সেটা আপনার ইচ্ছাতে হোক বা অনিচ্ছায় হোক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। প্রপোজ যেহেতু করেছেন তো আপনাকে কিভাবে ফিরিয়ে দেই বলেনতো! তাইতো বউ হয়ে চলে আসলাম আপনার ঘরে।

– তোদের ফিসফিসানি বাদ দিয়ে এখানে আয় আর মন দিয়ে কথা শোন।

জারিফের মায়ের ডাকে আয়না ভদ্র মেয়ের মত জারিফের মায়ের পাশে গিয়ে বসে যায়। আর এদিকে আয়না এমন কর্ম দেখে জারিফ হা করে তাকিয়ে আছে। জারিফ মনে মনে ভাবছে,

– কেমন অসভ্য বোম্বাইমরিচকে বিয়ে করলাম আমি। ঝাল লাগাবে আবার এর উপর মিষ্টির রসও ঢালবে। এই মেয়ের মতিগতি কিছুই বুঝি না বাবা।

——-

যেভাবে বলেছিলাম সেভাবে কাজ হয়েছে তো আমার? আয়নাকে আমার চাই যে কোনো মূল্যে। ওর শরীরে শুধু আমার অধিকার থাকবে আমি জানি আয়নার আর বিয়ে হয়েছে কিন্তু এটাও জানি আয়নার বর আয়নাকে এখন পর্যন্ত ফুলের টোকাও দেয়নি। সুতরাং আয়নাকে আমার চাই আজ হোক কাল হোক পরশু হোক আয়নাকে আমার চাই চাই চাই। কতদিনের পিপাসায় তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি আমি। এত সহজে ছাড়বোনা আয়নাকে।

এতক্ষণ ফোনে অজ্ঞাত লোকটি কথা বলছিল তার সহযোগীর সাথে। আয়নার প্রতি এমন কুনজর আয়না টের পেয়েছে? নাকি জারিফ কিছু একটা করবে। বাকিটা আগামী পর্বে জানতে পারবেন।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here