#প্রমত্ততা_তুই
#আফসানা_মিমি
||২য় পর্ব ||
ভরা ক্লাসের মধ্যমনি আয়না। প্রথম দিনেই সকল টিচারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আছে চমকৎকার বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। আয়নার চঞ্চলতায় সকলেই প্রফুল্লিত। প্রথম দিনেই মনে হচ্ছে হাজারো বছরের চেনাজানা সবার সাথে। আয়নার দুজন বন্ধু হয়েছে। একজনের নাম জিনিয়া আরেকজনের নাম রাদিফ। জিনিয়া একটু ভীতু সভাবের আর রাদিফ দুষ্টুর রাজা একদম আয়নার মতোই।
– হ্যাঁ রে আয়না তুই এত কম সময়ে সবার প্রিয় পাত্রী হয়ে গেলি কিভাবে? মানে সবার মন জয় করে নিলি কত সুন্দর ভাবে। দেখবি তোর বরের মন এক নিমিষেই জয় করতে পারবি তোর ঐ কথার মাধ্যমে।
রাদিফের কথায় আয়না রাফিদের মাথায় গাট্টি মেরে বলল,
– ঐসব বিয়ে নিয়ে আমার কোন চিন্তা নাই। এজীবনে যদি কাউকে পছন্দ হয় তো প্রেম পত্র পাঠাবো। এক্সেপ্ট করলে ভালো কিন্তু রিজেক্ট করলে তার জীবন তামাম। একদম উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
– বাবারে তুই তো সেই লেভেলের গুন্ডি মেয়ে রে! কথা না শুনলেই উঠিয়ে নিয়ে যাবি?
– শুধু উঠিয়ে নিবো নারে দোস্ত। এ আয়নার প্রতিবিম্বে বন্দি করে রাখবো।
আয়নার এমন ভয়ানক কথা শুনে জিনিয়া দা ভীতুর ডিম থরথর করে কেঁপে বলে উঠলো,
– আয়না তুই না আমাদের গয়না এসব করেনা ময়না। ভালো বাচ্চার মত থাকবি দেখবি সবাই তোকে আরো বেশি ভলোবাসবে।
– তোর লেকচার দেয়া শেষ হয়েছে তো চল বাহিরে যাই আজ আর ক্লাস হবে না। প্রথমদিন চল ফুসকা খেয়ে বাসাই যাই।
আয়নার কথায় সায় দিয়ে জিনিয়া রাদিফ চলল আয়নার সাথে ফুসকা খেতে।
——-
– মা একগ্লাস পানি দাও তো? গলাটা শুকিয়ে আছে। যা গরম পড়েছে মনে হচ্ছে শরীরের টি শার্ট এক হাতে মুঠ করলে বালতি ভর্তি পানি থুরি ঘাম বের হবে।
রান্না ঘরে রান্না করছিল জারিফের মা। আঁচলে হাত মুছে দুই টুকরো বরফ মিশিয়ে পানি নিয়ে আসলো ছেলের জন্য।
– আমার সোনা বাচ্চাটা। আজ ক্লাস কেমন হয়েছে?
জারিফের মার কথায় জারাফের ছোট বোন সাজিয়া উওর দেয়,
– তোমার ছেলেকে আজ দেখলাম রাস্তায় এক মেয়েকে নিয়ে রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া করছে। তাহলে বুঝো কেমন ক্লাস করেছে? সাজিয়া জারিফের ছোট বোন ক্লাস নাইনে পড়ে। ফোনে গেমস খেলতে খেলতে জারিফের মাকে নালিশ করল,
– কিরে বাবু, সাজিয়া যা বলেছে সত্যি? এজন্যই তোকে এত কষ্ট করে মানুষ করছি বল আমাকে বল?
জারিফ এবার সাজিয়ার মাথায় চাঁটি মেরে বলল,
– সাজিয়া পাজিয়া তোর পড়াশোনা কি নেই? সারাদিন গেমস খেলিস। তোর ঐ ময়লাবতী ম্যাডামের কাছে নালিশ করবো তোর নামে।
সাজিয়া মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উওর দিলো,
– উফ ভাইয়া উনার নাম ময়নাবতী তুমি সবসময়ই ময়লাবতী ডাকো কেন?
– তোর ঐ ম্যাডামকে আমার ভালো লাগে না বিশেষ করে যখন নাকের ডগায় চশমা এনে আমাকে বলে, বাবা জারিফ একদম লক্ষী বাচ্চা হয়ে থাকবে তুমি খুব ভালো ছাত্র তোমাকে দেখে সবিই শিখবে আরো কত কিছু।
– এজন্য তুমি ময়লাবতী ডাকবে? আমি কালই ম্যাডামকে বলে দিবো।
– যা ইচ্ছে কর যা পড়তে বস।
দুই ভাই বোনের ঝগড়ার মধ্যে জারিফের মা দুজনের কান মলে বলতে শুরু করলেন,
– তোরা দুটোই পাজি সারাদিন আমাকে কিভাবে জ্বালাতন করবি সেই চিন্তায় থাকিস। এখন সত্যি কথা বল মেয়েটা কে?
– আরে মা কান ছাড়লে তো বলবো ইশ আমার কানটা শেষ।
– বল।
– আরে ঐ মেয়ে কেউ না এমনিতেই পঞ্চাশ টাকার জন্য রাস্তায় ঝগড়া করছিলো। মেয়েটার জন্য অনেক বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল তাই মানবতার খাতিরে সাহায্য করলাম এরচেয়ে বেশি কিছু না।
– আচ্ছা মানলাম। এখন দুজন ফ্রেস হয়ে এসে খেতে বস আমি খাবার দিচ্ছি ।
——–
পরেরদিন ভার্সিটিতে আয়না বেশ তাড়াতাড়ি চলে আসে। ভার্সিটির গেইটের পাশেই শিক্ষার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে আয়না আর তাঁর বন্ধুরা। একেকজন একেক কাজে মশগুল। কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত তো কেউ গপিস করতে আর এসবার মাঝে একমাত্র আয়না একনজরে গেইটের দিকে তাকিয়ে আছে তাঁর আঁখিজোড়া অনেকক্ষণ যাবত একজনকে খুঁজে চলছে। প্রায় দশমিনিট পর কাঙ্খিত মানুষটি আসায় আয়নার হৃদয়ে ঘন্টা বেজে উঠে।
এইমাত্র ভার্সিটিতে এসে মোনালিসার সাথে কথা বলতে বলতে গেইট দিয়ে ঢুকছে জারিফ। পরনে তার ব্ল্যাক কালারের শার্ট হাতে ম্যাচিং করে ঘড়ি। হালকা চাপা দাঁড়িতে জারিফের সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে তুলেছে। ভার্সিটির অর্ধ মেয়েরা জারিফের এমন রুপে ঘায়েল হয়ে আছে। জারিফের এই লুকে আয়নার হার্টবিট দ্বিগুণ পরিমানে লাফাচ্ছে। নিজেকে কোনরকম সামলিয়ে আয়না এবার রাদিফকে বলল,
– দোস্ত চল গান ধরি মনটা আজ একজনকে দেখে কেমন লাগছে।
আয়নার কথায় রাদিফ হেসে বলল,
– আচ্ছা তাহলে তুই শুরু কর।
দুই তিনটা ব্যাগ একসাথে করে তার উপর হাতের সাহায্য তাল মিলিয়ে গান ধরে আয়না,
– আরে এই পথে যখনই আমি যাই,
মাঝে মাঝে একটা পুলারে দেখতে পাই।
কালো শার্ট পড়ে আমায় পাগল করেছে,
একটা চাপদাঁড়ি ওয়ালা ছেলে পাগল করেছে।
(কেউ হাসবেন না আমি মানে লেখিকা গান মিলাইছি )
সামনে দিয়ে জারিফ মোনালিসার সাথে কথা বলতে বলতে যাওয়ার সময় খেয়াল করে কালকের ঐ মেয়েটা কেমন অসভ্যের মত গান গাইছে। কিছুটা নিজের দিকে খেয়াল করে তাকিয়ে দেখে ঐ মেয়েটা জারিফকে নিয়েই মূলত গান গাইছে তা দেখে জারিফের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। মেয়েটিকে এবার একটু শিক্ষা দিতে সেখানে অগ্রসর হয়। আয়নার কাছে গিয়ে এবার জারিফ বলা শুরু করে,
– এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? এটা ভার্সিটি তোমার বেসুরে গলায় গান গাওয়ার জায়গা না বুঝলে? আর
যতদূর মনে হচ্ছে তুভি আমাকে নিয়ে গান গাইছো। আমাদের ভার্সিটিতে এসব চলবেনা। পরবর্তীতে এসব দেখলে সোজা প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নিয়ে যাবো।
-এই যে মিস্টার চোর মশাই আমি মোটেও আপনাকে নিয়ে গান গাইছি না। আমিতো ঐ যে গাছে বসে থাকা কাওয়াকে দেখে গাইছিলাম। আহা আমার গান শুনে আরো কাওয়াদের এখানে নিয়ে আসছে দেখেন দেখেন।
আয়নার কথা শুনে জারিফ এবার রেগে আগুন হয়ে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে উঠে,
-আমার সাথে লাগতে এসো না মিস টিকটিকি। রক্তহীন শরীরে ফেঁকাসে রুপ ধারন করবে।
জারিফের কথায় মুচকি হেসে আয়না এবার বসা থেকে উঠে জারিফের খুব কাছাকাছি এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
– আমি আয়না। অমার নজরে যে একবার আসে তাঁকেই অমার প্রতিবিম্বে আটকিয়ে রাখি। সুতরাং আমার থেকে যত দূরে থাকবে ততই তোমার জন্য মঙ্গল হবে। কালকের প্রতিশোধ কিভাবে অমি নিবো তা তুমি টেরও পাবে না।
আয়না এবার জারিফের থেকে একটু দূরে গিয়ে বলল,
– তো মিস্টার চোর মশাই কি যেন বলছিলেন?
-তোমাকে আমি দেখে নিবো মিস আয়না। আমার সাথে টক্কর লাগার মজা হারে হারে বুঝতে পারবে।
এতক্ষণ মোনালিসা সহ উপস্থিত সকলে হা করে জারিফ আর আয়না নামক মেয়েটার তান্ডব দেখছিল। জারিফ যেই ছেলে কখনও কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি কিন্তু আজ, আজ একটা মেয়ের সাথে রীতিমতো ঝগড়া করছে। ফোনে টুক করে শিহাবের নাম্বার তুলে ফোন দেয়,
-ঐ শিহাইব্বা কই তুই? কিহ এখনও জ্যামে? তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে চলে আয় বিশাল এক কান্ড ঘটে গেছে কলেজে।
জারিফ এখনও আয়নার চোখের নাগালে। রেগে আগুন হয়ে জারিফ ক্লাসের সিড়িতে পা দিতেই কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে ফুল হাতে লাজুক মুখে বলে উঠে,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি চকলেট বয়। আলুর পরটার মধ্যে দ
থাকা চকচকে তেলের মত তোমাকে ভালোবাসি। বেলুন ছাড়া যেমন রুটি হবে না ঠিক তোমাকে ছাড়া আমার জীবন চলবে না এতটাই ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো চুকু।
এমনিতেই মেজাজ গরম ছিলো জারিফের আর এখন মেয়েটির কথা শুনে সব শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। জারিফ এবার রেগে মেয়েটির থেকে ফুল নিয়ে মাটিতে পা দিয়ে পিষে দিয়ে বলতে শুরু করে,
– পেয়ে গেছো তোমার উওর? এবার ফুটো নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে যেন না দেখি।
মেয়েটি এবার ভয় পেয়ে চলে গেল সেখান থেকে। জারিফও রেগে ক্লাস রুমে চলে গেল। আর এদিকে ফুলওয়ালা মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একজন যেন সে তার নেত্র দ্বারা ভাষ্ম করে দিবে।
– আয়না তুই ভার্সিটির চকলেট বয়ের সাথে এ কি ব্যবহার করলি। তুই জানিস জারিফ ভার্সিটির সকলের অনেক প্রিয় আর তুই তাঁর সাথে এমন,,,
-ওহ চুপ কর জিনিয়া। এই আয়নার সাথে যে লাগতে আসবে আয়না তাঁর সাথে এমনই করবে।কোনো ছাড়াছাড়ি নাই। তোরা বস একজনের থেকে কিছু হিসেব নিকাশ বাকি আছে আদায় করে আসি।
আয়না সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করল। আর এদিকে জারিফ ভয়ংকর এক পরিকল্পনা করছে আয়নাকে শায়েস্তা করার জন্য। পরিকল্পনা টা কি তা জানতে চুখ রাখুন এনটিভির পর্দায় ,,,,,,,,,
চলবে…..