#আমরা_দুজন
#পর্ব_৩
[ written_by_sumaiya_karim ]

উদয়ের কথায় সবাই বিষম খেলো যেনো। হা হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই ওর দিকে। উদ্দেশ্য শুভ্রতা সম্পর্কে ওর বাজে কমেন্ট করার কারণ কি? আর এমন ভাবে বলছে যেনো সে আগে থেকেই বা শুভ্রতা কে খুব ভালো ভাবে চিনে! কিন্তু কি ভাবে?
সবাই সন্দিহান চোখে তাকালো ওর দিকে,

–‘এসব তুই কি বলছিস উদয়?’

আরেক জন বললো,

–‘মানে কি?’

–‘ভাবী খারাপ কি বলছো উদয় ভাই?’

সবার এত্তো এত্তো প্রশ্ন যেনো চেপে ধরছে তাকে। ভিমড়ি খেয়ে উদয় বললো,

–‘দেখো নি ও কেমন চুপ চাপ আর ভদ্র মেয়ে সেজেছে। আর সেটাই কেই তোমরা বলছো ভালপ। আদৌ কি ভালো?’

–‘তাহলে?’

–‘জানো ই তো ভদ্র সেজে থাকা মেয়ে গুলোই আসলে সয়তানের হাড্ডি। চঞ্চলদের মনে আসলে কিছু থাকে না। কিন্তু চুপটি করে শান্ত শিষ্ঠ মেয়ে গুলোর মাথায় ই যত ভূত। পরে দেখালো গেলো আমাদের এই সুখী পরিবার টা কে ঐ এক মেয়ের কারণে হাসি খুশি শেষ হয়ে গেলো!’

সূর্য মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর সবার আগে সেই ই বললো,

–‘তোর ভুল ধারনা। শুভ্রতা কে আমার এমন মনে হয় নি!’

সূর্যের বাবা মা ও বললো,

–‘হ্যাঁ আমাদের ও। সবাই তো আর এক না উদয়। মূল কথা টা কি বলতো? তোর কি শুভ্রতা কে পছন্দ হয় নি?’

উর্মি উনার মুখের কথা টেনে নিয়ে বললো,

–‘বিয়ে করবে সূর্য ভাই পছন্দ হচ্ছেনা উদয় ভাইয়ের। আশ্চর্য তো! কেন পছন্দ হবে না তোমার? মনে হয় তোমার চোখের সমস্যা কাইন্ডলি ডাক্তার দেখাও। ভালো হবে!’

উর্মির কথায় সবাই হাসলেও ইদয়ের হঠাৎ ই প্রচন্ড রাগ উঠে। আর খাবারের প্লেট হাতে ধুয়ে বলে,

–‘ভালো আমার কথার তো কোনো দাম ই নেই। নিজেরা যা বুঝি করো। আমি কে যে, কিছু বলবো?’

উর্মি সেটা বুঝতে পেরে বলে,

–‘আরে খাবার আবার তোমাকে কি করলো? খেতে তো যাও!’

–‘তুই খা ভুটকি!’

সূর্য পর তার বাবা মা চাচি ও ডাকলো কিন্তু উদয় এক প্রকার রেগে চলে যায়। আকস্মিক উদয়ের এমন মন্তব্যে সবাই কে একটু ভাবনায় ফেলে দিলো।

–‘থাক তো বাদ দে ওর কথা। আমাদের শুভ্রতা কে সূর্যের জন্য চাই ব্যাস।’

সূর্যের বাবা ও‌ সহমত পোষণ করলো। খাবার শেষ করে উঠে যায় সবাই। সূর্য হেটে উদয়ের রুমে যায়। তাকে খুব টেনশনে আছেন মনে হচ্ছে। সূর্য বুঝে উঠতে পারলো না হুট করে ওর হলো টাই বা কি? যার ফলে এমন রিয়েক্ট করছে?

–‘উদয়?’

আচমকা ডাক শুনে কিছু টা চমকে উঠে পেছনে ফিরে সে।

–‘হ্যাঁ ভাইয়া?’

–‘কি হয়েছে তোর?’

–‘ক-কই ন-না তো। আমার আবার কি হবে?’

সূর্য জোড় করে কি হয়েছে জানতে চাইলো কিন্তু উদয়ের থেকে কোনো মতেই কথা বের হলো না। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয় সূর্য। আর চলে যাওয়ার আগে বলে গেল,

–‘শুভ্রতা আসলেই চমৎকার একটা মেয়ে! এখনো পর্যন্ত আমি কোনো খুঁত দেখি নি। অবশ্যই মানুষ সম্পূর্ণ নিখুঁত না। কিন্তু তুই যা বলছি তার সাথে শুভ্রতার আকাশ ফাতাল তফাৎ!’

সূর্য চলে যেতেই উদয় রাগে দাঁত কটমট করতে থাকে। রুমে এসে কিছু একটা ভাবলো সূর্য। তার পর ফোন টা হাতে নিয়ে ভাবলো শুভ্রতার সাথে একটু কথা বললে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। উর্মি কে অনেক রিকোয়েস্ট পাশাপাশি ঘুষ দিয়ে শুভ্রতার নাম্বার টা জোগাড় করলো সে।

.
শুভ্রতা খেতে মন চাইলো না। তাই খাবে না বলে চলে এসেছিলো বলে তার মা এক প্লেটে তার প্রিয় বিরিয়ানি নিয়ে আসে তার রুমে। মা কে দেখে বলল,

–‘মা আমি খাবো না!’

–‘দেখ মেয়ে তোর মন খারাপ তাই কষ্ট করে বিরিয়ানি রান্না করেছি। কারণ বিরিয়ানি তোর ফেভারিট। এখন বলছিস খাবি না। তা কি করে হয়। দেখি হা কর আমি‌ খাইয়ে দেবো!’

–‘না মা আমি খাবো না তো!’

–‘তোর খেতে হবে না। গিললেই হবে শুধু!’

অগত্যা তিনি খাইয়ে দিতে লাগলেন। বিরিয়ানি শুভ্রতার এতো পছন্দ যে বলার মত না। কিন্তু আজ এতোটাই মন খারাপ ছিলো যে ক্ষুধা থাকা সত্তেও না করে দিয়েছিলো। কারণ পেটের ক্ষুধার থেকেও মনের ক্ষুধা অনেক বড়। আজ অন্যরকম স্বাধ হলো এই খাবার টায়। ফলে শুভ্রতা মন খারাপ কে এক পাশে ঠেলে আয়েশ করেই খেতে থাকলো। খাওয়ার মাঝ খানে হঠাৎ করে তার ফোন টা বেজে উঠে। হাতের কাছেই থাকায় ফোন টা নিয়ে দেখলো একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে। তাই সে কল টা রিসিভ না করে রেখে দিলি। তা দেখে ওর মা বললো,

–‘কিরে রিসিভ কর!’

–‘চিনি না তো কে কল দিলো!’

শুভ্রতার মা সকালে সূর্যের পরিবার দেখে যাওয়ার কথা মনে উঠায় বললেন,

–‘আরে ধর দেখ না কি বলতে চায়!’

–‘দরকার নাই!’

–‘চেনা ও হতে পারে। রিসিভ কর তো!’

–‘না…

–‘এতো অলসতা ভালো না বুঝলি? দেখি এ দিকে দে আমি রিসিভ করে দিচ্ছি!’

শুভ্রতার মা রিসিভ করে দিলে শুভ্রতা ফোন টা কানের সাথে চেপে ধরে বলে,

–‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে বলছে?’

ওপাশ থেকে বললো,

–‘ওয়ালাইকুম আসসাম!’

কন্ঠ শুনে ও চিনতে পারলো না শুভ্রতা তাই বললো,

–‘জ্বি কে বলছেন?’

ওপাশ থেকে কোনো কথা ভেসে আসছে না। নিশ্চুপ নিরবতা পালন করছে যেনো।

–‘হ্যালো? কি হলো কল দিয়ে চুপ করে থাকলেন কেন?’

আবারো চুপ!

–‘আচ্ছা রাখলাম তাহলে…

কল কেটে দিচ্ছে দেখে ওপাশের মানুষ টা অতি দ্রুত বললো,

–‘আ- আমি সূ- সূর্য!’

সূর্য নামটা শুনে খাবার নাকে মুখে উঠে যায় শুভ্রতার। ফলস্বরূপ সে কাশতে থাকে। ওপাশ থেকে সূর্য কাশির শব্দ শুনে বললো,

–‘আ- আরে..

আচমকা শুভ্রতা এমন করায় শুভ্রতার মা দ্রুত তার দিকে পানি এগিয়ে দেয়। আর মাথায় দুইটা আস্তে বাড়ি মেরে বললো,

–‘শুভা কি হলো তোর? কে কল দিলো?’

শুভ্রতার মা ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো ততক্ষনে কল কেটে গেছে। নাম্বার টাও আননোন তাই বুঝতে ও পারলেন না এটা আসলে কে? তার উপর কল দেওয়ার চেষ্টা করতে যাবেন এমন সময় শুভ্রতা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

–‘স-সূর্য..!’

তিনি তো আগেই এমন কিছু ভেবেই ফোন টা রিসিভ করতে বলেছিলেন। কিন্তু শুভ্রতার এমন করাত উনি বললেন,.
–‘তার জন্য এমন করতে হয়?’

–‘উনি কেন কল দিলো?’

–‘কই মানুষ কেন দেয়?’

–‘আমার নাম্বার কই পেলো?’

–‘আমি উর্মি কে দিয়েছিলাম!’

শুভ্রতার মুখ টা দেখার মতো হলো। তাই ও বললো,

–‘এখন তাহলে তুমি ই কথা বলো!’

–‘আমি কেন বলবো?’

–‘নাম্বার কেন দিলে?’

–‘ওমা এটা কেমন কথা? দেখ সূর্য খুব একটা ছেলে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আল্লাহ চান তো শুভ আসলেই বিয়ের দিকে এগোবো তার উপর তোর ও কোনো নিজস্ব পছন্দ নেই। তুই এটাও বলিস নি যে সূর্য কে তোর পছন্দ হয় নি। সব দিক ভেবে দিয়েছি!’

–‘এখন কে কথা বলবে?’

কাঁদো কাঁদো হয়ে,

–‘তোকে কল দিয়েছে তুই কথা বলবি। আমি যাই দেখি ও কি বলে!’

–‘কিন্তু!’

–‘কোনো কিন্তু টিন্তু নাই। আমি গেলাম..!’

–‘আম্মু…..

উনি মুচকি হেসে চলে যায়। শুভ্রতা বোকার মতো ভ্যাবাচ্যাকা বসে রইল। তার ফাঁকে একবার ফোনের দিকে তাকালো। এখন কি হবে?

যখন মাথায় এলো যে ফের সূর্য কল দেওয়ার আগে ফোন টা বন্ধ করে দিলেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে আবার কল টা এলো। বিপাকে পড়ে গেলো শুভ্রতা যে এখন কি করা উচিত তার! ভেবে না পেয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কল টা রিসিভ করলো। এবং সে চুপ করে রইল!
অন্যদিকে সূর্য একনাগাড়ে বলেই যাচ্ছে!

–‘হ্যালো শুভ্রতা আপনি ঠিক আছেন?’
–‘আর ইউ ওকে শুভ্রতা? আনসার মি!’
–‘শুনতে পারছেন কি আপনি? আমি আসলে খুব দুঃখিত। এভাবে হুট করে আমার কল দেওয়া ঠিক হয় নি!’

শুভ্রতা সব টা শুনে বললো,

–‘ইট্স ওকে!’

–‘থ্যাঙ্ক গড! আপনি কথা বললেন আমি ভাবলাম আরো কি না কি হলো!’

–‘না না। আমি ঠিক আছি। আপনি বলুন!’

সূর্য এটা সেটা বলতে থাকলো। হুট করে উদয় সূর্যের রুমের দিক দিয়ে হেটে চলে যাওয়ার সময় কথা বলার আওয়াজে থমকে দাঁড়ায়। উঁকি গিয়ে দেখার চেষ্টা করলে দেখে সূর্য হেসে হেসে কার সাথে যেনো কথা বকছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো সূর্য আসলে শুভ্রতার সঙ্গেই কথা বলছে!

সূর্য বললো,

–‘আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনাকে কি কল দিয়ে বিরক্ত করলাম?’

–‘উহু! বিরক্ত কেন করবেন?’

–‘যদি ও বা করি আপনি তো বলবেন না। সো আমি ই এত্তো গুলা সরি। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হলো তাই কল দিয়েছি! আমাকে একটু করে সময় দিয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য থ্যাঙ্কস!’

আরো কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে সূর্য কল টা কেটে দেয়। আর ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। শুভ্রতা কেন যেনো আনমনেই‌ হাসলো। সূর্য আসলে উদয়ের মতো নয়। কেন যেনো কোথাও একটা অমিল খুঁজে পাচ্ছে শুভ্রতা!

সূর্য কে ওয়াশরুমে যেতে দেখে উদয় চুপি চুপি ওর রুমে ঢুকে। আর খুব সাবধানে শুভ্রতার নাম্বার টা নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।

আর দেরি না করে শুভ্রতার নাম্বারে কল দেয়। শুভ্রতা কিছু টা অবাক। এই মুহূর্তে আবার কে কল দিলো? তাও আরেক টা অপরিচিত নাম্বার থেকে। এটা তো সূর্য হতে পারে না। তাই শুভ্রতা কল টা ইগনোর করলো। এভাবে করে পাঁচবার কল বাজতে বাজতে কেটে গেলো। এদিকে উদয় রেগে আগুন। ছয়বারের সময় শুভ্রতা কল টা রিসিভ করলো। আর ওপাশ থেকে সেই বহু পরিচিতি কন্ঠস্বর টা শুনে আঁতকে উঠলো সে…!

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here