#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_45

” মির্জা বাড়ির মেয়ে মুখ কালো করতে রেসট্রন এ আসছে। বিয়ের আগেই যে মেয়ে পালায় যায় তাঁর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। ”

আরফানের কন্ঠ টা চিনতে অসুবিধা হলো না অভিনবর। অভিনব পেছন ঘুরে তাকালো। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে আরফান বাঁকা হাসছে। অভিনব কে দেখতে পায় নি সে। কারন ঝিলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আরফান। ঝিল উঠে দাঁড়ালো। উক্ত ব্যক্তিটি কে সে চিনে না। তবু ও ভদ্রতার খাতিরে বলল
_ আপনাকে তো চিনলাম না ! আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে আপনি ?

_ অহনা মির্জা ঝিল রাইট ?

_ হুমম।

আরফান ব্যঙ্গ হাসলো। অভিনব বিষয় টা বোঝার চেষ্টা করছে। আপাতত সামনে থাকা মানুষটার প্রতি চরম বিরক্ত ঝিল। ততক্ষণে মৌনতা ও চলে এসেছে। মৌনতা কে দেখে আরফান বলল
_ আবার সাথে করে বান্ধবী কে ও নিয়ে এসোছো। বাহহ মির্জা বংশের কি উন্নতি হলো। এইসব নোংরামি শুধু ওরাই পারে।

অভিনবর রাগ উঠে গেল। সমস্ত কিছু তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলো। উঠে দাঁড়াতেই আরফান অন্য দিক ফিরে হাঁক ছেড়ে ডাকতে লাগলো।
_ আরে কোথায় তোরা ! মির্জা বংশের সম্মান দেখে যাহহ। কোন ছেলের সাথে ফস্টি নষ্টি করে বেড়াচ্ছে।

ঝিল অবাক হলো। কি বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করছে। অভিনবর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। টেবেলি টাকে খামচে ধরে বলল
_ আরফান ভাই !

কথা টা শোনা মাত্র আরফানের মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে গেল। পেছন ঘুরে অভিনব কে দেখে অবাকের চরম পর্যায়। এতোটাই অবাক হলো যে চোখের পলক পরছে না। অভিনবর মুখে ভাই ডাক শুনে ঝিলের মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে গেছে। সব কেমন উলোট পালোট লাগছে।

মৌনতার অবস্থা শোচনীয় । সে যেন দর্শক মাত্র। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ এ কেমন ভাষা ? ওর প্রতি এমন বাঝে ইনটেনশন কি করে দিতে পারো ?

_ ইহান তুই ! মির্জা বংশের মেয়ের সাথে তুই কি করছিস?

_ ওহ আমার গার্লফ্রেন্ড।

_ হোয়াট ! এখনি বাসায় ফিরবি তুই। এই মেয়েটার সাথে কোনো কথা নয়। বাজে বংশের বাজে

কথাটা বলার আগেই টগবগে কন্ঠের ধমক ভেসে আসলো। সবাই যে দিকে তাকালো। রোহন এর শরীর কাঁপছে। দিরহাম কে ঝিলের পিছু পাঠিয়েছিলো। একটা ছেলের সাথে দেখা করছে শুনেই এ দিকে রওনা দেয়। এখানে এসেই আরফানের ভাষা গুলো শুনতে পায়।
_ একটা ও কথা নয় আরফান শিকদার। নিজে কে সংযত রাখুন। আমার বোনের দিকে আঙুল উঠানোর সাহস কি করে হয় ?

_ বোনের হয়ে সাফাই গাইছিস ? তোর বোনের মানসিকতার ঠিক আছে ?

_ এখানেই থেমে যান না হলে বিবাদে যেতে বাধ্য হবো আমি।

দুজনের কলহ লেগে যায়। ঝিল জোড়ে চিৎকার করে উঠে। কেউ কোনো কথা শুনে না। মুহুর্তেই শোরগোল পেকে যায়। অভিনব যেন পাথরের মূর্তি। সমস্ত কিছু দেখে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না এঁদের শত্রুতা । চরম বিপাকে পরেছে ছেলেটা। তবে চুপ থাকাই শ্রেয় বলে চুপ রয়েছে। ঝিল কে এক সাইটে টেনে নিয়ে গেল অভিনব।
_ শান্ত হও ঝিল।

_ অনেক বড় সমস্যা হবে অভিনব। আমার মাথা কাজ করছে না।

_ ঠান্ডা হও প্লিজ।

মুহুর্তের মধ্যো পুরো রেসট্রন কলহের সরাই খানা হয়ে উঠে। মির্জা পরিবার আর শিকদার পরিবার মুখোমুখি হয়।
অভিনব বুঝতে পারে জটলা টা গভীর । এর সমাধান কি করে করবে বুঝে উঠে না।

রেসট্রন এর ম্যানেজার সবাই কে বসার ব্যবস্থা করে দেন। ঝিল আর অভিনব পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রইলো।
হঠাৎ করেই ছেলেটা ঝিলের হাত শক্ত করে ধরলো। ঝিলের নয়নে অশ্রুর মেলা। অভিনবর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। অভিনবর দৃষ্টি স্থীর দেখে অবাক হলো।

_ তোমার সাথে মির্জা বাড়ির মেয়ের কি সম্পর্ক ইহান ?

_ বড় মামা ওহ আমার ভালোবাসা।

_ ইহান কিছু নিষিদ্ধ জিনিস থাকে সেখাতে হাত বাড়াতে নেই।

_ ঝিল এদিকে আসো !

_ পাপা আমি

আহনাফ গিয়ে ঝিলের পাশে দাঁড়ালো। এক পলক তাকিয়ে বোনের হাত ধরলো। অভিনব ভ্রু কুটি করে বলল
_ হাত টা ছেড়ে দাও !

_ আমার বোনের হাত ধরার জন্য পারমিশন লাগবে ?

_ উহুহ লাগবে না। তবে এখন ওহ আমার সাথেই থাকবে।

_ ভাইয়া আমার কথা টা শোনো।

_ অনেক হয়েছে ঝিল। এবার আর না , আমরা চাই না শিকদার দের সাথে আত্মীয়তা গড়তে।

_ ভাইয়া !

অভিনব ঝিল কে টেনে নিলো। আহনাফ ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ আমাকে জোড় করতে বাধ্য করবেন না অভিনব । আমরা সম্মান দিতে জানি আবার সম্মান মাটি তে মেশাতে তো পারি।

_ তুমি ওর বড় ভাই আহনাফ। বোন কে কতোটা ভালোবাসো আমি জানি। তোমার বোঝা উচিত।

_ পরিস্থিতি ভালো না হাত টা ছেড়ে দিন।

_ ভাইয়া !

_ ভরসা রাখ আমার উপর।

অভিনব একটু বেঁকে তাকালো। হাত টা আলগা করে দিয়ে ঝিলের দিকে তাকালো। চোখের কোনে পানি জমেছে। একটু হাসলো , আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ চোখ সরিয়ে নিলো। ঝিলের হাত ধরে এগিয়ে গেল। বিভক্ত হয়ে গেল দুটো পরিবার।
বিচ্ছেদ এর রেখা দুটো হৃদয়ে। হঠাৎ করেই ঝিল কেঁদে উঠলো।
_ আমি ওর কাছে যাবো, ছাড়ো তোমরা ।

_ ঝিল !

অভিনব আগাতেই ইববান বাঁধা দিলেন। ঝিলের কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল। বুকে পাথর চেপে আছেন জাফর। মেয়ে কে কষ্ট দিতে চাইছেন না। তবে সব কিছুর সমাধান যে হয় না।

*

” ডোন্ট টক মি। কেউ আমার কাছে ও আসবে না। আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিলে তোমরা। মানুষ মনে হয় না আমাকে ? কিসের এতো অহংকার ? শিকদার বংশের সাথে ঝামেলা হয়েছে তো অভিনবর কি দোষ ? আমার থেকে কেন আলাদা করে দিলে তোমরা ? ”

_ ঝিল মামুনি তুমি কেন বুঝতে চাইছো না। ঐ ছেলেটার সাথে তোমাকে জুড়ে দিতে পারি না আমরা।

_ ওয়াও বড় পাপা। এতোদিন তো খুব বলতে চাঁদ কে ও হাজির করে দিবে। পুরো পৃথিবী টাই আমার। আজ কেন উল্টো গান গাইছো ?

_ মামনি !

_ নো মোর ওয়ার্ড। লিভ মি এলোন। অভিনব কে এনে দাও না হলে শেষ করে দিবো আমি। ভালোবাসি আমি , এনি কস্ট অভিনব কে চাই আমার।

_ মামনি

হাতে থাকা ফোন টা আয়নায় ছুঁড়ে মারে ঝিল। আয়নার এক পাশ ভেঙে পরে। তাঁর থেকেই এক টুকুরো আয়না নিয়ে নিজের হাতে লাগিয়ে দেয়।
রক্তে মাখোমাখো হয়ে যায় তাঁর হাত। ইববান এগোতে আসলেই ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠে। জাফরের চোখে পানি। ব্যথা টা বোধহয় বুকে লেগেছে।
পাঁচ ভাই হন্ত দন্ত হয়ে পরেছে। ঝিলের শরীরের রক্ত দেখে পাগল প্রায় অবস্থা। হঠাৎ করেই মেয়েটা জ্ঞান হারায়।

” একটা শত্রুতার জন্য ঝিল কেন সাফার করবে বলো তো ? তাছাড়া ওঁদের মাঝে তো কোনো ঝামেলা নেই তাহলে সমস্যা কোথায় ?

_ রোহন শান্ত হও তুমি।চাইলেই সব ঠিক হয় না।

_ কেন ঠিক হবে না ? ইহরিমা সরকার কে মেনে নিয়েছে শিকদার বংশ।
তাহলে আমাদের সাথে কেন শত্রুতা ?

মনিরুল এতো ক্ষন চুপ করে ছিলেন। ব্যথাতুর জায়গায় আবার ব্যথা অনুভব হলো। ফোঁস করে শ্বাস ফেললেন। এক টা ছবির ফ্রেম বের করলেন।
ছবিটা তাঁর স্ত্রীর। বার কয়েক হাত বুলিয়ে বললেন
_ তোমার মা কে খুব ভালোবাসি রোহন। ইহরিমা তোমার মায়ের বান্ধবী। অহেদ কে ভালোবাসতো খুব ।
কিন্তু শিকদার বংশ তা মেনে নেয় নি। পূর্ব পরিচিত শিকদার বংশ। সকলের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব।
তোমার মা কে কথা দেই অহেদের সাথে ইহরিমা কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করবো। অন্যায় ই করেছিলাম সেদিন । তবে সেটা ছিল পরিস্থিতি । দুটো ভালোবাসা কে আলাদা করতে চেয়ে ওরা উচিত করে নি।
শিকদার পরিবারে অসম্মান হয়েছিলো খুব। বিশ্বাস করো সেটা আমি চাই নি। তবে উপায় ছিলো না আমার ।

তারপর থেকেই মিত্রতা হয়ে উঠে শত্রুতা। শিকদার পরিবার মির্জা পরিবার কে ঘৃনা করে। আর আমরা ওহ শিকদার পরিবার কে ঘৃনা করি।

_ বাহ আজ কেন উল্টো বলছো ? ঝিল আর অভিনব কে কেন আলাদা করছো ?

_ দোষ টা তোমাদের ছিলো আব্বু। ক্ষমা চেয়ে নাও।

_ রাফাত।

_ কি বলবো আমি। ঝিলের দিকে তাকাও একবার। চোখ মুখ কেমন হয়ে গেছে।

_ ভাইয়া ক্ষমা চাইবে না রাফাত। রোহন বোন কে ভালোবাসা দোষের নয়। তবে সব আবদার পূরন হয় না ।

জাফরের কথায় সবাই অবাক হলো। ইবান বললেন
_ জাফর তুই

_ থামো তুমি। আমরা নত হবো না।

রোহন কিছু বলবে তাঁর আগেই চলে যায় ওনারা । রাফাতের রাগ হলো। রাগে গজগজ করতে লাগলো।
কেউ মাথা নত হবে না। এতো অহংকার ভালো নয়। শেষে ভুগতে না হয়।

*

” মম এমন কেন বলছো ? আমি চাই না তোমার সাথে মামাদের সম্পর্ক নষ্ট হোক। ঝিল আমার আছে আর আমারি থাকবে। তবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে অন্য ভাবে। পুরুনো বন্ধুত্ব ফিরিয়ে নিতে হবে। জানো তো ক্ষত তে টান পরলেই পুরনো স্মৃতি মনে পরে। তেমনি কিছু করতে হবে। ”

_ মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে । কতোটা ভালোবাসে তোকে। ভাইয়ারা এখনো রেগে আছেন।
আচ্ছা ভুল তো আমি করেছি। ওদের কেন শাস্তি দিচ্ছে বল তো ।

_ মম প্লিজ। ঝিল কে স্ট্রং থাকতে হবে আর তোমাকে ওহ। আমি বলেছি ওকে ওর মা ফিরিয়ে দিবো। মেয়েটা খুব ভালো জানো তো।
উজার করে ভালোবাসে আমায়।

ইহরিমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_ দেড় বছর দূরে রেখেছিস অভিনব। একটা মেয়ের মন কতো টা ভেঙে যেতে পারে ভেবে দেখেছিস ?

_ স্যরি মম। আমি তো তখন

_ তখন কি হুমম ? তখন ভালোবাসতে না আর এখন ভালোবাসো ? আমি তো জানতাম আমার ছেলে দায়িত্ববান। বিয়ে করা স্ত্রী কে কি করে ফেলে গেলে ?

অহেদ এর কথাতে মাথা চুলকোয় অভিনব। আসলেই চরম ভুল করেছে সে। তবে সব ছিলো পরিস্থিতির খেলা। অভিনব ভেবে রেখেছে মামা বাড়ির সবাই কে বিয়ের বিষয় টা জানাবে।
তবে সমস্যা হচ্ছে আগুনে ঘি ঢাললে আগুন তত তেতে উঠে।
ঘি ঢালা টা কি উচিত হবে ?

_ শোন অভিনব। ঝিলের একটু খোঁজ নে। মেয়েটা কেঁদে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে নিশ্চয়ই।

অভিনব ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে। একটু ভাবে ঝিল নিজেকে সামলাতে পেরেছে তো ?
মেয়েটা মাঝে মাঝে এতোটা বেখায়ালি হয় যে ভাষায় প্রকাশ হবে না।

বেশ কিছুক্ষন ভেবে ঝিল কে কল লাগালো।
কয়েক বার রিং হলো তবে ফোন রিসিপ হলো না। প্রচন্ড চিন্তা হলো। হয়তো আশে পাশে মানুষ আছে ভেবে আর কল দিলো না।

ফোনে ম্যাসেজ এর আওয়াজ ভেসে আসলো। আরফান ম্যাসেজ দিয়েছে। ছেলেটা স্যরি বলতে বলতে পাগল হয়ে গেল। অভিনব এতো বার বলল তবু ও শুনছে না।
যখন থেকে জেনেছে ঝিলের সাথে বিয়ে হয়েছে অভিনবর। তখন থেকে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
অভিনব একটু করে হাসলো।টাইপিং করে বলল
” সাহায্য করবে আরফান ভাই ? তুমি তো জানো আমাদের বিয়ের কথা। একটা পথ খুঁজে দাও না প্লিজ ।”

ম্যাসেজ টা সেন্ড করা মাত্র ই অভিনবর ফোন বেজে উঠলো। ঝিল ফোন করেছে। অভিনব এতোটাই উত্তেজিত ছিলো যে ফোন রিসিপ করা হলো না।
দ্বিতীয় বার রিং হতেই রিসিপ করে ফেললো।
_ হ্যাঁ ঝিল। তুমি ঠিক আছো ?

_ ঠিক নেই। আপনার জন্য নিজে কে রক্তাক্ত করেছে।

_ রোহন ! মজা করছো আমার সাথে ?

_ না। আপাতত ঘুমুচ্ছে। একটু আগে ডাক্তার ইনজেকশন পুস করে দিয়েছে। বুঝে উঠতে পারছি না মেয়েটা কেন আপনাকে এতো ভালোবাসে। কয়েকদিনের পরিচয়ে এতো ভালোবাসা!

অভিনব আর কথা বাড়ালো না। ফোন টা রেখে দ্রুত বেরিয়ে পরলো। ঝিল কে দেখতেই হবে। মেয়েটা এমন বোকামি কি করে করলো ?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here