#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_22

ডিমের চরের বনের গহীনে সবাই একটু ঘোরাঘুরি করলো। ছোট ছোট জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সবাই নিঃশব্দে হাঁটা খানিক টা গা ঝমঝম ভাব ছিলো। অবশ্য সারা টা সময় ঝিল অভিনবর বাহু তে ঝুলে ছিলো।
ডিমের চরে ওরা বেশ কিছু পাখি দেখতে পেল। শীতের শেষ সময় হলে ও এই সব পাখিরা এখানেই রয়ে গেছে।
একটা কিংফিশার দেখতে পেয়ে লাফিয়ে উঠলো ঝিল। পাখিটার মুখে ছোট কোনো মাছ । বোধহয় নদী থেকেই তুলে এনেছে এই মাত্র।
দুটো ব্ল্যাক হেডেড কাকু শালিক দেখতে পেল ওরা। যাদের মাথার অংশ টা কুচকুচে কালো। কমন রেড শ্যাংক , কেন্দিশ প্লোভার , লেসার স্যান্ড প্লোভার , কারলিউ স্যান্ডপাইপার , কারলিউ , হুইমবার্ল , গ্রেট থিকনি , রিভার টার্ন , হুইস্কার্ড টার্ন সহ নানা ধরনের পাখি। জঙ্গলের ভেতর এইসব পাখি নিজ হাতে ধরিয়ে ধরিয়ে দেখিয়েছে অভিনব ।
তা দেখে মাহেরার মুখ টা ছোট হয়ে গেছে। ঝিলের তখন বেশ মজা লেগেছে।
সবাই মিলে টেউয়ের মাঝে পা ও ভিজিয়েছে তারপর তিনকোনা দ্বীপ নামে এক দ্বীপে ও গিয়েছে।

সুন্দরবন প্রায় পাঁচ জেলাকে স্পর্শ করেছে। এখানে ছোট বড় প্রায় দুই শত দ্বীপ রয়েছে একটি ট্যুরে সব গুলো দ্বীপে যাওয়া কোনো কালেই সম্ভব নয়।
সাধারনত কয়েকটা দ্বীপেই ঘোরা হয়।

ডিমের চর থেকে সবাই কে নিয়ে বোর্ট এ উঠা হলো। এবার গন্তব্য পক্ষী খাল। পক্ষী খালের আসল সৌন্দর্য থাকে ভোরবেলা। তবে এখন নয়টা বেজে গেছে । তবু ও পাখির কিচির মিচির শোনা যাবে। পাখির কথা শুনেই ঝিলের কি লাফালাফি। ছোট সময়ে ওহ যখন ভোর বেলা আরবি পড়তে যেত তখন পাখির কিচির মিচির শুনতে পেত। দল বেঁধে গেলে ও একটা শব্দ ও করতো না ওরা। যাতে পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়।
পক্ষীর খালের দিকে বোর্ট চলতে লাগলো। কুয়াশার কারনে এখনো সূর্য উদয় হয় নি। বোর্টের কর্নারে ঝিল আর অভিনব পাশা পাশি বসে আছে। ঝিল ছোট বাচ্চা দের মতো পানি দিয়ে খেলা করছে। অভিনব সর্তক চোখে তাকিয়ে আছে। যাতে ঝিল পানি তে উল্টিয়ে না পরে। পক্ষীর খালে প্রবেশ করতেই সূর্য যেন চোখ মেলে তাকালো কুয়াশার চাঁদর সরিয়ে। এক ফালি রোদ্দুর এসে অভিনবর গাল ছুঁইয়ে যাচ্ছে। অভিনব ঝরা হেসে আলো কে গায়ে মাখতে লাগলো। ঝিলের ডাগর ডাগর চোখ গুলো অভিনবর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। অতিরিক্ত ফর্সা মুখ টা তে রোদ্দুর যেন খেলা করছে। সাদা রঙ টা হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে।
ঝিলের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তার চোখে দেখা অভিনব পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর পুরুষ।
ঝিলের ইচ্ছে হলো অভিনব গাল ছুঁইয়ে দিতে। ঝিল নিজের ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না । টুপ করে অভিনবর গাল ছুঁইয়ে দিলো। অভিনব অবাক চোখে তাকালো । ঝিল তখনো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অভিনব তার ঘায়েল করা মারাত্মক হাঁসি ফুটালো। ঝিলের হাত দুটো মুঠো বন্দী করে সময় নিয়ে চুমু খেল। ঝিল চমকালো , লজ্জার সাথে ভয়ের মিশ্র অনুভূতি তে ঝিল নুইয়ে পরলো। এই মুহুর্তে কি হলো ঝিলের মাথার নিউরন গুলো আচ করতে পারলো না। অভিনব দারুন হাসি তে হাসলো।
সেই হাসি তে যেন মুক্ত ঝরে।ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
ইসস কি দারুন অনুভূতি।

অভিনব লক্ষ্য করলো মাথার উপর দিয়ে ঈগল উড়ে যাচ্ছে। তবে ঈগল টা সাদা রঙের । ঝিল অভিনবর দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকালো। একে একে সবাই ঈগল টিকে দেখতে পেল। সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ঝিল অভিনবর বাহু তে ধাক্কা মেরে বলল
_ ওয়াও এটা কি রকমের ঈগল ?

_ সাদা ঈগল এটা র আরেক নাম সাগর ঈগল।

ঝিল কোনো কথা বলল না। মোহনীয় চোখে পাখিটির দিকে তাকিয়ে রইলো। ঈগল টার পাশে কোথা থেকে যেন আরেক টি ঈগল চলে আসলো। সবার মাথার উপর এক চক্কর দিয়ে ঈগলের জোড়া উড়ে গেল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ঝিল। নিঃসন্দেহে এই পাখি দুটো কাপল। ঝিলের হঠাৎ করেই ভীষন লজ্জা লাগলো। অভিনব ঝিলের লজ্জা মাখা মুখ টা দেখতে পেয়ে সরস হাসলো।

সাগর ঈগল Accipitridae পরিবারে অন্তর্ভুক্ত Haliaeetus গোত্রের ৬৮ সে.মি. দৈর্ঘ্যের একটি শিকারী পাখি। পূর্ণবয়স্ক পাখির পিঠ ধূসর ও দেহের নিচে সাদা। মাথা, ঘাড়, বুক, পেট ও লেজ সাদা। এদের ডানা সম্পূর্ণ গোটানো অবস্থায় লেজ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। উড়ার সময় ডানার প্রান্ত ও মধ্য পালক স্পষ্ট দেখা যায়। এদের ডানার আকৃতি ভি চিহ্নিত থাকায় সবার নজর কাড়ে। ঠোঁট কালচে। পা ও পায়ের পাতা ধুসর-সাদা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির একটু ভিন্নতা আছে। এদের পিঠ বাদামি ও লালচে-পীতাভ বর্ণের হয়। বুকের উপরের অংশ সম্পূর্ণ সাদা না হয়ে বাদামি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েপাখি পুরুষপাখির চেয়ে একটু বড় আকারের।

সাগর ঈগল উপকূলীয় পাখি হলেও নদীর তীর থেকে দূরের চরে, সুন্দরবনে আবার কখনো মিঠাপানির হ্রদে বিচরণ করে। সচরাচর এরা জোড়ায় বা একা থাকে। গাছে বসে বা আকাশে উড়ে নিচের খাবার খোঁজে। শিকার দেখামাত্র লম্বা নখ দিয়ে পানি থেকে শিকার তুলে নেয়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে সাপ, মাছ, কাঁকড়া, ইঁদুর ও অনান্য ছোট প্রাণি। মাঝে মাঝে সুন্দরবনের ছোট পাখিগুলোও এদের শিকার হয়। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। উপকূলের পাড়ের উঁচু গাছে ডাল ও পাতা দিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ২টি ডিম পাড়ে। মেয়েপাখি একাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।

সাগর ঈগল বাংলাদেশের সুলভ ও বিপদমুক্ত আবাসিক পাখি। বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের উপকূলে সচরাচর পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন ও মালয়েশিয়াসহ এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেই এদের বিচরণ রয়েছে।

পাখি দুটো চোখের আড়াল হতেই ঝিল নুইয়ে পরলো। অভিনব ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করতেই ঝিল কেমন লজ্জা পেয়ে গেল। অভিনব মুগ্ধ দৃষ্টি তে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। চুল গুলো এলেমেলো হয়ে আছে। অভিনব ধীর হাতে চুল গুলো গুছিয়ে দিলো।
ঝিল শুধুই হাসলো, মেয়েটার এই হাসিতে অভিনব চোখ ফিরিয়ে নিলো।
তার মনের অবস্থা ভয়ঙ্কর। নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য চোখে মুখে পানি দিয়ে নিলো।

ঝিল লক্ষ্য করলো গাছের ডালে একটা পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাচ্ছে। অভিনব কে প্রশ্ন করতেই অভিনব সে দিকে তাকালো। উত্তর না দিয়ে টপ করে একটা ফটো ক্লিক করলো। ঝিল প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।

_ এটা এ দেশের বিরল আবাসিক পাখি চিত্রিতবুক কাঠঠোকরা। ডোরাবুক পাকড়া কাঠঠোকরা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম স্টিক-ব্রেস্টেড উডপেকার। পিসিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Picus viridanus। সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল থেকে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া উপদ্বীপ পর্যন্ত পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

সচরাচর এটার দেখা পাওয়া যায় না। ঝিল এক ব্রিবতি কর প্রশ্ন করে ফেললো।
_ অভিনব এটা মেয়ে না ছেলে ?

অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। গলা ঝেরে দৃষ্টি লোকালো। ঝিল আবার প্রশ্ন করলো। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ দেখে তো মনে হলো পুরুষ পাখি।

ঝিল ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করলো। পাখির কিচির মিচিরে ঝিল চোখ বন্ধ করে নিলো। দারুন এক পরিবেশ। মনে হচ্ছে পাখির রাজ্যে প্রবেশ করেছে ওরা। সাধারনত পক্ষীর খালে পানি খেতে আসে এইসব পাখি। শীত হওয়াতে বিদেশী পাখির আনা গোনা ও রয়েছে। ঝিল একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। তবে সমস্ত পাখির নাম অভিনব বলতে পারলো না।
দুটো বক খালের পারে পানি খাচ্ছে। ঝিল সাদা বকের দিকে তাকিয়ে রইলো। এক মুহূর্তের জন্য অভিনব কে বকের সাথে তুলনা করে ফেললো।
তারপর ই খিল খিল করে হাসি। অভিনব ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। ঝিল পেট চেপে হাসছে । অভিনব খপ করে ঝিলের কোমর জড়িয়ে ধরে ফেললো। একটুর জন্য মেয়েটা পানিতে পরে যায় নি। ঝিল নিজেকে স্বাভাবিক করে ফিসফিস করে হিম শীতল কন্ঠে বলল
_ আপনাকে বকের মতো দেখতে লাগছে।

অভিনব তাজ্জব বনে গেল । সত্যি ই কি তাকে বকের মতো লাগছে ? অভিনব নিজ প্রশ্নে নিজেই বোকা বনে গেল। ঝিল ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো।

ঝিল সামান্য আশাহত হলো কারন এখানে তার পরিচিত পাখি গুলোর আনা গোনা কম। তবে একটা পাতিবাটান পাখির দেখা ও মিললো। কেন যেন পরিচিত পাখি গুলো কে দেখতে ইচ্ছে করছে।
ঝিলের মাথায় হঠাৎ এক প্রশ্ন আসলো। অভিনব বুঝলো কি করে কাঠঠোকরা টা পুরুষ পাখি।

_ এই যে শুনুন ।

_ হুম

_ আপনি জানলেন কি করে কাঠ ঠোকরা টা পুরুষ ছিলো।

_ তাই তো। আসলেই এটা ভাবার বিষয়।

_ মজা করছেন আমার সাথে ?

_ উহুহহ ।

_ তাহলে বলুন না কি করে বুঝলেন । আমি ও জানতে চাই। প্লিজ অভিনব , প্রমিস আপনাকে যাওয়ার আগে আমি চকলেট দিয়ে যাবো ।

_ সত্যি ?

_ হুমম পাক্কা।

_ তাহলে শুনুন ।

অভিনব বিজ্ঞ দের মতো গলা ঝেরে নিলো। ঝিল জানার জন্য তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে মনোযোগী শ্রোতা হচ্ছে ঝিল।
অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। ঝিল কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ বলুন।

অভিনব দমে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। তার স্টুডেন্ট এর বয়সী মেয়েটা তার বউ। আর সেই পিচ্ছি বউ টাকেই লেকচার দিবে ওহহ। তবে একটা পার্থক্য হচ্ছে স্টুডেন্ট রা ওর ধমক খায় আর ওহহ ঝিলের ধমক খায় । আপন মনেই হাসতে লাগলো অভিনব।

_চিত্রিতবুক কাঠঠোকরার দৈর্ঘ্য ৩০-৩৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ৯০-১২০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের ওপরের অংশ হলুদাভ সবুজ। গাল ধূসর ও গোঁফরেখা কালো। অসংখ্য সাদা ছিটসহ ডানার ওড়ার পালক ও লেজ কালো। ঘাড়, গলা ও বুকের ওপরের অংশ হলুদাভ- জলপাই রঙের। সাদা আঁশের মতো ছোপসহ পেট, ডানার নিচ বা বগল ও পায়ু জলপাই রঙের। চোখ কালচে লাল। দুরঙা চঞ্চুর ওপরেরটি কালচে ও নিচেরটি হলদে। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালচে। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও পুরুষের মাথার চাঁদি লাল ও স্ত্রীরটি কালো। দাগবিহীন ঘাড়-গলা-বুক, ধূসর গাল এবং সুস্পষ্ট দুরঙা চঞ্চুর মাধ্যমে চিত্রিতগলা কাঠঠোকরা থেকে পৃথক করা যায়।

ঝিল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব প্রশস্ত হেসে বলল
_ বুঝলেন এবার ?

ঝিল মাথা কাত করে সম্মতি জানালো।

বাংলাদেশে এদের কেবল সুন্দরবনেই দেখা যায়। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। গাছের কাণ্ড আঁকড়ে ধরে কিংবা মাটিতে পড়ে থাকা গাছের গুঁড়িতে লাফিয়ে লাফিয়ে

পিঁপড়া, উইপোকা, গুবরেপোকা এবং এদের ডিম ও রসাল শূককীট খুঁজে খায়।
আর ভাগ্য থাকলে তখনি এদের দেখা মিলে।

পক্ষীর খালের কিছু দূর পর গোলপাতা গাছ রয়েছে। ঝিল বুঝতে পারলো না এ গাছ কে কেন গোলপাতা গাছ বলা হয়। এদের পাতা তো খানিকটা নারিকেল গাছের পাতার মতোই দেখতে। ঝিল আর মাথা ঘামালো না। নিঃশব্দে পাখির আনা গোনা উপভোগ করতে লাগলো। তবে সবাই হালকা উল্লাসে মেতে উঠেছে। যেহেতু সবাই ঢাকার ব্যস্ত নগরীর বাসিন্দা তাই পাখির দেখা সচরাচর তাঁদের মিলে না। গাইড সবাই কে চুপ করতে বললেন। না হলে পাখির কলধ্বনি শুনতে পাওয়া যাবে না। কিছুদূর পর পর বোর্ট থামানো হচ্ছে যাতে করে সবাই পাখির কিচির মিচির শুনতে পায়। পাখির কিচির মিচিরের শব্দে কানে এসে বিঁধে গেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা গান পাখি রাই গায়। পাখির কলধ্বনি এভাবে শোনা হয় নি কখনো। ঝিল ঠিক করলো এখন থেকে খুব ভরে উঠে বাগানে চলে যাবে। তারপর প্রান ভোরে পাখির গুনগুন শব্দে সকাল পার করবে।
ঝিলের দু চোখ চকচক করে উঠলো। অভিনব বুঝতে পারলো মেয়েটা কোনো গভীর ভাবনাতে মত্ত।

রাডি কিংফিশার , ম্যানগ্রোভ পিট্টা ও চোখে পরলো।
কিছু দূর যেতেই গহীন জঙ্গলে চোখে পরলো একটি মায়া হরিন। সবাই চুপ হয়ে গেল। হরিন টি জ্বিভ দিয়ে পানি খাচ্ছে। অভিনব সুন্দর করে সে দৃশ্য তুলে নিলো। ঝিল মাথা উচিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। অভিনব সামান্য রসিকতার হাসি দিয়ে বলল
_ আমার থেকে বয়সে আর হাইটে আপনি অনেক পিচ্ছি। সব সময়ে পা উচিয়েই দেখতে হবে।

এ কথা শুনেই ঝিলের প্রচন্ড রাগ হলো। ঝিল মোটে ও খাটো নয়। বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে ঝিল কে মোটা মুটি লম্বা বলা যায়। ঝিল 5’3 আর অভিনব 6 ফিট। তো কি হয়েছে ঝিলের কলেজের ফাংশনে এক বিদেশী এসেছিলো যে 6’4 । আর ঐ বিদেশী ঝিলের সাথে নিজে সেলফি নিয়েছে।
ঝিল মুখ ফুলিয়ে রাখলো। অভিনব ঝিলের বাহু তে ধাক্কা মেরে ফিসফিস করে বলল
_ স্যরি।

ঝিল মানতে নারাজ। অভিনব হঠাৎ করে বোম ফাটিয়ে দিলো।
_ বউ রা বরের বুক পর্যন্ত হলেই মজা। যাতে করে এদের আষ্ঠে পৃষ্ঠে বুকে জড়িয়ে নেওয়া যায়। আর অন্য সব এডভানটেঞ্জ তো আছেই।

ঝিলের হার্ট বিট হাজার গুন বেড়ে গেল। অভিনবর মুখে বউ কথা শুনে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।
ওহহ কি সত্যিই অভিনবর বউ ? হ্যাঁ তাই তো ওদের তো বিয়ে হয়েছে। ঝিলের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
অভিনব মৃদু ছন্দে গুনগুন করছে। ঝিলের হঠাৎ করেই মনে হলো অভিনবর বলা সেই কথাটা।
” আপনাকে মুক্ত করে দিবো ঝিল ”
ঝিলের হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো। চোখ দুটো ভিজে গেল। খুব ইচ্ছে হচ্ছে অভিনব করে জড়িয়ে চিৎকার করতে। ইচ্ছে হচ্ছে বলতে আমি মুক্তি চাই না অভিনব । আমি চাই না ডিভোর্স। কিন্তু কোথাও এসে চিৎকার গুলো থেমে যাচ্ছে। ঝিল হতাশ চোখে অভিনবর দিকে তাকালো। তখন অভিনবর দৃষ্টি ছিলো ঝিলের দিকেই। দুজনের চোখা চোখি হয়ে গেল। দুজনের চোখেই হতাশার ছাঁপ। আচ্ছা দুজনের অনুভূতি গুলো কি একি দিকে যাচ্ছে ? নাকি এখানেই ওদের পথ চলার সমাপ্তি ঘটবে ?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here