#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_14
সূর্য টা ধীরে ধীরে কুয়াশার মাঝে হাড়াতেই ঝিলের মুখ টা শুকনো হয়ে গেল।
দেখতে বেশ ভালো লাগছিলো। কি সুন্দর জাদুর মতো করে একটু একটু করে আড়াল হয়ে যাচ্ছিলো সূর্য টা। সূর্য গ্রহন হলে যেমনটা লাগে ঠিক তেমন।
অভিনব ঝিলের মাথায় থাকায় ক্যাপ টা খুলে নিলো।
ঝিল নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ ক্যাপ টা খুললেন কেন ?
_ ক্যাপ পরলে কেমন যেন লাগে। এমনি তে বেশি সুন্দর লাগে।
ঝিল ঠোঁট বাঁকিয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের মাথায় ক্যাপ টা দিয়ে বলল
_ ক্যাপ পরলে ও সুন্দর লাগে , লাইক বিদেশিনী ।
_তাই নাকি ?
অভিনব মাথা কাত করে হুমম বোঝালো। তারপর বলল
_চা খাবেন ?
_ উমমম আচ্ছা।
_ আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি।
_ উহহহু আমি ও যাবো আপনার সাথে।
_ আচ্ছা চলুন।
ঝিল আর অভিনব মাঠের একটু পাশে থাকা একটা চায়ের দোকানে চলে আসলো।
চায়ের দোকান টা তেমন পরিষ্কার নয়। তবে চা খাওয়া যেতেই পারে। মাঝ বয়সী লোক টা চায়ের ফ্ল্যাক্স টা টেবিলে রাখছে। সাথে টুকিটাকি কাজ ও করছে। ঝিল হাতে হাত ঘষে বলল
_ ঠান্ডা বেড়ে যাচ্ছে।
_ চা খেলে দেখবেন শরীর মন দুটোই গরম হয়ে যাবে।
ঝিল মাথা কাত করে মুচকি হাসলো। চায়ের দোকনদার অভিনব কে দেখে একটু অবাক হয়েছেন।
তার এখানে প্রায় সময় বিদেশী পর্যটকের দেখা মিলে। তারা সচরাচর চা খায় না। কারন তারা হাইজিন আর লাইফ নিয়ে সচেতন।
ইনটেক ছাড়া কোনো কিছুই মুখে তুলে না।
অভিনব সবিনয়ের স্বরে বলল
_ চাচা দুটো চা হবে ?
লোকটা ভারী অবাক হলো। ফরেনার ছেলের মুখে স্পষ্ট বাংলা ভাষা তিনি ঠিক হজম করতে পারলেন না।
অভিনব আবার একি প্রশ্ন করলো। লোকটা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল
_ হুম হবে।
অভিনব আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বসার জন্য একটা বেঞ্চ আছে।
তবে বেশ ময়লা। ঝিল বসতে যেতেই অভিনব হাত ধরে ফেললো।
চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো না বসতে। ঝিল ভ্রু কুঁচকে বেঞ্চ টা পর্যবেক্ষন করে দেখলো বালি লেগে আছে।
ঝিল আর বসলো না। লোক টা দোকানের ভেতরে গিয়ে কিছু নিয়ে আসলো।
কাঠের টেবিল টাতে বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা। তিনটে বোতলে লালচে রঙের কিছু দেখে অভিনব বলল
_ চাচা এগুলো কি ?
_ মধু।
অভিনব বোতল গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বলল
_ এই মধু গুলোর নাম কি ?
_ এখানে যেগুলো আছে খলিসা কেওরা আর বাইন।
ঝিল উৎকন্ঠা হয়ে বলল
_ সুন্দরবনে কি কি ধরনের মধু হয় ?
_ সাধারনত পাঁচ ধরনের মধু হয়। কেওড়া , গরান , খলিষা , বাইন , গেওয়া ।
অভিনব মধু গুলো ভালো করে দেখতে দেখতে বলল
_ চাচা এই সব মধুর টেস্ট কেমন ? বেশি মিষ্টি কোনটা হয় ?
_ মিষ্টি হয় খলিষা মধু। অন্য গুলো একটু টক হয় , আবার কষ ও হয়।
ঝিল বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ শুনেছি এখন নাকি এখানে ও ভেজাল মধু ও দেওয়া হয়। চাচা আপনার মধু তে ভেজাল নেই তো ?
_ আরে না স্যার। কি যে বলেন ,এই সব খাঁটি মধু।
অভিনব ফোন ঘেটে বলল
_ খলিষা মিষ্টি হয় তাই না ?
_ হুম।
_ এটা দেখতে কেমন ?
_ গাঢ় হয় আর সাদা হয় , আর খেতে ও সুস্বাদু।
_ লালচে হয় না ?
_ নাহহ।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ চাচা 250 গ্রাম খাঁটি খলিষা মধু দিন। ঝিল আপনি খাবেন তো ?
ঝিল লাফিয়ে বলল
_ অবশ্যই।
অভিনব মুচকি হেসে একটা বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল
_ কতো টাকা কেজি ?
_ এক হাজার টাকা।
অভিনব বিল টা দিয়ে মধু নিয়ে নিলো। সাথে দু কাপ চা ও নিয়ে নিলো। লোকটার হাতের চা বেশ ভালো।
ঝিল চা খেতে খেতে বলল
_ আচ্ছা অভিনব একটা কথা বলুন তো। কুমির তো মানুষ ও খেয়ে ফেলে তাহলে এখানে ওদের কি খাওয়ানো হয় ?
_ আমি তো ঠিক জানি না ঝিল । ওয়েট চাচা কে জিজ্ঞাসা করে দেখি।
অভিনব চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে বলল
_চাচা আপনি এখানে কি শুধু চা বিক্রি করেন ?
_ নাহ আমি কুমির দের পরিচর্যা ও করি।
_ আচ্ছা তার মানে আপনি ই কুমির দের খাবার দেন। চাচা কুমির দের কি খাওয়ানো হয় ?
লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ বয়লার মুরগি তারপর মাছ , কাঁকড়া ও খাওয়ানো হয়।
ঝিল হা হয়ে তাকিয়ে বলল
_ মানুষের খাবার ওদের কে খাওয়ানো হয় ?
অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ হ্যাঁ। আচ্ছা চাচা কুমিরের বাচ্চা দের কি খাবার দেওয়া হয়।
_ কুমিরের বাচ্চা দের ছোট ছোট চিংড়ি দেওয়া হয়। তারপর বয়লার মুরগির ছোট ছোট টুকরো দেওয়া হয়।
ঝিল ভাবুক হয়ে কিছু ভাবতে লাগলো। তারপর অভিনব কে ফিসফিস করে বলল
_ কুমির কি ডিম পারে ?
_ ঝিল আপনি এটা প্রশ্ন করলেন আমাকে ?
ঝিল মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ আমি আসলে একটু কনফিউশনে ছিলাম।
তারপর একটু থেমে বলল
_ চাচা বুঝেন কি করে যে কুমির ডিম পেরেছে ?
_ একটা নিদিষ্ট সময় থাকে। আমরা সেই টাইম দেখেই লক্ষ্য রাখি।
তারপর ওদের জন্য ঘর করা হয়।
ঝিল অভিনবর হাতে খোঁচা মেরে বলল
_ তারপর ডিম থেকে বাচ্চা হয় কি করে ?
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল
_ আপনি একটু চুপ করুন ঝিল। এমন কিছু না বলে ফেলেন যাতে লজ্জায় নিজেই কুঁকড়ে যাবেন।
ঝিল মুখ টা গোমড়া করে নিলো। অভিনব ছোট করে বলল
_ সরি।
ঝিল কিছু বলল না আর।
অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আচ্ছা চা খাওয়া তো শেষ এখন যাই চলুন।
ঝিল মাথা ঝাঁকালো। এক পা বের হয়ে ঝিল লাফিয়ে উঠলো।
অভিনব সরু চোখে তাকালো
_ কি হয়েছে ?
_ আমার একটা প্রশ্ন আছে।
অভিনব কিছু বলবে তার আগেই ঝিল বলল
_ চাচা আগে বলুন তো এরা একসাথে কতো গুলো ডিম পারে।
_ এক সাথে প্রায় 50 – 60 টা পারে। তবে সব গুলো থেকে বাচ্চা হয় না।
ঝিলের চোখ চড়কগাছ। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ঝিল কে টেনে নিয়ে এলো।
অভিনব মুখ চেপে হাসতে লাগলো। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে ঝিল। অভিনব হালকা কেশে বলল
_ কিছু বলুন , এভাবে থম মেরে গেলেন কেন ?
_ একটা কথা বলুন তো এদের পেটে এতো গুলো ডিম কি করে থাকে ?
অভিনব হো হো করে হেসে বলল
_ আপনি অনেক বেশি কৌতুহলী । আমি জানতে পারলে বলবো ঠিক আছে ?
ঝিল এক গাল হেসে সম্মতি জানালো।
*
বিকেল প্রায় পাঁচ টা হতে চলেছে। ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন সবাই কে করমজলের কাঠের তৈরি ট্রেইল প্রদশর্ন করার জন্য ডাকছে ।
এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে সেটার উপর উঠলে মোটামুটি ভালো একটা ভিউ দেখা যায়।
ঝিল পাপড়ির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। পাপড়ি হচ্ছে শাকীল দের বান্ধবী। ওহহ আর ওর হাসবেন্ড এসেছে। পাপড়ির সাথে ঝিলের বেশ খাতির জমেছে। বয়সের ফারাক অনেক হলে ও দুজনের কথা বলার স্টাইলে মনে হচ্ছে বান্ধবী।
পাপড়ি হাসি থামিয়ে বলল
_ তুমি তো আচ্ছা মেয়ে। এতো বার বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছো ?
ঝিল মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। পাপড়ি ঝিলের হাত ধরে বলল
_ আমরা সবাই মেহেদী পরেছি তোমার হাত খালি কেন ?
_ আসলে আপু তোমরা তো আগে থেকে প্লান করে এসেছো।
আমরা তো
_ উহহ হো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা যাই হোক আমার কাছে মেহেদী আছে। তুমি রাতে পরে নিও।
ঝিল মুচকি হাসলো। পাপড়ি ঝিলের গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল
_ অভিনব ছেলেটা বেশ ভালো। তোমার সাথে বেশ মানাবে।
ঝিল খানিক টা লজ্জা পেল। পাপড়ি জানে অভিনবর সাথে কি করে পরিচয় হয়েছিলো। তবে বিয়ের বিষয় টা সবার অজ্ঞাত।
পাপড়ির হাসবেন্ড ডাক দিতেই পাপড়ি ঝিল কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
অভিনব মাহের এর সাথে কথা বলছে। মাহেরের ড্রোন টা সেট করে দিচ্ছে অভিনব।
ঝিল ওদের কাছ গিয়ে দাঁড়াতেই মাহের লম্বা হেসে বলল
_ হাইই ঝিল।
_ হ্যালো ভাইয়া।
_ ঝিল আপনি একটু ওয়েট করুন। হয়ে গেছে আমার , ড্রোন টা সেট করেই আসছি।
_ আচ্ছা।
ড্রোন টা সেট করে দিয়ে অভিনব ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো।
ঝিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ আজকাল আপনাকে তো দেখাই যাচ্ছে না।
এখন মাহের ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন। আবার তার বোনের সাথে সেলফি তুলছেন।
অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ আপনি কি জেলাস হচ্ছেন ?
ঝিল ভ্রু কুঁচকে বলল
_ হোয়াট । জেলাস আর আমি ? হাউ ফানি। শুনুন
অভিনব আমুদের স্বরে বলল
_ হুমম বলুন।
_ অভিনব আপনি আবার আমার সাথে মজা করছেন ?
_ আচ্ছা সরি। এখন বলুন কি বলবেন।
_ আসলে আমি চাইছিলাম যে আপনি ড্রোন টা চালাবেন না।
_ কেন ? সমস্যা কি তাতে?
_ তাহলে তো আমরা ঘুরতেই পারবো না।
আপনি ঐ উড়ন্ত ক্যামেরা হাতেই ব্যস্ত থাকবেন।
কথা টা ঝিল বেশ অসহায় হয়ে বলল। অভিনবর বেশ খারাপ লাগলো। আসলেই এখানে মোটা মুটি সবাই জুটি বেঁধে এসেছে। অভিনব ড্রোন নিয়ে পরে থাকলে ঝিল কি একা ঘুরবে ?
অভিনব লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি না হয় মাহের এর থেকে ফুটেজ কালেক্ট করে নিবো।
আপনি মন খারাপ করবেন না। আমি আপনাকে নিয়ে ঘুরবো ।
ঝিল খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। অভিনব মিষ্টি এক হাসি দিলো।
ঝিল ব্যাগ প্যাক থেকে চকলেট বের করতে লাগলো ।
ব্যাগ প্যাক খুঁজে হতাশ হলো। লঞ্চে চকলেট ফেলে এসেছে ওহহ।
অভিনব হালকা কেশে ঝিলের মনোযোগ নিলো। ঝিল সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হলো।
অভিনব সরস হেসে বলল
_ জানতাম আপনি চকলেটের জন্য মুড অফ করে রাখবেন।
কখন না আমাকে মেরেই বসেন। তার জন্য আমি ও চকলেট নিয়ে এসেছি।
সেবার তো চকলেট দেওয়ার সময় পিন ই পুস করে দিয়েছিলেন।
দু মাস অব্দি সেটার দাগ ছিলো। এবার রিক্স নেই তো আর ?
অভিনবর কথা তে ঝিল জ্বিভে কামড় দিলো। সেবার কি ভেবে ছিলো ওহ। আর অভিনবর হাতে আঘাত ও করে ছিলো ।
অভিনব চকলেট টা একটু ভেঙে নিয়ে বলল
_ আমার কাছে একটাই ছিলো। তাই সমান শেয়ারিং ওকে ?
_ ওকে।
ঝিল আর অভিনব চকলেট খেতে খেতে ট্যুর এজেন্সির নির্দেশক দের কাছে চলে আসলো।
** আপনাদের কাছে মনে হতে পারে একটা স্থানেই কেন আটকে আছি। আসলে আমি চাচ্ছি সুন্দরবন ট্যুরের সম্পূর্ন অনুভূতি তুলে ধরতে।
যদি শুধু সুন্দরবনের বিশেষ জায়গা গুলোর নাম লিখেই চলে যাই তখন গল্প টা কারোই ভালো লাগবে না।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে