#তাহার_আগমন
পর্ব:০৯ এবং অন্তিম পর্ব
জমিদার দালানের সামনে আসতেই দেখতে পেলেন,চারপাশ কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে।কেউ যেন ভেতরে নেই।সন্ধ্যার পর আজ আলোও জ্বালানো হয়নি।এমন সময়ে হাসিন হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে থেকে বেরিয়ে এসে বলল,স্যার,জমিদার বর্মণ আর সুজয়কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।আমি আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য ভেতরে যেতেই দেখি কেউ নেই।সঙ্গে শর্মিলা আর বিশুদাও নিঁখোজ।
এমন কিছু একটা হবে আগেই আন্দাজ করেছিলেন সানাউল মির্জা।ভয়টা সত্যিই হলো।বললেন,জমিদার আর সুজয়কে বাঁচাতে হবে।কিন্তু এই সন্ধ্যায় কোথায় খুঁজবো?
হাসিনকে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছে।বলল,স্যার,দুজনকে ওই শয়তান শিকারের জন্য নিয়ে যায়নি তো?
সানাউল মির্জা বললেন,সুজয়কে হয়তো শিকার করতে পারে।কিন্তু আমার মন বলছে,জমিদার বর্মণকে কোনো একটা কারণে পারছে না।পারলে অনেক আগেই জমিদার বর্মণের মৃত্যু হতো।
হাসিন অবাক হয়ে বলল,এখন আমরা কোথায় যাবো?
সানাউল মির্জা কিছু যেন ভাবলেন।তারপর পকেট থেকে একটা কাপড় বের করে বললেন,এই কাপড়টা আমি ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।এমন কাপড় কোথায় থাকতে পারে?
হাসিন দেখতে পেল,পুরানো কয়েদখানায় বাঁশে বাঁধা লাল রঙের কাপড়ের মতোই দেখতে।রঙ কিছুটা ঝলসে গেছে।হাসিন বলল,এটা তো কয়েদখানার কাপড় মনে হচ্ছে।তার মানে কি ওই নিঁখোজ হয়ে যাওয়া লোকটা কয়েদখানায় গিয়েছিল কোনো কারণে?
সানাউল মির্জা হাসিনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,এখন সবকিছু বলার সময় নয়।আগে জমিদার বর্মণ আর ভাগ্নে সুজয়কে বাঁচাতে হবে।আমার মনে হচ্ছে,দুজনে ওই কয়েদখানায় বন্ধী হয়ে আছে।তাড়াতাড়ি আমাদের পা চালাতে হবে।
সুজয় চোখ খুলতেই দেখতে পেল তার হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা।ঠিকমতো নড়তেও পারছে না।সুজয়ের কাছে জায়গাটা কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে।চারপাশে শুধুই অন্ধকার।মাঝে মশাল জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।সুজয় তার মামাবাবুকে খুঁজছে।পাশে তাকাতেই দেখতে পেল,তার মামাবাবুর এখনও জ্ঞান ফেরেনি।কিন্তু সে এখানে এসেছে কিভাবে?সুজয়ের মনে পড়লো,রোজ নিয়ম মতো সন্ধ্যার একটু আগে নাস্তা নিয়ে এসেছিল বিশুদা।তার শরীর খারাপ থাকায় মামাবাবু পাশেই বসে ছিল।দুজনে দুধের গ্লাস হাতে চুমুক দিতেই চোখদুটো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে।তারপর আর কিছু মনে নেই।তার মানে বিশুদা ইচ্ছে করে দুধের গ্লাসে কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল।সুজয়ের বিশুদার প্রতি খুব রাগ লাগছে।সুজয়ের ইচ্ছে করছে,দড়ি খুলে বিশুদার উপর হামলে পড়তে।কিন্তু লোকটার উদ্দেশ্য কি?জমিদার বাড়ির সোনা-গহনা লুট করা!বিশুদার গলা শুনতে পেল সুজয়।এদিকেই আসছে মনে হচ্ছে।
-আরে সুজয়বাবু,আপনার ঘুম ভেঙেছে তাহলে?পানির ঝাপটা দিতে হয়নি?ভালোই হয়েছে আমার,হেসে বলল বিশু।
সুজয় চিৎকার করে বলল,আমাদের ধরে নিয়ে এসেছেন কেন?আপনি কি আমাদের সোনা-গহনা লুট করে পালিয়ে যাবেন?
সুজয়ের কথা শুনে বিশু আরও জোরে হেসে বলল,সে তো করবো।সঙ্গে তোমার আর জমিদার কর্তার মাথা ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখবো।কেমন মজা হবে বলো?
সুজয় কিছু বলার আগেই দেখতে পেল,শর্মিলাদি বেরিয়ে আসছে ভেতর থেকে।সে বলল,তুমিও শর্মিলাদি!আমি এমনটা আশা করিনি তোমার কাছে।
শর্মিলা এগিয়ে এসে সুজয়ের মুখ চেপে ধরে বলল,একদম বেশি কথা বলবি না।তোকে এমনভাবে মারবো যে মরার আগে আফসোস করবি,কেন এখানে এসেছিলি?শর্মিলা বিশুকে বলল,জমিদারের মুখে পানি দে।ব্যাটা এতক্ষণ ঘুমালে উঠবে কখন?
বিশু সঙ্গে সঙ্গে জমিদার বর্মণের মুখে পানির ঝাপটা মারতেই কিছুক্ষণ পর জমিদার বর্মণ চোখ মেলে তাকালো।কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি।ফ্যালফ্যাল করে সবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
সুজয় বলল,মামাবাবু,গ্রামে কেউ নেই।এই সুযোগে শর্মিলাদি আর বিশুদা মিলে আমাদের দুজনকে বেঁধে রেখে সোনা-গহনা লুট করে পালিয়ে যাবে।কি সাংঘাতিক ব্যাপার ভেবেছো?
সুজয়ের কথায় শর্মিলা হেসে বলল,তোর মাথায় সত্যিই কিছু নেই।লুট করলে তো তখনই গলা কেটে পালিয়ে যেতাম।কষ্ট করে এখানে এত আয়োজন করার দরকার ছিল না।
জমিদার বর্মণ বললেন,তাহলে আমাদের এখানে নিয়ে আসার কারণ কি?তোমাদের যা দরকার নিয়ে যাও।আমার ভাগ্নে সুজয়কে যেতে দাও।
-কারণ তো আছে।কারণটা হলো,শর্মিলা কিছু বলার আগেই সানাউল মির্জা ভেতরে ঢুকে বললেন,কারণটা আমি বলছি রিতিশা।
রিতিশা নামটা শুনতেই শর্মিলা যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।বলল,আপনি এই নাম কোথায় শুনেছেন?আমার নাম তো শর্মিলা।
সানাউল মির্জা মুচকি হেসে জমিদার বর্মণকে বললেন,জমিদার সাহেব আপনার মালতি নামে একটা বোন ছিল তাই না?
জমিদার বর্মণ হঠাৎ রূঢ়ভাবে বললেন,আপন বোন নয়।মালতি আমার সৎ বোন ছিল।
সানাউল মির্জা বললেন,হ্যাঁ,সৎ বোন ছিল।সেই সৎ বোনের একটা ছোট আদরের মেয়ে ছিল।নাম মনে আছে তার?
জমিদার বর্মণ যেন লজ্জা পেলেন।নিজের বোনের মেয়ের নাম মনে করতে পারছেন না তিনি।
সানাউল মির্জা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললেন,আপনি আপনার বোনকে এতটাই ঘৃণা করতেন যে বোনের একটা মাত্র মেয়ের নাম মনে করতে পারছেন না।এর চেয়ে লজ্জা আর ভাগ্নীর কাছে কষ্টের কি হতে পারে?
শর্মিলা যেন মুহূর্তে এক অন্য নারীতে পরিণত হয়ে গেল।শর্মিলার চোখে জল।সে বলল,আপনি এতকিছু কিভাবে জানেন?
সানাউল মির্জা বললেন,ওইযে তোমার হাতের আংটি।আমি চুপিচুপি তোমার ঘরে যাওয়ার পর বাক্সে জমিদার বংশের আংটি চোখে পড়ে।সঙ্গে ছবিতে থাকা জমিদার সাহেবের পাশে উনার বোন মালতি দেবীকে দেখার পর প্রথমে চিনতে পারিনি।কিন্তু আমি এর ফাঁকে একবার জমিদার বাড়ির সবার ছবি দেখেছিলাম সুজয়ের কামড়ায় গিয়ে।তখনই হঠাৎ মালতি দেবীর কথা মনে পড়ে।আর মালতি দেবীর পাশে তার মেয়ে ছাড়া তো কেউ এত সুন্দর সাজে দাঁড়াবে না।সানাউল মির্জা জমিদার বর্মণের দিকে তাকিয়ে বললেন, জমিদার সাহেব,আপনার বোনের একমাত্র মেয়ে এই শর্মিলাই হলো রিতিশা।
জমিদার বর্মণ বিস্মিত হয়ে বললেন,রিতিশা বেঁচে আছে!
সানাউল মির্জা বললেন,হ্যাঁ,বেঁচে আছে।কিন্তু রিতিশা,তুমি হঠাৎ তোমার মায়ের ভাইয়ের উপর এত প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে কেন?উনি তোমার কি ক্ষতি করেছে?
রিতিশার চোখে পানি চিকচিক করছে।এই মানুষটা কখনো আমার মা মালতি দেবীকে নিজের বোন বলে স্বীকার করেনি।সবসময় অপমান করে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিতেন।কিন্তু আমার সহজ-সরল মা তার ভাইকে তারপরেও শ্রদ্ধা করতেন।কখনো সৎ ভাই বলে পরিচয় দিতে দেখিনি।মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে প্রায়ই মাকে কাঁদতে দেখতাম।উনি তার ভাইয়ের ছবির উপর শাড়ির আঁচল পেতে বলতেন,”আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আপনার কাছে এসেছি একটু ভালোবাসা পেতে।কিন্তু আপনি আমাকে কেন এত অপমান করেন?আমি তো আপনার বোন।সৎ হলেও বোন তো।এই কষ্ট যে আমি মেনে নিতে পারছি না।”
আমার বয়স তখন কম হলেও সবই বুঝতে পারতাম।একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,মা পাশে নেই।বিশুদাকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন,আজ মায়ের ফাঁসি।মায়ের অপরাধ,তিনি তার ভাইয়ের ক্ষতি করার জন্য গোপনে পিশাচ সাধনা করেছিলেন।আচ্ছা আপনি বলুন,যেই বোন তার ভাইকে এতটা ভালোবাসে সে কখনো এমন করতে পারে?
সেদিন দুপুরে আমার চোখের সামনে মায়ের শরীরটা ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয়।মামার পায়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পরও তিনি এতটুকু দয়া করেননি।তারপর আমার ভেতর জেদ চেপে বসে।পালিয়ে গেলাম দূরে।আস্তে আস্তে পিশাচ সাধনার দীক্ষা নিতে শুরু করলাম এক তান্ত্রিকের কাছে।ফিরে এসে মায়ের আত্মার বদলা নেয়ার জন্য মায়ের হীরে বসানো গহনার উপর পিশাচ মন্ত্র পাঠ করি।ভেবেছিলাম,আমার মায়ের আত্মা জাগ্রত করে ওই পিশাচসিদ্ধ গহনা মায়ের গলায় পড়িয়ে জমিদারের বংশের কাউকে বেঁচে থাকতে দিবো না।ছদ্মবেশে বিশুদাকে হাত করে কাজের লোক সেজে জমিদার বাড়িতে উঠে পড়ি।কিন্তু মাঝে এক লোক ওই গহনা চুরি করে নিয়ে যায় শহরে।ওই গহনা পড়ার কারণে পিশাচ উল্টোপথে শিকার করতে শুরু করে।এদিকে বিশুদাকে শহরে খোঁজ নিতে বলি।কিছুদিন পর ওই গহনার খোঁজও পেয়ে যাই।প্রথম শিকার সে রাতে অজয় হয়।কিন্তু জমিদার বর্মণকে মারতে পারছিলাম না।কারণ….
সানাউল মির্জা রিতিশার কথার মাঝে বললেন,কারণ,তোমার মায়ের আত্মা এখনও তার ভাইকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আত্মা হলেও সে তার ভাইকে মারতে রাজি ছিল না।আর সে জন্যই আজ জমিদার বর্মণ আর সুজয়কে নিজ হাতে মারার জন্য দুধে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে।
রিতিশা হঠাৎ যেন হিংস্র হয়ে উঠলো।চিৎকার করে বলল,আজ এই শয়তানকে মেরে আমার মায়ের আত্মা একটু হলেও শান্তি পাবে।রিতিশা জমিদার বর্মণের দিকে তেড়ে যেতেই হাসিন দূর থেকে একটা লাঠি রিতিশার পায়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো।লাঠির আঘাতে পা উল্টে নিচে পড়ে গেল রিতিশা।রেগে বলল,আজ আমাকে কেউ বাধা দিতে পারবে না।সামনে যে আসবে,তাকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে।রিতিশা বাম হাত মুখে নিয়ে মন্ত্র বলতে শুরু করলো।
সানাউল মির্জা দেখতে পেলেন,একটি ভয়ঙ্কর ছায়ামূর্তি হাসিনের দিকে এগিয়ে আসছে।কুৎসিতভাবে হাসছে রিতিশা।সানাউল মির্জা দৌঁড়ে গিয়ে হাসিনকে ধাক্কা দিয়ে একপাশে ফেলে দিলেন।ভয়ঙ্কর ছায়ামূর্তি এবার সানাউল মির্জার দিকে ঘুরে তাকালো।রাগে ফুঁসছে সে।সানাউল মির্জা দেখতে পেলেন,ছায়াটি আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে।আর মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে।তিনি চোখ বন্ধ করে বাঁচার জন্য দোআ করলেন।হঠাৎ মনে হলো,চারদিকের বাতাস যেন আচমকা থেমে গেছে।ছায়াটির নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।সানাউল মির্জা চোখ খুলে দেখতে পেলেন,ছায়ামূর্তিটি নেই।
হাসিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,স্যার,ওই লোকটা তাহলে ঠিকই বলেছিল।আর রিতিশার শক্তি বলে আর কিছুই নেই।সে এখন সাধারণ মানুষ।দুপুরে জঙ্গলের ধারে এক সাধুবেশী পুরোহিতের সাথে দেখা।তিনি বললেন,আজ অমাবস্যা।জমিদার সাহেবের খুব বিপদ।আজ যদি পিশাচকে শেষ করা না হয় তাহলে সবাই মারা যাবে।আমাকে জমিদার বাড়ি থেকে জমিদার সাহেবের বোনের পুরানো কাপড়ের টুকরো,সঙ্গে কিছু গহনা আনতে বলেছিলেন।আমি সন্ধ্যার আগেই সব যোগাড় করে দিয়ে আসি।আর তখন একটা মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে।আসলে আমি কাপড় আর গহনা আনতে গিয়ে দেখি,কেউ নেই।তখনই সন্দেহ হয় আমার।তাড়াতাড়ি গহনা আর কাপড়ের টুকরো দিয়ে এসে আপনাকে সামনে পেয়ে যাই।আর বাকিটুকু তো আপনি জানেন।
সানাউল মির্জা হাসিনকে জড়িয়ে ধরে বললেন,কতগুলো মানুষের প্রাণ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে তোমার জন্য।সত্যিই তোমার জন্য আমার গর্ব হচ্ছে,হাসিন।
এসব শুনে রিতিশা যেন পাগল হয়ে গেছে।নিজের শক্তি হারিয়ে সে এবার পাশ থেকে ধারালো ত্রিশুল হাতে নিয়ে জমিদার বর্মণের দিকে এগিয়ে যেতেই সানাউল মির্জা বললেন,থামো,রিতিশা।আমার মনে হচ্ছে তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
রিতিশা থেমে বলল,আমার কোনো ভুল হয়নি।ওই লোকটা বিনা কারণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরেছে আমার মা মালতি দেবীকে।
সানাউল মির্জা জমিদার বর্মণের দিকে তাকিয়ে বললেন,আচ্ছা সেদিন আপনার কানে নিশ্চয়ই বিশু এসেই মালতি দেবীর নামে মিথ্যা অপবাদ রটায় তাই না?
জমিদার বর্মণ বললেন,হ্যাঁ তাই তো।আমার মাথায় তখন রাগ উঠে যায়।আমি মালতিকে সহ্য করতে পারতাম না এটা ঠিক।কারণ আমার বাবা দুই বিয়ে করেছিলেন।মালতি হলো দ্বিতীয় পক্ষের।আমার বাবা আমার মায়ের উপর এত নির্যাতন করতেন যে তিনি মারাই গেলেন।সেই ক্ষোভে আমি মালতিকে সহ্য করতে পারতাম না।
সানাউল মির্জা এবার রিতিশার দিকে তাকিয়ে বললেন,এবার বিশ্বাস হলো তো?আর তুমি যে শয়তানটার সাথে হাত মিলিয়ে এতবড় সর্বনাশ করতে চেয়েছিলে সেই তোমার মায়ের মৃত্যুর পেছনে বেশি দায়ী।
বিশু হঠাৎ ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো।বলল,আমাকে জমিদার কর্তার কাকা এই কাজ করতে অনেক টাকা দেয়।বিশু আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মুখ দিয়ে রক্ত ছিটকে বেরিয়ে আসে।রিতিশার হাতের ত্রিশুল বিশুর পেটের ভেতর বিঁধে গেছে।
জমিদার বর্মণ ছাড়া পেয়ে রিতিশাকে জড়িয়ে ধরে হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।আমাকে ক্ষমা করে দে মা।রিতিশাও কাঁদছে জমিদার বর্মণকে জড়িয়ে ধরে।সুজয় যেন তার নতুন সঙ্গী পেল।জমিদার বর্মণ সানাউল মির্জার কাঁধে হাত রেখে বললেন,আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।আপনি সত্যিই একজন তুখোড় ভৌতিক গোয়েন্দা।
সানাউল মির্জা বিদায় জানিয়ে এবার হাসিনের দিকে ফিরে তাকালেন।বললেন,আমার সঙ্গে শহরে যাবে তুমি?একসঙ্গে দুজনে অশরীরী ব্যাপার নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করে ঘুরে বেড়াবো পথ থেকে পথে।
হাসিনের মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।চোখের কোণে জল গড়িয়ে পড়ছে।বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভেবেছিল,সে বড্ড একা।কিন্তু আজ সে আবার একজন ফিরে পেল।হোক না সে,বাবার মতই।
পুরানো কয়েদখানা থেকে বের হওয়ার সময় হাসিনের দেয়ালে চোখ পড়লো।দুপুরের সেই পুরোহিতের ছবি টাঙানো।নিচে লেখা,”মিথ্যা অপরাধে ফাঁসি হয়েছিল।”হাসিনের দ্বিতীয়বার বিস্ময়ের পালা।লোকটি তাহলে সাহায্য করার জন্যই ফিরে এসেছিল।সত্যিই পৃথিবী কত বিচিত্রময়।
তেরো.
সানাউল মির্জা আবিদের বাসায় বসে আছেন।পকেট থেকে নিতাইপুরের পরিত্যক্ত বাড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া বোতামটা হাতে নিয়ে এই হাত থেকে ওই হাতে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।উনার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।বোতামটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে টেবিলের উপর পড়ে থাকা পত্রিকাটা হাতে নিলেন।কিছুদিন আগের পত্রিকা।প্রথম পাতায় চোখ পড়তেই সানাউল মির্জার ঠোঁটের হাসি মুহূর্ত কালো মেঘের আবরণে ছেয়ে গেছে।প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে লেখা-“গতরাতে কর্পোরেট অফিসার মনছুরের রহস্যজনক মৃত্যু।ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।”
সানাউল মির্জা বিস্তারিত আর পড়লেন না।পত্রিকাটা ভাজ করে টেবিলের নিচে রেখে দিলেন।ভাবছেন,যেই মানুষটা এত বড় বিপদ থেকে সবাইকে সাহায্য করেছে,এই পৃথিবীতে এখন সে নেই।তবে এই ভেবে উনার ভেতরে প্রশান্তি লাগছে,আজ থেকে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।শুধু একটি মাত্র ভয় আর সেটা…
আবিদের ডাকে কল্পনায় ছেদ পড়ল সানাউল মির্জার,আপনি কখন আসলেন মির্জা সাহেব?
-এইতো বেশিক্ষণ হয়নি।তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন,আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আবিদ বলল,অবশ্যই বলবেন।তা আপনার রহস্যের সমাধান আর কত দূর?
সানাউল মির্জা আবিদের কথার উত্তর না দিয়ে পকেট থেকে বোতামটা বের করে আবিদের দিকে তুলে ধরে বললেন,দেখুন তো,এই বোতাম কোথাও দেখেছেন কিনা?আমার ধারণা,আপনার বোতামটা চেনার কথা।
আবিদ বোতামটা হাতে নিয়ে বলল,কই আমার তো মনে পড়ছে না।তা এই সাধারণ বোতামে আছে কি?
সানাউল মির্জা আবিদের হাত থেকে বোতামটা নিয়ে বললেন,নাহ,এটা সাধারণ কোনো বোতাম নয়।এই বোতামই আমাকে সব রহস্যের পথ বলে দিয়েছে।তাহলে আপনি চিনতে পারছেন না?
আবিদ মাথা নেড়ে বলল,না তো।
-ঠিক আছে,আমিই বলবো আপনাকে।তবে কি জানেন,লোভ জিনিসটা বড্ড খারাপ।যার ভেতরে একবার লোভ জন্ম নেয় তখন তাকে শত বাধা দিয়েও কেউ আটকাতে পারেনা।কিন্তু এই লোভের জন্য যে অন্য কারো ক্ষতি হতে পারে সে চিন্তাও করে না সে।
সানাউল মির্জার কথা শুনে আবিদ নড়েচড়ে বসলো।বলল,আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনার কথা।
সানাউল মির্জা হেসে বললেন,একটু পরে বুঝতে পারবেন।শুধু একটি কথা মনে রাখবেন,দুনিয়ায় পাপ কাজ করে কেউ তার ফল দুনিয়াতে ভোগ করবে না তা কখনো হয়নি।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয় আমাদের।
আবিদ যেন এবার একটু অস্থির হয়ে পড়ল।বলল,এসব কথা আপনি আমাকে বলছেন কেন?
সানাউল মির্জা এবার আবিদের দিকে ঝুকে কিছুটা সামনে এসে বসলেন।উনার মুখের ভাবভঙ্গি বেশ গম্ভীর।বললেন,আপনাকে একটা গল্প বলি আবিদ সাহেব।আজ থেকে ঠিক দুইমাস আগে নিতাইপুরে এক দম্পতি বাসা ভাড়া নেয়।লোকটা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে কি করবে বুঝতে পারছিল না।একদিকে ব্যাংকের চাপ,অন্যদিকে পাওনাদারদের ঝামেলায় সে তখন পাগলপ্রায়।খরচ কমাতে এক অজপাড়ায় গিয়ে উঠলেন।কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েকদিনের মাঝে জানতে পারেন,গ্রামে কেউ একজন পুরানো দিনের হীরে বসানো অলংকার দিয়ে প্রেতসাধনা করবে,যার মূল্য বর্তমান বাজারে কয়েক কোটি টাকা।তখনই উনার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি চেপে বসে।তিনি চুপেচুপে গিয়ে ঠিক তার আগমুহূর্তে সেটা চুরি করে নিয়ে আসে।কিন্তু ভাগ্যের লিখন,উনি হীরা উঠিয়ে গহনা পড়তে দেন উনার স্ত্রীকে।আর মন্ত্রপূত গহনা পড়ে প্রেতসাধনার উল্টোরথে যাত্রা শুরু করে তার স্ত্রী।ফলাফল,জমিদার বাড়ির মানুষের মৃত্যুর পরিবর্তে শিকার হতে শুরু করে গ্রামের নিরীহ মানুষজন।এদিকে মন্ত্রপূত গহনা দিয়ে যজ্ঞ করতে না পেরে মাথায় খুন চেপে যায় সেই শয়তান মেয়ের।সে তখন খবর যোগাড় করে আড়ালে নজর রাখতে শুরু করে লোকটার বাড়ির উপর।একদিন রাগের বশে লোকটাকে মারতে আসে।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,মাঝে প্রাণ যায় লোকটার নিরীহ বন্ধুর।আর হীরে বসানো গহনা পেয়ে এবার চোখ পড়ে জমিদার বাড়ির উপর।তারপর আর কি,এবার জমিদার বাড়ির মানুষ শিকারে পরিণত হতে থাকে।কিন্তু এখন আর সেসব কখনোই হবে না।চিরতরে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
সানাউল মির্জার কথা শেষে হতেই আবিদ কেমন যেন উসখুস করতে থাকে।সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
-আমার গল্পটি কেমন লাগলো?জিজ্ঞেস করলেন সানাউল মির্জা।
-আপনি কি আমার দিকে ইঙ্গিত করছেন পুরো ব্যাপারটা?দেখুন,আমি কিছুই করিনি।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
সানাউল মির্জা হেসে বললেন,আমি তো একবারের জন্যও আপনার দিকে আঙ্গুল তুলিনি।শুধু একটা গল্প বলেছি।আর আপনি নিজেই সব অকপটে বলে ফেলছেন।যাই হোক,কুলছুম মেয়েটি বেঁচে আছে।
আবিদ বিস্মিত হয়ে বলল,কি!কুলছুম বেঁচে আছে?
-হ্যাঁ,বেঁচে আছে।আর কুলছুমই আমাকে সেদিন বলেছিল,নিতাইপুরে যাওয়ার আগে আপনি তাকে সঙ্গে নেননি।আর আপনার একটি শার্টের ডান হাতের দুটো বোতামের মধ্যে একটা বোতাম নেই।মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে,আমি এই কথা কিভাবে জানতে পারলাম?আপনি প্রথম যেদিন আমার বাসায় এসেছিলেন সেদিন আমি আপনার হাতের দিকটা লক্ষ্য করেছিলাম।নিতাইপুরে পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে এই বোতামটা পেয়ে চেনাচেনা মনে হয়েছিল আমার কাছে।অনেক ভেবে তারপর মনে পড়ল,লাল বোতামটা আপনার।এখনও স্বীকার করবেন না,যে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর পেছনে আপনার লোভ দায়ী ছিল?
আবিদ হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল।বলল,প্লিজ আমাকে পুলিশে দিবেন না।তাছাড়া ওইদিন রাত থেকেই হীরে গায়েব।অনেকগুলো টাকার ব্যাপার।আমি একদম শেষ হয়ে যাবো।
সানাউল মির্জা বললেন,না,পুলিশকে বলে কোনো লাভ নেই।অশরীরী এসব ব্যাপার গাঁজাখুরি কথা বলে উড়িয়ে দিবে।আমি আজ তাহলে উঠি।সানাউল মির্জা হঠাৎ কি মনে করে থেমে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,আবিদ সাহেব,সাবধানে থাকবেন।হাকিনী বলে একটা কথা আছে।তারা যার সাহায্যে শিকার করে,সে শিকার হঠাৎ থেমে গেলে যাওয়ার আগে হাকিনীকে জাগানো প্রথম মানুষই শেষ শিকারে পরিণত হয়।আশা করি,আপনার কিছু হবে না।তবে আবারও কথাটা বলছি-“প্রকৃতি বড় নিষ্ঠুর।আজ মানুষ যে পাপ করে,দুনিয়া ছাড়ার আগে তাকে সে পাপের প্রাপ্য হিসাব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়।”আর আপনার স্ত্রীকে বলবেন,বোতামটা শার্টে লাগিয়ে দিতে,এই বলে সানাউল মির্জা টেবিলের উপর লাল বোতাম রেখে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
আবিদ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।টেবিল থেকে বোতামটা হাতে নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই ভেসে উঠল কয়েকমাস আগের দৃশ্য-
-রেহানা,তোমার নিতাইপুর কেমন লাগছে?
রেহানা বিছানা গুছিয়ে বালিশ হাতে নিয়ে বলল,খুবই ভালো।এই গ্রামের মানুষগুলো এত মিশুক।আসতে না আসতেই সবাই কত সমীহ করে।
আবিদ বলল,যাক,আমি চিন্তামুক্ত হলাম।আমি ভেবেছিলাম,হঠাৎ শহর ছেড়ে এতদূরে আসবে।তোমার ভালো লাগবে কিনা?তাছাড়া এখানে সুযোগ-সুবিধা শহরের তুলনায় একটু কম।
রেহানা হেসে বলল,দূর,এত চিন্তা করার কিছু নেই।আমার এমন নিরিবিলি পরিবেশই খুব পছন্দ।আচ্ছা কুলছুমকে এবার গ্রাম থেকে নিয়ে আসলে হতো না?আমি তো একা আর পারছি না।মেয়েটা সঙ্গে থাকলে খুব ভালো হতো।
আবিদ হঠাৎ কুলছুমের নাম শুনতেই বারণ করে বলল,না,এখন নয়।আরও কিছুদিন পর কুলছুম আসবে কিনা তখন দেখা যাবে।এখন কুলছুমকে নিয়ে আসার দরকার নেই।
আবিদের কথা শুনে রেহানা কিছু বললো না।
রেহানাকে চুপ থাকতে দেখে আবিদ বলল,এইদিকে একটা বিশাল জমিদার বাড়ি আছে।জমিদার অবশ্য এখনও বেঁচে আছে।বিকালের দিকে হাঁটতে যাবে নাকি?
রেহানা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,এখানে আসার পর থেকে এখনও খুব একটা কোথাও যাওয়া হয়নি।তুমি যখন বলছো,তাহলে যাওয়া যেতে পারে।আমি রান্নার কাজটা সেরে আসি।তুমি বসো।
রাতে খাবারের টেবিলে বসে আবিদকে কেমন যেন অস্থির মনে হলো রেহানার কাছে।অনেকক্ষণ ধরে ভাতের প্লেটে ভাত নিয়ে নড়াচড়া করছে।কিন্তু ভাত মুখে দিচ্ছে না।অন্যদিন বকবক করে পাগল করে ফেলে।আজ কেমন যেন চুপচাপ।আবিদ যেন কিছু বলতে চায়।কিন্তু বলতে পারছে না।রেহানা খাওয়া বন্ধ করে আবিদের দিকে তাকিয়ে বলল,আমি কি বাসার নতুন কেউ?
কথাটা শুনে থতমত খেয়ে আবিদ বলল,হঠাৎ এই কথা কেন বলছো?
-এইযে অনেকক্ষণ ধরে আমাকে কিছু বলবে বলবে করছো।অথচ কিছুই বলছো না।তাই মনে হলো,আমি এই বাসায় নতুন এসেছি,বলল রেহানা।
আবিদ গম্ভীর হয়ে বলল,কথাটা তোমাকে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।আমি তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি।
-তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছো সেটা নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই।মানুষ তো মিথ্যা বলবেই।কিন্তু মিথ্যাটা কি জানতে পারি,বলল রেহানা।
-আমি বিপদে পড়ে এই নিতাইপুরে এসেছি।আসলে অনেক ঋণের বোঝা আমার মাথার উপর।সবকিছু সামলাতে বেশ হাঁপিয়ে উঠছি।এখানে ভাড়াটা একটু কম।শহরের খরচের তুলনায় এখানে অনেক কম।তবে আমি কথা দিলাম,খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে শহরে নিয়ে যাবো,বলল আবিদ।
রেহানা উঠে এসে আবিদের কাঁধে হাত রেখে বলল,এই কথাটা বলতে এত উসখুস করার কি আছে?আমাকে বললে তো আমি বাবার বাড়ি চলে যেতাম না।
আবিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,না,ঠিক তা হয়।তবে তোমাকে একটা গোপন কথা বলি।আমার কাছে খবর আছে,জমিদার বাড়ির পুরানো কয়েদখানায় মূল্যবান হীরে লুকানো আছে।একবার যদি তা আমার কাছে চলে আসে,তাহলে পুরো জীবনটা আরামে চলে যাবে।ঋণের টাকা পরিশোধ করে আরও কত টাকা যে জমা থাকবে কল্পনাও করতে পারবে না।
রেহানা আঁতকে উঠে বলল,এই কাজ করা কি ঠিক হবে?আমি শুনেছি,পুরানো জিনিসে অনেক সমস্যা থাকে।শেষে যদি কিছু হয়ে যায়?আমার কিন্তু খুব ভয় করছে।
আবিদ বলল,রাখো তো কুসংস্কার।কিছুই হবে না।একবার ভেবে দেখো,মূল্যবান হীরে হাতে পেলে আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।আমি ঋণ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবো।বলো,এসব কি তুমি চাও না?
আবিদের কথা চিন্তা করে রেহানা শেষে রাজি হয়ে গেল।বলল,তুমি যা ভালো মনে করো।কিন্তু যা করবে সাবধানে।
রেহানার ডাকে ঘোর ভাঙলো আবিদের।দুইমাস আগের ঘটে যাওয়া দিনগুলো মনে করতে চায় না সে।এতকিছু শুধু তার জন্যই হয়েছে।আবিদ বলল,কি হয়েছে?
রেহানা বলল,রাতের খাবার খাবে না?উঠে এসো।আর ভদ্রলোক চলে গেলেন কেন?আমাদের সাথে বসে রাতের খাবার খেয়ে যেতেন।
-কি কাজ আছে বলে চলে গেলেন।আমি আর জোর করিনি।চলো,খেতে শুরু করি।
টেবিলে বসে আবিদ খেয়াল করলো,আজ রেহানা একটু অদ্ভুদ আচরন করছে।অন্যদিন এমনটা দেখা যায় না।চোখে আজ হিংস্রতার তীব্র দৃষ্টি।খাবারের দিকে কোনো মনোযোগ নেই।তার দিকে বারবার কেমন চোখে তাকিয়ে আবার প্লেটে নখ আচড়াচ্ছে।
হঠাৎ রেহানা বলল,আবিদ,একটা কথা কি জানো?পছন্দের খাবার প্রতিদিন খাওয়ার পর সেটার প্রতি একটা নেশা ধরে যায়।যদি সেই খাবার না পাওয়া যায় তখন কার মাথা ঠিক থাকে বলো?
অনেকদিন পর রেহানার কন্ঠ আবিদের কাছে একটু অন্যরকম মনে হলো।বলল,তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি না।বাসায় আসার পর থেকে কিসব উল্টাপাল্টা বলছো তুমি?
-মানুষের রক্ত আর মাংসের যে স্বাদ তা তোমরা কি বুঝবে?কিন্তু আজ আমি একটা মানুষও শিকার করতে পারিনি।সেখানে আমাকে বধ করার জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছে,বলল রেহানা।
রেহানার কথা শুনে আবিদের গলা যেন শুকিয়ে গেল।এই মুহূর্তে কি বলবে মাথায় কিছুই আসছে না তার।
-একটু পরে আমি চলে যাবো।প্লিজ আবিদ,তুমি আজ রাতে আমার শিকার হয়ে যাও।শেষবারের মত রক্ত পান করতে দাও।আমার যে বড্ড রক্ত পিপাসা পেয়েছে।
আবিদ দেখতে পেল,ধীরে ধীরে রেহানার চেহারা পাল্টে যেতে শুরু করেছে।হাতের নখগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে।মুখ থেকে মাংস খসে পড়ছে।আবিদ জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।চেয়ার থেকে উঠে দৌঁড়াতে গিয়ে চেয়ারের সাথে লেগে মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে গেল।দেখতে পেল,পিশাচরূপী রেহানা ভয়ঙ্কররূপে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।মনে পড়ল,তার লোভের কারনে গ্রামের কতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেছে।আবিদের কানে বাজছে তখন সানাউল মির্জার একটা কথা-
“প্রকৃতি বড় নিষ্ঠুর।লোভে পড়ে আজ মানুষ যে পাপ করে,দুনিয়া ছাড়ার আগে তাকে সে প্রাপ্য হিসাব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়।”
………সমাপ্ত……….