ডাক্তার সাহেব পর্ব-৪৯ (১ম অংশ)
#শারমিন আঁচল নিপা

(নোট- সবাই কমেন্ট করবেন প্লিজ। কারণ পেইজের রিচ ডাউন হয়ে গেছে হুট করে।)

সিঁথি দুটানা ভেঙে জমে থাকা পাথরটাকে একটু হালকা করতে রুবাইয়াকে বলা শুরু করল।

– আমি রেইপ কেইসের মামলায় ফেঁসে গেছি। কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারছি না যে এ কাজ আমি করিনি। আর আমি নিজেও সে সময় নিজের সেন্সে ছিলাম না। কী থেকে কী হয়েছে আমি জানি না।

নীলের মুখে কথাটা শোনার পর পরই আমার মনে হচ্ছিল আমি বেঁচে নেই। এত কষ্ট হচ্ছিল যে নিজেকে সামলানোর মতো প্রয়াস খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খুনের মামলা হলেও হয়তো মেনে নিতে পারতাম তবে রেইপের মামলা কেন জানি না মেনে নিতে পারতেছিলাম না। তার উপর নীলের কনফিউশান দেখে মনে হচ্ছে সে রেইপ করেছে কী না সঠিক বলতে পারছে না। করতেও পারে আবার না। আমার চোখ দিয়ে তখন গড়গড়িয়ে পানি পড়ছিল। শরীরটা ক্রমশেই কাঁপছে। আমি কোনো উত্তর দিলাম না। চুপ হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। নীল পরপরই বলল

– তোমার জন্য ব্লাড আনতে গিয়েছিলাম এক ডোনারের কাছে। ব্লাড আনার পর অফিস থেকে একটা জরুরি কল আসে ডিউটিতে জয়েন করার জন্য। আমি রুবুকে এক নজর দেখে ব্লাডটা দিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে রওনা দিই। অফিসে যাওয়ার পর অনেকগুলো কাজ হাতে ধরিয়ে দিল। অন্যের অধীনে চাকুরি সেগুলো তো না করে ফেলে আসা যায় না। এদিকে তোমার অবস্থাও খারাপ। তোমার জ্ঞান ফিরছিল আবার চলে যাচ্ছিল। সব মিলিয়ে চিন্তা আমাকে ক্রমশ গ্রাস করতে লাগল। তবুও পেটের জন্য চাকুরি বাঁচাতে হবে। সে জন্য তোমার চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম। এমন সময় রবিন আসলো আমার চেম্বারে। আমার দিকে তাকিয়ে বেশ মোলায়েম গলায় বলল

– অনীল সাহেব এত কাজের প্রেসার এ সময় নিচ্ছেন।

– বইলেন না ভাই কয়েকদিন অফিস কামাই করেছি তো সব কাজ একসাথে পড়েছে। আমার স্ত্রী এর অবস্থাও এত ভালো না তবে চাকুরির জন্য হলেও কাজ করতে হবে। ডাক্তারদের জীবনেই তো এটা।

– তা যা বলেছেন ভাই। তা আপনার মেয়ে হয়েছে নাকি ছেলে?

– মেয়ে হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। মেয়েটা একদম তার মায়ের মতো হয়েছে। আমিও চেয়েছিলাম মেয়েটা মায়ের মতো সুন্দরী হোক।

– যাক মশআল্লাহ। তবে এত প্রেসার নিতে হবে না আপনার। আমি নাহয় আপনার কিছু কাজ করে সাহায্য করলাম। বিপদে পাশে থাকতে সমস্যা নেই। আপনার বাসার সবাই কী চলে এসেছে?

– সবাই ঢাকায় আছে আপনার ভাবির কাছে। ওদের আসতে সময় লাগবে৷

– তাহলে একটা কাজ করুন আমার বাসায় চলে আইসেন, একসাথে আড্ডাও দেওয়া হবে কাজও করা হবে। আপনারও খাওয়া দাওয়া নিয়ে টেনশন করতে হবে না। আমি তো ব্যাচেলর মানুষ পুরো বাসায় একা থাকি। থাকার সমস্যা হবে না আশাকরি।

আমি মুচকি হেসে থাকার জন্য সম্মতি জানালাম। কারণ এদিকে যতদ্রুত কাজটা আমি সেড়ে ফেলতে পারব ঐদিকে তত দ্রূত তোমার কাছে যেতে পারব। সারাদিন হাসপাতালে বেশ ভালোই রোগীর চাপ সামলিয়েছি। তোমার অবস্থা তখন তেমন ভালো না। মিহুর কাছ থেকে বারকয়েক তোমার খোঁজ নিলাম। কাজের চাপে খোঁজ নেওয়ার পরিমাণ কম থাকলেও মন পড়ে ছিল তোমার কাছেই।

সারাদিনের কাজ শেষ করে রাতে রবিনের বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করলাম শোভন ও আছে। আমি শোভনের সাথে মোটেও এত ফ্রি না। শোভনের কিছু বিষয় আমার ভালো লাগত না বিধায় ওকে একটু এড়িয়ে চলতাম। তবুও ওর সাথে কুশল বিনিময় করে একসাথে বসলাম আড্ডা দিতে। আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে শোভন মদের বোতল বের করল। রাত তখন রাত ১২ টা ছুঁইছুঁই। আমি কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললাম

– আমি তাহলে উঠি। আপনারা খান। আমার এসব সহ্য হবে না। আমার দৌঁড় সিগারেট পর্যন্ত । এটা হজম করা সম্ভব না। তার উপর বউ বাচ্চা দুজনেই অসুস্থ। এর মধ্যে এটা খেলে আমার আরও সইবে না। আমি উঠলাম তাহলে।

রবিন আমার হাতটা ধরে বলল

– আরে বসেন তো। একটু খেলে কিছুই হবে না। বাচ্চার বাবা হয়েছেন সে খুশিতেও তো একটু খেতে পারেন। বেশি খাওয়ার জন্য জোর করব না নিশ্চিত থাকুন। আর না খেলে না খাবেন। বসে বসে আড্ডা দিতে তো সমস্যা নাই। আপনি সিগারেট খেলেন আর আমরা মদ।

এমন ভাবে ধরল সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ হলো না। অবশেষে বসে মুড়ি মাখা খাচ্ছিলাম আর সিগারেট আর তারা মদ। এক পর্যায়ে আমার কী যে হলো জানি না মনের মধ্যে অদ্ভুত চাওয়ার মতো মদ খাওয়ার চাওয়াটা উদয় হলো। আমি নিজেকে তেমন সামলাতে পারলাম না। মনে হলো একটু টেস্ট করে দেখি। আমি গ্লাসে একটু মদ নিয়ে নাক চেপে খেয়ে ফেললাম। সাথে সাথে আমাকে নেশায় পেয়ে বসলো। অল্পতে আর তুষ্টি মিলল না আরও খেলাম। এবার আমার নেশা ভালোই হলো। নেশায় গুঙরাতে লাগলাম।

রাত তখন আড়াইটা। দরজায় জোরে ডাক পড়ছে। বুঝতে পারছিলাম না এত রাতে কে ডাকছে। ইমারজেন্সি থেকে আমাদের কারও কল আসার কথা না কারণ রাতের ইমারজেন্সি ডিউটিতে আজকে মুক্তা আছে। শোভন নিজেকে গুছিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলতেই এক রমণী ঘরে প্রবেশ করল। প্রচন্ড পেট ব্যথায় কাঁতরাতে লাগল। আমি নেশায় তলিয়ে পড়লেও শোভন আর রবিনের নেশা তেমন ধরেনি। তারা নিজের মধ্যেই ছিল। সুতরাং শোভন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল

– কী সমস্যা?

এর মধ্যেই মেয়েটার সাথে ১৪ বছরের এক বাচ্চা প্রবেশ করল। বাচ্চাটা মেয়েটার ভাই। বাচ্চাটা কান্না গলায় বলল

– আপুর পেটে অনেক ব্যথা। হাসপাতালে কেউ নেই তাই এখানে আসলাম দেখানোর জন্য।

রবিন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বলল

– তোমার নাম কী?

– অপু।

– শোনো অপু তোমার বোনের কিছু হবে না। বাসায় কে কে আছে তোমার?

– মা আছে শুধু। বাবা মারা গেছে অনেক আগে।

– আচ্ছা তুমি বসো আমরা তোমার বোনকে দেখছি কী হয়েছে।

তখনও আমি বুঝতেছিলাম না তাদের মধ্যে কী চলছে। ঘর থেকে শুধু কথোপকথন শুনছিলাম। অপুকে বাইরে রেখে মেয়েটাকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল চিকিৎসার জন্য। এর কিছুক্ষণ পর মেয়েটার একটা হালকা চিৎকার পেলাম। সাথে সাথে আমার মনে অজানা ভয়ের আশঙ্কা তৈরী হলো। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। নেশার ঘোর ততক্ষণে অর্ধেক কেটে গেছে। আমি রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠল। গায়ের লোম শিউরে উঠল। মেয়েটা নগ্ন অবস্থায় কাঁতরাচ্ছে আর রবিন শোভন দুজনও নগ্ন। বুঝতে আর বাকি রইল না তারা মেয়েটাকে নেশার ঘোরে পরে রেইপ করেছে। আমি তাদের ছুটানোর জন্য গেলে তারা আমায় জোরে ধাক্কা দেয়। যেহেতু আমি নেশার ঘোরে ছিলাম ধাক্কা সামলাতে না পেরে আমি দূরে ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারাই। পরদিন মেয়েটার ভাই মেয়েটাকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করায় আর আমাদের তিনজনের নামে রেইপ কেসের মামলা ঠুকে। আমি কোনো দোষ করিনি কিন্তু আমি চিন্তায় ছিলাম কী করব। মেয়েটার অবস্থা খারাপ হওয়ায় রবিন আর শোভন পালিয়ে যায়। আমি পড়ি বিপাকে। তাই বুঝতে না পেরে আমিও পালালাম। শুধু অপেক্ষা করছিলাম মেয়েটা একটু সুস্থ হোক। কারণ অন্তত মেয়েটা জানে আমি কিছু করিনি। মেয়েটা সাক্ষী দিলে আমি নির্দোষ প্রমাণ হব। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটার সুস্থতায় কামনা করছিলাম। তবে সে আশার আলোটাও দুদিন আগে নিভে গেছে।

বলেই নীল হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আমি তো পুরো বরফ হয়ে গিয়েছিলাম। নীলের কান্না শুনে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও আমি পাচ্ছিলাম না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম

– মেয়েটার কী হয়েছে?

নীল কাঁদতে কাঁদতে বলল

– মেয়েটা আর কোনোদিন সাক্ষী দিতে পারবে না।

বুঝতে আর বাকি রইল না কী হতে চলেছে আমার জীবনে। কান্নাও যেন বুকে আটকে গেছে আমার। নীলকে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি নীল কিছু করে নি। তবে পুরো দুনিয়া কী করে আমি বিশ্বাস করাব। এর মধ্যেই নীল আরেকটা কথার সংযোজন করল যা শুনে আমার বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে গেল।

বলেই সিঁথি চুপ হয়ে গেল। মনের ভেতর তার ঝড় চলছে। রুবাইয়া মায়ের কষ্টটা একটু হলেও বুঝতে পারছে। তাই তেমন কিছু বলল না। মায়ের পাশ থেকে আস্তে করে উঠে পাশের রুমে গেল।

সিঁথি চুপ চাপ বসে আছে। ডায়রিটা নিয়ে পুনরায় লেখা শুরু করল।

#প্রিয়_ডাক্তার_সাহেব

মনের অন্তরালে আপনি বরাবরেই রয়ে গেছেন। কেউ বিশ্বাস না করুক আমি আপনাকে সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে বিশ্বাস করি। আমি জানি আপনি আমায় কখনও ঠকাতে পারেন না৷ আপনার শেষ কথাটা প্রবলভাবে আমি বিশ্বাস করি। সেদিন আপনি বলেছিলেন আমি আপনার সম্পূর্ণ অস্তিত্বজুড়ে অভিচল থাকব। আমি আপনার কথা রেখেছি আমি আপনার মেয়ের আদর্শ মা হতে পেরেছি। আপনার মেয়ে কী ভাবছে জানি না। তবে আমি জানি আপনি আমায় মিথ্যা বলেননি। সত্য প্রমাণের সুযোগ যথেষ্ঠ ক্ষীণ তবে আমি চেষ্টা করছি। আমি এখনও আশা রাখি আপনি আসবেন আমার কানের কাছে এসে বলবেন আই লাভ ইউ পাগলি বুড়ি। আমি হালকা হেসে বলব এভাবে না বাংলায় বলুন আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আজ কেন জানি অভিমানী গলায় তোমাকে আপনি বললাম। যখন আমার কাছে ফিরে আসবে তখন মনভরে তুমি বলে ডাকব আর হজারবার বলব আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি শুধু শুনবে আর আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকাবে। আমি তোমার সংস্পর্শে এসে পুনরায় যৌবনে ডুব দিব৷ হারিয়ে যাওয়া যৌবনটাকে উপভোগ করব। আমি শুকিয়ে যাওয়া ফুল। তাজা হতে তোমার একটু সংস্পর্শের প্রয়োজন। প্রিয় আমি তোমার অপেক্ষায় এক যুগ কেন এক জনম কাটিয়ে দিতে পারব। বড্ড ভালোবাসি তোমায়।

তোমার পাগলি বুড়ি।

এদিকে রুবাইয়ার মন ছটফট করতে লাগল তার বাবার পরের কথা শোনার জন্য। এত কঠিন কিছু শুনবে সেটা সে আশাও করেনি। রুবাইয়া পুনরায় সিঁথির ঘরে গেল। সিঁথির পাশে বসে বলল

– তারপর কী হয়েছিল মা?

সিঁথি লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে পরের কাহিনি বলা শুরু করল।

৪৯ পর্বের দ্বিতীয় অংশ পড়তে গ্রূপে জয়েন করুন। পেইজে ১৫০০ শব্দের উপর পোস্ট দিতেই ডিলেট হয়ে যাচ্ছে। তাই এক অংশে পর্বটা শেষ করতে পারলাম না। দ্বিতীয় অংশ পুরো লিখে গ্রূপে পোস্ট করব পেইজ ঠিক না হলে। আমার আন্টি মারা গেছেন গতকাল দোয়া করবেন।

গ্রূপ লিংক
https://www.facebook.com/groups/531708244286553/?ref=share

চলবে?

কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here