ডাক্তার সাহেব পর্ব- ১৮
#শারমিন আঁচল নিপা
আর শুরু হলো লঙ্কা কান্ড। রিদি প্রথমে এসেই আমাদের দুজনকে ধরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাল। আমি একপাশে সরে গেলাম বিপরীত পাশে নীল। নীল আর আমার মাঝে প্রবেশ করল প্রাচীরের মতো। আমার দিকে তাকাল। মেজাজ টা আমার তুঙ্গে। রিদি আমার দিকে তাকিয়ে মুখটাকে কালো করল। রাগের মাত্রাটাও আমার প্রখর তবুও চুপ রইলাম। সে আমার দিকে তাকিয়েই হরহর করে বলা শুরু করল
– তোর কী লজ্জা সরম সব চলে গেছে? পরপুরুষের সাথে হেলদুল খেতে লজ্জা লাগে না। কী করছিস এসব? তুই তো দেখি লাজ লজ্জা সব ধুয়ে খাবি।
তারপর নীলের দিকে তাকাল। নীলের মুখটা চুপসে গেল রিদির চাহনীতে। রিদির জোরালো কন্ঠ বেজে উঠল
– সিঁথি নাহয় অবুঝ আপনি তো অবুঝ না। সিঁথিকে এত প্রশ্রয় দেওয়া কেন হচ্ছে? কেনই বা সিঁথিকে এসবে আস্কারা দেওয়া হচ্ছে। আপনার কাছে এরকম আশা করতে পারি নি। কী করছেন এসব। আপনার বোধ বুদ্ধি নেই। আমি আজকে খালা,খালুকে বিষয়টা জানাব।
রিদির মুখে শেষ কথাটা শুনে আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। বাবা,মাকে শুনালে আমাকে আস্ত রাখবে না। আমার রাগটা ক্রমশেই ভয়ে রূপ নিল। নীলের জবাবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। নীল মুচকি হেসে বলল
– সিঁথির বাবা, মায়ের কানে এটাও আমি ঢুকিয়ে দিব যে তুমি আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছো কিন্তু আমি রাজি না তাই এমন করছো। আর আমি রাজি না এর পেছনে মূল কারণ হলো আমি সিঁথিকে পছন্দ করি। তোমার কী মনে হয় আমাকে তারা মেনে নিবে না? যথেষ্ঠ যোগ্য ছেলে আমি। বয়সটা একটু বেশি সিঁথির তুলনায় তাতে কী? সিঁথির বাবা, মা মেনে না নেওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। তবে আমি দুই বছর অপেক্ষা করতে বলেছি আমার বাবা, মায়ের জন্য। যদি বিষয়টা জটিল হয় দরকার হলে আমি সিঁথির দায়িত্ব নিব। নেহাত বিয়ের বয়স হয়নি ওর, নাহয় বিয়েই করে নিতাম। এবার তোমার সিদ্ধান্ত তুমি কী করবে।
রিদির মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। দাবার বোর্ডে এখন রিদি চ্যাক লিস্টে। নীলকে সে যে গুটি দিয়ে হারাতে চেয়েছিল রিদি এখন সে একই গুটি দ্বারা কপোকাত। রিদি মুখটাকে কালো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– এ নীলেই তোকে একদিন ভীষণ কষ্ট দিবে। আজকে এ ছেলের জন্য নিজের বোনকেও পর লাগছে তো একদিন ঠিকেই বুঝবি। জীবন এত সহজ হলে তো ছিলই। আমি বাসা থেকে আজই চলে যাব। চোখের সামনে এসব নষ্টামি আমি দেখতে পারব না। তোর এ অধোঃপতনও আমাকে দেখতে হবে সেটা আমি মেনে নিতে পারব না। একদিন ঠিক আমার কথাগুলোই তোর মনে হয়ে কান্না করা লাগবে। তখন পাশে কাউকে পাবি না। যে মানুষটা তোর পুরো অস্তিত্ব দখল করে আছে সে মানুষটা চলে যাবে পুরোপুরি শূন্য করে। সেদিন ঠিক আমার কথার মানে গুলো বুঝবি। তবে ভীষণ দেরি করে বুঝবি। ভালো থাকিস।
বলেই দৌড়ে ঘরে চলে গেল। রিদির কথা শুনলে নীলের প্রতি আমার তীব্র সন্দেহ জাগে। বারবার মনে হয় নীল আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো? এ বিষয়টা আমাকে কেন জানি না বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। বুকের ভেতর কম্পন তুলে। কষ্টে বুক চৌচির হয়ে যায়। নীলের আচমকা ডাকে নড়ে উঠি।
– কী হয়েছে কী চিন্তা করছো?
– তেমন কিছু না। রিদির কথা গুলো শুনলে অনেক খারাপ লাগে কেন জানি না। মনটা খছখছ করে। মনে হয় সত্যি সত্যি তোমাকে হারিয়ে ফেলব। এ ভালোবাসা আমাকে যন্ত্রণা দিবে ব্যথা দিবে কষ্টে ডুবিয়ে মারবে। এমন কেন মনে হয় জানি না। এ মনে হওয়ার কারণটাও আমার জানা নেই। শুধু বুক ফেটে যাচ্ছে। কখনও হারিয়ে ফেললে নিজেকে সামলাব কী করে?
নীল আমার হাতটা শক্ত করে ধরল। কপালে ঠোঁট ছোয়াল। আমি চোখটা বন্ধ করে ফেললাম। চোখের কার্ণিশে লজ্জার ছাপ ফুটে উঠছে। নীল আমার মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিয়ে বলল
– প্রিয়তম কখনও হারাতে দিব না। চোখের পাতায় তোমার মুখটাকেই সবসময় আটকে রাখব। হাতের মুঠোয় তোমার হাতটায় আবদ্ধ রাখব। এ হাত সহজে ছাড়ব না। তোমাকে সবসময় জড়িয়ে রাখব। শুনো সম্পর্কে কখনও তৃতীয় পক্ষের আগমন আসতে দিও না। যদি ঠকো বিশ্বাস করেই ঠকো। অবিশ্বাসের চাদরে মুড়িয়ে সম্পর্কটা জটিল করো না। নিজেকে সামলাও নিজের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখো।
বলেই নীল আমাকে ছেড়ে দিল। মাথাটা উপরে তুললাম। মনে হচ্ছিল আমি কোনো শান্তির জায়গায় আমার মাথাটা গুজে দিয়েছিলাম। সে জায়গায় আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকতে চাই। এ ভালোবাসায় আমি ডুবে যেতে চাই। শত চেষ্টার পরও আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। এ ভালোবাসায় আমি তলিয়ে গিয়েছি। এ তলিয়ে যাওয়া কতটা গভীর হবে জানা নেই। তবে প্রশ্নবিদ্ধ আমার মনে। তবুও বেশ শান্তি লাগছে।
– আমি গেলাম। ৯ টা থেকে হাসপাতালে বসতে হবে। তুমি কী কলেজে যাবে না?
নীলের কন্ঠসুরে ভাবনার দেয়াল থেকে বের হয়ে আসলাম। মৃদু সুরে বললাম
– আজকে আর যাব না। কাল থেকে যাব। মা কে একা রেখে যেতে ভয় লাগে। রিদির কাছে ভরসা পাই না। আজকে নানুমনি আসবে। নানুমনি আসলে শান্তি। কাল থেকে নিয়মিত ক্লাস করব। হঠাৎ এ প্রশ্ন?
– আরে এমনি। কলেজ যাওয়ার সময় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর কী… তোমাকে এক নজর দেখার জন্য। আবার আসার সময় দাঁড়িয়ে থাকতাম তোমাকে এক নজর দেখার জন্য। এছাড়া কিছু না। আর পাগলামি করো না। রিদির সাথে বাড়াবাড়ি ও করো না। সাবধানে থেকো।
– আচ্ছা বাবা থাকব। এত দুশ্চিন্তা করো না তো। যাও তো যাও।
নীল মুচকি হাসল। নীলের এ হাসিটায় আমি ডুবে যাই বরাবরেই। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে হাসতে হাসতে দরজা খুলে বের হয়ে গেল। আমি তার পথ চেয়ে আছি। যতদূর তাকে দেখা যায় দরজা খুলে ততদূর পর্যন্ত চেয়ে ছিলাম। চোখের আড়াল যখন হলো তখন নিজের মধ্যে সম্ভিত ফিরে আসলো। পেছন ফিরে তাকিয়ে রিদির কান্ড দেখে ভড়কে গেলাম।
চলবে?
(কপি করা নিষেধ)