#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_৬
মাগরিবের আযানের ধ্বন্নি চারিদিকের পরিবেশ মুখরিত হয়ে আছে।সন্ধ্যার শেষ সময়টুকু পাখিরা ফিরে যাচ্ছে তাদের নীড়ে।পাখির কলরবে গুঞ্জিত পরিবেশটা।আরাফ হাতে থাকা সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে সামনের দিকে হাটতে থাকে।আশে পাশের মানুষ গুলোর ব্যস্ততা যেন সন্ধ্যার সাথে সাথে বেড়েই চলেছে।একদল বাচ্চা হইহই করতে করতে টুপি পরে মসজিদের দিকে যায়। নিশ্চই মাগরিবের নামায আদায় করবে তারা।ঘাড় ঘুরিয়ে সমুজ্জ্বল মসজিদটার দিকে তাকিয়ে মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায় আরাফের। সাধারণত তার তেমন একটা নামায আদায় করা হয় না। বিশেষ করে জুম্মা নামায ছাড়া নামায পড়তে দেখা যায় না আরাফকে। শুধু আরাফ না এনায়েত বাড়ির পুরুষদের জুম্মা ছাড়া বাদবাকি দিন গুলোতে নামায পড়তে দেখা যায় না এটাই সত্য।তারা এতটাই কাজে নিজেদের ডুবিয়ে রেখেছে ইহকালে সুখটাই তাদের জন্য বড়।আর সেই ধারাবাহিকতা আরাফের মাঝেও বিদ্যামান।এই নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ আরাফের জেঠিমা হুমায়রা।তিনি সবসময় একটা কথাই বলবেন”যে ঘরের বান্দা গুলো নিয়মিত নামায আদায় করে না সেই ঘরে আল্লাহর নেয়ামত থাকেনা।সুখ শান্তি থাকেনা।ব্যাক্তিগত জীবনে যে বান্দা নামায আদায় করেনা তার মনে,দিলে কোন প্রশান্তি বা সুখ শান্তি থাকেনা।নামায সকল সুখের ভরসার মূল!”
কথাটা অত্যন্ত সত্যি।এনায়েত বাড়িতে কোন সুখের ছোঁয়া নেই।পুরো বাড়িতেই চলে একজনের সাথে অন্য জনের মত বিরধীতা,আড়ালে কূটকচাল। শুধু মাত্র নোমানের মা হুমায়রা, আদীব আর আইদা বাদে সবাই যেন একএকটা পিচাশ।
আরাফ সিগারেটটা রাস্তার মাঝে ছুড়ে সিধান্ত নেয় মসজিদে আজ মাগরিবের নামায আদায় করবে।কেননা তার মনের মাঝে বর্তমানে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।হৃদিতা তখন রেগে বেরিয়ে গেলে তার কিছুক্ষণ পর আরাফ যখন বের হয় তখন হৃদিতার দেখা মেলে না।অনেক্ষন রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ খুজঁতে থাকে, বার বার ফোন দিয়ে থাকে কিন্তু হৃদিতা ফোন রিসিভ করেনা। তাই অস্থিরতায় একের পর এক সিগারেট ফুঁকছিল সে।
দ্রুত ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করে আরাফ। বড় হওয়ার পর কখনো এইভাবে মসজিদে এসে তার মাগরিবের নামায আদায় করা হয় নি।আজ কত বছর পর সে নামাযে দাঁড়াবে।কারনটা কি হৃদিতা? হৃদিতার কারনেই তো তার মনের মাঝে অস্থিরতা আর অস্থিরতা নিরাময় করতে নামায পড়বে বলে সিধান্ত নেয় সে।সত্যি আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
রাগে সারা শরীর থরথর করে কাপঁছে হৃদিতার।কি করে পারলো আরাফ এমন একটা কান্ড ঘটাতে?আসলে তার নিজের ভুল। এমন একটা গাজাখোরি ছেলেকে তার বিশ্বাস করা কিছুতেই উচিত হয়নি। সন্ধ্যার আযান শেষে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। রাগের মাথায় আজ অন্য টিউশনি গুলোতে আর যাওয়া হয়নি তার।মেইন রাস্তা পেরিয়ে বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে ছিল সিএনজির জন্য তাই এতটা দেরি হয়েছে।শটকাটে বাড়ি ফেরার জন্য ভেতরের একটি নিরিবিলি রাস্তা বেছে নেয় সে কিন্তু বোকা হৃদিতার মাথায় আসেনি মাগরিবের পরে নিরিবিলি রাস্তাটা কতটা খারাপ হতে পারে।
কিছুক্ষন যাওয়ার পর হৃদিতার চোখে পরে কয়েকটি ছেলে কাটা গাছের গুড়ির উপর বসে আছে।শুনসান নিরিবিলি রাস্তায় ওই ছেলেগুলোর কথা ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা।তড়াক করে হৃদিতার মাথায় ছেলে গুলোকে নিয়ে উলটা পাল্টা চিন্তা আসতে থাকে।চুপচাপ রাস্তার এক পাশ ধরে হাটতে হঠাৎ করেই সব গুলো ছেলে হৃদিতাকে ঘিরে ধরে।
– কিরে হৃদিতা আজ হঠাৎ এই রাস্তায় তুই?
অন্ধকারে ছেলেটির চেহারা বোঝা না গেলেও গলার কন্ঠ স্বর স্পষ্ট বুঝতে পারে সে। এই ছেলেটা “নবীন”।এলাকার মেয়েদের উত্যক্ত করাই তার একমাত্র কাজ।হৃদিতাকে বেশ কয়েকবার বাজে প্রস্তাব দিয়েছে, অবশেষে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব ও পাঠিয়েছে।এমন কুৎসিত চরিত্রের ছেলেকে নিজের স্বামী হিসেবে ভাবতেই সারা শরীর গুলিয়ে উঠে তার। তাই সেদিন অপমান করেই বাড়ি থেকে বের করে দেয় নবীন কে।আজ যখন নবীন তাকে একা পেয়েছে নিশ্চই খারাপ কোন মতলব আটঁবে।
– কিরে এলাকার সবচেয়ে ভদ্র মেয়ে কথা বলছিস না কেন?
-আমার পথ ছাড়ুন নবীন ভাই।
– তোর পথ ধরে রাখার কি সাহস আমার আছে?বরং তুই আমার পথ আটকে রেখেছিস। তোর নিরবতা তোর সরলতায় আমি ফিদা।বিশ্বাস কর ফিদা।
– এইসব বলে আমার সময় নষ্ট না করলেও পারেন দয়া করে রাস্তা ছাড়ুন।
– উহ!রাস্তা ছাড়া যাবেনা।সারাজীবনের জন্য আমার না হলেও অন্তত এক রাতের জন্য হয়ে যা। কথা দিলাম কেউ কিচ্ছু যানবেনা।
নবীনের এমন কুৎসিত কথা শুনে দু কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে হৃদিতা।সারা শরীরে ঝংকার দিয়ে উঠেছে আজ কি হবে তার সাথে আজ?নবীন তো তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না।
– আল্লাহর দোহায় নবীন ভাই আমাকে ছেড়েদিন এইসব করার হলে পতিতা পল্লীতে যান। আমায় নিয়ে এইসব বাজে চিন্তা ধারা করা বন্ধ করুন।
– প্রশ্নই আসেনা।তাদের কাছে গেলে কি তোকে পাওয়ার সুখ পাবো?
নবীনের এমন কথায় দু পা পিছিয়ে যায় হৃদিতা তখনি কারো চওড়া বুকের সাথে ধাক্কা লাগে তার পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে নবীনের দলের লোক।ভয়ে হু হু করে কেঁদে দেয় অসহায় হৃদিতা। তার কান্না দেখেই বিশ্রী ভঙ্গিতে হাসতে থাকে লোক গুলো।
নিজেকে বাচাঁতে সে সবাইকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই পেছন থেকে নেকাব টেনে ধরে নবীন। নেকাব ছুড়ে মেরে খোলার আগেই ‘আল্লাহ’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে সে।সুনশান নিরিবিলি রাস্তায় কেউ শুনতে পায় না হৃদিতার চিৎকার।তাদের মাঝে কিছুক্ষন ধস্তাধস্তি হয়। পাচঁটা ছেলের সাথে একা একটা মেয়ের পেরে উঠা কিছুতেই সম্ভব নয় তবুও আত্নরক্ষায় কাউকে কামড় বা কাউকে লাত্তি দিতে থাকে হৃদিতা।এক পর্যায়ে সেই নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে ছুটি আসে তিনটা মাইক্সো গাড়ি।গাড়ির হেডলাইটে কয়েকটি ছেলের সাথে একা একটা মেয়ের ধস্তাধস্তি দেখে গাড়ি থামাতে বলে নোমান।তার আর বুঝতে বাকি নেই একা একটা মেয়েকে পেয়ে ছেলে গুলো কি করতে চাইছে।দ্রুত গাড়ি থেকে নোমানের সব দলবলকে নেমে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের দেখেই ছুটে পালাতে নেয় নবীনের দলের লোকেরা কিন্তু তার আগেই নোমানের লোক তাদের ধরে নেয়।
হৃদিতা রাস্তায় হাটুমুড়ে বসে পরে।এখনো তার মুখ থেকে নেকাব সরেনি।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।তখনি তার মুখে কেউ মোবাইলের ফ্লাশ লাইটের আলো ছুড়ে দেয়।পিট পিট করে চোখ খুলতেই নোমানকে সামনে দেখে ভয়ে শরীর আরো অসাড় হয়ে আসে।নোমান, যে কিনা নিশি রাতের আঁধারে মেয়েদের নেশায় মত্ত থাকে।একপাল কুকুরের হাত থেকে সে বেঁচে গেলেও নোমানের হাত থেকে তাকে বাচাঁনোর সাধ্য কারো নেই।যদি নোমানের পৈচাশিক সুখ পাওয়ার লোভ মনে জেগে উঠে তখন?তখন কি করবে হৃদিতা।
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্নার সুরটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সে কিন্তু পারছেনা।
– এই তুমি আরাফের ক্লাস মিট হৃদিতা না?
সঙ্গে সঙ্গে আবারো চোখ খুলে তাকায় সে। নোমানের দিকে তাকিয়ে মাথা নুইয়ে সায় দেয়।
– একা এই নিরিবিলি রাস্তায় কি করছো তুমি? দেখি উঠে দাঁড়াও।
হৃদিতা হেলেদুলে নিজেকে স্থির করে দাঁড়ায়।গায়ের বোরকা ঝেরে মাটি থেকে ব্যাগ হাতে তুলে নেয়।
– আরাফ কে পড়া শেষ করে এদিক দিয়ে ফিরছিলাম যেনো বাড়িতে তাড়াতাড়ি যেতে পারি তাই কিন্তু ভাবিনি এতটা রাত হয়ে যাবে।
– বোকা মেয়ে, কান্ড জ্ঞান নেই নিজের খেয়াল নিজেই নিতে পারো না।
নোমান দ্রুত গাড়ি দিকে এগিয়ে যায় পানির বোতল হায়ে নিয়ে আবারো হৃদিতার কাছে ফিরে আসে। পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,
– নাও পানি টুকু শেষ করো।ওদের সাথে তোমার কি সমস্যা?
নোমানের প্রশ্নে ঠোট কামড়ে কাঁদতে থাকে সে।
– কি হলো আমার প্রশ্নের উওর দাও তারপর যত ইচ্ছা কেঁদো।আমার এত সময় নেই ফটাফট উওর দাও।
– নবীন আমায় খারাপ প্রস্তাব দিয়েছে আমি রাজি হইনি তাই…
কথা শেষ করার আগেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হৃদিতা।নোমান বিষটি বুঝতে পেরে নবীনের সামনে যায়।তারপর কোন কথা না বলেই এলোপাতাড়ি থাপড়াতে থাকে।
– লজ্জা লাগেনা এমন মেয়ের দিকে হাত বাড়াস।প্রয়জনে পতিতা পল্লিতে যাবি খবরদার আমার এলাকার মেয়েদের দিকে যদি আরেকবার চোখ তুলে তাকাস তবে খুন করে দেবো।
নোমান কিছুটা দম নেয়।নবীন সহ তার দলের লোকেরা মাফ চাইতে থাকে তাদের কথা না শুনে বরং নোমানের লোকদের নির্দেশ দেয় সবাইকে যেন আচ্ছা মতো ধৌলাই দেয়।
নোমান হৃদিতার কাছে গিয়ে ইশারা করে গাড়িতে উঠার জন্য কিন্তু প্রথমে নারাজ হলেও পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে রাজী হয়।অবশেষে নোমান বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করে হৃদিতাকে তার বাড়ি পৌছে দেয়।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
হৃদিতাকে পাগলের মতো ফোন মেসেজ করেও কোন খোঁজ পেলনা আরাফ।নেহাকেও বেশ কয়েকবার কল করা হয় কিন্তু প্রতিবারেই নেহার ফোন বন্ধ বাতায়।আড্ডা মাস্তি কোন কিছুই যেন আরাফের মন ফেরাতে পারছেনা।এদিকে বন্ধুরা যতই ঘনিষ্ঠ হোক তাদের কিছুতেই হৃদিতার কথা বলা যাবে না।কেননা একবার যদি ভুল ক্রমে নোমানের কানে উঠে যায় আরাফ হৃদিতার প্রতি দূর্বল তাহলে বিপদ এ কূল ও কূল দুই কূলেরি সমান।
একের পর এক সিগারেট ফুঁকছে আর হৃদিতাকে নিয়ে চিন্তায় মশগুল হচ্ছে।একা একা সিগারেট ফুকঁতে ভালো না লাগায় এগিয়ে যায় গেটের সামনে থাকা দারোয়ানের কাছে।কিছুক্ষন গল্প করে এবার দুজনে মিলেই সিগারেটের নেশায় মগ্ন হয়ে যায়।তখনি গেট দিয়ে নোমানের গাড়ি ডুকে।আরাফকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে যায় নোমান।
– কত দিন বলেছি সিগারেটের নেশা ছেড়ে দে শুনবিনা তুই আমার কথা।
– তুমি কি ছেড়ে দিয়েছো দাদাভাই?বরং তোমার আরো বিষাক্ত নেশা গুলো বেশি।
– আমার নেশা আছে বা কি নেই তা দিয়ে কোন সমস্যা না কিন্তু তোর এইসব নেশায় সমস্যা হলে আমার বোনটার ক্ষতি। প্রভার ভবিষ্যত তুই তোকে যেন ফিট এন্ড ফাইন থাকতে হবে।
নোমানের কথা শুনেই স্থির হয়ে যায় আরাফ।তার রাগ লাগছে, ভীষণ রাগ লাগছে তার।যেকোন কথার উলটা পিঠে কি নোমানকে প্রভার কথা আনতেই হবে?যতসব বিরক্তিকর আলোচনা।
ঘাড় ঘুরিয়ে আরাফ চলে যেতে নিলেই নোমান তাকে ডেকে বলে,
– আরাফ শোন আজ একটা কান্ড হলো।হৃদিতাকে রাস্তায় কিছু গুন্ডারা এটাক করে।
আরাফ চমকে তাকায় নোমানের দিকে তার দুনিয়া যেন ওলট পালট হয়ে গেছে।শ্বাস আটকে আসছে।
– ক.কি বলছিস কখন?
নোমান একে একে সবটা খুলে বলে আরাফ কথা।তারপর ফ্রেশ হতে ঘরে চলে যায় এদিকে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আরাফ সে ভাবছে হৃদিতার মনের অবস্থা।তখনি হেলেদুলে পা নাচিয়ে গলায় শেকল বাঁধা বিড়ালটি নিয়ে এগিয়ে আসে আইদা আরাফের দিকে।আরাফ হৃদিকে কোলে তুলে নিয়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।
– ভাইয়া ব্যাপারটা কি হঠাৎ তুমি বাড়িতে বিড়াল নিয়ে এলে তার উপর মেয়ালি নাম রেখেছো “হৃদি” বিষয়টা বুঝিয়ে বলো প্লিজ!
– বোঝানোর কিচ্ছু নেই। এমনিতেই ভালো লেগেছে তাই নিয়ে এসেছি।
আরাফ হৃদিতে নিয়ে বাগানের দিকটায় হাটতে শুরু করে তার সাথে আইদা, দুজনের মাঝে চলে নানান কথা কিন্তু গোপনে আরাফের মাথায় ভর করে আছে হৃদিতার চিন্তা।
কিছুক্ষণ পর আরাফ ঘরে ডুকতেই লিবিং রুমে বাড়ির ছোট থেকে বড় সবাইকে দেখতে পায়। শুধু মাত্র সেখানে উপস্থিত নেই সে এবং আইদা।সবার দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে যেতে নিলেই আদীব আরাফকে ডেকে নিয়ে আসে।সবাই মিলে শুরু করে গোল মিটিং।আজকের বিষয় ব্যবসায় সফলতা অর্জনে বাড়িতে বিশাল করে পার্টির আয়োজন করা হবে।আরাফের বাবার নির্দেশে তার ছোট চাচা জসীম এনায়েত সবার নামের লিস্ট টুকতে থাকে। কার কয়জন গেস্ট আসবে এর একটা প্রাথমিক লিস্ট করা হচ্ছে। সবার হিসাব নেওয়া হলেও আরাফকে জিজ্ঞেস করা হলো না তার কোন গেস্ট আছে কি না?
– একি চাচ্চু বাড়িতে এতো বড় আয়োজন সবার বন্ধু বান্ধব আসবে,সবার লিস্ট নিলে কিন্তু আমার টা নিলে না কেন?
জসীম কিছু বলার আগেই গম্ভীর কন্ঠে তার বাবা জহির বলে,
– আমি জানি তোমার কোন ফ্রেন্ড,ওই গাজাখোর ছেলে মেয়ে গুলো।তুমি ভালো করেই জানো আমি ওই ছেলে মেয়ে গুলোকে পছন্দ করিনা।তাদের এই বাড়িতে আসা নিষিদ্ধ। তাহলে তোমার লিস্ট নেওয়া হবে কেন?
জহিরের কথা তীব্র রাগের সঞ্চার হয় আরাফের মনে। একদিকে হৃদিতার চিন্তায় তার মাথা ঠিক নেই তার সাথে জহিরের এমন গায়ে লাগানো কথা বার্তা,
– বাবা একটু ভদ্র ভাষায় কথা বলো।তারা আড্ডা মাস্তি করলেও তাদের চরিত্র অন্তত ঠিক আছে এই বাড়ির ছেলে গুলোর মতো নোংরা না।
– তুমি বাইরের ছেলের সাথে এই বাড়ির ছেলের তুলনা করো কোন সাহসে? আগেই বলেছিলাম তোমার ওইসব থার্ড ক্লাস ফ্রেন্ড গুলোকে আমার মোটেও পছন্দ না তাদের এই বাড়িতে আসা চলবেনা।
আরাফের রাগ যেন ক্ষনে ক্ষনে বেড়েই চলছে হৃদিকে আইদার কোলে দিয়ে রাগে মাথার চুল টেনে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
– আমি কিচ্ছু ভুল বলিনি বাবা, ঘরের ছেলের সাথে বাইরের ছেলের তুলনা করাই যায়।এই বাড়িতে চারটা ছেলে আছে আমি,নোমান ভাই,নিয়াজ,আদীব।তাদের মাঝে আদীব হয়তো সবার সেরা কিন্তু দেখবে কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে গেলে সে নিজেও বিগড়ে যাবে।ছেলেটা ভালো থাকবে কি করে তার বড় দাদাভাই গুলোই ভালোনা সেখানে এই ছেলের ভদ্রতা টিকে থাকার আশা বাদ দিলেই চলে।তোমার বাড়ির এই ছেলে গুলোর চাইতেও আমার ফ্রেন্ড গুলোর চরিত্র, অভ্যাস,আচার আচরণ অনেক ভালো।তাই তোমার ভুলভাল চিন্তাধারা আমার ফ্রেন্ড গুলোর চরিত্র এক চুল পরিমানেও পাল্টাতে পারবেনা।আর তাদের খারাপ বলে চিল্লাতে থাকলেও তারা খারাপ হয়ে যাবেনা
– যতই তাল বাহানা পাকাও তুমি।আমি কিছুতেই এই বাড়িতে ওদের আসার পার্মিশন দেবোনা। তোমার পার্টি করার হলে, টাকা দিয়ে দেবো তাদের সাথে পার্টি করবে।
আরাফ হৃদিকে আবারো কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে থাকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
– তোমাদের পার্টি তোমরা করো বাড়ির এই আয়োজনে আমি থাকবো না।আগেই বলেছিলাম আমার ফ্লাট আমায় দিয়ে দাও কথা দিলাম এই বাড়ির সিমানাও মাড়াবো না। উপপ্স, জেঠিমা আর আইদা,আদীবকে না দেখলে তো আমার পেটের ভাত হজম হবে না শুধু তাদের সাথেই দেখা করতে আসবো।
– তোমার ফ্লাট তুমি পাবেনা এই বাড়িতেই থাকতে হবে তোমায়।
আরাফ কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে উদ্ধৃত তখনি তার মা মায়মুনার গলা ভেসা আসে তার কানে,
– কি ছেলে জন্ম দিয়েছি আমি যে ছেলে তার জেঠিমাকে দেখতে এই বাড়ির চৌকাঠে আসবে অথচ আমায় না।এই দিন দেখার ছিল আমার?
– অবশ্যই তুমি হয়তো আরো বাজে দিন দেখবে মা।কারন তুমি তো তোমার কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছেলের খোঁজ কি তোমার নেওয়া হয়?আর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা আমি গেলাম।
আরাফ দ্রুত তার রুমের দিকে পা বাড়ায়।হৃদিতাকে কল করতে হবে যতক্ষণ না তার খোঁজ পাচ্ছে কোন শান্তি হবে না তার।
এদিকে রাতে বাড়ি ফিরেই দপাশ করে বিছানায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে হৃদিতা।দ্রুত নেকাব ছুড়ে সাইডে মেরে,পাশে থাকা জয়গা উপড় করে ঢকঢক করে পানি পান করে দ্রুত গলা ভিজিয়ে নেয়।তার এমন উদ্ভট আচরনে অবাক না হয়ে পারেনা বাকি সবাই। নেহাসহ বাকিরা যখন যানতে চায় তার কি হয়েছে সে শুধু বলেছে কুকুরের দৌড়ানিতে এতটা ভয় পেয়েছে।জামা কাপড় নিয়ে তারপর যায় পুকুর পাড়ে। যতক্ষন না গোসল করবে ততক্ষন শরীরে পাপীদের ছোঁয়া গুলো কিছুতেই যাবেনা।
কেটে যায় তিনদিন এই তিনদিন আরাফ বেশ কয়েকবার হৃদিতার কাছে ফোন করেছে কিন্তু প্রতিবারেই ফোন বন্ধ।ব্যাকুল আরাফ আর কোন উপায় না পেয়ে নেহাকে ফোন করে আর ছলে বলে কৌশলে জানতে পারে, সেদিনের রাতের পরে হৃদিতার গা কাপিয়ে ভীষন জ্বর উঠেছে।বর্তমানে কিছুটা সুস্থ সে।
হৃদিতার অসুস্থতার কথা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না সে মনে মনে সিধান্ত নেয় যে করেই হোক হৃদিতার সাথে দেখা করবে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফিরে মোবাইল হাতে নিতে মেসেজ চেক করতে থাকে নোমান। তখন মাইশার দেওয়া একটি মেসেজ চোখে পড়ে তার,
“এই যে, ভাবওয়ালা ছেলে শুনো,আমি বিডিতে আসছি।কাজী, বিয়ের শাড়ি গহনা তৈরি রেখো। আজকেই বিয়ে সেরে ফেলবো।এইভাবে দূরত্ব আর মানা যাচ্ছেনা।তুমি দিন দিন মাত্রা পেরিয়ে অসভ্য হয়ে যাচ্ছো আর তোমাকে ঠিক করতে আমাকে প্রয়োজন তাই আমি আসবো।আমি আসছি ভালোবাসা আরেকটু দৈর্য্য ধরো.!
মেসেজটি পড়ে নোমান স্থির হয়ে যায়।মাথায় বুদ্ধি গুলো যেন লোপ পেয়েছে।এই পাগল মেয়ে বিডিতে আসলে এবার নির্ঘাত কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ছাড়বে কি করবে এবার নোমান?
#চলবে….