#শব্দহীন_অনুভূতি
#পলি_আনান
#পর্ব_৪
প্রখর সূর্যের দাপটে উত্তাপ আজকের দিনটি।ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হৃদিতা।একটু রিলেক্স করতে দ্রুত ভার্সিটির কমন রুমের দিকে পা বাড়ায়।মুখে থাকা নেকাবটি খুলে দ্রুত চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়।ব্যাগ থেকে পানি নিয়ে কয়েক ঢোক গিলে বোতলের মুখ আটকে মাথা ঘুরাতেই নাফিসার সাথে ধাক্কা লাগে।
-আল্লাহ! সরি আমি খেয়াল করিনি আপু।
নাফিসা তড়াক করে সামনে তাকিয়ে হৃদিতাকে দেখতে পায়। কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ হৃদিতার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করে বলে,
– এই তুমি হৃদিতা রাইট?
– জি আপু, আমি হৃদিতা মেহেরীন।
– মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! তুমি হৃদিতা! এই প্রথম আমি তোমায় দেখলাম। সব সময়তো নেকাব পড়ে থাকো।চোখ দুটো ছাড়া তোমার মুখমন্ডল আমার দেখা হয়নি।মাশাল্লাহ তুমি দেখতে একদম মায়াবিনী।
নাফিসার কথায় হৃদিতা লজ্জা ভঙ্গিতে একটু হাসে।পানির বোতলটা ব্যাগে রেখে আবারো চাতকপাখির মতো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নাফিসার চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,
– শুকরিয়া আপু।
– এই তুমি আপু কাকে বলছো?আমি তোমার বয়সী। আমাকে নাফিসা বলেই ডাকবে।
– আমি ভেবেছিলাম আপনি..
হৃদিতাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নাফিসা তাকে হাত ইশারায় থামিয়ে দেয়।
– তুমি কি ভেবেছো আমি শাকীল, লিবান আর আরাফের মতো?
– শাকীল,লিবান কে?
– আমাদের সাথে থাকে একটু মোটা করে সে লিবান।আর আরাফকে তো তুমি চিনো বাকি যে ছেলেটা সে শাকীল।আমি কিন্তু তাদের মতো নই আমি তোমার মতো প্রত্যাক ক্লাসে পাশ করেই উঠেছি।
– ওহ এবার চিনতে পেরেছি।
– আরাফকে কেমন বুঝলে? পড়াশোনা করছে তো?
নাফিসার প্রশ্নে আহাজারি করে উঠে হৃদিতা। কোমড়ে হাত গুজে পায়চারি করে সামনে থাকা একটি বেঞ্চিতে বসে যায়।
– কি যে বলবো তোমায়!আমি জানি তোমরা অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তবুও তোমায় কথা গুলো না বললে নয়।তাকে পড়াচ্ছি গত এক সাপ্তাহ থেকে বিশ্বাস করো এত বলদ টাইপের স্টুডেন্ট আমি বাপের জন্মে দেখিনি।হ্যা অনেক স্টুডেন্ট আছে পড়া পারেনা বা তাদের পড়া বুঝতে সমস্যা হয় কিন্তু আরাফ তেমন ছেলে না।একটা বিষয় আমি বুঝিনা তাকে মাঝে মাঝে খুব ভালো মনে হয় স্বাভাবিক ভাবেই পড়া শিখে দেয় আমাকে।হ্যা একটু সময় লাগে কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছায় পড়ালেখা করেনা এইসব সে কেন করছে আমার মাথায় ডুকছেনা বিশ্বাস করো।
গত তিনদিন আমি একটা চ্যাপ্টার নিয়ে পড়ে আছি।আসল কথা তার পড়ালেখায় মন নেই।কয়েকদিন পর আমাদের ফাইলান কিন্তু এতেও তার মাথা ব্যাথা নেই।তার থেকেও আমার ক্লাস ফাইভ ফোরের স্টুডেন্ট গুলো সো গুড।তাদের অন্তত পড়াশোনা আগ্রহ আছে।
সম্পূর্ণ কথাটা এক নাগাড়ে শেষ করে হৃদিতা দম ছাড়ে। নাফিসা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।হৃদিতার কথার ভাব ভঙ্গিতে সে বুঝে নিয়েছে আরাফ তাকে জ্বালিয়ে মারছে।এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে আরাফ এত ত্যাড়ান্যাড়া কেন যে করছে? এবার নাফিসার নিজের বেশ রাগ লাগছে।তবে এটাতো সত্যি আরাফ আসলেই হাঁদারাম স্টুডেন্ট।
নাফিসাকে চুপ থাকতে দেখে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় হৃদিতা।শুষ্ক গলায় কয়েকটি ঢোক গিলে বলে,
– নাফিসা তুমি কি মনে কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়?আসলে বলতে চায় নি কিন্তু বলে ফেলেছি সরি!
হৃদিতাকে গম্ভীর হতে দেখে তার পাশে ধুপ করে বসে যায় নাফিসা।হৃদিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিজে আশ্বাস্ত সুরে বলে,
– কি যে বলো তুমি! আসলে একদম ঠিক কথাই বলেছো তুমি।শুধু আরাফ না ওই তিন ছেলের একটাই কাজ সারাদিন মাস্তি হই হুল্লোড়। রাত জেগে পার্টি।অবশ্য আমিও তাদের সাথে শামিল হই তবে নিজের পড়ালেখাটা ঠিক রাখি।শাকীল আমার কাজিন, সে আমার বড় খালামনির ছেলে। এই বছর তাকে পড়ানোর দাড়িত্বটা বলতে গেলে আমার। আস্তে আস্তে তাদের পার্টি গুলো ভেস্তে দিচ্ছি। শাটের কলার টেনে এনে পড়তে বসাই তবুও আমাকে মানতে চায় না নানান দখল সামলে তাকে আমার পড়াতে হয়। আর লিবানের বাবা তাকে গার্ড দিচ্ছে আর আরাফের কথা কি বলবো?অতীত থেকে সাম্প্রতিক যত টিউটর তার জন্য ঠিক করা হয়েছে সব কটাকে রাম ধোলাই দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে।আন্টি বয়সী মেডাম গুলোকে প্রপোজ করে উত্ত্যক্ত করেছে শুধু মাত্র তারা যেন আরাফের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, শেষে কি না আরাফ জিদ ধরে তোমার কাছে পড়বে আসলেই আমরা বন্ধুরা সবাই অবাক হই।
নাফিসার কথা গুলো শুনে ধাপে ধাপে অবাক হয় হৃদিতা। একটা ছেলে কি পরিমানে অসভ্য তা এখন উপলব্ধি করতে পারছে সে।হৃদিতাকে চুপ থাকতে দেখে নাফিসা আবার বলে,
– আসলে আরাফের কথা কি বলবো। বেচারা যে পরিমানে লম্বা সেই পরিমানে যদি একটু বুদ্ধি থাকতো তাহলে হয়েই যেতো।যত পাগলামি করিস নিজের ক্যারিয়ারটার কথা একটু ভাব।
– কে বলেছে তোমার বন্ধু লম্বা সে অন্তত আরেকটু লম্বা হতে পারতো। আরেকটু লম্বা হলে অন্তত বুদ্ধিটা আরেকটু বাড়তো।
হৃদিতার কথায় ফিক করে হেসে দেয় নাফিসা।
– কি যে বলো না তুমি!তোমার সাথে আরাফ দাড়ালে আমার ভীষণ হাসি পায় মনে হয় যেন জিরাফ আর হরিন একসাথে দাড়িয়ে আছে।
নাফিসা হাসতে থাকে। হৃদিতাও নিশব্দে হেসে যায়।
নাফিসা ক্লাসে ফিরে দেখে শাকীল আর লিবান যেন কি নিয়ে ঝগড়া করছে তাদের পাশেই চুপচাপ সিগারেট ফুঁকছে আরাফ।সে যেন কিছু দেখেও না দেখার ভান করে আছে।অবশ্য আরাফের এটা নতুন নয় সে আগে থেকেই এমন কোন ঝগড়া বিবাধ সে মিটমাট করবে না বরং চুপচাপ দেখতে থাকে।সে যেন তার ভাবনায় বিচরন করেই সুখ পায়।বিরক্তে মুখ বিগড়ে এগিয়ে আসে নাফিসা।
– এইসব কি? আরাফ তুই ওদের শান্ত করছিস না কেন?আর শাকীল তোকে আমি বলেছিলাম না আর যদি ঝগড়া বিবাধে লিপ্তহস তবে আমি তোর সাথে ব্রেকাপ করে নেবো। শুনবি না তুই আমার কথা।
নাফিসা এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে থেমে যায়। শাকীল মাথা নিচু করে নাফিসার উদ্দেশ্য সরি বলে।নাফিসা সেদিকে মন না দিয়ে আরাফকে বলে,
– যানিস একটা জম্পেশ খবর আছে। আজ আমি হৃদিতাকে দেখেছি কমনরুমে নেকাব ছাড়া।
আরাফ চমকে তাকায় নাফিসার দিকে। দ্রুত সিগারেট ঠোঁট থেকে নামিয়ে বলে,
– কি? কোন ছেলে ছিল সেখানে?
– আরে মেয়েদের রুমে ছেলে এলাউ হবে কেন? কি উলটা পালটা বকছিস তুই?আর হৃদিতা সবসময় ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
আরাফ যেন শান্ত হয়। আটকে যাওয়া দমটা যেন ছাড়া পেয়েছে।আরাফের কথাকে অগ্রাহ্য করে লিবান বলে,
– বলিস কি? মেয়েটা দেখতে কেমন রে?
– কেমন মানে!আহামরি সুন্দরি হয়তো না তবে মায়া! মেয়েটার চেহারার যে মায়াটা আছে তোকে এক দৃষ্টিতেই ঘায়াল করে দেবে।
– কি বলছিস তুই, সত্যি?ইসসস মেয়েটাকে দেখার আমার সুভাগ্য হলো না।
লিবানের কথায় চোখ মুখ কুচকে যায় আরাফের হাতে থাকা সিগারেটটা মুষ্টি বদ্ধ করে দুমড়ে মুছড়ে নিভিয়ে নেয়।চোয়াল শক্ত করে নাফিসাকে ধমকে বলে,
– ওই মেয়ে সবার কাছে নিজেকে আড়াল করছে আর তুই কি না তাকে দেখেই চেহারার বর্ননা দিতে চলে এসেছিস,তাহলে ওই মেয়ের আর নেকাব করার কি ছিল?ডাফার একটা।মেয়ে হয়ে মেয়ের সম্মান রাখতে পারছিস না।আমরা এখানে তিন তিনটা ছেলে নিশ্চই ওর দিকে পরের বার থেকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবো সেই কমনসেন্স তোর নেই?
আরাফ কথাটা বলেই শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো।শাকীল পকেটে হাত ঢুকিয়ে এটিটিউড ভঙ্গিতে বলে,
– আমার কোন মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই।রক্তের সম্পর্ক ছাড়া সকল মেয়ে আমার বোন বুঝলি আরাফ।আর আমার মহারানী আমার সামনেই আছে। তাকে ছাড়া কারো উপর নজর দেওয়া আমার জন্য অনুচিত।
নাফিসা আড় দৃষ্টিতে তাকায় শাকীলের দিকে।শাকীল মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসে।
নাফিসা আর শাকীলের সম্পর্ক সেই কিশোর-কিশোরী বয়স থেকেই। কিন্তু কেউ কাউকো সরাসরি বলেনি।দুজনের আবেগ, কথা বলার ভাব ভঙ্গিতেই একজন আরেক জনকে বুঝে নিয়েছে।তাদের সম্পর্কটা এমন একটা পর্যায়ে আছে না পারছে অতি আবেগে উপচে পড়া ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারছে দুজন দুজনের সেই ভালোবাসাময় তিক্ত আবেগ বিসর্জন
দিতে। চুপচাপ পরিস্থির সাথে তাল মিলিয়ে চলা ছাড়া দুজনের মাঝে আর কোন রাস্তা নেই।
আরাফের কথা গুলো শুনে নাফিসার মাঝে অনুসূচনার সঞ্চার হয়।গলার স্বর অস্পষ্ট করে বলে,
– সরি দোস্ত,আর এমন হবে না। কিন্তু তুই কি কখনো হৃদিতাকে দেখিস নি?হৃদিতা নেহা আপুর কাজিন সেই সুবাদে দেখার কথা।
– না দেখিনি আর নেহা যানে না হৃদিতা আমাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
আরাফের কাঠ কাঠ জবাব।তার ঘোমড়া মুখের বাজঁখাই সুরের জবাবে সবাই বিশ্বাস করে নেয় আরাফ সত্যি কোন দিন হৃদিতাকে দেখে নি।
আরাফের বাবা জহির এনায়েতের সাথে কথায় মশগুল নোমান।গুরুত্বপূর্ণ কথার এক পর্যায়ে মুঠো ফোন ভাইব্রেট করতে থাকে। নোমান আড়ালে মোবাইলটায় দৃষ্টি ফেলতেই মাইশার নাম্বারটা চোখে পড়ে।দ্রুত ফোনটা সুইস্টপ করে আবারো কথায় মশগুল হয় তখনি ম্যানেজারের হাতে থাকা নোমানের ফোনে আবার কল আসে।ম্যানেজার দ্রুত নোমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– স্যার মাইশা মেডাম ফোন করেছে।
– দ্রুত ফোন কেটে ব্লক লিস্টে ট্রান্সফার করো।
– ওকে।
কথা শেষ করে আবারো কথায় মন দেয় আরাফ।কিন্তু পাচঁ মিনিট পর সেন্টার টেবিলের উপর থাকা ল্যান্ড ফোনটি বেজে উঠে।জহির ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি বুঝতে পারছেন না এখন আবার কে ফোন করলো।সব ভাবনার সমাপ্তি জানিয়ে দ্রুত ফোন রিসিভ করতে কানে আসে একটি মেয়ের কন্ঠ,
– আসসালামু আলাইকুম!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?
– নোমান স্যার আছে?তার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা ছিল কিন্তু তিনি ফোন তুলছেন না।
– ওকে আমি দিচ্ছি তুমি লাইনে থাকো।
– আংকেল আপনি ভালো আছেন?
মাইশার এমন প্রশ্নে নিঃশব্দে হাসলো জহির।এক মূহুর্তে মেয়েটা প্রমাণ করে দিয়েছে সে অতন্ত মিশুক একটা মেয়ে।
– হ্যা ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছো?
– জি!
জহির ফোনটা একটু আড়াল করে সামনে থাকা নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– নোমান তোর ফোন।
– বাড়ির ফোনে আমাকে কে ফোন করবে?
– কথা বলে দেখ।
নোমান দ্রুত ফোন নিয়ে কিছু টা দূরে চলে যায়।বুকের ভেতটায় কিছুটা হলেও ভয়ের সঞ্চার হয়েছে।মাইশা যে পরিমানের চতুর এই মেয়ে আবার ফোন করেনিতো?
– হ্যালো কে বলছেন?
– তোমার বউ গো বউ!যাকে তুমি বিয়ে না করে দূরে সরিয়ে রেখেছো।
– হোয়াটিস দিস মাইশা? আমার বাড়ির নাম্বারে ফোন করার সাহস তুমি কোথায় পেলে?
– ভালোবাসা যখন বাধঁ মানে না তখন অনেক কিছুই করতে হয়।বাইদা ওয়ে আমি এইসব রং ডংয়ের কথা বলতে তোমায় ফোন করিনি।
হঠাৎ করেই নরম মিষ্টি সুরের কথা বলা মাইশার কন্ঠ হয়ে গেছে গম্ভীর তেজীপূর্ণ।মাইশার কান্ডে নোমানের ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকায়৷ এই মেয়ে হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারনটা কি?
– কি কারনে ফোন করেছো আমায়?
– তোমার ফেসবুক একাউন্টে এত সুন্দর সুন্দর ছবি দেয়ার কারন কি?বজ্জাত মেয়ে গুলো রেজিস্ট্রি ছাড়াই তোমাকে স্বামী বলে দাবি করছে এইসব কি? কেউ জান বলছে, কেউ কলিজা বলছে কেউবা বলছে আমার বয়ফ্রেন্ড আমার স্বামী।আমার তো এইসব এক বিন্দু পরিমানেও সহ্য হচ্ছে না।প্রত্যাকটা মেয়ে কি পরিমানে লুচু তুমি বুঝতে পারছো?
– হুম তোমার মতো। রেজিস্ট্রি ছাড়া তুমি যেমন করে আমায় স্বামী দাবি করো ঠিক তারাও করছে।সো হোয়াট, নোমান এনায়েতকে সবাই ভালোবাসতে পারে।
– তুমি ওই মেয়েদের সাথে আমাকে তুলনা করছো?
– হ্যা করছি, তুমি কি আমার কিছু হও? শুধুই আমার পেছন পেছন ঘুরো আর আমায় বিরক্ত করো।এই নোমান নিশির রাত ছাড়া কোন মেয়েকে পাত্তা দেয় না।
– মানে কি?তুমি এখনো ওইসব মেয়ের সাথে রাত কাটাও ছিহহহ!আমি তো মানতে পারবো না আমার হাজবেন্ড এতটা কেরেক্টারলেস আমি মানতে পারবো না।
– যদি মানার থাকে তাহলে রাতে বিছানায় চলে এসো, আমায় একদম বিরক্ত করবেনা আমি বিজি আছি।
নোমান দ্রুত ফোনটা কেটে দিলো। অপর দিকে মাইশা রেগে হাতে থাকা ফোনটা দেয়ালের সাথে ছুড়ে মেরে হাটু মুড়ে কাদঁতে বসে যায়।
– এই লোকটা এত খারাপ কেন? আমি কি না একটা কালো ধোঁয়ার পেছনে ছুটছি।তবে এইসব কি আমার উপচে পড়া আবেগ?না আবেগ তো নয় আমি কি ১৭/১৮ বছরের মেয়ে নাকি আবেগের সাগরে হাবুডুবু খাবো।আমি যথেষ্ট এডাল্ট একটা মেয়ে।নোমানকি আমায় কখনো বুঝবেনা!
মাইশা এখনো কাদঁছে। তার ভিষন কষ্ট হচ্ছে নোমান তাকে কেন বুঝেনা।
অন্যদিকে নোমান তার ম্যানেজারকে ইশারাতে আড়ালে ডেকে বলে,
– শোন,ফেসবুক ইন্সট্রাতে আমার পাচঁ খানা ছবি পোস্ট করো।বেছে বেছে ভালো দেখে। এট্রাক্টিভ লুকের ছবি গুলো।
– ওকে স্যার।
নোমান দ্রুত জহিরের সামনে চলে যায় এদিকে ম্যানেজার বিরক্ত ভঙ্গিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে,
– একটা ছবি পোস্ট করলে নটিফিকেশনের জালায় পাগল হয়ে যাই।মেয়েরা যেভাবে চুষে চুষে খায় আর পাঁচটা দিলে তো হয়েই গেলো।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।
চুপচাপ হৃদিতার সামনে বই নিয়ে বসে আছে আরাফ।সে আজ শান্তশিষ্ট। হঠাৎ করেই হৃদিতার প্রতি জমে থাকা রাগ ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।তখন শাকীল আর নাফিসাকে হৃদিতার প্রতি জমে থাকা রাগ ক্ষোভ গুলোর কথা আরাফ তাদের সাথে সেয়ার করে।এতে শাকীল আর নাফিসা রেগে যায় তার সাথে।মেয়েটা নিজে পরিশ্রম করে ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। তাতে আরাফের বাবা প্রশংসা করতেই পারে।আরাফ এর রাগ হৃদিতার উপর মেটারনোর কোন মানে হয় না।নানান কথা চিন্তা ভাবনার পর আরাফ ডিসিশন নেয় সত্যি আর হৃদিতাকে বিরক্ত করবে না বরং বন্ধু হয়েই থাকবে।
– পিচ্চি আজকে পড়বো না চল আজ আমরা আড্ডা দিবো।
– এইসব কি?হাতে আর বেশি সময় নেই কয়েকদিন পরেই ফাইনাল এক্সাম।
– এই তোদের ব্রিলিয়ান্টদের একটাই প্রব্লেম সারাদিন পড়া পড়া আর পড়া।উফফ অসহ্য।
আরাফ কিছুটা থামলো। মাথা নুইয়ে রাখা হৃদিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
– বন্ধু হবি আমার?
আরাফের হঠাৎ এমন প্রশ্নে তড়িৎ গতিতে তাকায় হৃদিতা।বুকের ভেতটায় যেন আষাঢ়ের মেঘ জমাট হয়ে গুম গুম করে ডাকছে।এই ছেলে হঠাৎ এত কোমল সুরে কথা বলছে কেন?
– কি রে কথা বলছিস না কেন পিচ্চি?
– না! আপনার বন্ধু হলে আমিও আপনার মতো হয়ে যাবো।
– হলে হবি তাতে কি সমস্যা?
– আমি আমার মতো আমি কারো মতো হতে চাই না।
হৃদিতার কথায় মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে চেয়ারের হাতে হেলান দিয়ে আরাফ বলে,
– হবি হবি একদিন তুই আমার জন্য আমার মতো করে হয়ে যাবি।সেদিন তোর উঠানেও আছড়ে পড়া প্রণয় দহনেরা, শব্দহীন অনুভূতি গুলোর শব্দ খোঁজার জন্য লাগামহীন ছুটে বেড়াবে।সেই অনুভূতির শেষ থাকবেনা। ক্ষনে ক্ষনে যেন নতুন করে উপলব্ধি করবি। কিন্তু সেই মানুষটাকে পাশে পাওয়ার অবকাশ থাকবে না। তাই সময় থাকতে অনুভূতি গুলোকে আশকারা দে।ডুবে যা নাম না যানা গহীনে এক অফুরন্ত সৌহার্দ্য রাজ্য।
আরাফের কথায় অবাক হয়ে তাকায় হৃদিতা। এই ছেলে এইসব কি উল্টা পাল্টা বকছে।সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।সে কি তাকে বন্ধু হওয়ার নিবেদন করছে নাকি প্রেমের!
#চলবে……