#দ্বিপ্রহরের_রাত্রি
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

৯.
চারদিকে মানুষের ভিড়ের জন্য ঠিকমতো হাঁটা যাচ্ছে না। ধাক্কাধাক্কি করেও খুব একটা সামনে আগানোও সম্ভব হচ্ছে না। এক হাতে অরিত্র অনিকের হাত ধরে রেখেছে। অন্যপাশে শ্রুতি প্রায় ওর গা ঘেঁষে হাঁটছে। অরিত্র যে রাগ করে আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে। মেলায় আসার বায়না করেছিল অনিক এবং শ্রুতি। অরিত্র অনেকবার করে বলেছে এখন প্রচণ্ড ভিড় থাকবে; যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কে শোনে কার কথা? এদিকে দুজনই নাছোড়বান্দা। অগত্যা অরিত্রকেও এই দুজনকে নিয়ে আসতে হয়েছে। আসার পর শ্রুতিও এবার নিজের ফল্ট বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকেই গালি দেয়। ইচ্ছে তো করছে এখান থেকেই বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু সেটা বলার মতো কিঞ্চিৎ পরিমাণ সাহসও অবশিষ্ট নেই আর। ভিড়ের মধ্য থেকেই শ্রুতি অরিত্রর থেকে আলাদা হয়ে যায়। সে অনেক পিছে পড়ে যায় এবং পেছনের মানুষজনরা সামনে এগিয়ে যায়। সেই সঙ্গে সামনে এগিয়ে গিয়েছে অরিত্রও। এদিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার দরুণ দু’পাশ থেকেই মানুষজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগছে শ্রুতির। সাহস সঞ্চয় সামনে এগিয়ে গিয়েও অরিত্রর দেখা আর পায় না। ভীষণ কান্না পাচ্ছিল ওর। ভিড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে সাইডে এক বন্ধ দোকানের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। অনবরত দুটি চোখ ভিড়ের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছে অরিত্র এবং অনিককে। সে ঢাকা-শহরের কিছুই চেনে না। এখান থেকে কীভাবে বাড়ি ফিরে যেতে হবে তাও জানা নেই তার।

আশেপাশে এবার বেশ কিছু ছেলে জমা হয়ে যায়। যারা নানাভাবে শ্রুতিকে উত্যক্ত করছে। অরিত্রকে হারিয়ে যতটা না কান্না পাচ্ছিল, ছেলেগুলোর বাজে বাজে কথা শুনে তার চেয়েও বেশি কান্না পাচ্ছে এখন। চোখে পানি টলমল করছে। সে এই দোকান ছেড়ে অন্য একটা খোলা দোকানের সামনে দাঁড়ায়। যেখানেও রয়েছে মানুষের সমাগম। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ছেলেগুলো এখানে এসেও শ্রুতিকে টিজ করছে। এবং এতে আশেপাশের মানুষেরও কোনো মাথা-ব্যথা নেই। তখন পাশ থেকে আরেক ছেলে এসে জিজ্ঞেস করে,’আপনি শ্রুতি না?’

শ্রুতি কেঁদেই ফেলেছিল। অশ্রুশিক্ত নয়নে পাশে ফিরে তাকায়। ছেলেটিকে সে চেনে না। তবুও সে উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল। তখনই ছেলেটা পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সেখানে অরিত্র এবং অনিকসহ আরও কতগুলো ছেলে এসে উপস্থিত হয়। যেই ছেলেটা শ্রুতির নাম জিজ্ঞেস করেছিল সে অরিত্রর কাছে এগিয়ে গিয়ে কানে কানে কী যেন বলল। সঙ্গে সঙ্গে অরিত্র উত্যক্ত করা ঐ ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে একটার গালে ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় বসায়। এগিয়ে যায় বাকি ছেলেগুলোও। মার খেয়ে ওরা ভিড়ের মধ্যেই দৌঁড়ে চলে যায়। শ্রুতি এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে ভয়ে। কিন্তু অরিত্র তাকে কিছুই বলে না। শুধু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শ্রুতি কাঁদতে কাঁদতে বলে,’বাড়ি যাব আমি।’
এতক্ষণে শ্রুতির ওপর কন্ট্রোল করে রাখা রাগগুলো আর দমিয়ে রাখতে পারল না অরিত্র। সে ধমক দিয়ে বলল,’বাড়ি যাব মানে কী? খুব না শখ হয়েছে মেলায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য? আজ মেলায় ঘুরবেন তারপর বাড়ি যাবেন।’
ধমক খেয়ে ঈষৎ কেঁপে ওঠে শ্রুতি। কিন্তু সেটা অরিত্রর নজরে পড়ল না। সে তার বন্ধুদের উদ্দশ্যে বলল,’অনিককে নিয়ে তোরা পিছু পিছু আয়।’
তারপর সে শ্রুতির ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। অর্থাৎ এবার আর শ্রুতির হারিয়ে যাওয়ার কোনো চান্স নেই।

এখন আর শ্রুতি কাঁদছে না। কিন্তু মেলায় গিয়েও সে মনমরা হয়ে থাকে। অরিত্র তাকে সাথে নিয়ে এই দোকান, সেই দোকান ঘোরায়। কিছু কেনার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, সে কিছুই নেবে না। রাগে কটমট করে সে শ্রুতির দিকে তাকালে শ্রুতি দৃষ্টি নত করে নেয়। অরিত্র নিজেই তাকে এক চুড়ির দোকানে নিয়ে যায়। লাল টকটকে কাঁচের চুড়ি নিয়ে শ্রুতির হাতে পরিয়ে দেয়। হাত নেড়েচেড়ে দেখে চুড়ির সাইজ ঠিক আছে কী-না। এই পুরো ঘটনাতেও শ্রুতি নির্বাক রইল। এই চুড়ির মাপেই নীল, কালো, সাদা আর হলুদ রঙের দু’মুঠ করে চুড়ি কিনে নিল অরিত্র। নিজেই পছন্দ করে এক জোড়া কানের দুল কিনে দিল। কাজলটা শ্রুতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’এই নিন। এটা সাথে রাখবেন। চোখে কাজল পরলে আপনাকে দেখতে মায়াবিনী লাগে।’
আরও টুকটাক জিনিস কেনাকাটা করে ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। শ্রুতির জন্য যা কেনার অরিত্রই কিনেছে। আর অনিক নিজের পছন্দমতো খেলনা কিনে নিয়েছে। অরিত্র ভেবে নিল শ্রুতির মুড ঠিক করার জন্য নাগরদোলায় উঠবে। এ কথা শোনামাত্রই শ্রুতি চিৎকার করে বলে উঠল,’অসম্ভব! আমি নাগরদোলায় উঠব না।’
অনিক হাসতে হাসতে বলল,’ইয়ে! ভাবি ভয় পায়, ভয় পায়। ভাবি ভীতু।’
শ্রুতি অনিকের মশকরায় একটুও রাগ করল না। কেননা সে সত্যিই নাগরদোলায় উঠতে ভয় পায়। এদিকে অরিত্র এবং ওর বন্ধুরাও নাছোড়বান্দা। জোর করেই তাকে নাগরদোলায় উঠানো হয়। সে শক্ত করে অরিত্রর হাত এবং শার্ট খামচে ধরে। নাগরদোলা ওপরে ওঠার সময় কোনো রকম অনুভূতি না হলেও নিচে নামার সময়ে মনে হয় প্রাণ ওপরে রেখেই নিজে নেমে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রাণ লাফিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। শ্রুতি সমানে চিৎকার করতে থাকে আর বলে,’আমাকে নামিয়ে দেন। আমি নামব, আমি নামব।’
অরিত্র, ওর বন্ধুরা এবং অনিক তখন হেসে কুটিকুটি। না পেরে সত্যিই তারা শ্রুতিকে নিয়ে নেমে যায়। আর শ্রুতির তখন বেহাল দশা।

শ্রুতিও এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে। ফিরে আসে অতীতে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতি থেকে। একা একা সে যখন জানালার গ্রিল ধরে চেয়ারে বসে ছিল, দৃষ্টি আবদ্ধ রেখেছিল দূরের গাছ-পালার দিকে তখনই সেই সুন্দর স্মৃতিগুলো এসে ধরা দিয়েছে। খুব করে মনে পড়ছে সেই বাড়ির কথা। বাড়ির মানুষগুলোর কথা। কথা বলতেও ইচ্ছে করছে ভীষণ। কিন্তু সে এমনই বোকামি করেছে যে অরিত্র কিংবা সুলায়মান রহমান কারোরই নাম্বার নিয়ে আসেনি।

‘এই শ্রুতি, তুই ঘরে আছিস?’
দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করে বৃষ্টি। শ্রুতি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বৃষ্টি তখন বলল,’কাল আমরা ঢাকায় চলে যাচ্ছি।’
‘মানে কী? এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি?’
‘এটা তাড়াতাড়ি হলো নাকি? আট দিন হয়ে গেছে এসেছি। তোর দুলাভাই ফোনের ওপর ফোন করছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। পিয়ুশ ভাইয়া আজ আসবে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
‘আমাদের মানে? এখানে আমরা কারা?’
‘কেন জানিস না মনে হয়? আমি, তুই আর রিমি। তুই তো আমার শ্বশুরবাড়ি যাসনি একবারও।’
শ্রুতি অন্য কোনো সময়ে হলে যেতে রাজি হতো না। কিন্তু এবার বিনাবাক্যেই রাজি হয়ে গেল। বৃষ্টির শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়।অরিত্রদের বাড়িও ঢাকায়। আর শ্রুতিও এখন অরিত্রদের বাড়ির ঠিকানা, অলি-গলি সব চেনে। এই একটাই সুযোগ এখন ওদের সাথে যোগাযোগ করার। এজন্য শ্রুতিও হাসিমুখে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।
.
.
মাসের আজ ২৯ তারিখ। বাড়ির আসবাবপত্র এখন থেকেই নতুন বাসায় নেওয়া শুরু করেছে অরিত্র। কাল শুক্রবার। আজ আর কালকের মধ্যেই সব নিয়ে গোছগাছ করতে হবে। এরপর আর সময় পাওয়া যাবে না। অনেক বছর ধরে ওরা এই বাসায় ছিল। হয়তো আরও থাকত। কিন্তু অরিত্র নারাজ ছিল। তার দম বন্ধ হয়ে আসে এখানে। কারণটা আর অন্য কিছুই নয়; বরং শ্রুতি। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর শ্রুতি দরজা খুলে দেয় না এটা তাকে পীড়া দেয়। অরিত্রকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বলে না এটা সে মিস করে। বৃহস্পতিবারে এখন আর সে বাচ্চাদের মতো বায়না ধরে বলে না, ‘কাল কিন্তু আমায় আর অনিককে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।’ ঘরের পর্দা ধরে ঝুলতে ঝুলতে এখন আর সে দুষ্টুমি করে না। খাওয়ার সময় সামনের চেয়ারে এখন আর শ্রুতি বসে না। জায়গাটা ফাঁকাই রয়ে যায়। এসবকিছুর মাঝে অরিত্র আর থাকতে পারছিল না। শ্রুতিকে ভুলতেও পারছিল না। আর এসব কিছু থেকে বাঁচার জন্যই সে ইমার্জেন্সী বাড়ি পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং নতুন বাড়ি খুঁজেও নিয়েছে। হ্যাঁ, এখন শুধু বিষয়টা মিস করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরঞ্চ সে শ্রুতিকে ভালোওবেসে ফেলেছিল। ভালোবাসাটা হয়তো প্রথম থেকেই ছিল। হতে পারে সে নিজেই বুঝতে পারেনি। এখন শ্রুতির অনুপস্থিতিই সেটা অরিত্রকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য, এ ভালোবাসা কখনই সম্ভবপর নয়। কেননা সে কখনই শ্রুতির ঐ দু’চোখে তার জন্য ভালোবাসা কিংবা কোনো অনুভূতি দেখেনি।

সব জিনিসপত্র নিতে নিতে ওদের রাত হয়ে যায়। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগেও অরিত্রর কষ্ট অনুভূত হয়। এক মনে সে ভাবে, বাড়িটা ছাড়া কি ঠিক হলো? এতদিন তো শ্রুতির স্মৃতি ছিল। কিন্তু এখন তো আর সেটাও থাকবে না। দীর্ঘশ্বাস নিল সে। সকল পিছুটান কাটিয়ে বাবা-মা আর ভাইকে নিয়ে চলে যায় অন্যত্র, নতুন বাড়িতে।
_________

আজকের সকাল অন্যরকম সুন্দর। আজ বাড়ির সদস্যদের কোলাহল ভালো লাগছে, পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে ভালো ডাকছে, হাঁস-মুরগীর শব্দ শুনতে ভালো লাগছে। মোট কথা আনন্দে আজ শ্রুতির কাছে সবকিছু মোহনীয়, আকর্ষণী এবং সুন্দর লাগছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজেকে ভালো করে দেখে নেয়। তার অতিরিক্ত খুঁশির ছাপ সে নিজেও তার চোখে-মুখে দেখতে পাচ্ছে। ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে অরিত্রর দেওয়া কাঁচের চুড়িগুলো বের করে সে। যেই চুড়িগুলো অরিত্র পরিয়ে দিয়েছিল সেই চুড়িগুলোই দু’হাতে পরে নেয়। একটা চুড়ি আরেকটা চুড়ির সঙ্গে লেগে রিনিকঝিনিক শব্দ তুলছে, যা শুনতে আরও বেশি শ্রুতিমধুর লাগছে। অরিত্রর দেওয়া কাজলটিও সে হাতে তুলে নেয়। দু’চোখে গাঢ় করে কাজল পরে নেয়। আয়নায় তাকায় ভ্রু কুঁচকে। পরবর্তীতে সে হেসে ফেলে। গালে হাত রেখে আয়নায় থাকা নিজের প্রতিবিম্বকে জিজ্ঞেস করে,’আমায় কি সত্যিই মায়াবিনী লাগছে?’

‘একদম। কোনো সন্দেহ নেই এতে।’
শ্রুতি আয়নাতেই দরজার দিকে তাকাল। কথাটি বলেছে পিয়ুশ। না, আজ পিয়ুশকে তার বিরক্ত লাগছে না। তাকেও ভালো লাগছে। শ্রুতি পেছনে ঘুরে এক গাল হেসে বলল,’ভেতরে আসুন।’
‘কী ব্যাপার? আজ এত খুশি কেন বলুন তো?’ ভেতরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করল পিয়ুশ। প্রত্যুত্তরে এবারও শ্রুতি হেসে বলল,’খুশি হতে বারণ নাকি?’
‘একদম না। হাসি-খুশি থাকলেই আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে। চোখে কাজল দেওয়ায় আরও বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। তা এত খুশির কারণটা কী? হবু শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন বলে?’
শ্রুতি প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পরক্ষণেই আবার হেসে ফেলে। কারণ সে জানে পিয়ুশের সাথে তার সম্পর্ক দুষ্টুমি করার। সেহেতু পিয়ুশ দুষ্টুমি করেই এ কথা বলেছে বলে ভেবে নেয়। অথচ তার জানাও নেই পিয়ুশের এ কথাই সত্যি হতে চলেছে। ওদিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পিয়ুশের বাবা-মা এবং বোন শ্রুতিকে সামনে থেকে দেখার জন্য।

সকালের নাস্তাও শ্রুতি খুশির কারণে খেতে পারল না। আনন্দেই তার পেট ভরে আছে। তবুও মামা-মামির বকুনির জন্য অল্পকিছু খেয়ে নেয়। এরপর ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সামনে ড্রাইভার এবং পিয়ুশ বসেছে। পেছনে বসেছে বৃষ্টি, রিমি আর শ্রুতি। সে সিটের সাথে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে। মনে মনে হাসে। দেখা হবে আজ সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষগুলোর সাথে। অথচ যার অথবা যাদের জন্য শ্রুতির এই আনন্দের ধারা সেই ধারাই যে সেখানে নেই সেটা এই মেয়ের জানাও নেই!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here