#মনোপ্যাথি
#পর্ব:৫
#অরিত্রিকা_আহানা
পরেরদিন সকালবেলা মুক্তা আপু এসে আমাদের ডেকে তুলে দিলেন।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসতেই দেখলাম ভাইয়া,ইনায়াজ ভাই , ইমতিয়াজ ভাইয়াসহ ওনার বন্ধুরা সবাই ডাইনিং এ বসে গল্প করছে।
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইনায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম।উনার পরনে ছাই কালারের একটা পাঞ্জাবি তারওপর কালো কোটি সেই সাথে ব্ল্যাক জিন্স।পাঞ্জাবীর হাতা গোটানো।হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি।ভাইয়ার কাছ থেকেই জেনেছি উনি বরাবরই ঘড়ির ব্যাপারে সৌখিন।আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম,গতকালের চাইতে আজকে দাড়ি হালকা ছাটানো তবে ক্লিন সেইভ না।উনাকে অবশ্য কখনই ক্লিন সেইভ হতে দেখি নি। খোঁচা খোঁচা দাড়িতেই উনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।সকাল সকাল উনার মুখটা দেখেই মনটা ভরে গেলো।আমি পাশে তাকাতেই দেখলাম তিথী হাঁ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছে।ওকে এভাবে তাকাতে দেখে ভীষন রাগ হলো।ওকে কিছু বলতে যাবো তখন দেখলাম তিশারও একই অবস্থা।মানে কি? সবার কেন উনাকেই দেখতে হবে?
রাগে আমি ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”তোমরা এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছে কেন? তোমাদের তো আরো দেরীতে আসার কথা ছিলো।”
ভাইয়া জানালো ইমতিয়াজ ভাইয়াই নাকি ফোন করে ওদেরকে আসতে বলেছে।আপু নাকি সারারাত কান্নাকাটি করেছে।
আপুকে দেখলাম হালকা গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি পরে হয়ে নাশতার টেবিলে এসেছে।গোলাপি শাড়িতে ওকে বেশ মিষ্টি লাগছে। বিয়ের পর নাকি মেয়েরা সুন্দর হয়ে যায় আপুকে দেখে বুঝতে পারলাম কথাটা আসলে মিথ্যে নয়।আপুকে দেখেই ইনায়াজ ভাই সহ ইমতিয়াজ ভাইয়ার বন্ধুরা সবাই ঠাট্টা মশকরা শুরু করে দিলো।
আমি তিথী আর তিশাকে নিয়ে নাশতা করতে বসে গেলাম।নাশতার টেবিলে নাফিস ভাই এসে আমার পাশে বসলো।মিষ্টি একটা গ্রাণ নাকে আসছে।সম্ভবত শাওয়ার নিয়ে এসেছেন উনি।চুল ঝরঝরে!টি-শার্টের বোতামগুলো খোলা।লোমশ বুকের খানিকা দেখা যাচ্ছে।আমি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম।তিথী আর তিশা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো।
নাফিস ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।প্রতিউত্তরে আমিও হাসলাম।
-“এখনো নাশতা করা হয় নি?”
-“না।মাত্র এলাম।আপনার এত দেরী যে?”
উনি রুটি আর মাংস চিবোতে চিবোতে বললেন,”রাতে ভালো ঘুম হয় নি।”
তিথী ফট করে বলে বসলো,”কেন ঘুম হয় নি কেন ভাইয়া?..কাউকে স্বপ্নে দেখেছিলেন?”
নাফিস ভাই প্রতিউত্তরে হাসলেন।আমি খেয়াল করলাম তিথীর কথা শুনে আমার গালদুটো অস্বাভাবিকভাবে লাল হয়ে গেছে।কেন হচ্ছে?.লজ্জায়? উহু অস্বস্তিতে!!আমি মাথা নিচু করে খাওয়া শুরু করলাম।নাফিস ভাই আবার ডাক দিলেন।
-“তনু?”
-“জ্বী?”
-“কিসে পড়ো তুমি?”
-“অনার্স ফাইনাল ইয়ার।”
-“ওহ!সাবজেক্ট কি?”
-“সয়েল সাইন্স!”
-“ভালো।তো ফিউচার প্ল্যান কি?.চাকুরীবাকরি কিছু করবে না বিয়ে?”
আমি কি উত্তর দিবো ভেবে পেলাম না।আসলেই আমার ফিউচার কি?..আই ডোন্ট নো!”
আমি বললাম,”আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।পরীক্ষা টা শেষ করি তারপর ডিসিশন নেওয়া যাবে।”
উনি কোন রিয়েকশন দিলেন না।শুধু বললেন,”পানির জগটা দাও।”
তিথী তিশা দুজনে এখনো হাসছে।মাঝে মাঝে আমাকে ইশারা দিচ্ছে।শেষে ধরা খেয়ে ফেলো নাফিস ভাইয়ের কাছে।উনি অনুযোগ করে বললেন,”তোমার দুজন জ্বালাচ্ছো কেন বেচারীকে?..বেচারী এমনিতেই লজ্জায় খেতে পারছে না।”
দুপুরের দিকে মেহমানরা সবাই আসতে শুরু করে দিয়েছে।আপুকে পার্লারে থেকে সাজিয়ে আনা হলো।
আজকে আমিও অনেক সেজেছি।বিয়েতে মিষ্টি কালারের একটা লেহেঙ্গার সাথে ভারী মেকাপ,ঠোঁটে নুড কালারের লিপস্টিক,গলা খালি রেখে কানে লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে বেশ বড় এয়ারিংস পড়লাম।সবটা নিজে নিজেই সেজেছি।সাজ শেষ হতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অনেক্ষন দেখলাম।
আমাকে দেখে তিথী আর তিশা ঠাট্টা করে বললো,”এত সেজেছিস কার জন্য?নাফিস ভাইয়া তো মনে হচ্ছে আজকে আর চোখ সরাতেই পারবে না।”
মেজাজটা পুরো খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু কিছু বললাম না। রুম থেকে বেরোতে যাবো এমন সময় দেখলাম ইনায়াজ ভাই একহাতে ফোন অন্যহাতে রুহিকে নিয়ে নিচে নামছে। উনার পারফিউমের মিষ্টি গন্ধে পুরো জায়গাটা সুরভিত হয়ে গেছে।আমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছি,উনি আমার ঠিক একহাত দূরে ছিলো,ফোনের দিকে চোখ থাকায় আমাকে দেখতে পান নি।
উনার উপস্থিতিতেই আমার বুকটা ধুকপুক ধুকপুক শুরু করে দিলো।আমি কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।উনি কথা বলতে বলতে নিচে নেমে গেলেন।আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইমতিয়াজ ভাইয়া বললেন,”কি হলো তনু?এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?চলো নিচে চলো।”
নিচে গিয়ে দেখলাম রুহি ইনায়াজ ভাইয়ের কোলের ওপর বসে আছে।এই মেয়ে সারাক্ষণ উনার সাথে লেগে থাকে!..কেন???দুজনে মিলে ফোনে গেইম খেলছে।ইনায়াজ ভাইয়ার কপালের ওপর এলোমেলো চুলগুলো ছড়িয়ে আছে।উফফফ!কি অসহ্য এক দৃশ্য।ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে উনার ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কপালের ওপর থেকেই সরিয়ে দেই।
উনি কি ভেবে সামনে তাকালো।চোখেচোখ পড়ার আগে আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।রুহিকে দেখলাম উনার কানে কানে কিসব বললো।তারপর দুহাতে উনার গাল চেপে ধরে চুমু খেলো।নাহ!আমি দেখতে পাচ্ছি না।সহ্য হচ্ছে না!
হঠাৎ কোথা থেকে নাফিস ভাইয়া এসে পেছন থেকে ডাক দিতেই আমি বেশ চমকে উঠলাম। উনি আমার দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছে।
উনার পরনে জাম কালারের একটা পাঞ্জাবি সাথে সাদা চুড়িদার।শুনেছি যাদের গায়ের রঙ শ্যামলা তাদেরকে নাকি লাইট কালারটা স্যুট করে না।কিন্তু উনাকে বেশ মানিয়েছে।উনি আমাকে দেখে চোখ বড়বড় করে বললেন,”আই এম ডান!ওহ মাই গড! আই এম ডান!!”
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।বোকার মত কিছুক্ষন উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,” রিয়েলি ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস!”
প্রথমে বিরক্ত হলেও উনার রিয়েকশন দেখে আমি হেসে ফেললাম।মুখে থ্যাংক ইউ বলার প্রয়োজন পড়লো না।আমি মুখের হাসিটাই অনেক কিছু জানান দিয়ে দিলো।প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে??
উনি আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললেন,”চলো ওদিকে ফটোসেশন চলছে,সবাই তোমার খোঁজ করছে।”
আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।এরপর উনি ইনায়াজ ভাইয়াকেও জোর করলেন আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য,উনার কথার মাঝখানে ইমু,ভাইয়ার বন্ধুরা সবাই এসে ইনায়াজ ভাইকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলো।ইনায়াজ ভাই স্বাভাবিক ভাবেই রুহিকে কোলে নিয়ে ওদের সাথে ছবি তুলতে চলে গেলেন।উনি কি আদৌ স্বাভাবিক ছিলো?? ছিলো হয়ত।
আমি যাবো কি যাবো না ভাবছি।ইনায়াজ ভাইয়া না থাকলে হয়ত এতটা সংকোচ হতো না।জানি না কেন উনি সামনে থাকলেই আমার সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ মুক্তা আপু এসে আমার হাত ধরেই টেনে নিয়ে গেলেন।
ওখানে গিয়ে দেখলাম নাহিদ ভাইয়া,অনু আপু ওরা সবাই এসে গেছে।আপুকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে।ফটোগ্রাফার ইমু।ইনায়াজ ভাই এর ক্যামেরাটা ওর হাতে।ইনায়াজ ভাই রুহিকে কোলে নিয়ে সবার মাঝখানে দাড়িয়েছেন।আপুর ঠিক পেছনে।মুক্তা আপু আমাকে তার পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।আমাকে দেখেই আপু ধমক দিয়ে বললো,”সব জায়গায় তোকে ডেকে ডেকে আনা লাগে কেন?কোথায় হারিয়ে যাস একটু পরপর?”
আমি ওর কথার জবাব না দিয়ে একটু হাসলাম।ইমু বললো,”এই আপু তুমি বাদ পড়ছো তো?মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াও।”
আমি বললাম,” তুই আগে ওদের সবার ছবি তুলে নে,আমি বরং বেরিয়ে যাই।সবার তোলার শেষ হলে আমি আলাদা করে আপুর সাথে তুলবো।”
কিন্তু আপু রাজী হলো না।ধমক দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললো,”তুই আমার পেছনে দাঁড়া।” আপুর কথা শুনে আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম।আপুর পেছনে মানে তো ইনায়াজ ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে।আমি লজ্জায় মরে যাবো উনার পাশে দাঁড়াতে গেলে।উনার অবশ্য কোন রিয়েকশন নেই,নির্বিকার ভাবে সবার সাথে হাসাহাসি করছে।বোধহয় আপুর কথা শুনতে পেয়েছে তাই একপাশে সরে আমাকে জায়গা করে দিলো।
আমার চোখ লেগে আছে তার সুন্দর মুখটার দিকে।আজকে তাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।আমার দিকে চোখ পড়তেই আন্তরিক হাসি দিলেন।বরাবরের মত এবারও আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। মানুষটাকে আল্লাহ একসাথে কতগুলো গুন দিয়েছেন।কি সুন্দর সবার সাথে মিশে যান।দেখতে সুন্দর,পড়াশোনায় ভালো,ভাইয়া বলে ওদের মেডিকেল এর নাকি সবচেয়ে জিনিয়াস স্টুডেন্ট ইনায়াজ ভাই,অথচ কি নিরহংকার একজন মানুষ।সৃষ্টিকর্তা যে কত মায়া দিয়ে যে উনাকে তৈরি করেছেন সেটা শুধুই উনিই জানেন।
আমি উনাকে নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত, এমন সময় নাফিস ভাইয়া হুট করে বলে উঠলো ,”আমার পাশে এসে দাঁড়াও তনু!এদিকে স্পেস আছে।”
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকালাম।আপু আমাকে ইশারায় বোঝালো উনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে,কোন সমস্যা নেই।আমি কিছুটা বাধ্য হয়েই উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ভীষণ বিরক্ত লাগছে উনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে।রাগ হচ্ছে!একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো উনি ইচ্ছে করে আমাকে ইনায়াজ ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে দেন নি।তিথী আর তিশাকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।ছবি তোলার এক পর্যায়ে ইনায়াজ ভাই রুহিকে আপুর কোলে দিয়ে ইমুকে বললো,”এবার তুমি গিয়ে দাঁড়াও।আমি তুলছি।” এবার আমি আরো অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।এখন তো আর ক্যামেরার দিকেই তাকাতে পারবো না লজ্জায়।আমি তড়িঘড়ি করে আপুর কানে ফিসফিসিয়ে বললাম,”আপু আমি ওয়াশরুমে যাবো।”
আপু বিরক্ত হয়ে বললো,”যা!”
আমি চলে আসার সময় নাহিদ ভাইয়া,নাফিস ভাইয়া মুক্তা আপু সবাই জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি কিছু বলার আগেই আপু বললো,”ওর একটু কাজ আছে।আমি পাঠাচ্ছি।” আমি মনে মনে আপুকে ধন্যবাদ দিয়ে সোজা ওপরে চলে এলাম।
এরপর আর নিচে যাই নি।মুক্তা আপুর রুমে এসে ঘুম দিলাম।
ঘুম ভাংতেই দেখলাম,আমার পাশে নাফিস ভাই লম্বা হয়ে ঘুমাচ্ছে।পুরো ঘর আবছা আলো আবছা অন্ধকার!দরজাটা হালকা ভেজানো।এইমুহূর্তে অন্য কোন মেয়ে হলে হয়ত নাফিস ভাইয়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখে মনে মনে শিহরিত হতো কিন্তু আমি হলাম না!
উনাকে দেখে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো আমার হৃদপিন্ড!মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে গেলো!
উনার কাছে গিয়ে তিক্ত গলায় ডাক দিলাম,”নাফিস ভাই?”
সাড়া নেই।আমার মেজাজ তখন একেবারে সপ্তম আসমানে।প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম।এইবার কাজ হলো।উনি ঘুমঘুম চোখে আমার দিকে তাকালেন।
-“তুমি?”
আমার চোখে তখন আগুন ঝরছে। উনার চোখদুটো লাল হয়ে আছে।সম্ভবত কাঁচা ঘুম নষ্ট করে দিয়েছি।
ক্ষিপ্ত গলায় বললাম,”আপনার কোন আক্কেল আন্দাজ নেই?”
উনি হাঁ করে তাকিয়ে আছেন।সম্ভবত বুঝতে পারেন নি আমি কি মিন করতে চাইছি।
-“বাড়ি ভর্তি মানুষজন আপনি আর আমি একরুমে!!আপনি এইরুমে কেন এসেছেন?আমাকে দেখতে পান নি?”
এবার বোধহয় বুঝলেন।শান্ত গলায় বললেন,”কালরাতে ভালো ঘুম হয় নি।আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে।বাকিরুমগুলোতে মানুষজন ভর্তি!সরি তনু আমার খেয়াল করা উচিৎ ছিলো।”
-“আমাকে সজাগ করে দিলেন না কেন?”
-“কাথামুড়ি দিয়ে ছিলে তো তাই দেখি নি।ভেবেছিলাম আধাঘণ্টার মধ্যেই উঠে যাবো।”
মেজাজ বিগড়ে গেলো!” বাহ!কি সুন্দর কথা?
রাগে চিৎকার দিয়ে বললাম,”আপনার উদ্দেশ্য আমি ভালো করেই বুঝে গেছি।একা একটা মেয়েকে ঘুমাতে দেখে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা উঠে গেলো?..আপনি যে এতবড় ইতর আমার জানা ছিলো না।”
আমি এমনিতে খুব শান্ত স্বভাবের।কিন্তু আজকে কেন এত মেজাজ খারাপ হলো আমি জানি না।আমার কথা শুনে নাফিস ভাই উঠে বসলেন।
চোয়াল শক্ত করে বললেন,”আমার উদ্দেশ্য মানে?..তোমার আমাকে কি মনে হয়? আমি চরিত্রহীন?..বদমাশ লম্পট?..তোমার কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে আমি ঘুমাতে নয় তোমাকে রেইপ করার জন্য ঢুকেছি। ”
আমি দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম।হুট করে কেন এত রাগ হচ্ছে আমি নিজেও জানি না।ঠাস করে উনার গালে চড় বসিয়ে দিলাম।আমি নিজেই হতবম্ভ!!.মুহূর্তেই নাফিস ভাইয়ের চেহারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছে।হ্যাঁচকা টানে আমাকে উনার কাছে নিয়ে গেলে।তারপর ঠেলতে ঠেলতে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।বাহুতে সজোরে চাপ দিয়ে বললেন,”ভদ্রভাবে বললে গায়ে লাগে না..না? তোমার এতবড় সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার?..হু দ্যা হেল আর ইউ?..আমি ইতর না? ইতর কাকে বলে জানো?..আজকে দেখাবো ইতরামি কি জিনিস!”
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।আতংকে উত্তেজনায় আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।প্রান পণ চেষ্টা করলাম মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করার।কেবল ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ হচ্ছে।
নাফিস ভাই আমার হাত দুটো উনার একহাতের মুঠোয় নিয়ে উঁচু করে ধরলেন।অন্যহাত দিয়ে ঝুঁটিকরা চুলগুলো একটানে খুলে ফেললেন।আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক লেপ্টে দিলেন,কাজল এবড়োখেবড়ো করে দিলেন।গায়ের ওড়নাটা টান দিয়ে খুলে ফেললেন।চিৎকার করতে যাবো তার আগেই হাত ছেড়ে দিয়ে মুখ চেপে ধরলেন।আমি কখনো ভাবতেই পারি নি নাফিস ভাই এমন একটা কান্ড ঘটাবেন।ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে।
উনি রাগে আমার ঘাড়ে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলেন।চিৎকারে দিতে পারছি না মুখ বন্ধ!দম বন্ধ হয়ে মরে যাবার মত অবস্থা।
তারপর রাক্ষসটা ধাক্কা মেরে আমাকে বের করে দিলো।বের করে দেওয়ার আগে বলল,”অসভ্যের মত ছেলেদের রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়বে আবার বড়বড় লেকচার দিবে?.. খাট থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিলে উচিৎ শিক্ষা হতো।..এবারে মত ছেড়ে দিয়েছি আর কখনো যদি লাগামছাড়া কথাবার্তা বলেছো তখন দেখবে কি হাল করি।আমি যতটা ভালো তার চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারি।..মাইন্ড ইট!”
তারপর আমার মুখের ওপর ওড়না ছুড়ে দিয়ে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন।জীবনে এই প্রথম কারো কাছ থেকে এত অপমানিত হয়েছি আমি।বুক ফেটে কান্না আসছে।পা দুটো টলছে।ঘাড়ের ব্যথায় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। দরজার কাছেই ঘুরে পড়ে যেতে নিলাম।কিন্তু কেউ একজন ধরে ফেললো।হাঁটু আর ঘাড়ে হাত রেখে শূন্যে তুলে নিলো আমাকে।আমি তার বুকের ওপর গিয়ে পড়লাম।পরিচিত একটা গ্রাণ আসছে।তারপর আর কিছু মনে নেই।জ্ঞান হারালাম।