#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ১৫ ||
—“রুবাই আপু কী ঠিকানা ভুল দিলো?”
—“এমন কেন মনে হচ্ছে তোর?”
—“না এখানে আরও একবার এসেছিলাম আর কী। সমস্যা নেই চলো সামনে এগোই, গাড়ি নিয়ে সেখানে যাওয়া সম্ভব না!”
—“কী বলিস! এখন প্রায় রাত হয়ে আছে, যদি কোনো সাপ-টাপ আসে?” ভয়ার্ত কন্ঠে বললো তানজীল।
—“আরে ধুর কিছু হবে না। চলো রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াই। সেখানে কাউকে পাঠাতে বলি!”
—“সে-ই ভালো। আমার এই রাত করে কেমন ভয় ভয় লাগছে, রাত বাজে মাত্র ৯টা তাও কেমন ভূতুড়ে, ভূতুড়ে পরিবেশ লাগছে!”
সা’দ কিছু বলে না। দুজন ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর পর ভোঁ করে বড় বড় ট্রাক, সিএনজি আর প্রাইভেট যাচ্ছে। এই রাস্তাটার ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলছে না। হয়তো লোড শেডিং হয়েছে। গ্রামের কারেন্ট লাইন হয়তো এই সড়কের ল্যাম্পপোস্টেও বিদ্যমান। রাস্তার মোড়ে গিয়ে সা’দ রুবাইকে কল করলো। রুবাই ‘হ্যালো’ বলতেই সা’দ জানালো সে গ্রামে এসেছে তবে তানজীল যে এসেছে সেটা বলেনি। ওটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছে দুজন। রুবাই তো খুশিতে আত্মহারা। ভাবেনি তার ভাই এতো জলদি গ্রামে চলে আসবে। সা’দ রুবাইকে সবটা বুঝিয়ে কলটা কেটে অপেক্ষা করতে লাগলো।
রুবাই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চাচী জেঠু বলে চেঁচাতে থাকলো। রুবাইয়ের চেঁচামেচিতে সকলেই সিঁড়ির সামনে চলে আসে এবং জিজ্ঞেস করতে থাকে কী হয়েছে, এতো চেঁচামেচি করছে কেন? রুবাই ঠোঁটজোড়া প্রসারিত করে বলে,
—“ভাই আসছে। সে নাকি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে। বলেছে কেউ যেন তাকে গিয়ে রিসিভ করে!”
—“আয়হায় সে কী বলিস রুবাই আগে বলবি না! আবিদ! আবিদ! যা গিয়ে সা’দ বাবাকে নিয়ে আয়। কতো কষ্ট করে আসলো আর এখন জায়গা চিনতে না পেরে নাকি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, এ কোনো কথা! হ্যাঁ গো,(বড় জেঠু) আপনি আর আবিদ মিলে ছেলেটাকে নিয়ে আসেন!”
—“আচ্ছা তুমি এতো উত্তেজিত হয়ে যেয়ো না, ছেলেটার জন্য ভালোমন্দ রান্নার ব্যবস্থা করো আমরা যাচ্ছি!”
বলেই জেঠু আর আবুদ বেরিয়ে গেলো। কবির সাহেব বাড়িতে নেই। কোনো এক কাজের চাপে আজ বাড়িতে ফিরবেন না। তাই জোহরা সকলের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছে। সেহের এই দুইদিনে ফাতেমা খালার সেবায় প্রায় সুস্থ হয়ে গেছে। তবে হাঁটতে এখনো তার কিছুটা কষ্ট হয়। সে বহুবার চেয়েছিলো দাদীমাকে বিয়ের ব্যাপারটা বলতে কিন্তু কেন যেন সে বলে উঠতে পারছে না। আবার না বলতে পেরে অপরাধবোধে কঠোরভাবে ভুগছে সে। এমন একটা অবস্থা তার একূলও যেতে পারছে না আবার ওকূলও না! সেহের ধীর-পায়ে হাঁটার চেষ্টা করছে। কারণ, ফাতেমা খালা বলেছে হাঁটার চেষ্টা করছে নয়তো হাঁটুতে আরও রক্ত জমাট বাধার সম্ভাবনা আছে। এতে রক্ত চলাচলও সঠিকভাবে হবে না তাই হাঁটতে হবে৷ সেহের হাঁটতে হাঁটতে রান্নাঘরের দিকে যেয়ে দেখলো তার চাচীরা রান্নার ধুম লাগিয়েছে আর জোহরা কিছুটা দূরে বেসিনে কিছু শাক-সবজি ধুচ্ছে। সকলের তাড়াহুড়ো বুঝলো না সেহের। যদিও সে প্রশ্ন করতে চাইলো না তাও করেই বসলো,
—“কী হয়েছে তোমরা এভাবে তাড়াহুড়ো করছো কেন?”
আসিয়া সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
—“আমার ছেলে আসছে ফুল! তার জন্য তার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করছি। আর তুমি এখানে কেন যাও রুবাইয়ের সাথে গিয়ে বসো!”
সেহের মাথা নাড়িয়ে সোফার ঘরে চলে গেলো যেখানে রুবাই ফোন টিপছিলো। রিমন নিজের ঘরে পড়ছে আর তপা তো ঘর থেকে বের হয় না বললেই চলে। সেহেরকে দেখে রুয়াবি বিনয়ের সাথে হেসে সেহেরকে পাশে বসতে ইশারা করলো। সেহেরও মুচকি হেসে রুয়াবিয়ের পাশে গিয়ে বসলো। রুবাই মুচকি হেসে বলে,
—“জানো আমি কতো এক্সাইটেড, আমার ভাই এই গ্রামে আসবে! উফফ! তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না। তবে হাসবেন্ডকে এতো ফোন করছি বারবার সুইচড অফ বলছে, চিন্তা লাগে না বলো?”
—“ভাইয়া ইতালিতে থাকে তাই না আপু?”
রুবাই মাথা নাড়ায়। এরপর সেহেরের কাঁধে মাথা রেখে আনমনে বলে,
—“কতোদিন তাকে দেখি না, কবে যে তাকে সরাসরি দেখবো, তাকে ছুঁতে পারবো!”
—“কেন ভাইয়া আসে না?”
—“হ্যাঁ আসে তবে খুব কম। জানো বড্ড অসহায় লাগে নিজের জন্য, আর কতো তার জন্য অপেক্ষা করবো!”
—“চিন্তা করিও না আপু, দেখবে আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা খুব শীঘ্রই তোমাদের দেখা করিয়ে দিবে!”
—“তাই যেন হয়। যাইহোক এখন কেমন আছো? হাঁটতে কী অসুবিধা হচ্ছে?”
—“না তেমন না ঠিক আছি আমি!”
তখনই সেহেরের দাদী আসলো আর সেহেরকে বিশ্রাম করার জন্য ঘরে পাঠিয়ে দিলো। দাদীমার ধারণা জোহরা সেহেরকে সামনে পেলেই কোনো না কোনো কাজে লাগিয়ে দিবেন। সে একদমই জোহরাকে ভরসা করেন না! সেহেরেরই বা কী করার সে রুমে চলে আসলো। একা থাকলেই সেহেরের বারংবার সা’দের কথা মনে পরছে। যদিও সেহের তার নাম জানে না, শুনেছিলো ‘স’ দিয়ে একটা নাম কিন্তু ঠিকভাবে শুনতে পায়নি। তবে সেহের তাকে বিদেশিই বলে। সেহের কখনো ভাবতেই পারেনি ওমন একটা পরিস্থিতিতে এই বিদেশিকে তার বিয়ে করতে হবে। সা’দের মতো এতো বড়ো মাপের মানুষকে ভাবাটাই তার জন্য বিলাসিতা ছিলো সেখানে কি না সা’দ তার স্বামী!! এখনো সেহের এই বিয়ের বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারছে না। কেন যেন বিয়েটা মানতে পারছে না সেহের। মানবেই বা কী করে, সবটা যে তার মতামতের বাহিরে। কিন্তু বিয়ে তো বিয়েই হঠাৎ সেহেরের মনে পরলো তার দাদীমার কথা। তার দাদীমা গল্প শুনাতে গেলে সবসময় বলতো জম্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবটাই আল্লাহ’র হাতে। আমরা তো উছিলামাত্র! এর মানে সেহেরের বিয়ে সা’দের সাথেই হতো? কিন্তু সা’দ তো তাকে বাঁচাতে এসেছিলো ওই অমানুষটার হাত থেকে, বাঁচাতে এসে নিজেই বিপদে পরে গেলো। ভাবতেই সেহের ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত হচ্ছে। নিশ্চয়ই সে বিয়েটা মানতে পারেনি, আর মানবেই বা কী করে? একটা অচেনা মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে তাও গ্রামের সাধারণ একটা মেয়ের সাথে। এতে নিশ্চয়ই সে অসন্তুষ্ট! কিছুদিন পর ডিভোর্স পেপারও পাঠাতে পারে অথবা এই বিয়ে সারাজীবন ধামাচাপাই রয়ে যাবে। নাহ সেহের আর ভাবতে পারছে না, তার মাথায় ব্যথা উঠে যাচ্ছে। সেহের আর না দাঁড়িয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। নানান কথা চিন্তা করতে করতে সে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো।
সা’দের সাথে তানজীলকে দেখে রুবাইয়ের চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠলো। আশেপাশে মুরব্বিরা থাকায় সে তানজীলকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো না কারণ, ওনারা গ্রামের সংস্কৃতিতে বড় হয়েছে। তাদের সামনে জড়িয়ে ধরাটা খুবই লজ্জাকর পরিস্থিতি হবে। তাও রুবাই অভিমান করে বসে রইলো, তানজীল দেশে এসেছে তাকে আগে কেন জানালো না? তানজীল রুবাইয়ের গাল ফুলানো দেখে মৃদ্যু হাসলো! সে বুঝতে পেরেছে তার স্ত্রীর অভিমানের কারণ! আসিয়া রুবাইকে বললো,
—“রুবাই মা, জামাইকে ঘরে নিয়ে যা। কতো জার্নি করে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবে!”
রুবাই মাথা নাড়ায়। রুবাই তানজীলকে আসতে বললে তানজীল রুবাইয়ের পিছে পিছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।
সা’দকে দেখে জোহরা হা হয়ে রইলো। এমন সুদর্শন সে আগে কোনোদিন দেখেনি। কী মনে করে সে খুব নম্র স্বরে বলে উঠলো,
—“বাবা উপরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি তুমারে ঘর দেখিয়ে দেই!”
সা’দ জোহরাকে চিনতে পারলো না। সা’দ ভ্রু কুচকে আসিয়ার দিকে তাকাতেই আসিয়া বললো,
—“উনি তোর ছোট চাচী সা’দ আর ওইযে দেখছিস দাঁড়িয়ে আছেন, উনি তোর বড় চাচী!”
সা’দ বিনয়ের সাথে তাদের সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। দাদীমা আশেপাশে তখন ছিলো না। জোহরা সা’দকে নিয়ে রিমনের ঘরে গেলো। রিমন নিজের ঘরে পড়তে বসায় সে সা’দকে দেখে ভ্রু কুচকে বললো,
—“উনি কে আম্মু?”
জোহরা হেসে বলে,
—“ও সা’দ, তোমার রুবাই আপুর ভাই। আর সা’দ, ও আমার ছোট ছেলে রিমন!”
সা’দ হেসে বলে,
—“হেই রিমন ভাই হোয়াট’স আপ!”
—“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
সা’দ রিমনের ব্যবহারে বেশ মুগ্ধ হলো সাথে জোহরার প্রতি সম্মানটা বাড়লো। জোহরা মা হিসেবে ভালো শিক্ষা দিয়েছে রিমনকে। কিন্তু সা’দ যে জানে না এসবের পেছনে কে আছে। জোহরা সা’দকে বাথরুম দেখিয়ে চলে গেলো। জোহরা ঘর থেকে বেরিয়ে তপার ঘরে গিয়ে তপার দরজায় নক করলো। তপা দরজা খুলে জোহরাকে দেখে বিরক্তির সাথে বললো,
—“কী হলো দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?”
—“তোর চাচাতো ভাইকে দেখেছিস?”
—“না কেন?”
—“দেখতে চাইলে জলদি নিচে আয়, কী সোনায় সোহাগা ছোঁকড়া! দেখলে পড়ান জুড়ায় যায়!”
তপা চোখ বড় বড় করে বলে,
—“সত্যি নাকি?”
—“হ্যাঁ। জলদি আয়।”
বলেই জোহরা চলে গেলো। তপা তার চুপ সুন্দরভাবে বেঁধে ওড়না একপাশে নিয়ে নিচে চলে গেলো। ওরা শহরের মানুষ, নিশ্চয়ই ওড়নায় আবৃত হয়ে ক্ষেত সাঁজা মানুষ পছন্দ করে না। আর করবেই বা কেন? তাদের তো বড় বড় স্টেটাস!
সা’দ নিজের লাগেজ রুমের একপাশে রেখে সেটা থেকে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। বাড়িটা কাঠের তৈরি হলেও ওয়াশরুমটার দেয়াল আর মেঝেটা টাইলসে আবৃত। এরকম কাঠের বাড়ি সা’দের বেশ পছন্দ হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে হাত দিয়ে নিজের চুল পেছনের দিকে নিতে নিতে সা’দ ওয়াশরুম থেকে বের হলো। বের হয়ে দেখলো রিমন টেবিলে নেই। হয়তো নিচে গিয়েছে। সা’দ নিজের লাগেজের উপর তাওয়ালটা মেলে দিয়ে নিজের নিচে চলে গেলো। নিচে তো বিশাল আয়োজন। সকলেই আছে। সা’দ নিচে গিয়ে সকলের সাথে পরিচিত হলো। সা’দকে দেখে তপা তো হা হয়ে গেলো। এমন সুদর্শন সে নিজেও দেখেনি। একে হাতে নাগালে পেলে তো গ্রামের মেয়েদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাবে। এ যে তার বড় সুযোগ! তবে সে সা’দকে একবার সে শুটিংয়েও দেখেছিলো। এতে তপার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেলো সা’দকে নিজের করে নেয়ার! জোহরা মেয়ের ইচ্ছার কথা শুনে তো আরও খুশি। রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে সে। আবারও তার রাজরানীর মতো থাকা হবে, এমনটাই ভাবছেন তিনি। সা’দ সকলকে পেলেও তার ছোট চাচাকে পেলো না। বড় জেঠু জানালো সে কিছু কাজে শহরে গিয়েছে। দাদীমা তো সা’দকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রুবাইকে বললো,
—“আমার নাতনি ঠিকই কইসে, মোর সা’দ তো পুরাই সেরা নায়ক! যা রুবাই বাজিতে হাইরা মোর সা’দের লগে লাইন মারা শুরু করলাম!”
দাদীমার কথায় ড্রইংরুমের সকলে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে খেতে চলে গেলো। যেহেতু অনেক মানুষ সেহেতু নিচে পাটি বিছিয়ে খাবার খেতে বসলো সকলে। বড় চাচী, আসিয়া এবং জোহরা মিলে খাবার পরিবেশন করছে। সাথে তপাও যোগ দিয়েছে আজ। খাবারের মাঝে আবিদ বমে উঠলো,
—“ফুল খেয়েছে?”
—“না। ঘুমোচ্ছে ফুল। ডাকতে গিয়েও ডাকিনি ভাবলাম শরীর হয়তো খারাপ করছে।” বড় জেঠুর পাতে খাবার দিতে দিতে বললো বড় চাচী! এর মাঝে সা’দ এক লোকমা মুখে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
—“ফুল কে?”
কেউ কিছু বলার আগেই দাদীমা মুখ খুললো।
—“আমার নাতনি। আমার ছুডু পোলার প্রথম পক্ষের একমাত্র মাইয়া। ও(জোহরা) তো দ্বিতীয়পক্ষ। আর এই মাইয়াটারে(তপা) যে দেখতাসো ওয় জোহরার প্রথমপক্ষের মাইয়া!”
সকলের সামনে এভাবে বলায় জোহরা এবং তপা উভয়ই লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। দাদীমা মানুশজটাই এমন তার মুখের লাগাম নেই বললেই চলে। তপার তো রাগে মন চাচ্ছে দাদীমার মাথায় পাতিল দিয়ে জোরে মারতে। কিন্তু এতো মানুষ সাথে সা’দ উপস্থিত থাকায় না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। দাদীমা যেন এমন সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো। সা’দ আর তানজীল এতক্ষণে বুঝলো বিষয়টা। বড় জেঠু চাচীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“এ কী বলছো! মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ, না খেলে ওষুধ খাবে কী করে? যাও গিয়ে উঠাও ওকে আর খাইয়ে দাও।”
চাচী মাথা নাড়িয়ে সেহেরের জন্য কিছু খাবার আর পানি নিয়ে সেহেরের রুমে চলে গেলো। তানজীল নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে বললো,
—“কী হয়েছে ওনার? এনি প্রব্লেম?”
—“আর বলো না বাবা, জঙ্গলে পায়ে শিকল পেঁচিয়ে পড়ে ছোট বড় চট পেয়েছে। এর বেশি কিছু না!”
এই কথা শুনে সা’দ বিষম খেলো। তার মনে পরে গেলো সেই শিঁকল বাঁধার ঘটনাটা। আচ্ছা সা’দ তো তার মায়াবীনির গ্রামেই আছে। সে কী আবারও তার মায়াবীনিকে দেখতে পারবে? কেমন আছে সে? সুস্থ হয়েছে সে? এমন নানান চিন্তা সা’দের মাঝে ঘুরঘুর করছে। সা’দ জানে তার গ্রামের বাড়ি তার মায়াবীনির গ্রামেই কিন্তু তার মায়াবীনির বাড়িটা সে চিনে না। এটাও জানে না যে এটা সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ি।
খাওয়া-দাওয়া সেরে যে যার ঘরে চলে গেলো। যেহেতু এবাড়িতে মোট ৫ টা ঘরে সেহেতু সিদ্ধান্ত হলো সা’দ থাকবে রিমনের ঘরে, রুবাই এবং তানজীল থাকবে রুবাইয়ের ঘরে, তপার রুমে সেহের আর রিমন, জোহরার ঘরে তপা এবং জোহরা এবং সেহেরের ঘরে আসিয়া এবং জুবায়ের। দাদীমা জেঠুদের বাসায় থাকবে। এবং তাদের বাড়ি বেশ দূরেও নয়। শুধু এদিক থেকে সেদিক। এক লাফেই এ বাড়ি সে বাড়ি আসা-যাওয়া করা যায়। দাদীমাকে চেয়েছিলো সেহেরের সাথে তপার রুমে শোয়ানোর জন্য কিন্তু দাদীমা সাফ বলে দিয়েছেন সে উপরে উঠবে না, তার পায়ের ব্যথা বেড়েছে, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আর কী করার তার সে বাড়িতেই যেতে হয়েছে। সেহেরকে খাইয়ে দিতেই সেহের চাচীর কথামতো নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উপরে চলে গেলো। রিমনও তাকে সাহায্য করলো।
আশেপাশে সে কাউকে দেখেনি, তাই সুঁড়সুঁড় করে উপরে চলে গেলো। যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে রিমনকে জিজ্ঞেস করলো,
—“আচ্ছা আজ নাকি কার আসার কথা ছিলো, সে এসেছে ভাই?”
—“হ্যাঁ আপু এসেছে। উনি তো আমার ঘরে তাই আমি তোমার সাথে শুচ্ছি!”
—“ওহ!”
সেহের আর কিছু না বলে তপার ঘরে চলে গেলো। সব গুছিয়ে রেখে রিমনকে নিয়ে সেহের বিছানায় শুয়ে পরলো।
চলবে!!!