#ভালোবাসার_রোজ[পর্ব-১৩]
#আফরোজা_আনজুম
পুরো বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে। সন্ধ্যা হতেই আরমান ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে মেহমানের আনাগোনা বেড়ে বাড়িটা পরিপূর্ণ বিয়ে বাড়ির রূপ নিয়েছে। বিকেলের পর নিঠুল ভাইয়ের কণ্ঠটাও শুনতে পেলাম না;দেখা তো দূর। দুই হাতে মেহেদী পরে রুমে বসে ছিলাম। পাশে পিউ নিজ হাতে দিচ্ছে। হঠাৎ কোত্থেকে সানা দৌড়ে আসলো। এসেই আমার মেলে রাখা দুই হাতে মুখ লুকালো। সে মুখ তুলে সেখানে হাত দিয়ে দৌড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। তারপর শুরু হলো গলা ফাটিয়ে কান্না। তার আচমকা কাণ্ডে হতভম্ব হলাম আমি। নিজের হাতের অবস্থা দেখে আবারও তার দিকে নজর দিলাম। বেচারির পুরো মুখ রঙে লেপটানো। পিউও বোকার মতো তাকিয়ে আছে। সানার কান্নার আওয়াজ পেয়ে বড় আপু দৌড়ে আসলো। সে নিজের মেয়েকে ঐ অবস্থায় দেখে আমাদের দিকে তাকালো। আমার অবশ্য তখন করুণ। সানা মা’কে দেখে দৌড়ে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ” মাম্মি, আন্তি মুখ কালাল কলে দিছে।”
কথাটা বলে আবারও কাঁদতে থাকলো। আমারও কান্না এলো তার অবস্থা দেখে। আপু তাড়াতাড়ি বাথরুমে গেলো তাকে নিয়ে। আমাকে কাঁদতে দেখে পিউ বললো, ” হাত ধুয়ে আয় জলদি। কাঁদছিস কেন পাগলের মতো? ”
আমি ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে দাড়িয়ে আপুকে বললাম, ” আমি একদমই খেয়াল করি নি আপু। ও কোত্থেকে দৌড়ে এলো আর…।”
” হাত ধুয়ে ফেল। কাঁদছিস কেন? ”
” আমার তো ওর জন্য কষ্ট লাগছে। আমি নিজের জন্য কাঁদছি নাকি!”
আপু হেসে সানাকে বললো, ” আম্মু, তুমি কাঁদছো তাই তোমার আন্টিও কষ্ট পেয়ে কাঁদছে দেখো। একটা পাপ্পি দাও তো আন্টিকে! ”
আমি নিচু হয়ে বসতেই সে এগিয়ে এসে আমার চুল টেনে ধরে ‘পঁচা, পঁচা’ বলতে লাগলো। হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। আপু বললো, ” একদম তোর মতো হয়েছে দুষ্টু, অভিমানী। ”
” হুহ! কয়েকদিন পর আম্মু বলে ফেলবে আমার কাছ থেকে শিখেছে সব। অথচ জন্মের পর থেকে দেখাই হয় নি ওর সাথে।”
.
.
নিঠুল ভাইকে দেখতে পেলাম আটটা বাজছে তখন। আন্টি তার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো দেখলাম। আমিও গেলাম সেদিকে। আন্টি আমাকে দেখে বললো, ” রোজা, নিঠুর জন্য নাস্তা নিয়ে আয় তো!”
শুনে আমি দৌড়ে আসতেই নিঠুল ভাই বললো কিছু খাবে না সে। শুধু পানি নিতে। আন্টি বকাঝকা করছে শুনলাম। ছোট চাচীকে বলে রঙ চা বানিয়ে আনলাম। রুমে গিয়ে দেখি সে একাই বসে আছে। আন্টি নেই। আমাকে দেখে বললো, ” সকাল থেকে শান্তিতে বসতে পারি নি একটুও। তোর বাপ বিনা পারিশ্রমিকে খাটিয়ে নিচ্ছে। এখানেও নিঠু,ওখানেও নিঠু।”
” আব্বু তোমাকে ভরসা করে বলেই তো সবকিছুতে তোমাকে চায়।”
” হুম। ভরসা করে নিজের মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিলেই হয়।”
” তুমি এর আগে পারিশ্রমিকের কথা বললে কেন? টাকা লাগবে নাকি তোমার!”
” বাপের মতো টাকা ছাড়া কিছু চিনিস না তাই না! টাকা কেন লাগবে! তোর আব্বার আদরের মেজো মেয়েকে লাগবে। সারাজীবনের জন্য তোর আব্বার কাছ থেকে নিয়ে যাবো।”
তার কথায় লাজুক হাসলাম আমি। চায়ের কাপটা তার হাতে দিলে রঙ চা দেখে তার মুখে হাসি মৃদু হাসি দেখলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিলো। হাতের দিকে নজর পড়তেই মুখের চা বেরিয়ে এলো তার। আমার হাত টেনে ধরে লেপ্টানো মেহেদী দেখে হাসতে লাগলো শব্দযোগে। আন্টি এলো তখন। আন্টিকে দেখে আমি হাত টেনে নিতে চাইলে সে ধরে আন্টিকে বললো, ” আম্মা, ডিজাইনটা সুন্দর না!”
” ডিজাইনারের মুখটা দেখেছিস! আরও সুন্দর। ” আন্টি বিছানায় বসে বললো।
” কার কথা বলছো?”
” সানার কথা বলছি। ও-ই তো করেছে এগুলো। হাতে মুখে মাখিয়ে কেঁদেকেটে কী অবস্থা! ”
আন্টি তখনের ঘটনাটা বললো তাকে। শুনে সে হেসে উল্টো আমাকে পঁচাতে লাগলো। একটু পর আব্বু ডাকলে সে দৌড়ে চলে যায়। আমার সামনেই আব্বুকে নিয়ে এটা ওটা বলে অথচ সে নিজেই এগিয়ে যায় আব্বুর সব কাজে। আব্বুও ভরসা করে তাকে।
সাকিব এসে আমার কানে ফিসফিস করে বললো, তৌফিক ভাই আসছে। ”
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম, ” মানে! তাকে কেন আনলি? নিঠুল ভাই যদি দেখে না…।”
” নিঠুল ভাইয়ের ভয় দেখাস না। সে এমন করে কেন তোকে নিয়ে! আমি তো এমনিই এনেছি। আত্নীয় স্বজনের বিয়েশাদি হলে এভাবে যাই আমরা। তুই নাস্তা নিয়ে আয় ওদের জন্য। ”
” পারবো না আমি। ” সোজাসাপ্টা বললাম।
সে শুনেও না শোনার মতো করে বললো, ” চারজন এসেছে। জলদি নিয়ে আয়।”
ট্রে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম নিঠুল ভাই আসছে। আমাকে দেখে রাগী গলায় বললো, ” দেখেছিস কেমন বেয়াদব তোর খালাতো ভাই! তৌফিক্কাসহ তার চামচাগুলোকে নিয়ে এসেছে। সাহস তো কম না তার।”
” সমস্যা কী? বন্ধুদের নিয়ে এসেছে ও। এভাবে নাকি যায় ওরা।”
” তুই কোথায় যাচ্ছিস এসব নিয়ে? ”
আমি ভীতু গলায় বললাম, ” সাকিব এসে বললো ওদের জন্য…। ”
” মেহমানদারী করা হচ্ছে না! কোনো কিছু দেওয়ার দরকার নেই। না খেয়ে ফিরে যাবে। সাকিপ্পার প্রেস্টিজ কোথায় যায় দেখবো।
আবার জিজ্ঞেস করলো, ” ওদের সামনে গিয়েছিস?”
” না তো।”
” তোকে দেখেছে?”
না বললাম আমি। সে বললো, ” একদম সামনে পড়বি না ওদের। নজর খারাপ এক একটার।”
” আচ্ছা। এখন এগুলো তো দাও! মেহমান তো ওরা! ”
” যা তুই। ওদের নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। ” ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথাটা বলেই ট্রে হাতে নিয়ে গেলো সেদিকে। আশ্চর্য হলাম আমি। কোনো দোষ নেই তাও আমার উপর দেখালো সব রাগ।
.
.
শাড়ি পরে তৈরি হয়ে ছাদের দিকে গেলাম। গান বাজনায় ছাদ ফাটিয়ে ফেলছে। আব্বু সামনে পড়তেই লজ্জায় পালাতে চাইলাম। আব্বু হেসে এগিয়ে এসে বললো, ” মাশআল্লাহ। আমার মেয়েটাকে দেখছি শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে।”
মাথা নিচু করে রইলাম আমি। শাড়ি পরে বাবার চাচাদের সামনে যেতে কেমন যেন লাগে। আব্বু বুঝতে পেরে আমাকে যেতে বললো। ছাদে সবাইকে দেখলাম মজা করছে। নিঠুল ভাই চেয়ারে বসা ছিল। তার দিকে নজর পড়তেই হাসলো সে। তার পরনে নীল পান্জাবি। চোখ সরিয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি। ভয়ে আছি যদি কেউ বুঝে যায়! আমার পরনেও নীল শাড়ি। অন্যরা মিল রেখে হলুদ শাড়ি পরেছে আর ছেলেরা হলুদ পান্জাবি। সবার থেকে আমি আর নিঠুল ভাই আলাদা আর শুধুমাত্র দুজনেই ম্যাচিং। এটা তারই প্ল্যান। শপিংয়ের সময় সে-ই তার পান্জাবির ছবি দিয়ে বলেছে ঐ রঙের শাড়ি নিতে। আমি না করলেও পরে কী মনে করে নিয়ে নিই। ভয় লাগছে সবার নজরে পড়বে সেটা।বড় ভাইয়ারা দেখে দুষ্টুমি শুরু করেছে বড় হয়ে গেছি, এরপর আমার বিয়ের সানাই বাজবে এসব বলে বলে। সবার সামনে পিউ বলে বসলো, ” তুই আর নিঠুল ভাই তো পুরোপুরি ম্যাচিং হয়ে গিয়েছিস। এটা কীভাবে হলো?”
আমি ঢোক গিললাম ভয়ে। নিঠুল ভাই কিছু জানে না এমন অবাক হয়ে বললো, ” হ্যা, তাই তো! দুজনে কেমন মিলে গেলাম। এটা কীভাবে?”
আরিফ ভাইয়া বললো, ” যা-ই বলো দুজনকে কিন্তু কাপল মনে হচ্ছে। পাশাপাশি দাঁড়াও তো একটু দেখি!”
তাড়াতাড়ি অন্যদিকে সরে গেলাম আমি। নিঠুল ভাইয়ের আশেপাশেও গেলাম না আর। তার চোখাচোখি হয়েছি অনেকবার। সানা নিচের রুমে ঘুম ছিলো। অনেকক্ষণ পর আপু বললো সানাকে রুমে গিয়ে দেখে আসতে উঠেছে কি না। সিঁড়ির শেষ ধাপে নেমে পেছনে ধুপধাপ আওয়াজ পেয়ে ফিরে দেখলাম নিঠুল ভাই নামছে। সে নেমেই আমার হাত টেনে পাশের রুমে নিয়ে যায় আমি কিছু বুঝে উঠার আগে। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, ” এখানে নিয়ে এসেছো কেন? কেউ দেখলে কী হবে? ”
” শাড়ি পরে, সেজেগুজে ঢং করে করে বড়দের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিস। আমাকে দেখেও দেখছিস না কী ব্যাপার?”
বলতে চাইলাম তোমার আশেপাশে থাকি আর সবার নজরে পড়ি না! কিন্তু বলতে পারলাম না। এতো কাছে দাঁড়িয়ে সে! চোখে তুলে একনজর তাকালাম তার দিকে। নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে আমিই নামিয়ে নিলাম চোখ। শাড়ির আঁচল হাতের মুঠোয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বললাম, ” সরো। আমি যাবো।”
সে সরলো না। আচমকা আমাকে টেনে সামনে এনে শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে দিলো। লজ্জায় আমি পিছিয়ে যেতেই সে এক হাত দেয়ালে দিয়ে আরও কাছে এসে দাঁড়ালো। মৃদুস্বরে বললো, ” নীল শাড়িতে তোকে এতো সুন্দর লাগবে বুঝি নি। ঘোমটা দেওয়ায় এখন একদম বউয়ের মতো লাগছে। আমার বউ। সবাই কী বলছিল শুনেছিস! আমাদের নাকি কাপলের মতো লাগছে।”
তার ফিসফিস কণ্ঠে কেঁপে উঠলাম আমি। লজ্জায় পেছনের দিকে সরে আসলে সে দেয়ালে এক হাত দিয়ে আরো এগিয়ে আসলো৷
আমি নিচু স্বরে আবারও বললাম, ” কেউ আসবে। আমি যাবো।”
” উহুম। আমি দেখবো তোকে।” ঘোরলাগা কন্ঠে বললো সে। মুখটা কাছে আনতেই দুই হাতে নিজের মুখ ঢাকলাম আমি। অনেকক্ষণ তার সাড়াশব্দ না পেয়ে হাত সরালাম। সে সামনে থেকে তেড়ে আসার মতো করে এসে চুমু খেয়ে নিল আমার গালে। চোখ বড় বড় করে তাকালে আরেক গালেও চুমু খেয়ে নিল। তখনই পিউর কণ্ঠ শুনতে পেলাম রুমের বাইরে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। নিঠুল ভাইয়ের কোনো ভাবান্তর নেই। সে আমার গালে আরও একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো। এদিকে ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিজেকে ঠিক করে রুম থেকে বেরুতেই পিউর সামনে পড়লাম। সে আমাকে দেখেই প্রশ্ন শুরু করলো, ” এখানে কী করছিস তুই? সেই কখন পাঠালো সানাকে দেখতে। এই রুমে কী করছিলি?”
” দেখেছি তো, দেখেছি ওকে। ঘুমাচ্ছে ও। যাওয়ার সময় দেখলাম এই রুম লাইট জ্বলছে তাই।” আমতা আমতা করে বললাম আমি।
সে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো।বললো, ” নিঠুল ভাইকে দেখলাম ছাদের দিকে যাচ্ছে। তখন তোর পিছু পিছু নেমে এলো।”
” খালি নিঠুল ভাই, নিঠুল ভাই করিস কেন? আমি জানি নাকি তার খবর! সে কখন এলো, কখন গেলো সব দেখি তুই খেয়াল করিস।” খানিকটা রাগী গলায় বললাম যাতে সে অন্যকিছু মনে না আনে।
” এভাবে রাগছিস কেন তুই? আমি তো এমনিতেই জিজ্ঞেস করছি।”
আমি কিছু না বলে রুমে গেলাম সানাকে দেখতে গেলাম। দেখলাম সে বিছানায় বসে কাঁদছে। দৌড়ে গিয়ে কোলে নিলাম। আসার সময় পিউ বললো, ” আমার মনে হচ্ছে নিঠুল ভাইয়ের সাথে তোর কিছু চলছে। তার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া ছবিটাতে হাতগুলো তোদের দুজনের। তোর রিংটাও আছে আঙুলে। আজকে দেখলাম দুজনে ম্যাচিং কাপড়, এতক্ষণ নিঠুল ভাই নিচে ছিল। এর মানে কী দাঁড়ায়? ”
” তোকে আগেও বলেছি ঐ হাতটা আমার না। তার তো গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই। কার হাত বুকে নিয়ে ছবি তুলেছে কে জানে! এমন রিং ফুটপাতে হাজার হাজার পাওয়া যায়। শুধু আমার হাতেই কেন থাকবে! আর ম্যাচিংয়ের ব্যাপারটাও অজান্তে। এখন তুই বিশ্বাস করলে কর না করলে নেই।” বেশ জোর গলায় কথাগুলো বললাম। নিজের মিথ্যে কথায় নিজেই অবাক হলাম। পিউ বিশ্বাস করে নিয়েছে। সে গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ” আচ্ছা, আচ্ছা রাগ করিস না। নিঠুল ভাই যে তোকে একদমই সহ্য করতে পারে না, তোদের ঝগড়ার সম্পর্ক তা তো আমি জানি। তাও এমনি জিজ্ঞেস করলাম। ”
রাগে নিঠুল ভাইয়ের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো। সেদিন কাপ্তাই লেকে যখন ঘাসে শুয়ে আমার হাত টেনে নিয়েছিল তখনের তুলা ছবিটা ফেসবুক ওয়ালে ছবি দিয়ে রেখেছে বারণ করা সত্বেও। যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে। তাকে বললে সে বলে ‘আমার অ্যাকাউন্টে আমার যা ইচ্ছে তা দেবো, আমার যেটা মনে হয় সেটাই করবো। তুই লুতুপুতু প্রেমিকাদের মতো প্রেমিকের জীবনে হস্তক্ষেপ করছিস!”
আর আজ! সে যেটা বলে সেটাই। সেদিন সবাইকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাবে বলে কী ভয়টাই না দেখিয়েছিল।
সবার ছবি তুলতে ব্যস্ত সে। আরমান ভাইয়া আমাদের ডেকে তার পাশে বসালো। ছবি তুলা শেষে আরিফ ভাইয়া আমাকে নিঠুল ভাইয়ের পাশে দাঁড় করিয়ে তার হাত থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে বললো, ” দুজনে দাঁড়াও। ছবি তুলি তোমাদের। তোমাদের দেখে পারফেক্ট কাপল মনে হচ্ছে। ”
লজ্জায় সরে দাঁড়ালাম আমি। নিঠুল ভাই মহাখুশি। এটাই চাচ্ছিল সে অনেকক্ষণ ধরে। কয়েকবার কানে কানে বলেছিলও, ” আমাদের দুজনেরও উঠাবো ছবি।”
না না বলে বারণ করেছিলাম। আপু বললো, ” লজ্জার কী আছে? দাঁড়া সুন্দর লাগছে দেখতে। ”
আরিফ ভাইয়া সেখান থেকে সরে নিরিবিলি জায়গায় যেতে বললো। সাথে আপুও বললো। নিঠুল ভাইয়ের কোলে সানা ছিল। সে আমাকে দেখেই মারতে চাইলো। আপু তাকে নিতে চায়লে আরিফ ভাইয়া বললো, ” ও থাক নিঠুল ভাইয়ের কোলে। ছবি সুন্দর আসছে। হ্যাপি ফ্যামেলির মতো লাগছে। ”
নিঠুল ভাইকে বললো, ” ভাই, ছবিগুলো তোমার সুইটির কাছে গেলে কী হবে ভেবে দেখেছো? বুঝতেই পারবে না এগুলো এমনিতে ফটোশুট করা।”
নিঠুল ভাই গম্ভীর স্বরে বললো, ” ওর কাছে যেন না যায় এগুলো। দেখলে মহা সমস্যা হবে।”
তারপর পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, ” এভাবে ছবি সুন্দর আসবে। তোল এবার।”
মনে মনে হাসলাম আমি। কী চালাক সে! সানাকে ছাড়াও অনেক ছবি তুললো দুজনের। নিঠুল ভাই এমনভাবে বললো আরিফ ভাইয়া বুঝতেই পারে নি। সে চিন্তায় আছে ছবিগুলো সুইটির চোখে পড়লে নিঠুল ভাইয়ের কী হবে তা নিয়ে।
এতোবার স্যরি বলার পরও সানার রাগ ভাঙাতে পারলাম না। লাল লাল মুখে চোখ বড় বড় করে তাকায় আমাকে দেখলেই। নিঠুল ভাইয়ের কোল থেকে আসছেই না। নিতে গেলেই নাক মুখ খামছে ধরে। নিঠুল ভাইয়ের সামনেই সে আমার চুল টেনে ছিড়ে নিল হাতে। কোনোমতে ছাড়িয়ে নিয়ে নিঠুল ভাই বললো, ” কী রাগ বাবা! একদম তোর মতো হয়েছে। রাগ, অভিমান সব পেয়েছে তোর মতো।”
এবার আমি চলে আসতে চাইলাম। সে সানাকে জোর করে আমার কোলে তুলে দিয়ে বললো, ” এখন থেকেই সামলানো শিখ। আমার বাচ্চারাও তোর মতো এমন হবে দেখিস। তাই আগে থেকেই শিখে রাখ।”
সানাকে সামলাতে পারলে তো! এতো সান্ত্বনা দিলাম তাও সে গলা ফাটিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। এদিকে আমার নিজের ভবিষ্যৎ ভেবেই ভয় লাগছে। কীভাবে সামলাবো, কী করবো!”
বিয়ের দিনটাও কেটে গেলো আনন্দে। সবার সামনেই কথা বলা, হাত ধরা, ছবি তোলা সবকিছু কৌশলে করে গেলো নিঠুল ভাই। তবে পিউর চোখে কয়েকবার পড়েছে। সে বুঝতে পারছে না আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা কী! এই নিঠুল ভাই কথা শোনালো- রাগী চোখে তাকালো, আবার এই হাত ধরলো- প্রেম চোখে তাকালো। বুঝবে কীভাবে পিউ!
#চলবে…