বাসন্তী
পর্ব-১১
লিমু
-” পুষ্প কলিকে ডাকতে গিয়ে দেখে কলি বাথরুমে,এই মেয়ে যে একটু পর পর বাথরুমে কি করে। কোন প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যায় না।
-” হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ ঘষতে লাগলো পুষ্প,তখন দেখলো প্রণয় আবার ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
-” এবার পুষ্পর নিজের প্রতি চূড়ান্ত রাগ হলো,হচ্ছেটা কি ওর সাথে।
-” পুষ্প রাগে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,কি করছেন এখানে?
আমাকে হেল্প করতে এসেছেন,নাকি বিরক্ত করতে?
-” আমার মাথাটা কিন্তুু খারাপ হয়ে গেছে অলরেডি,আর খারাপ করবেন না দয়া করে। আর কি তখন থেকে আমার চোখের সামনে ঘুর ঘুর করছেন,ভূত নাকি।
-” কিন্তুু প্রণয় কোন কথা বলছেনা,চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর ঠোটের কোণায় হাসিটা ঝুলে আছে।
-” প্রণয় মনে মনে বললো,ম্যাম কি আমাকে কল্পনা ভাবছে, ও মাই গড!
-” জলজ্যান্ত মানুষটাকে তার কল্পনা মনে হচ্ছে,মাথাটা কি গেল নাকি একেবারে।
-” আচ্ছা তারমানে সে আমাকে নিয়ে ভাবে সবসময়,কারন কাউকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবলেই এমনটা হয়। মনে হয় সে পাশেই আছে,কাছেই কোথাও আছে। অথচ সেটা হ্যালুসিনেশন, কিন্তুু এখনের টা তো তা নয়। তবে ম্যাম কেন সেটা ভাবছে,যেখানে এখন আমি সশরীরে উপস্থিত তার অক্ষিসম্মুখে।
-” আচ্ছা কেমন হয়, যদি আমি কিছু করে তাকে জানান দেই যে এটা ভ্রম নয়,সত্য।
-” তার রিএকশান কি হতে পারে,এটা ভেবে প্রণয় একটা ছোট্র হাসি লুকালো। পুষ্পর এরকম অবস্থা দেখে প্রণয়ের বেশ লাগছে, একইসাথে পেট ফেটে হাসি আসছে।
-“পুষ্পর মাথার পিছনে একটা হাত,আর চিবুকের নিচে একটা হাত রেখে পুষ্পর যে চোখ জ্বালা করছিল সেখানে আস্তে করে ফুঁ দিল প্রণয়। সেই মায়াবী চোখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল প্রণয়ের,সেই প্রথম দিনের মতো। কারো চোখের গভীরতা এত তীব্রভাবে কাউকে আকর্ষণ করতে পারে,তা এই মায়াচন্ডীকে না দেখলে বুঝতাম না।
-“এতো হৃদয় দিয়ে মারার আগে,গভীর চোখের সমুদ্রে ডুবিয়ে মারবে আমাকে।”
-” পুষ্প এতক্ষণ ভাবছিল এটা ওর কল্পনা,কিন্তুু এবার হুট করে প্রণয়ের এমন কাজে ও ফ্রিজ হয়ে গেল। তারমানে কি সে সত্যি এখানে,নাকি তার ভূত।
কিন্তুু জীবিত মানুষেরও কি ভূত থাকে নাকি,এটা ভেবে পুষ্পর মাথা ঘুরাচ্ছে। পুষ্প ছিটকে প্রণয়ের থেকে একহাত দূরে সরে গেল।
-” পুষ্প ভূত ভূত বলে লাফাতে লাগলো,প্রণয় তাড়াতাড়ি পুষ্পর মুখ চেপে ধরলো। পুষ্প আরো ভড়কে গেল এ কাজে,ভয়ে ওর আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে।
প্রণয় ভেবে পাচ্ছে না দিনের দুপুরে একটা মানুষকে কি করে ভূত ভাবতে পারে কেউ,আমার চেহেরা কি এতোটাই খারাপ!
পুষ্পর মুখ চেপে ধরেই প্রণয় ড্রেসিংটেবিল এর আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। পুষ্প ভয়ে কাঁপছে আর চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে,বেচারী এখনো শকডে আছে।
-” প্রণয় পুষ্পর মুখ ছেড়ে দিয়ে ওর পিছনে একটু সরে দাঁড়ালো। পুষ্প তখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে,আর প্রণয় একধ্যানে আয়নার ভিতর পুষ্পকে দেখতে লাগলো।
-” পুষ্প একটা সুতি সাদাকালো প্রিন্টের থ্রিপিছ পরা,ওড়না কোমড়ে গুঁজা,চুল খোঁপা করা। একদম সাদামাটা যাকে বলে,ঠিক তেমন। কোন সাজ নেই,এমনকি চোখে কাজল পর্যন্ত নেই। তবু ওর চোখে যেন কি আছে,গভীর মায়া। চোখের পাপাড়ি গুলো ঘন কালো এবং একটু বড় বড়,যেটা ওর চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম একটা কারন। চোখের পাপড়ি ঘন কালো বড় হলে যেকোন মেয়েকে একটু বেশিই আকর্ষণীয় লাগে।
আর সেই মানুষটা যদি হয় পছন্দের কেউ,তবে তো কথাই নেই।
-“চোখ থেকে চোখ সরানো দায়
ঐ চোখে মন হারালাম
আমার হবে কি উপায়!”
-” কাটা চুলগুলো কানের পাশ থেকে সরে গেছে আর খোঁপাটা বিপদ সীমার উপর আছে,কারন যেকোন সময় খুলে যাবে। প্রণয় এটা ভাবতে ভাবতেই খোঁপাটা খুলে, অবাধ্য চুলগুলো ধীরে ধীরে পিঠময় ছড়িয়ে পড়লো। প্রণয় অবাক নয়নে সেই দৃশ্য অবলোকন করলো,এই মেয়ে তো প্রণয়কে অসুস্থ করে দিবে,মনের অসুখে।
-” হঠাৎ প্রণয় পুষ্পর পিছন থেকে একটু সাইডে সরে দাঁড়ালো।
পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে ওর কানের কাছে গিয়ে বললো……
নয়ন যাকে খুঁজে
নয়ন সম্মুখে সে দাঁড়িয়ে
কি হবে মুখ লুকিয়ে
দেখ না একটু তাকিয়ে।
____ফুল বাসন্তী।
-” এটা শুনে পুষ্পর শরীর পুরো জমে গেল,একটু চোখ খুলে তাকালো,দেখলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে । এবং তার পাশে আরো একজন দাঁড়িয়ে আছে,তার মানে কোন ভূত নয়,বাস্তব!
কারন ভূত-প্রেত নাকি আয়নার সামনে দাঁড়ালে চেহারা দেখা যায় না,কিন্তুু এতো সুস্পষ্ট সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্প আর কিছু ভাবতে পারছেনা,ওর মাথা ঘুরাচ্ছে।
তারমানে এতক্ষণ সে ভুল ভাবছিল,এটা বাস্তব কোন হ্যালুসিনেশন নয়।
-” কয়েকদিন ধরে ওর সাথে এমন হচ্ছিল,মানে যেখানে সেখানে প্রণয়কে দেখতে পাচ্ছিল,কি একটা বাজে অবস্থা। পুষ্পর নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছিল,হচ্ছেটা কি ওর সাথে!
-” কিন্তুু নিজের সাথে রাগ করা গেলেও,নিজের মনের সাথে,অনুভূতির সাথে তো রাগ করা যায় না।
আর আজকে সে সত্যি পুষ্পর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,পুষ্প আর কিছু ভাবতে পারছেনা। সে তো চলে গিয়েছিল,তাহলে ফিরে আসার কি মানে?
আর যদি ফিরেই আসবে,তাহলে চলে যাওয়ার নাটকটার কি মানে?
-” পুষ্পর মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে,ও হঠাৎ ধপ করে যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই বসে পড়লো। প্রণয় এটা দেখে একটু ভয় পেয়ে গেল।
#চলবে……