বাসন্তী
পর্ব-০৬
লিমু

-” কোথাও একটা পড়েছিলাম,প্রেম ভালোবাসা হলো পোকা খাওয়া গাছের ডালের মতন। কখন যে কার ঘাড়ে ভেংগে পড়ে সেটা বুঝা মুশকিল। ঐ পোকা খাওয়া ডালটা বোধহয় গতকাল আমার ঘাড়ে পড়ে গেছে,তাতে আমার কোন দোষ নেই। সব দোষ ঐ লেখকের যিনি এই কথাটা বলেছিলেন।
-“ইতি প্রেমজ্বরে আক্রান্ত রোগী প্রণয় মেহবুব।”

-” এটা পড়ে কলি হো হো করে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো,তারপর নিজেই চুপ করলো। কারন এত রাতে হাসির শব্দ শুনে মা ভাবতে পারে তার মেয়ের মাথা গেছে পুরো।
-” কলি হাসছে আর পুষ্প রাগে ফুসছে,হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো” আই লাভ ইউ।”
-” পুষ্প হকচকিয়ে গেল,এটা কি ওর হ্যালুসিনেশন! ঐ ত্রিপলি কি এখনো ওর মাথায় ঘুরছে,নাহ একদম না। পুষ্প কোনমতেই এমন একটা অসভ্য ছেলের কথা ভাববেনা,কখনোও না। পুষ্প ওর হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো,আর চোখ বন্ধ করে রাখলো।
-” কলি পুষ্পর অবস্থা দেখে হেসে দিল,আর মনে মনে বললো আবি তো জ্বালানো শুরু হুয়া বু,আগে আগে দেখো হোতা হে ক্যায়া। ছোট বোন বড়বোনকে পেয়ার শিখাবে,হাহাহা….

-” কলি একদম পুষ্পর কানের কাছে গিয়ে টেডিটার পেটের মধ্যেখানে প্রেস করলো,আর সেটা সাথে সাথে বলে উঠলো, আই লাভ ইউ।
-” এবার পুষ্প চরম বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললো,ও ভাবছে এটা ওর হ্যালুসিনেশন।
কিন্তুু চোখ খুলে দেখে কলির হাতে টেডিটা, আর কলি বারবার ঐটার পেটের মধ্যেখানে প্রেস করছে, আর ঐটা আই লাভ ইউ বলছে।

-” পুষ্প এতক্ষণে বুঝতে পারলো বিষয়টা,তার মানে এটা তার হ্যালুসিনেশন ছিল না। তখন রাগে ঐ টেডিটার পেটের মধ্যেখানে প্রেস করেছিল,তাই ঐটা আই লাভ ইউ বলে উঠেছিল। ঐ ব্যাটা নিজে যেমন অসভ্য,বেহায়া ঠিক তেমন একটা জিনিস দিয়েছে,অসভ্যের মত আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ করতে থাকে।

-” এটা বলে পুষ্প কলির হাত থেকে টেডি টা নিয়ে ফেলে দিতে চাইলো,কিন্তুু তার আগেই কলি দৌড় দিল। আর পুষ্পকে বলতে লাগলো,বু এটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে প্লিজ,আমি রাখি। তোমার সামনে কখনো বাজাবো না,প্লিজ।
-” কলি আমি কিন্তুু এসব একদম পছন্দ করি না,ঐ ত্রিপলির সাহস কত এত রাতে জানালা দিয়ে এসব পাঠায়। কিন্তুু ব্যাটা আমার রুম কোনটা সেটা বুঝলো কি করে,তাই তো ভেবে পাচ্ছি না।

-” আরে বু ভালোবাসার টান থাকলে এমনি বুঝা যায় বুঝলি।
-” ফাজলামি করার জায়গা পাস না, ভালোবাসার টানে আমার রুম চিনে ফেলেছে তাই না। এমন ভালোবাসা কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে,আর এমন কিছু শুধু গল্প,সিনেমাতেই সম্ভব,বাস্তবে না বুঝলি।
-” ওকে বুঝলাম,বাট চিনলো কি করে সেটা বুঝতে পারছিনা।
-“সকালে কবির কে নিয়ে যখন পিঠা খেতে গেছিলাম,তখন ঐ ত্রিপলির সাথে দেখা,ব্যাটা নিশ্চিত আমাকে ফলো করছে।
তাই বাসায় যখন ঢুকেছি তখন দেখেছে,তাই চিনে ফেলেছে।
-” কলি কতক্ষণ কি ভেবে বললো,কিন্তুু সে যদি তোমাকে ফলো করতো তাহলে কালকেই তোমার পিছন পিছন আসতো,আজকে ভোরবেলায় নিশ্চয়ই আসতো না। ঠিক কি না বল?
-” পুষ্প একটু ভেবে বললো,আরে কালকে পিছনে না আসলেও এটাতো দেখেছে যে আমি কোন গলিটাতে ঢুকেছি।
-” তুমি বুঝলে কি করে?
-” না বুঝার কি আছে,আমি যখন গলির মোড়ে ঢুকে পড়ি, তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়। ভেবেছিল আমি হয়তো পিছন ফিরে তাকাবো, সেই আশায় দাঁড়িয়েছিল। ঐ যে তোর শাহরুখ খানের পালাট ওয়ালা সিনের মতো ভাবছিল মে বি।
-” কিন্তুু বু,কথা হলো তুমি না তাকালে দেখলে কি করে সে তোমাকে যতক্ষণ দেখা গিয়েছে ততক্ষণ দাঁড়িয়েছিল।
-” পুষ্প এবার কি বলবে বুঝতে পারলনা,এই মেয়েটা সবসময় এভাবে ওকে পেচে ফেলে দেয়। তাই কোনরকমে বললো,আরে আমি গলির মোড়ে ঢুকে গিয়ে আবার চেক করেছিলাম পিছনে আসছে কিনা,কিন্তুু সে তখন নিচের দিকে তাকিয়েছিল। তাই আমাকে আর দেখতে পায় নি,ব্যাস।

-” কলি কেমন একটা চাহনি দিল পুষ্পর দিকে,যেটা দেখে পুষ্প রাগী চোখে তাকালো কলির দিকে।
-” কলি পুষ্পকে পাত্তা না দিয়ে বললো,বু তবু কিন্তুু প্রশ্ন থেকে যায়।
-” আবার কি লেডি আইনস্টাইন?
পুষ্প কলিকে লেডি আইনস্টাইন ডাকে। একে তো পুষ্পর ঝাঁকড়া চুল,যেটা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। কুকড়া চুল সাধারনত বেশি লম্বা হয় না,বা হলেও বুঝা যায় না।
-” কলি একটা ভাব নিয়ে বললো,মানলাম বাসা চিনেছে কিন্তুু তোমার রুমটা চিনলো কি করে? তিনতলা বাসা, এতগুলো রুম সেখানে তোমার রুমটা চিনলো কি করে?
-” এবার পুষ্প ভাবনায় পড়ে গেল,ঠিকই তো বলেছে, রুম চিনলো কি করে ত্রিপলি!
.

-” হুট করে কলির ফোনটা বেজে উঠলো,কলি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশের কথাটা শুনেই কল কেটে দিল। কেটে দেয়ার আগে শুধু এতটুকু বললো,যে তোকে সলুউশনটা টেক্সট করে দিচ্ছি।

-” কারন পুষ্প যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় কলটা কে দিয়েছিল,তাহলে কলির বারোটা বাজাবে। তাই কলি চুপচাপ কেটে পড়লো পুষ্পর কাছ থেকে। আর চিরকুট আর টেডি দুইটাই কলি ওর কাছে রাখলো,কারন পুষ্প ঐগুলো জীবনেও নিজের কাছে রাখবেনা। পুষ্প আড়চোখে তাকালো কলির দিকে,তখন কলি হেসে বললো আরে গিফটটা যখন এত কষ্ট করে দিয়েছে, রেখে দিই না। এইটা রাখলেই তো আর তুমি তার প্রেমে পড়ে যাবে না,তাই না।
-” তুই কি লোভী রে কলি,সামান্য একটা ছোট্র টেডি এইটার লোভ সামলাতে পারলিনা। আর আমি এত সহজে প্রেমে পড়ার মেয়ে নয়,তুই অন্তত সেটা ভালো করে জানিস। আমার এত আবেগ নেই।

-” কলি জোর করে একটা হাসি দিল শুধু,আর মনে মনে যেটা বললো সেটা যদি পুষ্প জানতো।
-” পুষ্প কলির কথার পাত্তা না দিয়ে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো,কারন সকালে কলেজে যাওয়ার আগে টিউশনি আছে। আর বিকাল থেকে সন্ধ্যা আরো দুইটা টিউশনি করায়।

-“এটাতো মধ্যবিত্ত মেয়েদের একটা আয়ের উৎস,আর পুষ্পর পরিবারের অবস্থা আরো নাজুক। যেহেতু বাবা নেই,আর ওর মা ওদের বাসার তৃতীয় তলায় যে পার্লারটা আছে সেখানেই কাজ করে। আর নিজের সেলাই মেশিন আছে সেটা দিয়ে আশেপাশের যারা আছে তারা তাদের কাপড় সিলি করে নেই বাসাতে এসেই। এভাবেই চলছে কোনরকম,মা মেয়ে মিলে চালিয়ে নিচ্ছে কোনভাবে।
-” মধ্যাবিত্ত পরিবারগুলো কতটা কষ্টে জীবন পার করে,তা বাইরে থেকে কেউ বুঝবেনা। মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটা মেয়ে জন্ম থেকেই নিজের চাহিদা কন্ট্রোল করতে শিখে যায়,কাউকে বলে দিতে হয় না। এরা ম্যাচিওরিটি নিয়েই জন্মায়।
যদিও ওর বাবা থাকাকালীন পুষ্পদের অবস্থা এমন ছিল না,যথেষ্ট ভালো ছিল। কিন্তুু সেটা এখন অতীত,আর অতীতে কি ছিল সেটা ভেবে এখন লাভ নেই।

.
কলি ম্যাসেজ কিনে প্রণয়ের সাথে চ্যাটিং শুরু করলো।
-” আপনি আমার বু কে সত্যিই ভালোবাসেন?
-” একদম না।
-” সোজাসুজি কথা বলুন,যদি আমার আপনাকে যোগ্য মনে হয় তাহলে আমি আপনাকে হেল্প করবো কিনা ভেবে দেখবো।
-” তার মানে কি আপনি আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন?
-” ধরুন তেমনটাই।
-” ওকে লেটস স্টার্ট।
-” আচ্ছা তার আগে এইটা বলুন,আপনি আমাদের রুম কোনটা চিনলেন কি করে?
-” ঐটা বলা যাবেনা,একটু কমন সেন্স কাটিয়ে বের করেছি।
-” হুহ,ঢং। আচ্ছা আমি কে সেটা বুঝলেন কি করে?
-” ঐটাও কমনসেন্স খুকি।
-” আসছে আমার কমনসন্সের সাগর রে।
-” আসলে সকালে তোমাদের বাসার সামনেই দাঁড়িয়েছিলাম,যদিও জানতাম না ঐটা তোমাদের বাসা। তখন ঐ পিঠাওয়ালীর কাছ থেকে তোমাদের সম্পর্কে একটু জেনে নিলাম। অবশ্য তোমাদের কারো নামই জানিনা। তোমার নাম কি?
-” কলি,আপনি বুবুর নাম জানেন না?
-” নাহ,মায়াচন্ডী নাম বলে নি,জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-” মায়াচন্ডী কে?
-” তোমার বোন। আমি এই নাম দিয়েছি।
-” এমন অদ্ভুত নাম দেয়ার কারন?
-” সে অনেক কাহিনী।
প্রায় এক ঘন্টার মতো কথা হলো দুজনের,কলির পরীক্ষায় প্রণয় উত্তীর্ন হলো।

.
অনেক্ষণ ধরে পুষ্প দেখছে একটা গাড়ি ওকে ফলো করে করে পিছন পিছন আসছে।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here