শুভ্রনীড়
পর্ব১৬
#Shamu_Choudhury

ইউভী সাবধানতার জন্য আমানের হেকলার কোচ এইচকে এমজি৪ এমজি ৪৩ মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত হয়ে নেয়। কারণ হাতিয়ার ছাড়া সেখানে যাওয়া একদম ই ঠিক না। সবাই দরজার সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে। ভিতরের বিশ্রী গন্ধে আমান আর শ্রাবণ এর বমি এসে যায়। ইউভী হেসে বলে এই গন্ধ মানুষের লাশ পঁচা গন্ধের কাছে কিছুই না৷ এই বলে তারা এগোতে থাকে৷

তারা লুকিয়ে দেখে সামিহা কি যেন খাচ্ছে৷ সেখানে কাউকে বাঁধা আছে নাকি আবছা আলোয় বোঝাও যাচ্ছেনা। তবে তার পাশে কাজের লোক মেঝে তে অজ্ঞাত অবস্থায় পরে আছে। আমান আর শ্রাবণ এগোতে চাইলে ইউভী আটকিয়ে বলে শুভ্রা কে এমন এক যন্ত্রের সাথে রাখা আছে যে যন্ত্রটাতে হাতে কিছু করা যাবে না সব কিছু রিমোট কন্ট্রোল। যন্ত্র টা এমন ভাবে বানানো হয়েছে যে প্রতিটা অঙ্গ তার দ্বারা সমান ভাবে এক নিমিষেই কাটা যাবে। দেখা গেল আমানদের দেখে প্রধান ভয় পেয়ে রিমোটে প্রেস করলো। এতে হিতে বিপরীত হবে। তাই যা করার ভেবে চিন্তে করা লাগবে।
তারা সবাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে৷ সামিহাকে তার বাবা বলে প্রথমে শুভ্রার শির লাগবে। তাই শুভ্রাকে ছাড়িয়ে আনতে৷রিমোট নিচে রেখে সামিহা উঠে দাঁড়ায় আর হাতে নেয় চোখ ধাধানো ধারালো এক অস্ত্র। শুভ্রা আর মিরা সহ আমানরাও ভয়ে পেয়ে যায়। সামিহা শুভ্রার মাথার কাছে অস্ত্র ধরতেই ইউভীর মানা সত্ত্বেও আমান প্রধানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আমানকে দেখে প্রধান হচকচিয়ে উঠে। আমানের হাতে কোন অস্ত্র নেই যদি প্রধান আমানের কিছু করে ফেলে ভয়েয় শ্রাবণ আর ইউভীও বেরিয়ে আসে। মিরার এমন অবস্থা দেখে শ্রাবণ এর চোখে মুহুর্তেই পানি চলে আসে। ইউভী কে দেখে সামিহা বজ্র কণ্ঠে প্রধান কে বলে,,,

বাবা দেখ ইউভী ওদের সাথে। আমি তোমায় বলেছিলাম সে তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে৷ সে ডায়েরী নিতে এসেছে তোমার তো সব জানা হয়ে গেছে তুমি এবার তা পুড়িয়ে ফেল।

(আমানের ঘর থেকে ডায়েরীটা সামিহা লুকিয়ে প্রধান কে দিয়েছিল। তারা কেউ সেইটা জানতো না। সামিহার কথা মতে প্রধান তার লকার থেকে ডায়েরী টা বের করে আর ডায়েরী টা পুড়িয়ে ফেলার বদলে সামিহার কাছে রাখতে বলে কারণ এখন সব কিছু তার আয়ত্ত্বে থাকলেও পরবর্তীতে এইটা অনেক কাজে দিতে পারে ) এর পর প্রধান সামিহাকে বলে শুভ্রাকে মেরে ফেলতে। আমান রা তাকে বাচাঁতে চাইলে প্রধান রিমোট দেখিয়ে তাদের ব্লাক মেইল করে। সামিহা আমান আর শ্রাবণ কে হস্টেজ বানিয়ে ফেলে। আর বলে ইউভী তাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে এর ফল তাকে পেতেই হবে। এই বলে প্রধান ইউভীর বুকে ছুরি চালাতে লাগলেই পিছন থেকে কেউ প্রধানের পিঠে ছুরি চালিয়ে দেয়। আর এতে সেই ছুরিটা এতটাই হিংস্রতার সাথে মারা হয়েছিল যে প্রধানের বুক চিড়ে ইউভীর একদম চোখের কাছে গিয়ে ঠেকে। ইউভী আতঁকে উঠে পিছে সরে যায় আর সবাই সেই ব্যক্তিটার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে থাকে৷

চার বছর পর,,,,,

পা_পা! পা_ পা!!

না সোনা পাপা বলো না বলোতো মাম_মা । বলো সোনা।

পা_পা!!

_আমার বাবুই বলতে চাচ্ছেনা তার পরেও জোর করো কেন??
_ আজব কে জোর করলো?? পাপা সহজ তাই আমার বাচ্চা সহজ শব্দটা বলেছে।

_হুম জানি জানি।আদর করা লাগে শুধু শব্দ সহজ হলেই হয়না৷তুমি হয়ত ঠিক ভাবে বুঝোনি। আসো তোমাকেও বুঝিয়ে দেই। তুমিও আমার নাম ছাড়া অন্য কারো নাম মুখেও আনবানা৷ এই বলে আমান আর শুভ্রা এগোতে থাকলেই তাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে শুভ্র বলে উঠে,,,

মাম_মাম! মাম_মাম!!

দেখছো?? আমার বাচ্চা কত কঠিন শব্দটাও বললো??? তোমার থেকে ওই আমায় বেশি ভালো বাসে হুম। তুমি রেডি হয়ে নাও আমি শুভ্র কে নিয়ে নিচে যাই।

আরেএএএ দাড়াও না প্রাণপাখি। সেই আগের দিনের মত ভালোবেসে তোমায় শাড়ি পরিয়ে আমার ছায়াবিনীর হুরময়ী চেহারা ফুটিয়ে তুলি?? প্লিজ না করো না।

সাথে আমার বাচ্চা আছে কি বলতেছেন এসব?আমি রেডি হয়ে নিয়েছি। আপনি তাড়াতাড়ি নিচে আসুন। সবাই এসে গেছে৷

আমান শুভ্রাকে জোরাজোরি করতে যাবে এর মাঝেই আগমন ঘটে মিরার।
মিরার পরনে ভারী সিলভার কালার এক লেহেঙ্গা। তাতে সিলভার কালার পার্ল গুলো ফুটে উঠেছে। সে এসে শুভ্রাকে নিচে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু নিচে যাওয়ার আগেই মিরার ডাক পরে।

মিরা তার রুমে এসে দেখে কেউ নাই। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসতেছে হয়ত সেখানে কেউ আছে। এই ভেবে মিরা বাথ্রুমে যেতে লাগলেই পিছন থেকে শ্রাবণ তাকে জরিয়ে ধরে বলে,,

এই যে মহারানী কেবল আসার সময় হলো হুম?? নিজের তো খেয়াল রাখেন না সাথে আমাদের ও রাখেন না৷ সারাদিন শুধু টইটই করে ঘুরে বেরানো??

ওরে বাবা মহারাজের এত অভিযোগ? আর কি কি আছে শুনি?

মহারানী নিজের খেয়াল রাখেই না সাথে নীড়ের ও রাখেনা৷

মিরা অবাক হয়ে শ্রাবণ কে প্রশ্ন করে
নীড় কে??
শ্রাবণ মুচকি হেসে মিরার পেটে হাত রেখে বলে
এইখান টায় যে রাজপুত্র আছে। তার নাম। শুভ্রনীড়ের একজন শুভ্র আর বাকি অংশটুকু নীড় হবেনা তাকি হয়? আমি আর আমান যে রকম তারাও সে রকম হবে।

তাই বুঝি? সে রাজপুত্র না হয়ে যদি রাজকন্যা হয়?তবে?

হলে হবে। তখন আমান কে বলব তারাও যেন রাজকন্যা নিয়ে আসে তার বদলে আমরা শুভ্রের জন্য আরেক ভাই আনবো৷ যাই হোক সব কিছু তেই তিনটা করে থাকবে বুঝছো? আজ ইউভী কে বলে দিবো রাজকন্যা না হয় রাজপুত্র কে আনার প্রস্তুতি তাকে নেওয়া লাগবে। এই বলে শ্রাবণ খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।

আমান আর শুভ্রার মান অভিমান ইউভী ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে দুই বছর আগে তারা আবার ধুমধাম করে বিয়ে করে আর তাদের কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা আসে। তার নাম ইউভী রাখে শুভ্র। আর এক বছর আগে মিরা আর শ্রাবণ বিয়ে করে নেয়। তাদের বাচ্চা এখনও পেটে আসবে আসবে তবে আসতে সময় লাগবে৷
প্রতিবছর একটা না একটা বিয়ে লেগেই আছে। এই বছর ও ব্যতিক্রম না। আর তাই আজ শুভ্রনীড় কে আবার পুরোনো দিনের মত রাঙিয়ে তোলা হয়েছে।
আজ কের দিন সবার জন্য আনন্দমুখর রঙবেরঙে সব কিছু সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এই দিনটা এক কপোত-কপোতীর জন্য একটু আলাদা।

শু? আমার বউ কে একটু ডাকবি? সেই কখন থেকে ম্যাসেজ করছি রিপ্লাই নেই। কতবার ফোন করলাম ধরেই না। তার রুমে দুই একবার উকি মারলাম। তার দেখা পেলাম ই না বরং সবাই বলতেছে আমি নাকি বউ পাগল। আরোও অনেক কিছু।

আরে ইউভী ভাইয়া ওরা মজা করছে। আচ্ছা তুমি কি বলবা আমায় বল। আমি তোমার বউ কে বলে দিচ্ছি। এই বলে শুভ্রা মিটিমিটি হাসতে থাকে৷

নে তুইও নে৷ শুভ্র ছাড়া আমায় কেউ বোঝেনা। আসোতো চাচ্চু। আর ওকে গিয়ে কিছু বলা লাগবেনা ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দে। ওর খুব দরকার৷
এই বলে ইউভী শুভ্র কে কোলে নেয়। আর শুভ্র তাতু বলে তার কোলে ঝাপিয়ে পরে৷ শুভ্রা দেখে একটু অবাক হয় তারা সারাদিন শিখিয়ে দিয়েও কথা বলাতে পারেনা তার উপর শুভ্র কারো কোলে যেতে চায় না। আর এখন?? শুভ্রাকে শুভ্রর দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বলে উঠে,,

আরে তুই বুঝবিনা এইটা আমার আর শুভ্রর ব্যাপার। তুই জানিস না তোদের থেকে আমি তাকে বেশি ভালোবাসি? তাকে ছাড়া কিছু বুঝিনা তাই আমার না বলা কথাও সে বুঝে যায়। আর তার একটা সাথী তো লাগবে। সে সাথী আনার জন্য আমার বউ কে লাগবে। এইবার শুভ্রর সাথীর কথা ভেবে আমার বউ কে এনে দে৷

এই বলে ইউভী শুভ্রাকে এক প্রকার ঠেলেই তার বউ য়ের রুমের দিকে তাকায়। শুভ্রা গিয়ে দেখে সে বোরখা পরতেছে। ইউভীর কঠোর আদেশ তার বউ কে কেউ দেখতে পারবেনা। তাই শুভ্রনীড় এত জাকজমক বাবে সাজানো হলেও সেখানে তারা তিন ভাই আর মিরার মা বা বোন রা ছাড়া কেউ আসেনি।শুভ্রা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

সামিহা আমার জান তাড়াতাড়ি কর। ইউভী ভাইয়া ডাকছে তোকে।

চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here