শুভ্রনীড়
পর্ব১৫
#Shamu_Choudhury
হ্যাঁ। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখি আমি কবরের ভিতর শুয়ে। ভয়ে আর গন্ধে আমার জীবন যায় যায় অবস্হা কেননা, তার ভিতর মানুষ পঁচার গন্ধ আরোও তিব্র এতটাই তিব্র যে, মনে হবে দেহ থেকে এই বুঝি আত্মা বের হয়ে হাতে চলে আসল। খেয়াল করে দেখি আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসতেছে। আমি সেই কবর থেকে বের হতে চাইলেই দেখি কয়েকটা অদ্ভুত রকমের লোক মোমবাতি হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই আমাকে সেখান থেকে বের করে৷ তাদের চোখে মুখে কি রকম অদ্ভুত রকমের আঁকিবুঁকি ছিল। প্রথমে আমি ভয় পেয়ে যাই তবে তারা আমার কোন ক্ষতি না করে প্রশ্ন করে আমি আসলে সেখানে কি চাই? কারণ যদি সুইসাইড করতেই যেতাম তাহলে এতক্ষণ অপেক্ষা করতাম না। আগেই সুইসাইড করতাম৷ তারপর আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলি,,
_ আমি কালো জাদু সম্পর্কে খুটিনাটি সব জানতে চাই।তাছাড়াও আমি খোঁজ পেয়েছি জার্মানির সুইসাইড ফরেস্ট এ কালো জাদুর প্রকোপ বেশি। তাই আমার এখানে আসা৷
তারা প্রথমে রাজি হয়না। তবে পরে তাদের সাথে থাকতে নেয়। আস্তে আস্তে সেখানে থেকে সব শিখতে থাকি। পরবর্তীতে যে প্রধান সে সবার জন্য একটা লক্ষ্য স্থির করে, কিন্তু তার জন্য অনেক মানুষের শির প্রয়োজনীয়। আর আমি বেরিয়েও পরি সে কাজে। সে কাজে একটা মেয়ে আমাকে সাহায্য করে। সে ওই প্রধানেরই মেয়ে। মেয়েটা বাংলাদেশের একজন তবে আমি যখন সেখানে যাই সেও তখন সেখানে গিয়েছিল। আর তাছাড়াও সেই মেয়ে টি আর কেউ নয় শুর বান্ধবী সামিহা।
ইউভীর কথা শুনে সবাই তাক লেগে যায়। যাকে শুভ্রা এত বিশ্বাস করত আর সেই কিনা?? শ্রাবণ আমান কে ঝাকিয়ে বলে,,
দেখছিস? তোকে আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে কে আগে থেকেই আমার সুবিধার মনে হয়নি। কথায় আছেনা? ঘরের শত্রু বিভীষণ। একে তো বিভীষণের সাথে তুলনা করলেও চলেনা। কিভাবে পারলো এইগুলা?তার নাটক কি সুক্ষ্ম বুঝতেও পারিনি।
এর মাঝে ইউভী আবার বলে,,,
সামিহা আগে এসব কিছুই জানতোনা। পরে তার বাবার কথার অনুযায়ী সে কাজ করে।প্রথমে বেখেয়ালি ভাবে কাজ করলেও পরে তার বাবার লক্ষ্য কে নিজের স্বপ্ন ভেবে বসে। যার জন্য এত কিছু। শুভ্রার বাবা আর সামিহার বাবা বন্ধু ছিলেন সেখান থেকেই সবার পরিচয় সেখান থেকেই কালো জাদু শুরু। তবে বলা যায় শুরু টা ছিল সেই ডায়েরি থেকে যাতে কালো জাদুর সব কিছু বিস্তারিত ভাবে লেখা ছিল, যার জন্য সামিহার বাবা শুভ্রার বাবাকেও হত্যা করেন। আর এই সব নিকৃষ্ট কাজ আমাকে দিয়েও করান। আমি অনেক বার ফিরে আসতে চেয়েছি তবে পারিনি।
আমান ইউভী কে থামিয়ে বলে,,
সবই বুঝলাম ভাইয়া। কিন্তু সবার উদ্দেশ্য কি? আর তুমি বা কেন এসব করেছিলে?
উদ্দেশ্য একটাই তা হচ্ছে কালো জাদুর উপরও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
সব তো আগেও বলেছি। এভাবে দিন কাটতে থাকে। কিন্তু মাঝখানে তারা আমাকে দিয়ে বাবা কেও খুন করায়। তার পর শুভ্রাকে মারতে বলে শুভ্রাকে মারতে হলে আগে তোকে মারা লাগতো। তাই আমি তোকে মারি। কিন্তু তুই যাতে বেঁচে যাস সে জন্য বুকের এক ইঞ্চি উপরে ছুরি দিয়ে আঘাত করি। এসব করে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই তুই বুঝতেও পারিস নি যে, আমি তোকে বাচাঁতে চেয়েছিলাম।আর পরে তোদের কেয়ারটেকার কে ফোন করে তোর কথা জানিয়ে দেই। তাছাড়া তোদের অনেকবার বাচাঁতেও চেয়েছি কিন্তু সামিহা শুভ্রাদের সাথে মিশে যায়। যার জন্য সব কিছু করতে চেয়েও পারিনি। আমাকে মাফ করে দিস আমান। এখন আমাদের উচিত শুভ্রা কে খুজে বের করা। কিন্তু তার জন্য তার অবস্থান জানতে হবে। কিন্তু কিভাবে কি করবো??
শ্রাবণ মিটিমিটি হেসে বলে,,
সে চিন্তা তোমায় করতে হবেনা। আমরাও কিন্তু কাঁচা খেলোয়াড় নই।
ইউভী বুঝতে পারেনা সে কি বলছে তাই শ্রাবণ আবার বলে,
শুভ্রার সেইফটির জন্য তার প্রতিটা ড্রেসে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ট্র্যাকার লাগানো আছে। সে কোথায় আছে আমার ট্র্যাকারের মাধ্যমেই জানতে পারবো।এই বলে শ্রাবণ ল্যাপটপ অন করে তাদের ট্র্যাক করে। লাস্ট লোকেশন শুভ্রনীড়ের স্টোর রুম।তারা সবাই হতবাক হয়ে যায়।
বুঝতে পারেনা শুভ্রার সাথে স্টোর রুমের কি রহস্য। তাই তারা স্টোর রুমের দিকে এগোয়।
____শুভ্রার জ্বর ইতিমধ্যে কমে এসেছে। পিটপিট করে চোখ খুলতেই তার বুক অজানা ভয়ে আঁতকে উঠে। চোখ বার বার বুজ এ আবার তাকায় সে কি ভুল দেখছে?? না। ভূল না, এ যে বাস্তব। তার সামনে মিরা অজ্ঞাত অবস্থায় রয়েছে। সে কি মারা গেছে?? মিরার অবস্থা এতটায় খারাপ যে দেখে মনে হচ্ছে ঠিক ভাবে দাড়াতে পারছে না। তাকে মনে হচ্ছে ঝুলে রাখা হয়েছে নতুবা জোর করে দাড় করিয়ে রেখেছে। মিরার পুরো জামা রক্তে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। শুভ্রা ঠিকমত কথাও বলতে পারতেছেনা। শুভ্রার পা বাধাঁ নেই। তবে তাদের দুজন কেই দাঁড়িয়ে বেধেঁ রাখা হয়েছে কিসের সাথে যে বেঁধে রেখেছে শুভ্রা বুঝতে পারেনা। দড়ি নয় মনে হচ্ছে লোহা দিয়ে। এইটা কোন এক যন্ত্র হতে পারে। মাথার উপর ভারী কিছু রয়েছে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মিরা কে ডাকতে থাকে। কামরাতে আবছা আবছা আলো রয়েছে। মনে হচ্ছে একটু পর অন্ধকার আলোকে গ্রাস করতে চলেছে। শুভ্রা বুঝতে পারেনা তারা আসলে কোথায় আছে। আশে পাশে তাকিয়ে তার ফোন খোজে কিন্তু পায়না৷ বের হওয়ার রাস্তা খোঁজ এ কিন্তু একি বিফলকাম হয়। হঠাৎ করেই সে পায়ের শব্দ শুনতে পায়৷ তার মস্তিষ্ক শুন্য হয়ে যায়। ভয়ে তার পুরো শরীর কাপঁতে থাকে। এই সময়ে তার আমানের কথা খুব মনে হচ্ছে।আচ্ছা আমান কি তাকে খুজছে? আর তারই বা এখন কি করা উচিত? তার জন্য কে আসছে?কোন শুভ্রাকাঙ্খি আসছে?? না অন্য কেউ??
_____
পক্ষান্তরে তারা স্টোর রুমে কিছুই খুঁজে পায়না। রুম এত পরিষ্কার দেখে ভাবে মিরারা হয়ত পরিষ্কার করেছে। হতাস হয়ে ফিরে আসার সময় ভালো তারাও দরজাটি পেয়ে যায়। আর বুঝে যায় এখানেই সবাই আছে। কিন্তু এতদিন হলে আমান শুভ্রনীড় কিনে রেখেছে তবুও সে জানেনা এখানে গুপ্ত বেইসমেন্ট এ কিছু থাকতে পারে৷ অতপর তারা ভিতর ঢুকতে চাইলে, ইউভী তাদের থামিয়ে দেয় দেয়।
_____
সামিহা তুই????? আমি জানি কেউ আমার পাশে না থাকলেও তুই থাকবি।দেখ মিরার কি যেন হয়েছে। ওকে খুলে দিতে পারিস না কি দেখ প্লিজ।
(সামিহাকে দেখে শুভ্রার চোখ ঝলমলিয়ে উঠে। সে ভাবে সামিহা এখানে তার জন্যই এসেছে। তাই সে সামিহাকে এসব বলে)
ওহহহ ইউভীর কিউট শু বেইবি। জানিস ইউভী তোর কথা একবার বলেছিল যে তোকে না মারলে হয়না?? তবে আমি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার দিকে করে নিয়েছি।
সামিহা বিরতিহীনভাবে বলেই মিটিমিটি হাসতে থাকে। শুভ্রা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। তাই সে সামিহাকে তার মনের প্রশ্ন গুলো ছুড়ে মারে,
কি যাতা বলছিস সামিহা?? ইউভী কে তো আমরা খুজেই পাইনি। আর শু??? এই নামে আমাকে কেউ ডাকতো। তবে মনে করতে পারতেছিনা। তুই কিভাবে জানলি??
উঃ তুই খুব অবুঝ শুভ্রা।চোখের সামনে তোর সব ঘটলেও তুই কিছুই বুঝতে পারিস না। শু নাম টা আর কেউ না তোর ইউভী তোকে ডাকতো। মনে করে দেখ। আর আমরা না, তুই ইউভী কে খুজে পাসনি। আমি তো সেই কবে থেকেই ইউভীর সাথে আছি। এই বলে সব শুভ্রাকে খুলে বলে।
আর এও বলে আমান সেই যাকে শুভ্রা ইউভী ভেবে এসেছে। শুভ্রা ছলছল চোখে সামিহার দিকে তাকায়। তার মনে হচ্ছে এইসবের আগে মারা গেলেই বোধ হয় ভালো হত। শুভ্রা কিছুই বলেনা চুপ চাপ থাকে কি বলবে সে? কাছের মানুষগুলো এত নিষ্ঠুরতম আচরণ কিভাবে করল?
এর মাঝে মিরার জ্ঞান ফিরলে সেও চুপচাপ এসব শুনতে থাকে। সামিহার কথা শেষে মিরা খুব কষ্টে বলে উঠে,,
তুমি আলাহ কে ভয় কর না কেন সামিহা? মনে রেখ প্রত্যেক প্রাণী কে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করাই লাগবে।
(একটু চুপ থেকে আবার বলে)
আর সেই তুমি বেঁচে থাকতেই কাফের হয়ে গেলে?? তোমার মনে কি একটুও ভয় কাজ করেনা।
মিরার কথা শুনে সামিহা ধারালো ব্লেড হাতে তার দিকে এগোয়। শুভ্রা আতঁকে উঠে আর বলে,
এই রকম করিস না সামিহা।ওই ভূল কিছু বলেনি। এমনিতেই ওর অবস্থা খুব খারাপ যা করার আমার সাথে কর ওকে আর মারিস না দোয়া কর আমাদের উপর প্লিজজজ!!!!
এই বলে শুভ্রা কাদঁতে থাকে। সামিহা হেসে বলে,
ওরে বাবাহ!! এততত দরদ!!!
দরদ তোর উপরেও ছিল সামিহা কিন্তু তুই সবার সাথে বিস্বাসঘাতকতা করলি। আমরা মরে গেলেও আমান তোকে ছাড়বেনা। ওর কলিজায় তুই হাত দিয়েছিস। তোর কলিজা ছিড়তে ও দ্বিতীয় বার ভাববেনা।
সামিহা শুভ্রাকে কিছু বলতে যাবে তার মাঝেই প্রধান আসে। শুভ্রা তাকে চিনতে পারে। হ্যাঁ,তার বাবার বন্ধু।যার কোলে সে বসে খেলেছে। কিন্তু তার বাবাও তো নরপশু। সামিহার বাবা শুভ্রনীড়ে দারোয়ানের চাকুরী নিয়েছিল। যাতে তাদের কাজ সহজ হয় যখন বাসায় কেউ থাকতোনা তখন তারাই মিলে বেইসমেন্টে এসব কাজ করে। তিনি বলেন,,
সামিহা তৈরি হয়ে নাও। অনেক তো কাহিনী হল।এইবার সব রহস্যের জটিলতা খুলতে চলেছে। এবার এদের শিরঃচ্ছেদ করবো। সামিহা তার কথা মত সব তৈরী করে নেয়। মেঝেতে ইলুমিনাতির সিম্বল আঁকানো,তার মাঝে মনে হয় সিঁদুর দিয়ে ভরাট করা। তার চারপাশ দিয়ে অনেক শির সাজানো। মাঝখানে বড় মোমবাতী। তার পাশেই কয়েক বাটি ভরা রক্ত। সাথে সেই গা গুলানো গন্ধ তো আছেই।
রিচুয়ালের শুরুতে তারা কি কি যেন বলতে থাকে। প্রধানের কথামত সামিহাও সে সব আওড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে সামিহাকে সেখান কার বাটিতে বিদ্যামান রক্ত পান করতে বলে। সামিহা বিরক্ত না দেখিয়ে মিটিমিটি হাসিতে বাটি টা হাতে নেয়। তাকে দেখে মনে হয় এর অপেক্ষাতেই সে ছিল। সে এমন ভাবে খায় যেন তা রক্ত না স্ট্রবেরি ফ্লেভারের জুস।
চলবে??