গল্পঃহৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৫০।
লেখা #মেহের।

নার্সটা মারুফের কথা শুনে ও জেসিকার সাথে মারুফের ব্যাবহার দেখে ভয় পাচ্ছে।

নার্সটি ভাবছে মেয়েটা তো কোমায় আছে তারপরও গাড়িতে উঠে থেকে এই লোকটা মেয়েটার সাথে কথা বলছে লোকটি আবার পাগল হয়ে গেলো না তো?
ইস কখন যে এই পাগলের কাছে থেকে রেহাই পাব।

মারুফ জেসিকার সাথে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
এ যেনো ঠিক শব্দহীন কান্না।

মারুফ জেসিকাকে এমন অবস্থাতে দেখে সহ্য করতে পারছে না।
ওর হৃদয়ের আসনে রানী করে যাকে বসিয়েছে ।
তার এমন অবস্থা কি করে দেখবে?
ওর প্রিয়তমাকে এ ভেসে দেখে হৃদয়ের কষ্টগুলো যেনো অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
আমাদের ভালোবাসার অংশ হচ্ছে বাচ্চারা ।
কিন্তু সেই বাচ্চারা জন্মের পরে থেকে এখনো মায়ের উষ্ণ স্পর্শ পায়নি।
আদৌও বাচ্চারা মায়ের বুকের উষ্ণতা পাবে কিনা তাও জানে না।
মারুফ মনে মনে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল,বৌ আমি হাড় মানবো না।
তোমাকে আমার ও বাচ্চাদের জন্য সুস্থ্য হতেই হবে।
আমিও দেখতে চায় তুমি কতদিন এভাবে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পার।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে গাড়ি জেসিকার বাসায় পৌঁছে গেছে মারুফ তা টেরও পায়নি।

হঠাৎ নার্সটি বলল,স্যার আমরা মনে হয় এসে পরেছি।

নার্সের কথায় মারুফের ধ্যান ভঙ্গ হয়।
বাহিরে তাকিয়ে দেখে বাসায় পৌঁছে গেছে।
তাই মারুফ গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পরল।

মারুফ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল।
এরপর দুজন লোক এসে জেসিকাকে গাড়ি থেকে বের করে।
জেসিকার জন্য আগে থেকে ঠিক করা রুমেই ওকে আনা হয়েছে।

উকিল সাহেব বাসার কাছাকাছি এসেই তাদের পারিবারিক ডাক্তারকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছে।

জেসিকা শহীদ তাজউদ্দীন হসপিটালে থাকা কালীন সময়ে ওদের পারিবারিক ডাক্তার দিলীপ সাহা ওকে দেখে এসেছে।
দিলীপ সাহায় জেসিকার বাবাকে বলেছে মেয়েকে বাসায় বসে চিকিৎসা করাতে।
কারণ কোমা থেকে কবে ফিরবে বা আদৌও ফিরবে কিনা তার ঠিক নেই।
তাই কে কতদিন হসপিটালে ওর সাথে থাকতে পারবে।
আর জেসিকার বাবার যেহেতু টাকা পয়সার অভাব নেই তাহলে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে সমস্যা নেই তো!
ডাক্তারের কথা শুনেই উকিল সাহেব আজকে মেয়েকে বাসায় নিয়ে এসেছে।

জেসিকাকে এখানে আনার পরে ডাক্তার এসে জেসিকার চেকআপ করে উকিল সাহেবের সাথে কথা বলে চলে গেছে।

মারুফ বাসায় এসে আজকে আর দোকানে যায়নি।
বাসায় এসে জেসিকার জামা কাপড় নিজের হাতে পাল্টে দিয়েছে।
জেসিকার সারা শরীরে মেশিন পত্র লাগানো।
হাতে স্যালাইন লাগানোর জন্য কয়েক জায়গায় দাগ হয়ে গেছে।
জেসিকার পোশাক বদলানোর সময় তা দেখে মারুফের চোখের পানি ঝর ঝরিয়ে পড়েছে।
একভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে জেসিকার পিঠ লাল টকটকে হয়ে রয়েছে।
নাকের ভিতরে পাইপ ঢুকানো ।
জেসিকার এমন অবস্থা দেখে মারুফের নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।
কারণ সেদিন শ্বশুরের সাথে জেসিকাকে আসতে দেয়নি সেজন্য।
মারুফ জেসিকার এ অবস্থা দেখার পরে থেকে ওর হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।
মারুফ জেসিকার কাছে কিছুক্ষণ থেকে তারপর ওখানে থেকে বের হয়ে আসে।

মারুফ জেসিকার এখনকার রুমে থেকে বের হয়ে আগের রুমে যায়।
ওখানে ওর থাকার ব্যবস্থা করেছে উকিল সাহেব।

মারুফ আগেই ওর শ্বশুরকে বলে রেখেছে ,জেসিকাকে যে রুমে রাখা হবে তার পাশের রুমেই যেনো মারুফের থাকার জন্য ঠিক করে।
তাইতো জেসিকার বাবা জেসিকার পুরানো রুম মারুফের জন্য ঠিক করেছে।
আর পাশের রুম জেসিকার জন্য।

জেসিকার বাবা হসপিটালে বসেই ভেবেছে মেয়েকে দেশের বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন।
কিন্তু ডাঃ দিলীপ সাহা বলেছেন,এই অবস্থায় ওকে কোথাও নেওয়া সম্ভব নয়।
তাতে ওর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।
আর বড় হসপিটালে নিলে জেসিকাকে যে চিকিৎসা দেওয়া হবে তা তো বাসায় দেওয়া যায়।

এদিকে মারুফ জেসিকার পুরানো রুমে আসার পর থেকে ওর হাঁসফাঁস লাগছে ।
লাগবে না কেন?
পুরো রুমের দেওয়াল জুড়ে জেসিকার বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি রাখা।
মারুফের সাথেও জেসিকার দু’টো ছবি দেখা যাচ্ছে।
খাটের পাশে দেওয়ালে টাঙানো।
মারুফ জেসিকা এবং ওর ছবি গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
পাশেই আরেকটি ছবি দেখে এক ধ্যানে মারুফ সে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।

বড় একটা ফ্রেমে জেসিকার হাঁসি মুখর ছবি ঠিক খাট বরাবর উপরে দেওয়ালে টাঙানো ।
ছবিটিতে জেসিকাকে প্রাণবন্ত লাগছে।
মারুফের মনে হচ্ছে জেসিকা ওর সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
মারুফ জেসিকার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল,বৌ আমার অবস্থা দেখে তোমার হাসি পাচ্ছে।
বৌ তোমার মারুফের চোখের পানি তুমি দেখতে পাও না!
বৌ তুমি এত নিষ্ঠুর হয়ো না!
আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে আমি মারা যাব।
বৌ তোমাকে ছাড়া তোমার মারুফ বাঁচবে কি করে?
বৌ তুমি তোমার মারুফের বুকে ফিরে আসো ।

মারুফ জেসিকার ছবির দিকে তাকিয়ে এসব বলছিল এর মধ্যে মায়া বেগম ও কোমল মুহিব ও জেরিনকে কোলে করে রুমে ঢুকে পড়ল।

রুমে ঢুকে মারুফকে কাঁদতে দেখে ও বিরবির করে বলা কথা গুলো শুনে কোমল বাবুকে নিয়েই ভাইকে জরিয়ে ধরে বলল, ভাইয়া তুমি কাঁদছ?

তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমাদের কষ্ট হয়তো।

মারুফ তার ছুটকির কথা শুনে ছুটকির দিকে তাকিয়ে দেখে তার কোলে মুহিব।
মারুফ মুহিবকে ছুটকির কোলে থেকে নিয়ে নেয়।
তারপর এক হাতে বাবুকে অন্য হাত দিয়ে ছুটকিকে জরিয়ে ধরে বলল,কয় কাঁদছি না তো !
চোখে হঠাৎ কি যেনো পরেছিল সেজন্য চোখে জ্বালা করছে। তাই হয়তো চোখ দিয়ে পানি পরছে।
আমি ঠিক আছি ছুটকি ।
আমার জন্য এত চিন্তা করতে হবে না।
কোমল মারুফের কথা শুনে বলল,ভাই তুমি কাঁদছো তোমার চোখে পানি দেখেই আমি বুঝতে পারছি।

ছুটকির কথা শুনে মারুফ বলল,তোর ভাইয়ার চোখের পানি এত সস্তা নয়।
তাই এসব কথা বাঁধ দিয়ে কাজের কথা শুন, এখান থেকে গাজিপুর গিয়ে কলেজ করতে তোর সমস্যা হবে ।
তাই তোদের প্রিন্সিপালের সাথে আমি আগেই কথা বলেছি ।
যে তুই শুধু পরীক্ষা দিতে যাবি।
তোর যে বিষয়গুলো গুলো বুঝতে সমস্যা হবে তা বাসায় মাষ্টার রাখবো তার কাছে থেকে বুঝে নিস।
ছুটকি মারুফের কথা শুনে বলল,ঠিক আছে ভাইয়া।

এই সপ্তাহের মধ্যে ছুটকিকে পড়াতে বাসায় মাষ্টার আসবে তাও মারুফ ছটুটিকে জানায়।

মারুফের মা দুই ভাই বোনের কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আর মনে মনে ভাবছে,
ছেলেটা যেখানে বোনের কাছে কষ্ট লুকাতে চাচ্ছে সেখানে সে এই ব্যাপারে কথা বলে ছেলেটার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করার দরকার নেই।

মারুফ মা’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়ের কাছে গিয়ে তার কোলে থেকে জেরিনকে নিতে চায়।

তা দেখে মায়া বেগম মারুফকে বলে,বাবা দুইজনকে একসাথে কোলে নিতে তোর কষ্ট হবে তো!

মায়ের কথা শুনে মারুফ বলল,মা আমার কষ্ট হবে না বরং ওদের একসাথে কোলে নিয়ে বুকে চেপে ধরলে আমার বুকের হাহাকার কিছুটা হলেও কমে যায়।
মারুফ কথাটা বলে ,জেরিন ও মুহিবকে বুকের সাথে হালকা করে চেপে ধরেছে।

ছয় মাস পর।

দোলা এবার হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে তার কৃতকর্মের ফল।

জেসিকার সাথে করা অন্যায়গুলো আজকাল দোলার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
তখন আফসোস করে কেন সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নিল না?
লোভে পড়ে মানুষকে মানুষ ভাবতে ভুলে যাওয়ার শাস্তি বোধহয় এভাবেই পাওয়ার ছিল।

রিফাত যাওয়ার দুই মাসের মধ্যে জানতে পারে রিফাত তাদের দোকানের নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়েছে।
আর ইসহাক যেহেতু সবার কাছে তার মেয়ের জামাই হিসেবে রিফাতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে
তাই সে যাওয়ার পর পরেই সবাই টাকার জন্য ইসহাককে চেপে ধরল।
ইসহাক মানুষের চাপে পড়ে দোকান খোয়াতে হলো।
কারণ দোকান বিক্রি করে মানুষের পাওনা টাকা দিয়েছে ।

জায়গা জমি যা ছিল তাতো আগেই বিক্রি করে দিয়েছে সেজন্য এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইসহাক মারুফের কাছে ব্যাবসার জন্য টাকা চেয়েছিল মারুফ বলেছে , তার কাছে যা টাকা আছে সে টাকা তাকে দিয়ে ছোট বোন ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারবে না।

আর যতদিন পেরেছে তাদের সাহায্য করেছে এখন ওরও সংসার আছে ।
তাই আগে ওর পরিবারের দিকে দেখতে হবে পরে অন্য সবদিক।

চাঁদনী বানু মারুফের মুখে এমন কথা শুনে কষ্ট পেয়ে বলল, তোমরা পোলাও কোর্মা খাবে আর ওদের কপালে ডালভাতও না জুটক তুমি তাই চাও দাদা ভাই।

মারুফ দাদুর কথা শুনে বলল, আল্লাহ তোমার ছেলের হাত পা দেয়নি যে অন্যের অচ্ছিষ্ট্যে খেয়ে বাঁচতে হবে।

চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে বলল, দাদু ভাই এমন নিষ্ঠুর হতে নেয়।
মারুফ ওর দাদুর কথা শুনে তাকে বলল, আমি নিষ্ঠুর হলে আজকে আমার বৌ কোমায় পড়ে থাকতো না।
জেসিকার সাথে তোমার ছেলে , ছেলের বৌ আর তুমি যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছো তা কি ভুলে গেছো?
চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে লজ্জায় আর কিছু বলতে পারে না।
তবে মারুফ কথা শেষে যাওয়ার আগে চাঁদনী বানুকে বলে, তোমার ইচ্ছে হলে আমার সাথে ওখানে থাকতে পার।
আর না গেলে তোমার খাওয়ার খরচ বরাবরের মতো আমিই দিবো।
তবে তোমার আদরের ছেলের পরিবারের জন্য মাসে ডাল ভাত খাওয়ার সামান্য টাকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না।
আর আমি ওদের এতটুকু করতাম না শুধুমাত্র আমার আল্লাহ ও রাসূলেকে আমি ভালোবাসি ।
তাই নিজের প্রতিবেশীকে অভুক্ত রাখতে পারলাম না।

মারুফের কথা শুনে ইসহাক বলল, মারুফ তুই এতো বড় কথা বলতে পারলি?
চাচাকে প্রতিবেশী বলতে তোর বুক কাঁপে না।
মারুফ ওর চাচ্চুর কথা শুনে বলল, যে পরুষ স্ত্রীর কথায় ভালো মন্দ বিচার করতে ভুলে যায় ।
সে কখনো আমার চাচ্চু হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
কথাটা বলেই মারুফ ওখানে থেকে চলে যায়।

দোলা আড়ালে দাঁড়িয়ে মারুফের সব কথায় শুনেছে। কিন্তু নিজের করা অন্যায়গুলো ভেবে মারুফের কথার প্রতিবাদ করতে পারেনি।
আর প্রতিবাদ করবেই কোন মুখে ?
যেখানে সে একটা হাসি খুশি পরিবারকে নষ্ট করেছে নিজের লোভের কারণে।
সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে এ ভেবে ,মারুফ তাদের এত অপমান করার পরেও ।
ওর টাকায় এই সংসার চালাতে হচ্ছে।
তবে মারুফ যে টাকা দেয় তাতে টেনেটুনে সংসারটা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
আজকে ওদের এই অবস্থা হয়েছে ঐ বেঈমানের জন্য।দোলার কষ্ট হয় বেঈমান
রিফাতকে ছেলের মতো ভেবে বিশ্বাস করেছিল সেজন্য।

দোলা মনে মনে ভাবছে, রিফাত তার বিশ্বাসের মর্যাদা তো রাখেনি উল্টো তাদের পথের ভিখারি করে ছেড়েছে।
দোলা দুই মাস আগে জানতে পারে রিফাত ভারতে যাওয়ার আগেই
ঝর্নাকে আইনি প্রক্রিয়ায় তালাক দিয়েছে।
ঝর্নাও না বুঝেই তালাক নামায় সাইন করেছে।
তালাকের পরও ঝর্নার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে যা সম্পূর্ণ হারাম।
কিন্তু যার মধ্যে ঈমান নেয় তার কাছে হালাল হারামের তফাৎ কোথায়?
দোলা এসব জানার পরে থেকে রিফাতকে দিন রাত অভিশাপ দিচ্ছে।

এদিকে রেশমার বাপের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়।
এবার গিয়ে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে রেশমা চেষ্টা করছে তাদের মত করে চলতে ।
কিন্তু তারা এখন রেশমাকে বাড়িতে রাখতে চাচ্ছে না।
তাই মুখে না বললেও বিভিন্ন ভাবে ওকে কষ্ট দেয়।

আর রেশমার শ্বাশুড়ি যেদিন থেকে জানতে পেরেছে রেশমা বাপের বাড়িতে থাকাকালীন চাচাতো বড় ভাইয়ের বউয়ের গায়ে হাত তুলছে।
বাজে আচরণ করছে
সেদিন থেকে রেশমার শ্বাশুড়ি ও অন্য সবাই রেশমার সাথে ভালো মত কথা বলে না।
ওকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করায়।
ইদানিং ‌রেশমার স্বামীও ওকে দেখতে পারে না।
কথায় কথায় বাড়িতে থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
রেশমা বাবার বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার কষ্ট হয় সে কথা ভেবে সব অপমান অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে আর মনে মনে বলে, ভাবী তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছি তার থেকেও বেশি কষ্ট এখন আমি পাচ্ছি।
ভাবী আমার অপরাধের জন্য আজকাল তোমার কাছে মাফ চায়তে বড্ড ইচ্ছে করে।

আচ্ছা তুমি সুস্থ্য হলে আমি যদি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এলে ক্ষমা করবে তো?
নাকি আমার করা পাপের জন্য আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে?
আমি দেরিতে হলেও এখন বুঝতে পারছি সবাইকে তার কর্মের ফল এই জীবনেই ভোগতে হয়।
দু’দিন আগে বা পরে।

অন্যদিকে দিকে ইসহাক বাজারের দোকান যার কাছে বেঁচে ছিল তার কাছে থেকেই মারুফ কিনে নেয়।
কিনে কাপড়ের দোকান দেয়।
দোকানের জন্য কর্মচারী রাখে।
সেই দোকানে কর্মচারীদের মধ্যে একজন হচ্ছে ইসহাক।

মারুফের কথা আপনাকে বসে বসে টাকা দেওয়ার থেকে আপনি দোকানে বসে বেচাকেনা করবেন তার বিনিময়ে আপনাকে মাসে মাসে বেতন দেওয়া হবে।

আজকাল ইসহাক দোকানে বসে ভাবে নিয়তির নির্মম পরিহাসে একদিন যে ছিল মহাজন আজকে সে বেতন ভুক্ত চাকর।
নিজের দোষে ছেলের মত ভাতিজা হয়ে গেছে পর।
সময় থাকতে যদি শক্ত হতে ঘুড়ির লাটায় ধরে রাখতো তাহলে এমন দিন দেখতে হতো না তাকে।

এদিকে চাঁদনী বানু ছোট ছেলের সাথে অনেকদিন থেকেছে।
মারুফের কাছে যায়নি।
কিন্তু মাঝে মাঝে বড় বৌ ও নাতি নাতনিদের কথা মনে হলেই অনুশোচনায় দগ্ধ হয় মন।
স্মৃতির পাতায় ভেসে বেড়ায় নিজের করা ভুল গুলো।
একজনের পক্ষ নিতে গিয়ে আরেকজনের সাথে দিনের পর অন্যায় করেছে।
চাঁদনী বানু ভাবে কখন উপরের ডাক চলে আসে তার ঠিক নেই কিন্তু যাওয়ার আগে ক্ষমা তো চায়তে হবে।
তাইতো লাজ লজ্জা ভুলে মারুফের শ্বশুর বাড়িতে যায়।

ও বাড়িতে গিয়ে চাঁদনী বানু মায়া বেগমের কাছে তার অন্যায় কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চান।
মায়া বেগম চাঁদনী বানুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা আপনাকে কখনো মা ছাড়া শ্বাশুড়ি ভাবিনি।
তাই আপনার এই মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ছোট করবেন না।
আম্মা আমি সব ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান।

তারপর থেকে চাঁদনী বানু উকিল সাহেবের বাড়িতেই থাকেন।
মারুফ চাঁদনী বানুর সাথে এখনো তেমন একটা কথা বলে না।
চাঁদনী বানু কষ্ট পেলেও তা বুঝতে দেয় না।
কারণ নিজের দোষে তার আদুরের নাতি দূরে সরে গেছে।
এখন কাছে আসতে তো সময় লাগবেই।

এদিকে মারুফ দোকানে থেকে আজকে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে।
তাতেই তার কলিজার টুকরো দুটি কান্না কাটি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছে।
কারো কোলেয় থাকছে না শুধু মুখে এক বুলি বা..বা,আব্বা।

উকিল সাহেব বাসায় এসে নাতি নাতনিকে এভাবে কাঁদতে দেখে সহ্য করতে না পেরে সে ও রাশেদ ওদেরকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতেও গেছে ।
কিন্তু তাতে কাজ হয়নি বাচ্চা দুটো এতো বিচ্ছু বাহিরে গিয়ে পাঁচ মিনিট ভালোই ছিল তার পরে বা বা বা বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
উকিল সাহেব ও রাশেদ শত চেষ্টা করেও থামাতে পারেনি।
তাই উকিল সাহেব মারুফকে ফোন করে বলেছে, তোমার জন্য আমার ছোট বৌ আর ছোট ভাইটা কেঁদেকেটে লাল হয়ে যাচ্ছে আর তুমি কি করছো?
তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।

মারুফ শ্বশুরের কথা শুনেই তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করে বাসায় এসেছে।
মারুফ ওদের কান্না সহ্য করতে পারে না।
আর না পারে উকিল সাহেব ।
উকিল সাহেব ওদের বুকে নিলে মেয়ের কষ্ট কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যায়।
আর মারুফ সে তো বাসায় এসেই হাতমুখ ধুয়ে ছেলে মেয়েকে আধাঘণ্টা বুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে ।
তারপর ওদেরকে মায়ের কাছে দিয়ে জেসিকার রুমে গিয়ে সারাদিন কি কি করেছে !
কি খেয়েছে তা বলতে শুরু করে দেয়।
বাচ্চার নতুন নতুন শব্দ বলতে শিখেছে তাও জেসিকাকে বলতে ভুলে না।
তারপর কথা বলা শেষ করে জেসিকা বুকে আলতো করে মাথা রাখবে ।
জেসিকার কপালে চুমু খাবে ।
এরপর আবার বাচ্চাদের কাছে যাবে ।
এগুলো এখন প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।

মারুফ রাতে ঘুমায় না বললেই চলে।
বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে জেসিকার রুমে এসে কতশত গল্প করে।
জেসিকার প্রতি অভিযোগের ঢালা নিয়ে বসে।
কেন জেসিকা এখনও ঘুম থেকে উঠছে না?
সে কি জানে না তার মারুফ বৌয়ের বুকে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারে না!
আরও কতশত অভিযোগ।
এরমধ্যে জেসিকার কিছুটা উন্নতি হয়েছে , এখন সে সব শুনতে পারে, কিছু বলতে না পারলেও হাতের আঙুল নড়াচড়া করে ।
মনে হয় রেসপন্স করতে চেষ্টা করছে।
ডাক্তার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, জেসিকার সাথে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।
তাকে অনুভব করাতে হবে তাকে সবার প্রয়োজন ।
এমন করতে থাকলে জেসিকা যে কোন মুহুর্তে তাদের ডাকে সাড়া দিবে।

সে কথার পরে থেকেই বাসার সবাই যখন সময় পায় জেসিকার রুমে এসে জেসিকার পাশে বসে একা একাই গল্প করে।

ইদানিং মারুফ সময় পেলেই জেসিকার কাছে বসে থাকে।
আজকে বাসায় আসার পর থেকে বিচ্ছু দুটোকে মারুফের কোলে থেকে কেউ নিতে পারছে না।
উকিল সাহেব, মারুফের মা, কোমল কেউ কোলে নিতে আসলেই মারুফের সাথে মিশে বা…বা বা করছে আর হা করে মারুফের গালে হামি দিচ্ছে।

মারুফ ওদের কান্ড দেখে বলল,ওরা আমার কাছেই থাক ।
আজকে আমার সোনারা মায়ের সাথে গল্প করতে যাবে।
মারুফ কথাটা বলে, ওদের নিয়ে জেসিকার রুমে আসলো।

এসে ওদের নিয়ে চেয়ার টেনে বসে বলল,বৌ দেখো তোমার বিচ্ছুরা এসেছে তোমার আদর খেতে।
ছয় মাস সতের দিন বয়স হয়েছে ওদের।
আর তাদের মা এতদিন ধরে ঘুমিয়ে কাটালো এটা কোন কথা হলো!
এখনও ওদের তুমি আদর করলে না !
ওদের তো অভিমান হয় নাকি!
ও বৌ আমার কথা শুনছো তো?

এদিকে বাচ্চারা মারুফের কোলে বসে জেসিকার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর জেসিকার কাছে যেতে চায়।

মারুফ ওদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়।
এতদিন তো সে বাচ্চাদের রেখেই জেসিকার রুমে আসতো।
আজকে প্রথম বাচ্চাদের নিয়ে এই রুমে এসেছে।
তারপরও বাচ্চারা জেসিকার কাছে যেতে হাত পা ছুটাছুটি করছে।
এমনিতেই মারুফের কোলে থেকে কারও কাছে ওরা যেতে চায় না কখনো।
আর আজকে জেসিকাকে দেখেই ওর কোলে যেতে চাচ্ছে।
মারুফ তা দেখে মনে মনে বলল,ওরা হয়তো মায়ের ঘ্রাণ পেয়ে গেছে।
নাড়ির টান বলে কথা।

এদিকে মুহিব বেশি বিরক্ত করছে জেসিকার কাছে যেতে।

মারুফ মুহিবের দিকে তাকিয়ে বলল, আব্বু তুমি তো পাবলিক সুবিধার না!
মাকে দেখে বাবাকে ভুলে যাচ্ছ?

মারুফের কথা বুঝার বয়স তো এখনও হয়নি মুহিবের।
তাই মুহিব মারুফের কাছে থেকে নামতে চাচ্ছে।
তা দেখে মারুফ মুহিবকে জেসিকার বুকের উপরে আলতো করে শুয়ে দিয়ে মারুফ জেসিকাকে বলল,বৌ তোমার কথায় সত্যি হলো।
তুমি বলতে না ছেলে হলে তোমার ভক্ত হবে।
দেখো তাই হয়েছে।

ছেলে যে তোমার ভক্ত হবে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।

তুমি কি সুন্দর ঘুমের মধ্যে থেকেই ছেলেকে হাত করে ফেললে এখন আমার কি হবে?

এদিকে মুহিব মায়ের বুকে শুয়ে বা..বা দা..দা ফুঁ ..ফুঁ করে ডাকছে আর জেসিকাকে হামি দিচ্ছে।

অন্যদিকে জেরিন মুহিবকে মায়ের কাছে যেতে দেখে সেও যাওয়ার জন্য ওদিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
হঠাৎ এদিকে ঝুঁক দেওয়াতে জেরিন পরে যাচ্ছিল মারুফ জেরিনকে ধরতে গিয়ে মুহিবের থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
মুহিবের কাছে থেকে হাত সরিয়ে নিতেই মুহিব পরতে নেয়।
মুহিবকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে জেসিকা মারুফ বলে চিৎকার করে উঠল।

মারুফ হঠাৎ করে ওর নাম শুনে পাশে তাকিয়ে হ,,,

#চলবে।
নোটঃ আমরা মানুষেরা পাপ,অপরাধ করার সময়ে এটা ভুলে যায়।
যেমন কর্ম করবো তেমন ফল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমাদের ভালো মন্দ ,পাপ পূণ্য সব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দেখছেন।
আমাদের ভালো কাজের জন্য যেমন রয়ছে পুরষ্কার ।
তেমনি পাপ ও মন্দ কাজের জন্য রয়েছে শাস্তি ।
কথাটা সবাই মনে রাখলে তাহলে কেউই লোভ লালসার পরে খারাপ কাজে সামিল হতো না ।

বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here