গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৪১।
লেখাঃ#মেহের।
মারুফ তার দাদুর কথা শুনে বলল, রেশমা এবং চাচীর অধঃপতন হয়েছে তোমার আশকাড়া পেয়েই ।
তাই এ বিষয়ে আমাকে ভুলেও কিছু বলতে আসবে না।
মারুফের কথা শুনে দোলা বলে উঠল, দেখছেন আম্মা মারুফ কিভাবে কথা বলছে আপনার সাথে!
মারুফ দোলার কথা শুনে বলল, আমি এভাবে কথা বলাতে আপনাদের মনে হচ্ছে আমি দোষ করেছি!
তাহলে এতদিন আপনারা আমার বৌয়ের সাথে যে আচরণ করেছেন তাতে আপনাদের বুঝি নিজেদের দোষ চোখে পরেনি।
এরমধ্যে রাশেদ দোলার উদ্দেশ্য বলল,চাচী শুনুন, ভাবীর বাবা যদি একবার জানতে পারে না আপনি এবং আপনার মেয়ে মানে রেশমা আপু তার মেয়ের সাথে কি ধরনের বাজে আচরণ করছেন তাহলে নির্ঘাত আঙ্কেল আপনাদের নামে নাড়ি নির্যাতন মামলা দিবে।
আপনাদের ভাগ্যে ভালো ভাবী এখনও আঙ্কেলকে কিছু জানায়নি।
মারুফ রাশেদের কথা শুনে বলল,ভাই এখানে আমি কথা বলছি তাই তোদের কথা বলতে হবে না।
জানিস না আমি বড়দের সাথে বেয়াদবি করা পছন্দ করি না।
সেজন্য আমি চাচ্ছি তুই এই মুহূর্তে এখানে না থেকে কোমলকে নিয়ে তোরা নিজেদের রুমে যা।
মারুফের কথা শুনে রাশেদ ওদের বোনকে নিয়ে এখানে থেকে সরে যায়।
এরমধ্যে চাঁদনী বানু মারুফকে বলল, দাদু ভাই তুমি রাগে তোমার ওয়া,,,,
মারুফ ওর দাদুকে থামিয়ে বলল, দাদু মাফ করো তোমার কথার মাঝে বিরক্ত করছি বলে।
তবে এখন তুমি কি বলবে তা আমি জানি!
আমি তোমাকে দেওয়া ওয়াদা ভাঙছি সে কথা বলবে তো!
কিন্তু আমি ওয়াদা ভাঙতে চায়নি তোমাদের কার্যক্রমে ভাঙতে বাধ্য হচ্ছি।
তবে সেজন্য তুমি চিন্তা করো না।
কারণ তাদের ভালো সময়ে পাশে না থাকলেও তাদের বিপদে সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
আর দাদু তুমি আজকেই কাজের খালাদেরকে ফোন করে আসতে বলবে ।
এখন থেকে একজন আমাদের কাজ করবে অন্যজন চাচীদের ।
চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
এদিকে মারুফ তার দাদুর দিকে তাকিয়ে বলছে, দাদু আজকে থেকে তোমার যেখানে ভালো লাগবে সে ঘরেই খাবে।
তোমার যা যা লাগবে আমাকে বলবে আমি তা এনে দিবো।
তোমার সব প্রয়োজন পূরণ করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি ।
কিন্তু শুধু একটা ছাড়া তাহলে চাচ্চুর আমাকে প্রয়োজন হতে পারে তাই নিজের ছেলের সার্থে তুমি আমাদেরকে কখনো একসাথে থাকতে বলতে পারবে না।
এখন থেকে চাচ্চু তার পরিবারকে নিয়ে এবং আমি আমার পরিবারকে নিয়ে থাকবো।
আর দাদু তুমিও কিন্তু আমার পরিবারের মধ্যে আছো।
চাঁদনী বানুর সাথে মারুফের কথা বলা শেষ হলে মারুফ ওর মাকে বলল,মা আজকে থেকেই সব আলাদা করে রাখবে।
আর কালকে থেকে আরেকজন ছুটা বুয়া ঠিক করবে যে ধোয়া,মুছা ও কাটা বাছা করবে।
এবং আগের কাজের খালা এলে বাকি যে কাজ থাকে সেগুলো সে করবে এবং
তোমার ও জেসিকার খেয়াল রাখবে।
মারুফের মা ছেলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
এদিকে মারুফ তার মা’কে বলছে, মা আমি চাইনা সামান্য কিছু টাকার বাঁচানোর জন্য তুমি বা জেসিকা কেউই কষ্ট কর।
তোমার ছেলের আল্লাহর রহমতে সেই সামার্থো আছে তোমাদের ভালো রাখার।
মারুফের কথা শুনে মায়া বেগম বললেন, বাবা তুই আমাদের নিয়ে চিন্তা করিস না।
আর শুন সবাই মিলে বৌমার খেয়াল রাখলে আল্লাহর রহমতে বৌমার বা বাচ্চার কিছুই হবে না।
মারুফ ওর মায়ের কথা শুনে বলল, ইনশাআল্লাহ।
মা আমি জানি তোমায় কিছু বলতে হয় না।
উল্টো তোমার কাছে অনেক বেশি শেখার আছে।
কারণ মা গো আল্লাহ তোমায় অনেক সহ্য ক্ষমতা দিয়েছে তাই তো তুমি এতো বছর এই সংসারটা আগলে রেখেছো।
তোমার ওপরে হওয়া অন্যায় অদেখা করেছো সবকিছু হাঁসি মুখে সহ্য করে আসতে পেরেছো।
সেজন্য দাদুর দায়িত্ব নিশ্চিন্তে তোমার হাতে দেওয়া যায়।
মা তুমি দাদুর খাওয়া দাওয়ার এবং ওষুধের দিকে সবসময় নজর রাখাবে রাশেদ ও কোমলকে দিয়ে।
দাদু যাতে এটা মনে করতে না পারে তার বড় ছেলে ও স্বামী আজ বেঁচে নেই বলে এই সংসারে তার অমর্যাদা হচ্ছে।
মারুফের কথা শুনে মায়া বেগম বললেন, বাবা তুই শান্ত হ্ ।
আমি সবদিকে খেয়াল রাখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
অন্যদিকে চাঁদনী বানু আজকে নতুন এক মারুফকে দেখছে।
আজকের এই মারুফ যে তার বড় অচেনা লাগছে।
আগের মারুফ তো শত অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করতো।
কিন্তু আজকে মারুফ তো কোন কিছুই শুনতে চাচ্ছে না।
চাঁদনী বানু মনে মনে আফসোস করে বলল,তার কিছু ভুলের জন্য এই গুছানো সংসারটা ভেঙে গেলো।
সে ছোট ছেলে ও ওর পরিবারের দিকে নজর দিতে গিয়ে পুরো সংসার ভেসে গেছে।
এদিকে মারুফের কথা শুনে দোলা ক্ষেপে বলে উঠল,তা আলাদা হবে ভালো কথা কিন্তু আমার মেয়ের গায়ে তুমি হাত তুলো কোন সাহসে?
তোমার চাচা এবং আমি কখনো রেশমাকে ফুলের টোকাও দেয়নি ।
আর তুমি ওর গালে আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিলে!
মারুফ ওর চাচীর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
রেশমা অন্যায় করেছে তা চাচী দেখছে না কিন্তু মারুফ শাসন করাতে অন্যায় হয়েছে তা দেখছে !
তাই মারুফ ওর চাচীকে বলল,চাচী রেশমাকে মেরে আমি কোনো ভুল করেনি।
তবে হ্যাঁ ভুল হয়েছে ওকে এক থাপ্পড়ে ছেড়ে দিয়ে।
দোলা মারুফের কথা শুনে ক্ষেপে বলল, মেয়েটা শুধু ওর বোনকে কোথায় পেয়েছো তাই জানতে চেয়েছে আর সেজন্য তুমি ওর সাথে এমন আচরণ করতে পারলে!
তোমার এই আচরণ প্রামাণ করেছে তুমি ওদেরকে কখনো কোমলের মত আপন মনে করোনি।
মারুফ ওর চাচীর কথা শুনে বলল, আমি কি মনে করি তা আমার ভালোই জানা আছে।
আপনার কথায় তো আর সব হবে না।
মারুফের কথা শুনে এবং রাগী মুখ দেখে ঝর্না ভয় পাচ্ছে ।
ভাইয়া যে রেগে আছে তার কথায় ভালোই বুঝতে পারছে।
কিন্তু কি জন্য রেগে রয়েছে তা সম্পূর্ণ বুঝতে পারছে না।
ঝর্না ভয় হচ্ছে সেদিন পালানোর জন্য আজকে না ওকে মেরে আধমরা করে রাখে।
মারুফের কথা শুনে দোলা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারুফ তাকে থামিয়ে দেয়।
তারপর মারুফ ওর দাদুকে বলে, দাদু তুমি এবং তোমার ছোট ছেলের পরিবারের সবাই ঝর্না পালিয়ে যাওয়াতে সব দোষ আমার বৌকে এতদিন ধরে দিয়ে এসোছো।
এখন যেহুতু ঝর্না এখানেই আমাদের সামনে আছে ওর কাছেই জিজ্ঞেস করো আমার বৌ ওকে পালাতে সাহায্য করেছে কিনা?
চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলল,কিরে ঝর্না দাদু ভাই কি বলছে শুনতে পাসনি ?
নাতবৌ কী তোকে পালাতে সাহায্য করেছে?
ঝর্না ওর দাদু ও মারুফের কথা শুনে ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে । ওর ভাইয়া ও দাদু আজ যা কিছু জিজ্ঞেস করছে তার ঠিকঠাক জবাব না দিতে পারলে যে আজ তাদের হাত থেকে ওর রক্ষা নেই তা ভালোই বুঝতে পারছে।
এদিকে দোলা ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলল, ঝর্না মা তুই সবাইকে সত্যিটা বলে দে ।
মারুফের বৌ যে তোর মাথাটা খেয়েছে তা তো মারুফের জানা দরকার।
মারুফ ওর চাচীর কথা শুনে ঝর্নাকে বলল,এই তাড়াতাড়ি সব বলতো আমি শুনে ধন্য হয় কিভাবে আমার বৌ তোর মাথা নষ্ট করেছে বা খেয়েছে!
ঝর্না মারুফের কথা শুনে আমতা আমতা করে বলল, ভাইয়া ভাবী আমার মাথা খেতে যাবে কেনো?
আর ভাবী আমাকে পালাতে সাহায্যেও করেনি।
ভাবী তো জানতোই না আমি পালিয়ে যাবো।
ঝর্নার এসব কথা শুনে দোলা অবাক হয়ে বলে উঠল,মা তুই জেসিকাকে ভয় পেয়ে মিথ্যা বলিস না!
যা সত্যি তাই বল।
ঝর্না ওর মায়ের কথা শুনে বলল,আম্মু আমি মিথ্যে বলছি না তো!
আর সেদিন বর আসার কিছুক্ষণ আগেই আমি একজনকে ভালোবাসি তা ভাবীকে জানায় ।
তার আগে তো জানেই না যে আমি কাউকে ভালোবাসি।
উল্টো ভাবী আমার কথা শুনে সব জানার পরে আমি ভুল করছি তা বলে আমাকে অনেক বুঝায় ।
এবং শেষে এটাও বলে বিয়ে নাহলে দুই বাড়ির সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে আরও কি কি যেনো বলেছে তখন ।
কিন্তু আমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনিনি তাই এখন আর কথা মনে পরছে না।
রেশমা থাপ্পর খেয়ে এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেও ।
ঝর্নার কথা শুনে চুপ থাকতে পারলো না ।
ঝর্নাকে রেশমা বলল,ঠিক আছে মানলাম তুই পালিয়ে যাবি তা বড় মায়ের বৌমা জানতো না।
কিন্তু আমাদের বিশ্বাস তোকে প্রেম করতে নিশ্চয় সে শিখিয়েছে ।
মারুফ রেশমার কথা শুনে মনে মনে হেসে বলছে, ঝর্না কি এতোই ছোট যে ওকে প্রেম করতে আমার বৌ শিখাবে!
কিন্তু এখানে রেশমা ও ঝর্নাও ওর ছোট বোন হয় তাই কিছু বলতে পারলে না।
এছাড়া মারুফের কথা হচ্ছে ঝর্না আগে মুখ খুলুক তার পর ওর যা জানানোর সবাইকে জানাবে।
জেসিকার বাবা ঝর্নার প্রেমিককে চাপ দিয়ে সব কথা বের করছে এবং তা মারুফকে জানিয়েছেন।
ঝর্না ওর বোনের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,এসব কি বলছো আপু?
আমি রিফাতকে দের বছর আগে থেকেই ভালোবাসি।
আর ভাবীতো আমাদের বাসায় এসেছে এক বছরও হয়নি!
তাহলে তুমি শুধু শুধু ভাবীকে দোষ দিচ্ছো কেন!
রেশমা ঝর্নার কথা শুনে বলল , তাহলে ছেলেটির সাথে তোর সম্পর্ক হলো কি করে?
তুই যতই মিথ্যা বলে মারুফ ভাইয়ের বৌকে বাঁচাতে চাস না কেন!
সত্যি তো বের হবেই।
ঝর্না বোনের কথা শুনে বলল, আশ্চর্য আমি মিথ্যে বলতে যাবো কেনো?
আপু শুনো আমাদের দুজনের পরিচয় এবং ভালোবাসা সব কিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে হয়েছে।
দোলা ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলল, ফেসবুকের মাধ্যমে মানে কী?
মারুফ ওদের কথা শুনে বলল, আমি তো চাচ্চুকে সে সময়ে বলেছিলাম ঝর্না মাত্র নবম শ্রেণীতে পড়ছে।
তাই ওকে এখনেই স্মার্ট ফোন কিনে দিতে নিষেধ করেছিলাম ।
কারণ যাতে ঝর্না এতো তাড়াতাড়ি সোশ্যাল জগৎ সম্পর্কে আগ্রহী না হতে পারে।
আর ফোনের বেশি দরকার হলে সাধারণ যে কোন একটি ফোন কিনে দিলেই তো চলতো।
স্মার্ট ফোনে অনেক কিছু আছে এই বয়সেই ও ভালোমন্দ বুঝতে পারবে না।
কিন্তু কে শুনে কার কথা !
চাচ্চু আমার কথা না শুনে তার মেয়েকে ফোন কিনে দিয়েছে আর তার মেয়ে সেটার ভালো ভাবেই অপব্যবহার করছে।
মারুফের কথা শেষ হতেই ইসহাক বলল,তা বাবা আমি ওকে স্মার্ট ফোন কিনে দিয়ে কী এমন দোষ করেছি?
তা তো জানতে হচ্ছে!
ইসহাক এতক্ষণ দোকানে ছিল কিন্তু ঝর্না মারুফের সাথে বাসায় ফিরে এসেছে এ খবর ফোনে স্ত্রীর কাছে শুনেই দোকানে থেকে বাসায় এসে পড়েছে।
এখানে কি হয়েছে বা হচ্ছে তার জানা নেয় এসে শুধু স্মার্ট ফোনের কথাটা শুনে নেয়।
ফোনের কথা শুনে মারুফের কাছে জানতে চায় মেয়েকে মোবাইল দিয়ে সে কী দোষ করেছে?
মারুফ ওর চাচ্চুর কথা শুনে বলতে শুরু করল, ঝর্নাকে ফোন কিনে দিতে নিষেধ করার আমি কে?
আমি তো শুধু ওকে বলেছি স্মার্ট ফোন দিতে মানা করছি।
ইসহাক মারুফের কথা শুনে বলল, স্মার্ট ফোন নিয়ে আবার কি হলো!
চাচ্চুর কথা শুনে মারুফ বলল,ঝর্না স্মার্ট ফোন হাতে পেয়েই তো বান্ধবীদের সাহায্যে ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছিলো।
ফেসবুক এবং অন্য সোশ্যাল মাধ্যম হচ্ছে একটি ভিন্ন জগৎ ।
চাঁদনী বানু মারুফের কথা শুনে বলল, এ আবার কেমন জগৎ?
মারুফ চাঁদনী বানুর কথা শুনে বলল,দাদু তোমাদের কারো সাথে পরিচিত হতে হলে তার কাছে যেতে হবে।
কিন্তু ফেসবুকে দেশ থেকে বিদেশে বলো বা বাংলাদেশের মধ্যেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানের মানুষের সাথে পরিচিত হতে কাছে যেতে হয় না।
যেখানে একটা চিঠি পাঠালে পৌঁছাতে সপ্তাহ চলে যাবে সেখানে কিন্তু একটি ম্যাসেজ বা ই-মেইল করলে মূহুর্তের মধ্যেই পৌঁছে যাবে দেশ বিদেশে।
চাঁদনী বানু অবাক হয়ে মারুফের কথা শুনছে আর ভাবছে কলিযুগে কত কি দেখতে হবে!
এদিকে ইসহাক মারুফের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল, এতো কথা না পেঁচিয়ে সোজা করে কী হয়েছে বললেই তো হয়?
মারুফের কথা শুনে যে ওর চাচ্চু বিরক্ত বোধ করছে মারুফ তা বুঝতে পেরে বলল, চাচ্চু ঝর্নাকে ওর বান্ধবী ফেসবুক একাউন্ট খুলার দেওয়ার পর থেকেই ঝর্না ফেসবুকে অপরিচিত ছেলেদের সাথে প্রতিদিন ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতো।
তাদের মধ্যে একজনের সাথে ঝর্না বেশিই কথা বার্তা বলতো।
নতুন ফোন সাথে ফেসবুকে ,ম্যাসেঞ্জার ওর সময় ভালোই যাচ্ছিল।
আস্তে আস্তে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছিল আর ফোনের দিকে ঝুঁক বেড়ে যাচ্ছিল।
রাতের ফোন চালাতো তাই ঘুম কম হওয়ার কারণে খাওয়া দাওয়া অরুচি ও চোখের নিচে কালো দাগ পরায় তোমরা মনে করেছিলে ঝর্না স্কুলে পড়ার চাপে অসুস্থ্য হয়ে গেছে।
তাই ওকে চাপমুক্ত থাকতে বললে ,কোন রকমে পাশ করতে পারলেই চলবে।
পড়াশোনার চাপ নেই
সেই সাথে এতো দিনে ফেসবুকের বিশেষ বন্ধু ঝর্নার মনে অনেকটাই জায়গা দখল করে নেয়।
আস্তে আস্তে ছেলেটার সাথে ও প্রেম করতে শুরু করে।
তার পর থেকেই ছেলেটি মাঝে মাঝে ওর স্কুলে তারপর কলেজেও এসে ঝর্নার সাথে দেখা করতো।
চাচ্চু তুমি ওকে এই বয়সে স্মার্ট ফোন না দিলে ঝর্না এ পথে যেতে পারতো না।
মারুফের কথা শুনে ইসহাক বলেন,মেয়েটা ওর বান্ধবীদের কাছে ফোন আছে তা দেখে ওর কাছে ফোন নেয় তাতে লজ্জা পেতো।
সবার কাছে ছোট হয়ে যাবে ভেবে তোর চাচীই বলল ওকে ফোন কিনে দিতে।
মারুফ ওর চাচ্চুর কথা শুনে বলল, তোমার এ কথার জবার আমার কাছে আছে কথা শেষে বলছি।
তো ছেলেটার সাথে বারবার দেখা হওয়াতে ঝর্না ছেলেটার প্রতি আরও দুর্বল হয়ে যায়।
তারমধ্যে চাচী ওকে বিয়ে দিতে চায়।
ঝর্না ছেলেটাকে সে কথা বললে ছেলেটা ওকে ছাড়া বাঁচবে না সে কথা বলে।
এবং ওকে বিয়ে করতে চাই সেকথা জানায়।
ছেলেটি ঝর্নাকে বাসায় থেকে পালিয়ে ছেলেটার কাছে একবারে এসে পড়তেও বলে।
এদিকে ঝর্না যেহুতু ছেলেটাকে ভালোবাসে এবং ছেলেটার প্রতি দুর্বল সেজন্য বাসায় থেকে পালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে।
আর বিয়ের দিন ঝর্না সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যায়।
বিয়ের দিন ছেলেটা এই বাড়ির আসে পাশে ছিল ঝর্নার কথামত।
এরপর ঝর্না বাসা থেকে বের হলে ছেলেটা ওকে নিয়ে এক বন্ধুর বাসায় পালিয়ে যায়।
অবশ্য বন্ধুর বাসায় যাওয়ার আগেই কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে দুজনে।
তারপর ওকে নিয়ে সেই বন্ধুর বাসায় উঠে।
ওরা এতদিন সেখানেই ছিল।
মারুফের কথা শুনে ইসহাক বলল, তাহলে তোর সাথে ওর দেখা হলো কিভাবে?
মারুফ ইসহাকের কথা শুনে বলল, সকালে আব্বু মানে জেসিকার বাবা ফোন করে ঝর্নার খোঁজ পেয়েছে তা আমাকে জানায় ।
তার ফোন পেয়ে আমি ওকে আনতে যায়।
দোলা মারুফের কথা শুনে বলল,তা তোমার শ্বশুরের আমার মেয়ের খোঁজ নেওয়ার হঠাৎ প্রয়োজন পরল কেন?
দোলার কথা শুনে মারুফ বলল, কারণ ঝর্নার জন্য তার মেয়ের সাথে সবাই অন্যায় আচরণ করছিলেন তা আব্বু সহ্য করতে পারছিলো না।
তাই আব্বু ঝর্না যেদিন পালিয়ে যায় সেদিন থেকেই লোক লাগিয়েছে ওর খোঁজ খবর বের করতে।
তার লোকজন আরও দুইদিন আগেই ঝর্নার খোঁজ খবর পেয়ে তাকে জানায়।
সে এই দুইদিন ওদের ওপরে নজর রেখেছে এবং ছেলে সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়ে তারপর আজকে সকালে আমাকে ফোনে ঝর্নার বিষয়ে জানায় ।
আর চাচ্চু তুমি তখন বললে না নিজের মোবাইল না থাকায় ঝর্না লজ্জা পেয়েছে।
কিন্তু ওর তো লজ্জা পাওয়ার কথা ছিলো না।
লজ্জা পাওয়ার কথা ছিল তো সে সব বাবা মায়ের যারা ডিজিট্যাল যুগ ফোন না হলে চলে না এসব কথা বলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেয়।
ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ মুঠোবন্দী হয়ে থাকে স্মার্টফোনের রঙিন দুনিয়ার।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেয়ে লজ্জা পাবে তার জন্য তাকে ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই ফোন দিয়ে সে কি করছে তার খোঁজ খবর নেওয়ার দরকার মনে হয় না!
আজকাল টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় চোখ রাখলেই দেখা যায় খুন ধর্ষণে ছড়াছড়ি।
আমরা নিউজ দেখার পরে আফসোস করি , কখনো ছেলেটাকে দোষী সাব্যস্ত করি আবার কখনো মেয়েটার চরিত্রে আঙুল তুলতে দ্বিধা বোধ করি না।
আসলে দোষী তো বাবা মায়েরা।
আধুনিক যুগ একটা স্মার্ট ফোন না হলে চলে।
এসব ভেবে ছেলেমেয়ের হাতে স্মার্ট ফোন দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ।
ফোন দিয়ে সে কি করছে কোনো খারাপ পথে যাচ্ছে কি না তার হিসেব রাখে না!
তারা নিজেদের নিয়ে এতোই মগ্ন হয়ে যায় এদিকে তাদের সন্তানেরা কি করছে তার খোঁজ খবর রাখতে ভুলে যায়।
ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট ভুল থেকে শাসন না পেলে বড় ভুল করার সাহস পায়।
চাচ্চু আমরা ছোট ভুল দেখলে এটা ভেবে ছেড়ে দেয় যে সামান্য ভুলে একদিনেই তো আর অন্যায় পথে চলে যায় না।
মারুফের কথা শুনে ইসহাক বলল, তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছ সবাই কম বয়সে ফোন পেলে খারাপ হয়ে যায়?
মারুফ ওর চাচ্চুর কথা শুনে বলল , আমি সেটা কখনোই বলবো না।
সবাই এক না সেটা আমিও বিশ্বাস করি।
অনেক এই সোশ্যাল জগৎ থেকে নিজেকে সামলে রাখতে জানে ।
তবে সবাই না।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যারা নিজদের সামলাতে পারে না তাদের সারাটা জীবন অন্ধকারে তলিয়ে যায়।
যেমন চাচ্চু তুমি একবার ভেবে দেখো ঝর্না কতবার ছেলেটার সাথে দেখা করতে গেছে ছেলেটা যদি ওকে খুন বা ধর্ষণ করতো তখন কি হতো?
তখন সমাজের কাছে মুখ দেখাতে কি করে?
কারণ এই সমাজ ধর্ষক না ধর্ষিতাকে ঘৃনা করে।
মারুফের কথা শুনে ঝর্না প্রতিবাদ করে বলে উঠলো, ভাইয়া রিফাত এরকম ছেলে না।
মারুফ ঝর্নার কথা শুনে বলল,তা বোন তোর রিফাতকে ভালো ভাবিই কি করে?
যে ছেলে প্রেমিকার কাছে নিজের মিথ্যা পরিচয় দেয়।
সে ভালো হয় কি করে আমার জানা নেই!
ঝর্না মারুফের কথা শুনে বলল, ভাইয়া রিফাত আমাকে হারানোর ভয়ে মিথ্যা বলেছে।
মারুফের কথাটা শুনে চাঁদনী বানু মারুফকে বলল ,ছেলেটির কাহিনী সব খুলে বলো তো আমরাও একটু শুনি।
মারুফ চাঁদনী বানুকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোমার নাতি জামাই মানে ঝর্নার জামাই ঝর্নাকে লোভ দেখিয়ে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে।
ঝর্না প্রতিবাদ করে বলে, ভাইয়া আমাদের ভালোবাসাকে ফাঁদ বা লোভ বলতে পারো না তুমি?
মারুফ ঝর্নার কথা শুনে মনে চাচ্ছে থাপ্পর মেরে দাঁত ফেলে দিতে কিন্তু এক বোনকে মেরে অন্যায় করেছে তাই ঝর্নাকে মেরে আর তাদের কাছে অপমানিত হতে চাচ্ছে না।
সেজন্য মারুফ নিজের রাগকে শান্ত করে দাদুকে বলল, দাদু ছেলেটা ঝর্নার সাথে প্রেম করার আগেই নিজের সম্পর্কে মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে।
ছেলেটি ঝর্নাকে বলেছে সে অনার্স করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ঢাকায় নিজেদের বাড়ি ও গাড়ি আছে।
ছেলের বাবার নিজের গার্মেন্টস আছে।
ছেলেটি বাবার একমাত্র সন্তান।
তা শুনেই ঝর্না ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
আর যেহেতু ছেলেটি দেখতে শুনতে ভালই।
ঝর্না রিফাতের ছবি দেখে এবং বাড়ি গাড়ি আছে এসব শুনেই প্রেমে পরেছে।
রিফাতের আসল পরিচয় হচ্ছে ছেলেটা মেট্রিক ফেল।
গার্মেন্টসে চাকরি করে।
বাবা মা বেঁচে নেয় এই পৃথিবীতে চাচা ছাড়া রক্তের সম্পর্কের কেউ নেয়।
যে চাচা আছে তিনি দেশের বাড়িতে থাকে।
আর ছেলেটা আশুলিয়ার ওদিকে টিনসেটে এক রুম নিয়ে কয়েকজন মিলে ভাড়া থাকে ।
তবে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে যার অবস্থা ভালো।
তার বাসায় ছিলো ওরা এতদিন।
আসলে দাদু ছেলেটি গরিব তাতে সমস্যা ছিল না কিন্তু ছেলেটা লোভী সেটাই সমস্যা।
রিফাতের বন্ধু ওকে বুদ্ধি দিয়েছিলো কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের যাদের ছেলে নেই। এমন একটি পরিবারের মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে।
যাতে ঘরজামাই হয়ে থাকতে পারে।
আর মেয়ের বাপের যা কিছু আছে সব এক সময় তার হয়ে যাবে।
এসব চিন্তা করেই ঝর্নাকে ফাঁসানো হয়েছে।
অবশ্য ফেসবুকে এমন অহরহ ঘটনা ঘটছে।
এখানে তুমি আসল পরিচয় লুকানো মানুষ বেশি নাহলেও কম পাবে না।
তবে এখানে কেউ কেউ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিজের পরিচয় গোপন করে আবার অনেকে ছেলে মেয়েদের নিজেদের জালে ফাঁসানোর জন্য।
মারুফের কথা শুনে চাঁদনী বানু বলে, এমন লোভী ছেলের কাছে ঝর্নাকে রাখা ঠিক হবে না।
এরমধ্যে দোলা বলে উঠল,তা আম্মা মারুফের শ্বশুর যে সব সত্য বলছে এর প্রমাণ কি?
তাই এ বিষয়ে পরে কথা বলা ভালো হবে।
মারুফ দোলার কথা শুনে বলল, চাচী তা আপনাদের ইচ্ছে।
আজকে থেকে আপনাদের কোনো ব্যাপারেই আমি বা আমার পরিবার থাকবে না।
মারুফের কথা শুনে ইসহাক বলল,এই মারুফ তুই এসব কি কথা বলছিস!
তোদের এবং আমার পরিবার আলাদা এটা বললি কি করে!
মারুফ ওঁর চাচ্চুর কথা শুনে বলল,চাচ্চু আজকে থেকে আমরা আলাদাই।
কারণ একসাথে থেকে আমার বৌকে তো রেশমার হাতে মার খেতে ছেড়ে দিতে পারিনা।
তবে চাচ্চু রেশমাকে যেনো আমার বৌয়ের আশেপাশের না দেখি। তাহলে ও যে আমার বোন হয় তা ভুলে যাবো।
মারুফ তার চাচ্চুকে কথাটা বলে জেসিকার কাছে চলে আসে।
মারুফ রুমে এসে দেখে জেসিকা এখনো ঘুমাচ্ছে।
তা দেখে মারুফ চুপচাপ এসে জেসিকার পাশে শুয়ে জেসিকাকে হালকা করে টেনে নিজের কাছে নিয়ে বুকের ভিতরে জরিয়ে ধরে,
জেসিকার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
এই কয়দিনে তার বৌকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
সে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ও দাদুর জন্য পারেনি।
কিন্তু আজকে জেসিকার অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারে নাই।
রেশমা করা অন্যায় ওর সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে।
তাইতো মুখ বুজে থাকতে পারেনি।
মারুফ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে আগে নিজের পরিবার তারপর অন্য সব।
এসব ভেবে জেসিকার মুখে দিক তাকিয়ে মারুফ নিজের ওষ্ঠ ধারা জেসিকার গোলাপী ঠোঁটে উষ্ণ স্পর্শ একেঁ দিলো।
মারুফের স্পর্শ পেয়ে জেসিকা কেঁপে উঠে বিরবির করে বলছে,,,
নোটঃ
মানুষের কল্যাণের জন্য প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার।
প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ যেমন চাঁদে যেতে সফল হয়েছে।
তেমন প্রযুক্তি বিভিন্ন সফটওয়্যারের আবিষ্কারে সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
কিন্তু সব কিছুর ভালো খারাপ দুটো দিকই আছে।
কিছু লোকেরা প্রযুক্তির ভালো দিক ফেলে খারাপ দিকে ঝুঁকে ।
বাচ্চাদের হাতে কম্পিউটার,ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজেরা আপন দুনিয়াতে ব্যস্ত থাকে।
স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন অ্যাপস , গেমস,ভিডিও ,পূর্ণ্যগ্রাফি ,টিকটক,লাইকি,ফেসবুকে ,ভাইভা ইত্যাদি প্রযুক্তিতে
অনেক কোমলমতি শিশু কিশোর কিশোরীরা আসক্ত হয়ে পড়ে।
তাদের জীবন তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে ।
অনেকে জরিয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
লোভ লালসায় পরে কিছু মানুষের জীবন মাঝ পথে থেমে যায়।
সত্য মিথ্যার খোলসে ঢাকা কিছু মানুষ রূপি অমানুষের কারণে কত প্রাণ ঝরে পড়ে অকালে।
কত মেয়ে হয় ধর্ষিতা।
কিছু ছেলে আত্মহত্যা করে প্রেমিকার ছলনায়।
তাই মা বাবার খেয়াল রাখা উচিত তাদের বাচ্চারা তাদের চোখের আড়ালে কোনো অপরাধ কর্মকান্ডে জরিয়ে যাচ্ছে না তো!
কারণ মা বাবায় হচ্ছে সন্তানের প্রথম শিক্ষক।
,,,,
দুঃখিত কিছুদিন ধরে শরীর অসুস্থ্য তাই নিয়মিত গল্প দিতে চেষ্টা করে পারছি না।
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে সাথে থাকবেন।
লেখা সম্পূর্ণ হলে এমনিতেই গল্প দিবো নেক্সট বলা লাগবে না।
গল্প এরচেয়ে বড় করে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।