গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৩৫।
লেখাঃ#মেহের।

এদিকে মারুফ কিছু একটা নিতে ঘরের দিকে যাচ্ছিল
তারমধ্যে জেসিকার চেঁচামেচি শব্দ শুনে দৌড়ে ভিতরে আসে।

এসে দেখে জেসিকা সোহাগের সাথে রাগারাগী করছে।
মারুফ সোহাগকে ভিতরে দেখে বুঝতে পারল এই ছেলে আবার কিছু একটা করেছে।
নাহলে অকারণে জেসিকা রেগে যাবার কথা না।

এসব ভাবতে ভাবতে মারুফ ওদের কাছে গিয়ে জেসিকাকে জিজ্ঞেস করল, এত রেগে যাচ্ছো কেন?
আর সোহাগকে বলল, বরযাত্রীর সবাই তো বাহিরে আপনি এখানে কি করছেন?
সোহাগ কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেসিকা মারুফের কথা শুনে ওঁর দিকে তাকিয়ে বলল, মারুফ এই অসভ্য লোকটা আমাকে একা পেয়ে পিছনে থেকে জরিয়ে ধরেছে।
এর সাহস হলো কী করে আমাকে ছোঁয়ার?

মারুফ জেসিকার মুখে সোহাগ ওকে ছুঁয়েছে শুনে রাগ উঠে গেল।
ভুলে গেল সোহাগ তার বোনের হবু দেবর।
মারুফ রেগে সোহাগের গালে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ওঁর শার্টের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলছে ,তোর সাহস হয় কি করে আমার বৌকে স্পর্শ করার?

মেয়েদের দেখলে আর হুস থাকে না তাই না!
আজকে তোকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
যেনো কোন মেয়ে মানুষ দেখলে মা বোন ছাড়া কিছুই ভাবতে না পারিস।
এদিকে সোহাগ মারুফের হাতে থেকে ছুটতে চেষ্টা করছে।
কিন্তু মারুফ শক্ত করে শার্টের কলার ধরায় ছুটতে পারছে না।

অন্যদিকে মারুফের চিৎকার শুনে বাহিরে থেকে অনেকেই এসে পরেছে।
সে সময় সফিকের বাবাও এসেছে।

সে এসে দেখে মারুফ সোহাগের শার্টের কলার ধরে আছে।
সফিকের বাবা তা দেখে বলল,এই ছেলে তোর সাহস হলো কিভাবে আমার ছেলের শার্টের কলার এভাবে ধরে রাখার?

সোহাগ তার বাবাকে দেখে বলল,বাবা দেখো না মারুফ ভাই বিনা কারণে আমার গায়ে হাত তুলেছে,
আমাকে থাপ্পর মেরেছে।
বাবা তুমি কি আমাকে অপমান করাতে এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করছো ?
যারা বিয়ের আগেই তোমার ছোট ছেলের সাথে এমন আচরণ করছে তাদের বোন কেমন হবে তা ভাবতে পার!

মারুফ সোহাগের কথা শুনে বলল, তুই অন্যায় করে তা ঢাকতে আমার বোনের নামে উল্টাপাল্টা কিছু বলবি তো এমন অবস্থা করবো যে তুই কথা বলার অবস্থায় থাকবি না।

সোহাগের বাবা ছেলের গায়ে হাত তুলছে শুনে এবং তার সামনেই ছেলেকে শাসানো দেখে মারুফকে চর দিয়ে বলল,এই ছোকরা তুই ওঁর গায়ে হাত তোলার সাহস কোথায় পেলি?

দোলা সফিকের বাবার কথা শুনে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না মারুফ তার ছেলেকে অপমান করেছে সেজন্য বেচারা রেগে তুই তামারী করছে।
ছেলেকে অপমান হতে দেখে কোন বাবাই চুপ থাকতে পারবে না।
আর জেসিকার মুখ দেখে বোঝায় যাচ্ছে এসব কিছুর মুলে এই মেয়ে আছে।

ওদিকে চাঁদনী বানু,মায়া আর সবাই বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে!
ছেলের বাবা মারুফের সাথে এমন আচরণ করছে কেন?
এটা কোন ধরনের অভদ্রতা।

মারুফ ও সফিকের বাবার চিল্লাচিল্লি শুনে স্টেজে বরের কাছে যে মানুষগুলি ছিলো তারাও বাড়ির ভিতরে আসে কি হয়েছে দেখতে !

মারুফের পরিবারের ভাগ্যে ভালো আজকে আকদের অনুষ্ঠানে নিকট আত্মীয় ছাড়া বাহিরের কোন মানুষকে দাওয়াত করেনি।
নাহলে এই পরিবার আজকের পরে থেকে সমাজে মুখ দেখাতে পারতো না।

সবাই অবাক হচ্ছে ছেলের বাবার মারুফের সাথে এমন আচরণে ।
আত্মীয় স্বজনরা সবাই জানে মারুফের মত ভালো ছেলে সচরআচর হয়না।
আর সেই ছেলের সাথে এই লোক এমন ভাবে কথা বলছে।

এক আত্মীয় তো বিরবির করে বলল,এতক্ষণ দোলা কিনা তাদের কাছে এই লোক আর তার পরিবারের সুনাম করছিল।
বড় লোক ও শিক্ষিত পরিবার বলে গুন গান করছিল।
মুরব্বি হয়ে মারুফের সাথে যেভাবে কথা বলছে ।
এই যদি হয় শিক্ষিত পরিবারের ছিরি তাহলে এমন শিক্ষিত পরিবার দরকার নেয়।

এদিকে মারুফ সোহাগের বাবার কথা শুনে বলল, আঙ্কেল আপনি ভুল বুঝছেন।
আপনার ছেলে আমার বৌয়ের সাথে খারাপ আচরণ করেছে।
তাই তাকে মেরেছি।
আর তাকে মেরে আমি কোন অন্যায় করিনি।

মারুফের কথা শুনে সফিক বলল, সোহাগ মারুফ ভাই কি সত্যি বলছে?

সফিক তার ভাইয়ের চোখ দেখে বুঝতে পারছে সে অন্যায় করেছে।
কিন্তু নিজেদের সম্মানের কথা ভেবে দোষ এরিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তাই প্রশ্ন করে ভাইকে ইশারায় উত্তরে মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বলছে।

সোহাগ বড় ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে ও ইশারা দেখে বলল, বিশ্বাস কর ভাইয়া আমি ওয়াশরুমে যেতে ভিতরে ঢুকেছি।
সে সময় ওনার বৌয়ের সাথে আমার সামান্য ধাক্কা লাগে।
আমি সাথে সাথে ওনাকে সরিও বলি।
কিন্তু সে সময় মারুফ ভাই এখানে আসলে ওনি মারুফ ভাইকে আমার নামে মিথ্যা কথা বলল।
আমি নাকি তাকে জড়িয়ে ধরেছি।
আর মারুফ ভাই সত্যিটা না শুনেই আমাকে আঘাত করে।

ভাইয়ের উত্তর শুনে সফিক সুস্থি পেলো।

মারুফ সোহাগের কথা শুনে বলল, সফিক ও মিথ্যা বলছে।
বিশ্বাস না হলে আমার বৌয়ের থেকে জিজ্ঞেস করুন।

এরমধ্যে ‌সফিকের বাবা বলল,বড় লোকের মেয়ে ছেলে কেমন হয় তা সবার জানা আছে।
মেয়ে ভালো হলে এই সামান্য কারণে আমার ছেলেকে স্বামীর হাতে অপমান করাতো না।
যেখানে ওঁর ননদের সাথে আমার বড় ছেলের একটু পরেই বিয়ে হতে যাচ্ছিল।

এদের কথার মাঝে দোলা এসে বলে,ভাই ওঁর ভুল হয়ে গেছে ওকে মাফ করে দিন।
এই মারুফ ওনার কাছে মাফ চাও বাবা।

মারুফ ওঁর চাচীর কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি মাফ চায়বো কেন?
উল্টো সোহাগ আমার বৌয়ের কাছে মাফ চায়বে।

সোহাগের বাবা কথাটা শুনে বলল,এই বাজারের মেয়ে ছেলের কাছে আমার ছেলের মাফ চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সফিক এই বাড়িতে তোকে বিয়ে করাবো না এখান থেকে এখনেই চল।

মারুফ সফিকের বাবার মুখে জেসিকাকে বাজারের মেয়ে শুনে বলল, আপনি মুরুব্বি হয়ে এত নীচ কথা বলেন কিভাবে।
আরেক বার এমন কথা বললে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে দুই বার ভাববো না।
সফিকের বাবা মারুফের কথা শুনে বলল, এতো অপমানের পর এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চায় না।
সফিক যলদি চলে আয়।

সফিক ওঁর বাবার কথা শুনে কোন প্রতিবাদ করতে পারে না।
ওদের সংসার সব সিদ্ধান্ত ওঁর বাবাই নেন।

অন্যদিকে সফিকের বাবার কথা শুনে, ইসহাক, দোলা এবং চাঁদনী বানু তাকে বিয়ে না ভাঙতে
অনুরোধ করলো ।
তারা আশ্বাস দিল দরকার হলে মারুফ ও জেসিকা তাদের কাছে মাফ চায়বে।
কিন্তু তাও যেনো বিয়ে না ভাঙ্গেন।
আজকে বিয়ে ভেঙে গেলে ঝর্নার জীবনে কালো দাগ লেগে যাবে।
দরকার হলে সবাই তাদের কাছে মাফ চায়বে তাও বললো।

কিন্তু সফিকের বাবা তাদের কোন কথাই কানে নেয়নি।
বলেছে জুতা মেরে গরু দান করতে হবে না।
উল্টো সফিকের বাবা ইসহাক, দোলা এবং চাঁদনী বানু অপমান করে চলে গেল।

সফিকের ঝর্নাকে অনেক পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও ওঁর বাবার কথার উপরে কোনো কথা না বলে বাবার সাথে চলে গেল।

তারা যাওয়ার পর একে একে সব আত্মীয় স্বজনরাও যে যার বাড়িতে চলে যায় ।

এদিকে দোলা রেগে গিয়ে জেসিকাকে থাপ্পর মারে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।
দোলা রেগে জেসিকাকে বলে , সুন্দরী মেয়েদের কি দেশে অভাব আছে যে তোকে সোহাগ জরিয়ে ধরতে যাবে!
নিশ্চয় তুই কিছু দেখিয়ে সোহাগের মাথা বিগড়ে দিয়েছিস।
তাই তোকে জরিয়ে ধরেছে।
মারুফের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে তুই এসব নাটক করছিস।
দোলা মনে করছে একমাত্র জেসিকা জন্য তার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে।

মায়া বেগম ও মারুফ ভাবতেই পারেনি দোলা হঠাৎ করে জেসিকার গায়ে হাত তুলবে।
এবং সে একজন মা হয়ে বাড়ির বৌকে এমন বাজে কথা বলবে।

জেসিকাকে বাজে কথা বলাতে মারুফ ওঁর চাচীকে কিছু বলতে যাবে,,
এরমধ্যে কোমল দৌড়ে এসে বলল,ভাইয়া
ঝগড়ার পরে থেকে ঝর্না আপুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

এই কথাটা শুনে যেনো ঘরের মধ্যে বোম ফাটলো।

সবাই ছোটাছুটি করে সারা বাড়িতে তন্ন তন্ন করেও ওকে খুঁজে পায়নি।
তবে ওঁর রুমে একটা চিরকুট পেয়েছে।
যাতে লেখা আছে,এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমি একজনকে ভালোবাসি।
কথাটি তোমাদেরকে এতদিন ভয়ে বলতে পারিনি।
তবে যাওয়ার আগে সাহস করে একজনকে জানিয়েছি ।
আমি চলে যাচ্ছি তোমরা ভালো থেকো।
আমার জন্য কোন চিন্তা করো না।
লেখাটা পরে দোলা বিলাপ করতে শুরু করে, এই একজন জেসিকা ছাড়া অন্য কেউ না।
জেসিকা ইচ্ছে করে তার মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
তার সোজা সরল মেয়েটার মাথা নষ্ট করেছে।
এজন্যই এতদিন তার মেয়েকে জেসিকা সাথে সাথে রেখেছে।
আজকে সুযোগ বুঝে তার মেয়ের ক্ষতি করেছে।

চাঁদনী বানু দোলার কথা শুনে বলল, ছোট বৌ তোমার মেয়ে তো কারো নাম লেখে যায়নি।
তাহলে বুঝবে‌ কিভাবে একজন কাকে বলল।

দোলা শাশুড়িকে বলল,আম্মা এইবদ মেয়ে ছাড়া আমার মেয়ের ক্ষতি আর কেউ করবে না।
জেসিকার মা ও বাবা এখানে এসে দেখে বরযাত্রী চলে গেছে তার জন্য দোলা বেগম জেসিকাকে বকাঝকা করছে।

তারা এসে এগুলো দেখে চুপচাপ সব সহ্য করল।
কিন্তু দোলা এখন তাদের মেয়েকে যা নয় তাই বলছে।
এমনকি তার মেয়ের চরিত্র‌ নিয়ে খারাপ কথা বলতেও ছাড়েনি।
এসব দেখে জেসিকার বাবা বলল, আপনার মেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে তার জন্য আমার মেয়ের সাথে আপনি এমন জঘন্য ব্যাবহার করতে পারেন না আপা।
জেসিকা দেখছে ওঁর বাপি রেগে যাচ্ছে তাই বাপির কাছে গিয়ে বলল,বাপি তুমি শান্ত হওতো
ঝর্নাকে পাওয়া যাচ্ছে না তাই চাচী কি থেকে কি বলছে নিজেও বুঝতে পারছে না।

জেসিকার কথা শুনে দোলা আরও ক্ষেপে বলল, এই মাইয়া আমার সামনে সাধু গিরি করবি না।
বর আসার আগে তুই তো ছিলি ঝর্নার কাছে।
প্লান করে ঝর্নার দেবকে রূপ দেখিয়ে কাছে ডেকে মারুফকে উস্কে বিয়ে বানচাল করছিস।
আর সুযোগ বুঝে তুই আমার মেয়েকে গুম করেছিস।

জেসিকা দোলার কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যায়।
মারুফ চাঁদনী বানুকে উদ্দেশ্য করে বলে,দাদু চাচী কিন্তু বেশি করছে।
তাকে থামতে বলো।
তার কোন অধিকার নেই আমার বৌয়ের সাথে এমন আচরণ করার।

মারুফের কথা শুনে চাঁদনী বানু দোলাকে থামতে বললেন, তারপর কোমলকে ডেকে জেরা করে সে এই বিষয়ে কিছু জানে কিনা।
কোমল তার দাদুকে বলল সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না।
চাঁদনী বানু এবার জেসিকাকে জিজ্ঞেস করে সে কিছু জানে কিনা?
জেসিকা চাঁদনী বানুকে ঝর্না বলা কথাগুলো বলল।
ঝর্না জেসিকাকে বলার পরে সে যে এসব কিছু বাঁধ দিয়ে ওকে সামনে এগিয়ে যেতে বলেছে।
আর ঝর্না এমন কিছু যেনো না করে যাতে এ বাড়ির সম্মান ধূলোয় মিশে যায়।
চাঁদনী বানু বলল। দাদু ওকে এসব বলেও বুঝিয়ে ছিলাম।
তারপরও যে ঝর্না এমন কিছু করবে ভাবতেই পারেনি।

চাঁদনী বানু সব শুনে বলল,নাতবৌ তোমার আগেই উচিত ছিল আমাদের জানানো।
তুমি আমাদের জানালে আমরা আগে থেকেই সে মত ব্যাবস্তা নিতে পারতাম।
তা না করে তুমি আমাদের কিছুই বলোনি।
আর না বলে ওকে সুযোগ করে দিয়েছো পালাতে।
ঝর্না নাহয় ছোট মানুষ তাই না বুঝে ভুল পথে পা দিয়েছে।
তুমি তার বড় ভাবী হয়ে তাকে বাঁধা না দিয়ে তার থেকে বড় ভুল করেছো।
এখন ঝর্নার সাথে খারাপ কিছু হলে তার দায়ভার কে নিবে?

দোলা তাদের কথা শুনে বলল, আমার কথা তো প্রথমে কেও বিশ্বাস করলেন না।এ
ই মেয়েটা আমার ঝর্নাকে ভাগিয়ে দিয়েছে।
এই মেয়ে বাপের বাড়িতে এতকাল নষ্টামি করে এসেছে।
এখন আমার মেয়েকেও
তার মত বানাতে চায়।
আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হলে ওকে ছাড়ব না।

মারুফ দোলার কথা শুনে রেগে গম্বীর হয় জেসিকাকে বলল, তুমি জানতে ঝর্না কাওকে ভালবাসে এবং পালিয়ে য়েতে চায়?
মারুফের রাগি মুখ দেখে আর কথা শুনে জেসিকা ভয় পাচ্ছে।
মানুষটা তাকে ভুল বুঝবে না তো!

মারুফ জেসিকাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকের সুরে বলল, তুমি জানতে কিনা তা বল?

জেসিকা মারুফের ধমক শুনে ভয় পেয়ে বলল,হ্যাঁ জানতাম।
তবে আমি আগে থেকে এসব জা…
মারুফ জেসিকার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,চুপ আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না।
এই মেয়ে তোমাকে মানা করেছি না ঝর্নার ব্যাপারে নাক গলাতে?
জেসিকা মারুফের কথা শুনে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।

তা দেখে মারুফ বলল, তাহলে তুমি ওকে সহযোগীতা করলে কেন?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, তুমি বিশ্বাস করো ও আমাকে এসব কথা বর আসার কিছুক্ষণ আগেই বলেছে।

কথাটা শুনে তোমাদের বলতে খুঁজে সামনে পায়নি।
কারণ সে সময়ে বর এসে পরেছিল তাই তোমরা সবাই তাদের নিয়ে ব্যাস্ত ছিল।

জেসিকার কথা শুনে মারুফের কিছুটা খারাপ লাগছে।
রাগের মাথায় জেসিকার গায়ে হাত তুলছে তা ভেবে ওঁর ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে।
এমনিতেই চাচীর ওকে মেরেছে আর সেও মারল মেয়েটাকে।
আসলে দোলা যখন অকথ্য ভাষায় জেসিকাকে গালিগালাজ করছিল তা শুনে মারুফের রাগ উঠে যায়।
চাচীকে কিছু বলতে না পেরে সে ঝাল জেসিকার ওপরে ঝেড়েছে।
জেসিকা মারুফকে চুপচাপ দেখে বলল, তুমি বিশ্বাস করো আমি ঝর্না ও কোমলকে নিজের বোনের মত মনে করি তাই ভুলেও ওদের কোন ক্ষতি হোক তা চায় না।

ইসহাক এসব শুনে বলল,বোন মনে করলে আমার মেয়েটার ক্ষতি করতে পারতে না।
আমরা তোমার কি এমন ক্ষতি করেছি ?
যে আমার মেয়েটার সাথে এমন আচরণ করলে।
ঝর্নার বড় বোন বলল,ও তাহলে এতদিন আমাদের উপরে উপরে আদর যত্ন করতে।
আর মনে মনে আমাদের জন্য বিষ পুষতে।
তুমি যে একটা দুই মুখো সাপ তা এতদিন আমরা বুঝতেই পারিনি।
জেসিকা ঝর্নার বোনের মুখে এ কথা শুনে বলল,আপু বিশ্বাস করেন আমি নির্দোষ।

ঝর্নার বোন বলল,শুনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না।
আমার বোনকে কোন ছেলের সাথে ভাগিয়েছো তা আগে বলো?
কারণ আমার বোন প্রেম করার মতো মেয়ে না।
আজ পর্যন্ত কোন ছেলের সাথে ওকে কেউ কথা বলতে দেখেনি।
আমার মনে হচ্ছে তুমি ওকে কোথাও সরিয়ে রেখেছো।
যাতে বিয়ে ভাঙতে সুবিধা হয়।
তোমার মত মেয়েকে এই বাড়িতে থেকে বের করে দেওয়া উচিত।

ঝর্নার বোনের কথা শুনে মায়া বেগম বললেন,তুই এইসব কি বলছিস?
জেসিকা মোটেও এমন মেয়ে না।
এরমধ্যে রাশেদ বলে উঠল, এতক্ষণ ধরে বাড়ির বড়রা সবাই ভাবীকে উল্টা পাল্টা কথা বলে চলেছে এটা কি ঠিক!
সবাই মিলে অযথায় ভাবীকে অপমান করছে।
যেখানে ভাবীর কোনো দোষ নেই।
রাশেদের কথা শুনে ঝর্নার বোন বলল,আজ বুঝতে পারলাম চাচাতো ভাই কখনো আপন ভাইয়ের মত হয়না ।
আজকে বুঝিয়ে দিলি মারুফ ভাই ও তার বৌ তোর আপন।
আমি আর আমার বোন পর।

রাশেদ বলল,আপু তুমি এসব কি বলছো ?
তুমি, ঝর্না আর কোমল তোমারা তিনজন আমাদের দুই ভাইয়ের কাছে সব সময় একরকম।
রাশেদ ভাবতেই পারছে না তার কথায় আপন পর এলো কোথায় থেকে।

মায়া বেগম বললেন,মারে তুই বুঝার চেষ্টা কর জেসিকা তোদের আপন বোনের মতোই ভাবে। সে খারাপ না।

দোলা এ কথা শুনে ক্ষেপে বলে,তা বুবু তুমি বলতে চাচ্ছ আমার মেয়েরা খারাপ।
আর তোমার বৌ দুধে ধোয়া তুলসী পাতা।

জেসিকার বাবা মা মেয়ের বিরুদ্ধে এমন অপবাদ সহ্য করতে পারছে না।
আর না কিছু বলতে পারছে তাদের মেয়ে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে নিষেধ করছে।
জেসিকার কথা তারা ওঁর সাথে রাগারাগী করে একসময় থেমে যাবে কিন্তু ওঁর বাবা ওঁর পক্ষ নিয়ে কিছু বললে ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা আছে।
এতে শুধু অশান্তি বাড়বে কোন সলিউশন হবে না।
উকিল সাহেবের ভাবতে অবাক লাগে তার মেয়েটা হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে।
এখন ভালো মন্দ বুঝতে পারে।
সবাইকে ভালবেসে আপন করে নিতে চায়।
আর তার এই মেয়েটাকে মারুফের পরিবারের কিছু মানুষ হেনেস্থা করছে।
আজকে উকিল সাহেব ঠিক করেছে মারুফ পরিবারের কথা চিন্তা করে যদি জেসিকাকে বের করে দেয় তাহলে সে মেয়েকে একবারেই নিয়ে যাবে আর এদের আইনের মাধ্যমে শায়েস্তা করে ছাড়বে।

চাঁদনী বানু সবার কথা শুনে বলল,তোমরা চুপ কর।
আমার পরিবারের মধ্যে আপন পর কথা এলো কোথায় থেকে।
তোমরা দুই পরিবার না এক পরিবার সেটা কি ভুলে গেছো?

এদিকে দোলা বলল,আম্মা ভাবী ঝর্নাকে রেখে এই মেয়েকে বিশ্বাস করছে ।
তাহলে আপন পর কে টেনে আনলো?
আর এই মেয়ে আমাদের বাড়িতে পা রাখার পর থেকেই অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
অলক্ষী অপয়া মেয়ে একটা।
এই মেয়েকে এই মুহূর্তে বাড়িতে থেকে বের করে দিন নাহলে আমাদের আলাদা করে দিন।

ইসহাক বলল,মা এই মেয়ের জন্য সব সমস্যা ওকেই বের করে দেও।
মায়া বেগম তাদের কথা শুনে বলল,এটা ঠিক না জেসিকা এই বাড়ির বউ।
কথায় কথায় তাকে বের করে দেওয়া অন্যায়।

চাঁদনী বানু মায়া বেগমকে বলল,ন্যায় অন্যায় বুঝতে আমি আছি তুমি চুপ কর।
জেসিকা সবার কথা শুনে ভয় পাচ্ছে।
তাকে আবার বাড়ি থেকে বের করে দিবে না তো।
ওকে যদি বের করে দেয় তাহলে মারুফকে ছাড়া বাঁচবে কি করে!
মারুফ যে ওঁর রঞ্জে রঞ্জে মিশে আছে।

মারুফ ওদের সবার কথা শুনে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সবাইকে কিছু বলতে চায় যেহুতু সবার মনে হচ্ছে জেসিকা ভুল করেছে অন্যায় করেছে সেজন্য,,,

বিঃদ্রঃ লেখায় ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর যদি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগলে তো লাইক ও কমেন্ট করবেন।
আপনাদের সারা পেলে লেখার উৎসাহ জাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here