গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৩৪।
লেখাঃ #মেহের।

জেসিকা ভেবেই পাচ্ছে না ঝর্নার বিয়ের ব্যাপারে সবাই এতো তাড়াহুড়ো করছে কেন?

এমন নয় যে ঝর্নার বয়স হয়ে যাচ্ছে।
দেখতে শুনতে ভালই তাও চাচী ওকে বিয়ে দিতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে!

জেসিকার এসব কথাবার্তা চিন্তা করে ভালো লাগছে।
ঝর্নার বিয়ের কথা শুনেই মনটা অস্থির হয়ে গেছে।
কিছু ভালো লাগছে না।
সেজন্য নিজের রুমে চলে গেল।
রুমে গিয়ে পড়তে বসেছে মারুফের ভালোবাসায় এতো মগ্ন ছিল তাই অনেকদিন ধরে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়নি।
মারুফ তা খেয়াল করেছে, সেজন্য কালকে রাতে কড়া ভাষায় বলেছে , রেজাল্ট খারাপ হলে ছোটদের সামনে কান ধরে এক পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিবে।
সেকথা শুনে জেসিকা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে ।
এখন থেকে ভালো মত পড়বে ।
কারণ এই বয়সে এসে ছোট ননদদের ও দেবরের সামনে লজ্জায় পড়তে চায় না।
এই লজ্জার চেয়ে পড়াশোনা করা শতগুণ ভালো।

রাতে মারুফ দোকানে থেকে এসে মা এবং দাদুর সাথে দেখা করলো।
এক সপ্তাহ শ্বশুর বাড়িতে বেড়ালেও প্রতিদিন সকালে দোকানে যাওয়ার আগেই বাসায় এসে মা ও দাদুর খোঁজ খবর নিয়েছে।
মারুফ ওঁর দাদুর সাথে কথা বলছিল।

মারুফের কথা চাঁদনী বানু মনোযোগ দিয়ে শুনলো।
মারুফ কথা শেষে উঠতে নেয়। তা দেখে ‌চাঁদনী বানু ওকে বসিয়ে বললেন, আজকে ঝর্নার বিয়ের পাঁকা কথা হয়েছে।

মারুফ দাদুর কথা শুনে বলল, আমাকে তো আগে থেকে এ ব্যাপারে কিছুই বললে না।

মারুফের কথা শুনে চাঁদনী বানু বলে, দাদু ভাই ওঁরা ফোন না করেই এসে পরেছে।
তোর চাচা তাদের বলছিল তোর সাথে কথা বলতে ‌।
কিন্তু সফিকের বাবা মেয়ের বাপের সাথেই পাঁকা কথা বলতে চাচ্ছিল।

তার মতে তুই এখনো পোলাপান।
তাই তোর সিদ্ধান্ত শুনলে ওদের চলবে না।
এ কথা শুনে আমি ওদের সাথে রাগ করে তোকে জানাইনি ওঁরা পাঁকা কথা বলতে এসেছে।

তাই আমি ইসহাককে তোকে জানাতে নিষেধ করেছি।
যেখানে আমার নাতি সম্মান পাবে না তার আশেপাশের আমার নাতি থাকবে না।

কারণ যার সিদ্ধান্তে এ পরিবার চলছে তাকেই ওরা হেয়ো করে দেখছে তা আমার সহ্য হয়নি দাদু ভাই।

আমি তো এখানে নাতনিকে বিয়েই দিতে চাচ্ছিলাম না।
কিন্তু তোর চাচী কান্নাকাটি শুরু করেছিলো।
তাই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
জানিস দাদু ভাই ওই পরিবারের মধ্যে শুধু সফিককে আমার পছন্দ হয়েছে।
আর একটাও ভালো না।
মারুফ এতক্ষণ দাদুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো।

মারুফ দাদুর সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে আসে।
রুমে এসে দেখে জেসিকা বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছে । আর কি যেনো চিন্তা ভাবনা করছে।
পড়ায় একদম মনোযোগ নেই।

মারুফ তা দেখে জেসিকার কাছে গিয়ে বলল,কি হয়েছে তোমার?
বই খুলে শুধু নাড়াচাড়া করছ!
এমন করলে হবে বলো সোনা।

জেসিকা মারুফকে দেখে বইপত্র ছেড়ে মারুফের মুখোমুখি হয়ে বলল, তুমি কখন এসেছো?
আমি তো আলাপ পেলাম না।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল,বৌ তুমি ‌ চিন্তা করছো কেন?
আমি তো কিছুক্ষণ আগেই এসেছি ।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা ওকে জরিয়ে ধরে বলল, অনেক রাত হয়েছে তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।

মারুফ জেসিকার মাথায় থুতনি রেখে বলল,বৌ সবাই কি রাতে খেয়েছে?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,হ্যাঁ সবার খাওয়া দাওয়া শেষ।
এখন শুধু তুমি বাকি আছো।

এটা শুনে মারুফ বলল, সোনা আমি ফ্রেস হয়ে আসছি তুমি আমাদের খাবার রুমে নিয়ে এসো।
মারুফের কথা শুনে ,জেসিকা খাবার আনতে রান্না ঘরে চলে গেল।

মারুফ ফ্রেস হয়ে রুমে এসে দেখে জেসিকা টি টেবিলে খাবার সাজিয়ে ওঁর জন্য অপেক্ষা করছে।

মারুফ এসে খেতে বসে বলল,বৌ তোমার প্লেট কোথায় শুধু আমার প্লেটে সবকিছু দিচ্ছো যে!

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমি বাসায় থেকে খেয়ে এসেছি তো তাই এখন আর খাব না ।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,শুনো বৌ বাহানা দিয়ে কাজ হবে না।
তুমি আমাকে রেখে রাতে খাও না তা আমার অজানা নয়।

কথাটা শুনে জেসিকা বলল, সত্যি বিশ্বাস করো,সন্ধ্যায় তোমার শ্বশুরের বাসায়‌ খেয়েছি তো ।

মারুফ জেসিকাকে বলল, সন্ধ্যায় নাস্তা করেছিলে তা আমি জানি।
এখন কোন কথা না বলে আমার হাতে চুপচাপ খেতে হবে।

জেসিকা মারুফকে আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু মারুফ কোন কথা না শুনে জেসিকার মুখে লুকমা তুলে দিল।

কোন উপায় না পেয়ে জেসিকা মারুফের সাথে খেতে হয়েছে।

কারণ তার বর তাকে না খাওয়ানো পর্যন্ত জেসিকার কোন কথায় শুনলো না।

দুজনের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মারুফ হাত ধুয়ে এসে বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসলো।

আর জেসিকা সবকিছু গুছিয়ে রান্না ঘরে রেখে তারপর রুমে আসলো।

মারুফ বিছানায় বসে চোখ বুজে মনে মনে ভাবছে, তার বোনের বিয়ের পাঁকা কথা হয়েছে আর সে জানেই না।

মারুফের সবচেয়ে খারাপ লাগছে এটা শুনে তাকে পোলাপান ভেবে সফিকের বাবা মারুফকে দায়িত্ব পালন করার অযোগ্য মনে করেছেন।
তার চাচা চাচীও ওদের কথা প্রতিবাদ না করে নীরব থেকে ওদের কথার সমর্থন করল।

কিন্তু তারা কি জানে,এই পোলাপান বাবা মারা যাবার পর থেকেই পুরো সংসারের বোঝা হাসি মুখে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
চাচার ব্যাবসা পর্যন্ত তাকে সামলাতে হয়।
তারা কি সেটা ভুলে গেছে!
মারুফ যখন এসব ভেবে বিভোর হয়ে ছিলো।
সে মুহূর্তে জেসিকা ওঁর বুকে মাথা রেখে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরেছে ।
জেসিকার স্পর্শ পেয়ে মারুফ কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এসেছে।

মারুফ জেসিকাকে জরিয়ে ধরে বৌয়ের কপালে চুমু খায়।

জেসিকা কপালে মারুফের স্পর্শ পেয়ে আরও শক্ত করে মারুফকে চেপে ধরল।

মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল,বৌ তোমার সাথে আমি রাগ করেছি।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে মন খারাপ করে বলল, আমি কি করেছি?
যার জন্য তুমি আমার সাথে রাগ করছো!

জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল, তুমি সবসময় খাওয়া দাওয়া নিয়ে অবহেলা কর।
ঠিকঠাক নিজের যত্ন নিতে চাও না।
সবার সবদিকে তোমার নজর আছে কিন্তু নিজের দিকে নজর নেয়।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমি নিজের যত্ন ঠিকঠাক নেয় তো।
আর খাওয়া দাওয়া বেশি করলে মোটা হয়ে যাব।
তাই বেশি না একটু কম খায়।

তাছাড়া আমার খেয়াল রাখার জন্য তো আমার বর আছেই তাই না!

জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল, শুনো বৌ মোটা হলে হবে তাও এতো অল্প খাবে না।

জেসিকা বলল, কেন গো?

মারুফ বলে,সোনা তুমি বুঝতে চেষ্টা করো তোমার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে ।
তখন আমাদের বাচ্চাও তো অপুষ্টিতে ভুগবে।

মারুফের কথাটা শুনে জেসিকা অবাক হয়ে বলল, কিন্তু হঠাৎ করে বাচ্চা এলো কোথায় থেকে।
যখন হবে তখন বোঝা যাবে।

মারুফ জেসিকার নাক টিপে দিয়ে বলল,আরে বোকা বাচ্চা আসতে কতক্ষন।
তাছাড়া আমরা তো কোন প্রটেকশন ইউজ করি না।
তাই মেহমান আসার খবর যে কোন সময় আসতে পারে।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মারুফের বুকে মুখ গুঁজে দিল।
মারুফ তা দেখে হেসে ফেললো।
আর বলল,বৌ আমি তোমার লজ্জাগুলো শুষে নেয় কি বলো?

জেসিকা মারুফের বুকে থেকে মাথা উঠিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললো,লাজ লজ্জা নেয়, বেশরম লোক একটা।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে হেসে বলল, ছেলেদের লজ্জা শরম থাকতে নেয়।
নাহলে বৌকে সুখী করতে পারবে না।
আর ছেলেদের বেশি শরম থাকলে তোমরা মেয়েরা মা হতে পারতে না গো বৌ।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,তা জনাব বাচ্চাদের বিষয়ে আপনি এতো কিছু জানেন?
তা আপনি এখন পর্যন্ত কয়টা বাচ্চার বাবা হয়েছেন?

কথাটা শুনে মারুফ জেসিকার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে জেসিকার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, এখনো বাচ্চার বাবা হয়নি তো কি সামনেও যে বাবা হবো না এমনতো নয়।

কথাটা বলে মারুফ জেসিকার কানে আলতো করে কামড় বসিয়ে দেই।
আর বলে ,বৌ তোমার শরীর মাখনের মত নরম ।
তাই তোমার কাছাকাছি থাকলে মনে চায় কামড় বসিয়ে দেই।

মারুফের স্পর্শে জেসিকার শরীরে শিহরণ খেলে গেলো তবুও পাত্তা না দিয়ে বলল, তোমাকে দেখলে আমার কাছে কালোজাম মনে হয়।

আর কালোজাম যেহুতু আমার পছন্দের মধ্যে একটি খাবার
আর তুমিও কালো জামের মত তাহলে তো তোমাকে আমার গপাগপ খাওয়া দরকার।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ চোখ টিপে বলল ,বৌ তোমার যখন আমাকে গপাগপ খেতে মন চায়বে আমাকে বলা মাত্রই তোমার সামনে হাজির হয়ে যাব।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,যত সব ফাউল কথাবার্তা।

আর শুনো তুমি আমাকে বললে না কেন ঝর্নার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।

আর এই ছেলে ছাড়া কি আর কোন ছেলে নেই যে ঝর্নাকে ঐ বাড়িতেই বিয়ে দিতে হবে!

মারুফ জেসিকার মুখে বিয়ের কথা শুনে গম্ভীর হয়ে বলল,বৌ তুমি ঝর্না এবং এই বিয়ের বিষয় থেকে দূরে থাকবে।

আমি চাইনা বিয়ের বিষয়ে তুমি কারো সাথে কোন কথা বল।
কোন কারণে বিয়েতে কোন ঝামেলা হলে চাচী তোমাকে দোষ দিতে পারে।
আর আমি কোন অশান্তি চায় না।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু মারুফ ইশারায় ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, অন্য কথা হলে বলতে পারো কিন্তু এই বিষয়ে আমি কোন কথা শুনতে চায় না।
তুমি এই বাড়ির বড় বউ তাই তোমার বাড়ির বৌ হিসাবে যা দায়িত্ব তা পালন করবে।
বিশেষ করে বিয়ে ভেঙে যায় এমন কোন ব্যাপারে নিজেকে জরাবে না।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে মন খারাপ করে বলল, ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে।

মারুফ জেসিকার মন খারাপ দেখে মনে মনে বলল,বৌ আমি যা দেখতে পারছি তুমি দেখছো না।
ঝর্নার বিয়েতে কোন ঝামেলা হলে চাচী তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
নানা রকম কষ্ট দিবে।
আর তা দেখেও আমি কিছুই করতে পারব না।
না তোমাদের নিয়ে আলাদা হতে পারব ।
কারণ চাচার ছেলে নেই সেজন্য দাদু আরও আগেই আমার কাছে থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যত কষ্টই হোক না কেন আমি যেন নিজের থেকে তাদের আলাদা না করি।
আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন যেনো সবাই মিলে একসাথে থাকি।

তাই চাচীকে কিছু বলতে পারব না।
তোমাকে কোন কষ্ট দিতে দেখলে তখন
আমি না পারব তোমার কষ্ট সহ্য করতে ।
আর না পারব তোমার জন্য প্রতিবাদ করতে।

কারণ প্রতিবাদ করতে গেলে চাচী বলবে, নিজের ছেলে হলে বৌয়ের পক্ষ নিতো না।

সেজন্য তোমাকে এসব থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছি।
মারুফ মনের সব চিন্তা ভাবনা শেষ করে বৌয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওঁর বুকে মাথা রেখে বৌটা ঘুমিয়ে পরেছে।

মারুফ মনে মনে বলল, ইস্ আমার সোনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কিউটের ডিব্বা লাগছে।
কথাটা মনে মনে বলে তারপর আলতো করে জেসিকার কপালে, চোখে, গালে চুমু খেল।
সবশেষে জেসিকার ওষ্ঠে গাঢ় করে চুমু দিল।

জেসিকা মারুফের স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে উঠল।

মারুফ জেসিকাকে নড়াচড়া করতে দেখে জেসিকার কাছে থেকে সরে এসে ওকে ভালো করে বিছানায় শুইয়ে দিল।

রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে ওদের আবার ভোরে উঠে নামায পড়তে হবে তাই শুয়ে পড়ল।

পরের সপ্তাহ

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কিভাবে কেটে গেছে কেউ বুঝতে পারল না।
আরও দুইদিন আগে থেকেই ঝর্না আকদের জন্য সব তোরজোর চলছে।
সফিকরা দুপুর দেড়টা বা দুইটায় আসবে।

পার্লারে মেয়েরা এসেছে ঝর্নাকে সাজিয়ে দিতে।
চাঁদনী বেগম কোমল ও জেসিকাকে পার্লারে মেয়েদের কাছে সাজতে বলেছেন।

কারণ আজকে বাহিরে থেকে রান্না করতে বাবুর্চি আনিয়েছে এবং
শুধু আজকের জন্য ছুটা বুয়া রয়েছে কয়েক জন।

খাওয়া দাওয়া জন্য উঠানের একপাশে স্টেজের ব্যাবস্থা করেছে।
সেজন্য চাঁদনী বানুর কথা হচ্ছে,সব কাজ বাহিরের মানুষজন করছে তাহলে বৌ ঝিরা আজকে এমন সুযোগ পেয়ে সাজবে না কেন!

কোমল ও জেসিকা দাদুর কথা শুনে সাজতে রাজী হয়েছে।

এদিকে ঝর্নাকে সাজানো শেষ হলে পার্লারে মেয়েরা কোমল ও জেসিকাকে সাজাতে যায়।

সে সময় ঝর্না রুমে একা থাকে।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ওঁর কাছে কেউ নেই ।
সে সুযোগে কিছু কাপড় চোপড় ও অল্প কিছু টাকা একটা ব্যাগে ভরে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে দিল।

কিছুক্ষণ পরেই জেসিকার সাজানো হয়ে গেলে।
জেসিকার সাজ শেষ হলে ঝর্নাকে দেখতে ঝর্নার রুমে আসলো।

ঝর্না ওঁর ভাবীকে দেখে দরজা বন্ধ করে জরিয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল, ভাবী আমি এই বিয়ে করবো না ।
আমাকে এসব থেকে বাঁচাও!
আমি যে মন প্রাণ দিয়ে একজনকে ভালোবাসি ।

জেসিকা ঝর্নার মুখে এসব কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।
এ কি কথা বলছে মেয়েটা ?
আগে বললেও কিছু করতে চেষ্টা করতো কিন্তু এই মূহুর্তে কিছু করা সম্ভব না।

আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ বাড়ির লোকজন এসে পরবে।

আর এই মেয়ে এখন বলছে কাউকে ভালোবাসে এটা কোন কথা হলো!

তাই জেসিকা ঝর্নাকে বলল, বোন এসব কি উল্টো পাল্টা কথা বলছো?
আর হঠাৎ করে ভালোবাসা এলো কোথায় থেকে?

ঝর্না জেসিকার কথা শুনে বলল, ভাবী আমি সত্যিই একজনকে ভালোবাসি।
হঠাৎ করে নয় দের বছর আগে থেকেই ভালোবাসি।
ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
জেসিকা ঝর্নার মুখে এসব কথা শুনে চমকে যাচ্ছে।
কারণ ওতো জানে এসব আবেগ একটা জীবন নষ্ট করতে যথেষ্ট।

কারো নষ্ট লাইফ গুছানোর জন্য তো সবার জীবনে মারুফের মত জীবন সঙ্গী আসে না।

এসব ভেবে জেসিকা ঝর্নাকে বলল, বোন তুমি বুঝতে চেষ্টা করো এই মুহূর্তে বিয়ে ভাঙা যাবে।
তোমার বিয়ের সাথে জড়িয়ে রয়েছে আছে এই পরিবারের মান সম্মান।
তোমার কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ পরিবারের সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে।

বোন তুমি পিছনের সবকিছু ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।

কিন্তু ঝর্না মনে হয় না জেসিকার কোন কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
সে আজকেই এ বাড়িতে থেকে পালিয়ে যাবে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে।
ঝর্না এই মুহূর্তে তার ভালোবাসার মানুষটির স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে।
অবশ্য সে যাওয়ার আগে লেখেই যাবে , এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
কথাটি তোমাদেরকে ভয়ে এতদিন বলতে পারিনি।
তবে যাওয়ার আগে সাহস করে একজনকে জানিয়েছি ।
আমি চলে যাচ্ছি তোমরা ভালো থেকো।

ঝর্না কাগজে কি লিখবে তাও ভাবা শেষ।
অন্যদিকে জেসিকা তাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাহিরে চলে যাচ্ছে আর
মনে মনে বলছে কথাটা কাউকে জানাতে হবে।
এদিকে দোলা বেগম ভাবছে জেসিকা তার মেয়ের সাথে কি এতো কথাবার্তা বলছে।
সেই কখন ঝর্নার রুমে গিয়েছে আর এখন বের হলো।
এই মেয়ে আমার মেয়ের বিয়েতে কোন ঝামেলা বাঁধাবে নাতো?

এরমধ্যে বাহিরে থেকে আওয়াজ শুনতে পেল বর বর এসেছে।

দোলা এবং বাকি সবাই মেহমানদের আপ্যয়ণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
মারুফ এতক্ষণ বাহিরে ছিলো মেহমানদের বসিয়ে একটা কাজে ভিতরে এসেছে ।
ঠিক সে সময় জেসিকাকে দেখল।
ওঁর বৌটা এমনিতেই পরি আর আজকে তো সাজার পর তাকে চেনা যাচ্ছে না।
তাই মারুফ দুষ্টুমি করে বলে,ম্যাডাম আপনি কি বলতে পারেন আমার বৌ কোথায় আছে?
আসলে আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।

জেসিকা রেগে বলল, কি ?
মারুফ বলল,এই আপনার আওয়াজ তো আমার বৌয়ের মতো তাহলে আপনি কি আমার বৌ?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমাকে ক্ষেপালে ভালো হবে না বলছি।
আমি এখনেই সব সাজ ধুয়ে আসবো কিন্তু!
মারুফ জেসিকার কথা শুনে মনে মনে বলল, না ভাই আর রাগানো ঠিক হবে না।
পাগল ক্ষেপে যাচ্ছে।
তাই বলল,বৌ তোমাকে সুন্দর লাগছে।
তারপর জেসিকা এক সাইডে নিয়ে কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলল,এই সাজ যেনো নষ্ট না হয়।
আমি আজকে এই সাজে রাতে মন ভরে আমার বৌটাকে দেখতে চাই।
আর শুনো বৌ এতো সেজেগুজে বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই।
বাড়ির ভিতরেই থাকো।

জেসিকা মারুফের কথা ইশারায় ঠিক আছে বলে।

জেসিকার সাথে কথা বলা শেষে মারুফ বাহিরে বর যাত্রীদের কাছ চলে গেল।

কাবিন হওয়ার আগে সবাইকে খেতে দিল।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে বিয়ে।

তাই কাজী বসে বসে ছেলের মেয়ের নাম , তাদের বাবার নাম মায়ের নাম, দেনমোহর কত? সবকিছু লেখছে ।
মারুফ আর ওর চাচা কাজীর কাছে দাঁড়িয়ে থেকে সব তথ্য দিলো।
এদিকে সোহাগ একবারও এ পর্যন্ত জেসিকা দেখতে না পেয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।

এদিকে মারুফ কিছু একটা নিতে ভিতরে যাচ্ছিল
তারমধ্যে জেসিকার চেঁচামেচি শব্দ শুনে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে দেখে….

বিঃদ্রঃ লেখায় ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর যদি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগলে তো লাইক ও কমেন্ট করবেন।
আপনাদের সারা পেলে লেখার উৎসাহ জাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here