গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৩২।
লেখাঃ মেহের।

জেসিকা মনে মনে বলল, এই লোকটা দোলা চাচীর আত্মীয় না হলে আজকে এই ছেলেকে জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে ছাড়তো।

জেসিকা যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে ছেলেটা উঠার বাহানায় জেসিকার সাথে ধাক্কা খায়।

জেসিকার সাথে ধাক্কা খেয়ে ছেলেটি সাথে সাথে জেসিকার উদ্দেশ্য সরি বলল।

জেসিকা এই ছেলের কাজকর্ম দেখে কিছু বলতে যাবে সে সময় সেখানে এসে চাঁদনী বানু ছেলেটাকে বলে উঠল, তোমার ধাক্কা দেওয়ার শখ ছিল তা আমারে বললেই হতো।

আমার মত সুন্দরী রাইখা কিনা বুড়ির সাথে ধাক্কা খাও সোহাগ মিয়া।

(পাত্রের নাম হচ্ছে সফিক গাজী এবং পাত্রের ভাইয়ের নাম সোহাগ গাজী)

সোহাগ চাঁদনী বানুর কথা শুনে বলল, দাদু আপনারা মত পরির সাথে ধাক্কা খেলে তো আমি অধম বেসামাল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
তাই আর সে রিস্ক নেয়নি।

মুখে এটা বললেও মনে মনে বলল, আমি পাগল নাকি সামনে হট জিনিস রেখে বুড়ির সাথে ধাক্কা খেতে যাব।

চাঁদনী বানু সোহাগের কথা শুনে হেসে দেয়।
আর মনে মনে বলল, হারামজাদা মেয়ে দেখলেই ছুঁকছুঁক করতে মন চায় তাই না।
তোর ভাগ্য ভালো আমি সময়মতো এসেছি নাহলে আমার নাত বৌয়ের জুতার বারি খেয়ে জনমের মতো লুচ্চামি করার স্বাদ মিটি যেতো।

চাঁদনী বানু সফিকেরা আসার পরে থেকেই খেয়াল করছে যে, এই ছেলে জেসিকার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকছে।
তাইতো এতক্ষণ নজরে নজরে রাখছে।
কারণ মারুফ এসব দেখলে সোহাগের কপালে খারাপই আছে।
সোহাগ গাজীকে আরও কিছু কথা বলে, চাঁদনী বানু জেসিকাকে নিয়ে সরে গেল।

ওখানে থেকে বের হয়ে,চাঁদনী বানু জেসিকাকে নিয়ে ভিতরে গেলো।
ঝর্নাকে এখানে আনতে।

কিছুক্ষণ পর চাঁদনী বানু তার নাতনিকে নিয়ে আসে।
চাঁদনী বানু ঝর্নাকে পাত্রের সামনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।

সফিক তো ঝর্নাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে।
দেখে মনে হচ্ছে মেয়ে মানুষ দেখেনি কখনো।
ঝর্নার লোকটার তাকানো দেখে খুব অসুস্থি হচ্ছে।
এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।

এদিকে পাত্র পক্ষেরা ঝর্নাকে দেখে সালাম দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করল।
ঝর্নার ওদের সালামের জবাব দেওয়ার পরে নিজের নাম বলল।

এরপর সোহাগ এবং ওদের বাবা মা ঝর্নাকে একটা একটা করে প্রশ্ন করছে।
ঝর্নাও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।

সোহাগের মা ঝর্নাকে হেঁটে দেখাতে বলেন।
ঝর্না তা শুনে ও চুপচাপ বসে আছে।
তখন দোলা এসে মেয়েকে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, চুপচাপ এরা যা বলে তা কর না হলে আমার হাতে মার খেয়ে তোর একটা হাড়গোড়ও আস্ত থাকবে না।

ঝর্না মায়ের কথা ভয় পেয়ে তাদের হেঁটে দেখায়।
পাত্রের মা, ঝর্নাকে বসতে বলল।
তারপর শুরু হলো ঝর্নার ইন্টারভিউ নেওয়া।

ঝর্না রান্না করতে জানে কিনা? ধোঁয়া মুছা এবং সংসারের কাজ করতে পারে কিনা ?
তা একটা একটা পাত্রের মা জিজ্ঞেস করল।

সফিকের মায়ের কথা শুনে চাঁদনী বানু বলে, নাতি আমার ছোট মানুষ এতো কিছু …

এরমধ্যে দোলা বেগম বললেন, আমার মেয়ে সব কাজে পটু আপা।
আপনাকে সংসার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না।
ও একাই সব সামলাতে পারবে।

দোলার কথা পাত্রের মা তো ভীষণ খুশি হলো।
তার চোখ মুখ দেখে তাই মনে হচ্ছে।

এদিকে চাঁদনী বানু রাগে হিঁসহিঁস করছে।
সে বলতে চেয়েছে তার নাতনি তো ছোট মানুষ এতো কাজ করতে পারে না।

কিন্তু ছোট বৌ বেয়াদবের মতো চাঁদনী বানুর কথার মাঝে কথা বলে সেটা বলতে দিলো না!

নিজের বাপের বাড়ির লোক দেখে বৌ হাতির পাঁচ পা দেখেছে ।
একে তো চাঁদনী বানু দেখে নিবে।

ইসহাক আসুক বাসায় এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।

অন্যদিকে জেসিকা সফিকের মায়ের প্রশ্ন শুনে ভাবছে ,তারা ছেলের জন্য বৌ নিতে এসেছে? নাকি বিনা বেতনে কাজের বুয়া!
তাই বুঝতে পারছে না।
হ্যাঁ সেও তো
সংসারের কাজ করে তবে তা কারো হুকুমে না।
নিজের করতে ভালো লাগে তাই করে!

কিন্তু এরাতো রিতিমত ছেলেকে বিয়ে করানোর আগেই মেয়েকে কি কাজ করতে হবে তার ফিরিস্তি দিচ্ছে।
যত্তসব ফালতু লোকজন।

এদিকে সফিকের মা ঝর্নার হাত হাতে নিয়ে ভালো মতো খেয়াল করে দেখেছে।
কোথাও কোন দাগ আছে কিনা।

রাশেদ আর মারুফ তো রাগ উঠে যাচ্ছে।
তারা মেয়ে দেখতে এসেছে নাকি গরু কিনতে তাই বুঝতে পারছে না।
কোন শিক্ষিত পরিবার এভাবে সবার সামনে কোনো মেয়েকে দেখে।
বা এমন কথা বলতে পারে?
মারুফের এই মুহূর্তে মনে চাচ্ছে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়িতে থেকে এদের বের করে দিতে।

কিন্তু চাচী সুবিধার মানুষ না।
দেখা যাবে পাত্র পক্ষের অপমান দেখলে আমি বোনের বিয়ে ভেঙে দিছি সে অভিযোগে কান্নাকাটি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে।
তাই এই মুহূর্তে চুপ থাকায় ভালো।
মারুফের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে যখন এরা,
ঝর্নার চুল দেখতে চায় সে কথা শুনে মারুফের ধ্যান‌ ভাঙল।

এদিকে সফিক তার মা’কে আস্তে করে বলল,মা বাঁধ দাও তো চুল দেখতে হবে না।
সফিককে ওঁর মা নিচু স্বরে ধমক দিয়ে চুপচুপ বসে থাকতে বলল।
তারপর দোলাকে তার মেয়ের চুল খুলে দেখাতে বলল।

ঝর্নার মা মেয়ের চুল খোঁপা খুলে তাদের দেখাচ্ছে।

জেসিকার এসব দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
ঝর্না, কোমল বাড়িতে থেকে বাহিরে গেলেও পর্দা করতে হয়।
তাছাড়া এ বাড়ির সবাই ওদের বের হতে দেয় না।
কিন্তু এখন কেউ কিছুই বলছে না।
মেয়ে দেখার নাম করে আদিকাল থেকে মেয়েদের ওপরে এসব অনাচার চলছে।

কেউ কিছুই বলে না।
যুগ পাল্টেছে কিন্তু মানুষের স্বভাব চরিত্র পাল্টাতে পারেনি।

চাচী মা হয়ে কিভাবে ছেলেগুলোর সামনে তার মেয়েকে বেপর্দা করতে সাহায্য করছে।
তা ভেবে জেসিকা সব কিছু অসহ্য লাগছে।
তবুও কিছু বলতে পারছে না ।
এ বাড়ির বৌ বলে।

সোহাগ তার ভাইকে বলল, ভাইয়া তুমি কি ওনার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাও?

সফিক তার ভাইয়ের কথা শুনে ফিসফিসিয়ে বলল, ঝর্নাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
একেই তোর ভাবী বানাবো ।
আলাদা কথা বলা লাগবে না,

সোহাগ কথাটা শুনে তার ভাইকে বলল, বাব্বাহ ভাইয়া এতো দূর পর্যন্ত ভেবে ফেললে ভালোই তো।
সফিক ভাইয়ের কথায় শরম পেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।

পাত্র পক্ষরা ঝর্নাকে দেখে সন্ধ্যায় চলে গেল।
যাওয়ায় আগে এটা বলতে ভুললো না এই পরিবার তাদের পছন্দ হয়েছে।
কিন্তু বিয়ে হচ্ছে বড় একটা সিদ্ধান্ত।
তাই তারা বাসায় গিয়ে চিন্তা ভাবনা করে ফোন করে জানাবেন।

এরা যাওয়ার পর চাঁদনী বানু দোলাকে ইচ্ছে মত বঁকেছেন।
তার সাথে বেয়াদবি করেছে তাই।
দোলা তো শাশুড়ির পায়ে হাতে ধরে মাফ চেয়ে কেঁদে কেটে অস্থির অবস্থা করছে।

মারুফ ও রাশেদের ছেলে সামান্য পছন্দ হলেও ছেলের পরিবার মোটেও পছন্দ হয়নি।

মারুফ চিন্তা ভাবনা করছে তার চাচ্চুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে।
মায়া বেগম আজকে দোলার কাজকর্ম দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।
তাই কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
জেসিকা কাজ শেষ হলে ঝর্নার রুমে যায়।
ঝর্নার রুমে এসে দেখে মেয়েটা কাঁদছে।
জেসিকা ঝর্নাকে জরিয়ে ধরে বলল, তুমি কাঁদছ কেন?
কি হয়েছে?
ঝর্নার ওঁর ভাবীকে বলল,ভাবী ও বুড়ো ব্যাটাকে আমি বিয়ে করবো না। কিছুতেই না।

ঝর্নার কথা শুনে কোমল বলল,
ভাবীকে বলে লাভ কী চাচীকে গিয়ে বল।

জেসিকা বলল, ঝর্না বোন আমার শান্ত হওতো।
দেখতে এলেই তো আর বিয়ে হচ্ছে না।

ঝর্নার আবার বলে,ভাবী জানো লোকটি কেমন ভ্যাবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
ছিঃ ছিঃ ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে।
আর লোকটার লাজ লজ্জার বালাই নেই।
ভাবীগো আমি এই আঁতেলকে বিয়ে করতে চায় না।
তুমি কিছু একটা কর‌।

ঝর্নার কথা শুনে জেসিকা অনেক কষ্টে ঝর্নাকে বুঝায় যে এ ব্যাপারে ওদের ভাইয়ের সাথে সময়মতো কথা বলবে।

ঝর্নাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে জেসিকা নিজের রুমে আসল।

রুমে এসে মারুফকে না দেখে ভাবলো হয়তো মায়ের রুমে আছে।
তাই মারুফ রুমে আসার আগে জেসিকা ফ্রেস হয়ে আসে।

মারুফ ওঁর চাচ্চুর সাথে ঝর্নার ব্যাপারে কথা বলে রুমে আসলো।
রুমে এসে দেখে জেসিকা এক পাশ হয়ে শুয়ে আছে।

মারুফ বিছানায় গিয়ে
জেসিকার পাশে শুয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষাঘষি করতে লাগলো।

জেসিকা মারুফের স্পর্শ পেয়ে মারুফের দিকে ঘুরে শুয়ে মারুফের বুকে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলো।

মারুফও জেসিকাকে জরিয়ে ধরে চুলে ওষ্ঠর স্পর্শ দেয়।

জেসিকা মারুফের থেকে আদর পেয়ে মারুফের বুকে নাক ঘষাঘষি করছে।

আর মারুফ জেসিকার ডান হাতের আঙুল নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলা করছে।
আবার মাঝে মাঝে হাতে চুমু খাচ্ছে।

জেসিকা মারুফের এই ছোট ছোট আদরগুলো উপভোগ করছে।
জেসিকাকে চুপচাপ দেখে মারুফ একসময় জেসিকার ওষ্ঠ দখল করে নেয়।

কিছুক্ষণ এভাবেই দুজনের মাঝে তাদের ভালোবাসা আদান প্রদান হয়।

মারুফ জেসিকার ওষ্ঠ ছেড়ে গলায় মুখ গুঁজে দিল।
জেসিকা আবেশে মারুফের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলো।

আর ঝর্নার কথা এবং দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো নিয়ে চিন্তা করছিল।

সে সময়ে মারুফ জেসিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, সোনা কি হয়েছে আজ এতো চুপচাপ আছো যে ?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,জানো কি হয়েছে!

মারুফ জেসিকার কথা শুনে গলায় থেকে মাথা তুলে মুচকি হেসে জেসিকার নাক টিপে দিয়ে বলল, পাগলি না বললে জানাবো কেমনে?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে , আজকে দুপুর থেকে ওঁর সাথে হওয়া সব ঘটনা মারুফকে খুলে বললো।

এটাও বলেছে, সোহাগ ইচ্ছে করেই ওঁর হাত ছুঁয়ে দিয়েছে, আবার ওকে ধাক্কাও দিছে
এসব কথা শুনে মারুফ রেগে বলল, ওরা থাকতে বললে না কেন?
তখন বললেন সোহাককে বুঝিয়ে দিতাম আমার বৌয়ের দিকে নজর দেওয়ার পরিণাম কি?
কথাটা শুনার পরে থেকেই মারুফ ক্ষেঁপে বোম হয়ে আছে।
তাকে এই কথা আগে কেনো বল হয়নি তাই।
মারুফের রাগ দেখে জেসিকা প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছে।
কিছু একটা চিন্তা করে ওঁর ওষ্ঠ দিয়ে মারুফের ঠোঁট লক করে নিলো তাতে মনে হয় মারুফের সবরাগ শুষে নিচ্ছে।

জেসিকার আদর পেয়ে মারুফের রাগ নিমেষেই।

বিঃদ্রঃ লেখায় ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর যদি গল্পটা আপনাদের ভালো লাগলে তো লাইক ও কমেন্ট করবেন।
আপনাদের সারা পেলে লেখার উৎসাহ জাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here