গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ২৭।
লেখাঃ #মেহের।

হঠাৎ করে একটা মানুষ কি করে এতটুকু সময়ের মধ্যেই এমন নাই হয়ে গেছে!
তা কেউ বলতে বা বুঝতে পারছে না।
কি থেকে কি হয়ে গেল জেসিকা তাই বুঝতে পারছে না।
কষ্টে বুকের ভিতরে দলা পাকিয়ে আসছে।
যার জন্য নিজেকে এভাবে বদলে ফেলেছে কোন কারণে তাকেই হারিয়ে ফেলবে না তো!
তাহলে সে এই জীবনে মারুফকে ছাড়া বাঁচবে কি করে!
এসব চিন্তায় মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
জেসিকা অশান্ত মনকে শান্ত করতে হাবিজাবি চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ওযু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়।

জেসিকা নামায পড়া শেষ হলেই মারুফের বলা কিছু কথা মনে পড়ে গেল।
মারুফ কিছুদিন আগে জেসিকাকে বলছিল,জানো জেসিকা আমার শক্তি হচ্ছে আমার পরিবার।
নিজের সব ব্যথা আমি মুখে বুজে সহ্য করতে পারি ।
কিন্তু আমার পরিবারের সামান্য ব্যথাও আমাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।
আর এখন আমার সেই পরিবারের মধ্যে তুমিও একজন বুঝলে বৌ!

জেসিকা তখন মারুফের কথা শুনে বলল, তা এসব আমাকে বলছেন কেন?
এসব জেনে আমি কি করবো?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,আমার অবর্তমানে মানে আজকাল আমি যতক্ষণ বাড়ির বাহিরে থাকি ততক্ষণ পর্যন্ত এই পরিবারের দায়িত্ব কিন্তু তোমার হাতে ভেবেই নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।
বাড়ির সবার ভালো মন্দের সাথে তোমার আমার ভালোমন্দ জরিয়ে আছে।
কারণ তুমি আমার স্ত্রী, প্রিয়তমা প্রিয়সী সব।
অতীতের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে এসে জেসিকার চোখে পানি ঝলঝল করছে।
মারুফ তাকে কতটা ভরসা করেই এ কথাটি বলেছ।
এসব চিন্তা ভাবনা করে জেসিকা মনে মনে ঠিক করল ওকে শক্ত হতে হবে।

আল্লাহর দয়ায় মারুফ নিশ্চয় আমাদের কাছে ফিরে আসবে।
আর ও এসে মা এবং দাদুকে অসুস্থ্য দেখলে হয়তো ঠিক থাকতে পারবে না।
কারণ ওঁর জীবন হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা।
যদি এসেই বলে জেসিকা আমি তো কিছুক্ষণের জন্য এখানে ছিলাম না তুমি কি পারতে না আমার অল্প সময়ের অনুপস্থিতিতে তাদের খেয়াল রাখতে।
মারুফ তাকে যদি জিজ্ঞাসা করে তাহলে তখন জেসিকা ওকে কি উত্তর দিবে?
এসব চিন্তা ভাবনা করে জেসিকা রুমে থেকে বসার রুমের দিকে গেল।

ফযরের নামাযের পরে সবাই বসার রুমে বসে আছে।
সারারাত দুশ্চিন্তায় এ বাড়ির ছোট বড় কারো ঘুম হয়নি।

জেসিকা বসার রুমে এসে শাশুড়ি ও দাদু শাশুড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বুজে তারা তসবিহ হাতে সোফায় বসে আছে।
তাদের বন্ধ চোখের কিনারা দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে।
জেসিকা ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তাদের এমন অবস্থা দেখে।
জেসিকা তাদের পায়ের কাছে বসে বলল,আম্মু ও
দাদু আপনারা এতো চিন্তা করবেন না।
আল্লাহর রহমতে নিশ্চয় ওনি ভালই আছে।
হয়তো জরুরি কাজে আটকে গেছে।
তাই ফিরতে দেরী হচ্ছে।
দোকানের জন্য মালপত্র কিনতে গেলে অনেক সময় এমন হয়েছে যে সেদিন আর বাড়িতে ফিরেই আসে না।
আর এসব কথা তো আমি আপনাদের কাছে থেকেই শুনেছি।

জেসিকার কথা শুনে ইসহাক খান বলল, কিন্তু বৌমা মারুফ দোকানের মাল আনতে গেলে মাঝে মাঝে বাসায় আসতে এমন দেরি হয় ঠিকই কিন্তু সবসময় তো আগেই দেরি হবে ফোন করেই বলছে।
তাহলে আজকে কি হলো!

জেসিকা ইসহাকের কথা শুনে বলল, চাচ্চু কালকে আপনি বললেন না যে দোকানের ছেলেটা বলেছে ওনি পকেটে করে টাকা নিয়ে গেছে।
তাতে তো এটাই বোঝা যাচ্ছে।

জেসিকার কথায় পরিবারের সবাই কিছুটা যুক্তি খুঁজে পেলেও তাদের মনে খচখচ করছে।
কারণ মারুফ না বলে কোথাও যাওয়ার মানুষ নয়।

জেসিকা চাঁদনী বানু মায়া বেগম কে জোর করেই হালকা কিছু খাওয়ায়।
এরপর প্রেসারে ঔষুধ মুখে তুলে দেয়।
জেসিকা তাদের অবস্থা দেখে বুঝতে পারছে চাঁদনী বানু ও মায়া বেগমের বিশ্রাম দরকার ।
নাহলে বড় কোন অঘটন ঘটে যাবে।
বেশিদিন হয়নি দাদু সুস্থ্য হয়েছে।
আর আম্মু তো এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য না।
তাই জোর করে ওনাদের দুইজনকে চাঁদনী বানুর রুমে নিয়ে গেলো।

এক প্রকার জোর করেই তাদের বিছানাতে শুয়ে দিয়ে বলল, আপনারা একটু রেস্ট করুন তো নাহলে প্রেসার বেড়ে যাবে।

মায়া বেগম বললেন,মারে এ চোখ যে মারুফকে না দেখে শান্তি পাবে না।
না জানি আমার ছেলেটা কেমন আছে?

শাশুড়ির কথা শুনে বলল ,আম্মু আপনি আমার কথাটা শুনেন একটু শান্ত হোন ।
নিশ্চয় ওনি ভালই আছে।
ইনশাআল্লাহ দেখবেন একটু পরেই আপনার ছেলে বাসায় এসে পরবে।
আরও নানা কথা বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জেসিকা তাদের তো বুঝ দিয়েছে কিন্তু নিজেকে বুঝ দিবে কিভাবে?
বুকের ভিতরে যে মারুফের কথা ভেবে তোলপাড় শুরু হয়েছে তা সামাল দিবে কি করে।

কিছুক্ষণ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেখে তাদের চোখে কিছুটা তন্দ্রা ভাব এসেছে।
তা দেখে জেসিকা কোনো সাড়া শব্দ না করে আস্তে আস্তে ওখানে থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে ফ্লোরে বসেই মুখে ওড়না খুঁজে কান্না করছে যাতে কান্নার শব্দ বাহিরে না যায়।
ওঁর নিজের এই মুহূর্তে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
মারুফ এখনও বাসায় আসছে না কেন?
তা ভেবে বুকের ভিতরে যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে ।
তা তো কেউ বুঝতে পারবে না।

এদিকে রাশেদ ওঁর রুমে যাওয়ার সময় ভাইয়ের রুমে থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনে মারুফের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ওঁর ভাবী মুখে ওড়না খুঁজে কান্না করছে।

রাশেদ তা দেখে মনে মনে বলল,ভাবী তোমাকে স্যালুট জানাই।
নিজের মনের ভিতরে ভাইয়াকে নিয়ে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু বুঝতে দিচ্ছ না।
আমাদের কথা ভেবে নিজেকে আমাদের সামনে অভিনয় করে তোমার শক্ত মনোবল দেখাচ্ছো।
যা সবাই করতে পারে না।

রাশেদ ওঁর ভাবীর এ অবস্থা দেখে কোমলকে ডেকে নিয়ে ইশারায় জেসিকার কান্নাকাটি দেখায়।
এবং ফিসফিস করে বলল, তুই এখন থেকে ভাইয়া না ফেরা পর্যন্ত সবসময় ভাবীর আশেপাশেই থাকিস।
ভাবীকে দেখে তো বুঝতেই পারছিস সে আমাদের সামনে যতটা শক্ত মনের দেখাচ্ছে!

আসলে সে কিন্তু তেমন শক্ত মনের নয়।

কোমল রাশেদের কথা শুনে জেসিকার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সোনা ভাবী কেঁদো না।
দেখো আমাদের ছেড়ে ভাইয়া বেশিক্ষণ থাকতেই পারবে না।

জেসিকা দেখে কোমল কান্নার জন্য কথা পর্যন্ত বলতে পারছে‌না তা দেখে নিজের কষ্ট বুকে চেপে রেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই জেসিকা নিজের সামলে নিল।
তারপর‌ কোমলের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে
আর বলছে কাঁদে না কোমল।
তোমরা এভাবে ভেঙে পরলে আমি যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না বোন।
তোমরাই তো আমার শক্তি বুঝতে পারছ।
জেসিকা কোমলকে অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে শান্ত করল।

এরপর কোমল ও জেসিকা দুজনেই রুমের বাহিরে আসে।

দোলা কোমল ও জেসিকাকে আসতে দেখে বসা থেকে উঠে এসেই কোমলকে জরিয়ে ধরে বলল,মা কেঁদেকেটে মুখের কি অবস্থা করেছিস বলতো।
মারুফ এসে তোর চোখে পানি দেখলে ওঁর কী ভালো লাগবে।
আমাদের তো রাগ করবে তার ছুটকি কেন কেঁদেছে সেজন্য।
তুই তো আমাদের লক্ষী মা ।

কোমল চাচীর কথা শুনে চাচীকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
চাচী বুকে নিয়ে কোমলকে বুকে শান্তনা দিচ্ছে।
আর মনে মনে বলল, মারুফের জন্য যেখানে আমরা সবাই অস্থির সেখানে জেসিকা মারুফের বৌ হয়ে এমন শান্ত আছে কি করে?

কিন্তু দোলা জেসিকার মনের খবর তো সে জানে না।
বুঝতে পারছে না।
মেয়েটার ভিতরে যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে মারুফের খোঁজ খবর না পেয়ে।

চাঁদনী বানু ও মায়া বেগম আরও আগেই জেগে যায়।
রুমে থাকতে শাশুড়ি ও বৌমার অসহ্য লাগছে।
তাই তারা বসার রুমে এসে সোফায় বসে পড়ল।

এদিকে জেসিকা বারবার ঘড়ি দেখছে ।
কারণ জেসিকা এক ঘন্টা আগে ওঁর বাপিকে ফোন করেছে। মারুফের কোন খোঁজ পেয়েছে কিনা জানতে?

জেসিকার বাবা এখনও মারুফের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি বলতেই জেসিকা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
উকিল সাহেবের কতকিছু বলে মেয়ে বুঝিয়ে কান্না থামাতে হয়েছে।

বাবার কথা শুনে জেসিকা কিছুক্ষণ নীরবে কান্না কাটি করে যায়।
তারপর জেসিকা কিছু একটা চিন্তা করে কান্না থামিয়ে ওঁর বাবাকে বলল, বাবা মারুফের নামে মিসিং ডাইরী লেখাতে রাশেদ ভাই এবং চাচ্চু থানায় যাবে।
তুমি ওদের সাথে গেলে ভালো হতো।

তুমিতো জানোই পুলিশ শক্তর ভক্ত নরমের যম।
তাই তোমার পরিচয় জানলে মারুফের ব্যাপারকে সিরিয়াসলি দেখবে।
উকিল সাহেব মেয়ের কথা শুনে বলল, তুই চিন্তা করিস না আমি এখনেই আসছি।
সেই থেকে জেসিকা বারবার ঘড়ি দেখছে, কখন তার বাবা আসবে আর ওদের সাথে কখন থানায় যাবে।
জেসিকা এসব ভাবতে ভাবতে ওঁর বাবা এসে পড়ল।
রাশেদ ও ইসহাক এতোক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করছিল।

তাই সে আসার সাথে সাথে তাকে নিয়ে রাশেদ ও ইসহাক খান থানায় যেতে বের হলো ।

জেসিকার বাবা থানায় যাওয়ার আগে একবার পিছনে ফিরে দেখল তার মেয়ে এবং বাকি লোকদের।

তার দিকে বাসার সবাই আশাভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।

রাশেদ ও মারুফের চাচ্চু সামনে দিকে হাঁটা দিয়ে থেমে গেল।
রাশেদ চিৎকার করে বলল ভাইয়া তোর কি হয়েছে?

ইসহাক জোরে শব্দ করে বলল, মারুফ তুই এসেছিস বাবা!

এদিকে সবাই সামনের রুমে বসে ছিলো এবং দরজা খোলা ছিল ।
তাই রাশেদের ভাইয়া ডাক শুনে সবাই কিছুটা অবাক হয়েছিল।
চাঁদনী বানু ভাবে কে এলো ?

কিন্তু ইসহাকের মুখে মারুফ এসেছে এটা শুনে সবাই হুড়মুড়িয়ে বাহিরে আসে।

বাহিরে এসে মারুফকে এ অবস্থায় দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে।
মায়া বেগম দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে ধরে বলল, বাবা তোর কি হয়েছে এমন করে আছিস….

বিঃদ্রঃ লেখাই কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনাদের যদি আমার লেখা ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে জানাবেন।
খারাপ লাগলেও সেটা প্রকাশ করবেন।
এতে আমার ভুল ত্রুটি গুলো বুঝতে পারবো।

আর আজকে একটা কথা সরাসরি বলতে চাই।
আমি শুধু গল্প নিয়েই থাকি না।
আমার সংসার আছে, সেখানে স্বামী বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে হয়।
সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
তার মাঝে সময় পেলেই লেখতে বসি।
তাই মাঝে মাঝে গল্প দিতে দেরি হয়।
কিন্তু সেজন্য দেরি করে গল্প দিলে পরবেন না এমন হুমকি ধামকি দেওয়া এবং বাটপার বলা কী ঠিক?
আর আমি তো কাওকে জোর করে আমার লেখা পড়তে বলছি না।
তাহলে এসব বলার মানে কি?
আমি নিজের তৃপ্তির জন্য লেখি কারো হুমকি ধামকি পেতে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here