গল্পঃহৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ১৩।
লেখাঃ#মেহের।
এই মুহূর্তে জেসিকাকে না থামালে মারুফ হয়তো নিজেকে জেসিকার দেখে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতেও পারে।
মারুফ বুদ্ধি করে সেজন্য নড়াচড়া দিয়ে উঠলো।
যাতে জেসিকা বুঝতে পারে মারুফ ঘুমে থেকে জেগে যাচ্ছে।
মারুফ নড়াচড়া করাতে হয়েছেও তাই ।
মারুফের নড়াচড়া দেখে জেসিকার ঘোর মূহুর্তেই কেটে গেল।
জেসিকা ভয় পেয়ে মারুফকে ছেড়ে দূরে সরে অন্যপাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ,
মনে মনে বলল, ইস্ এখনেই তো আরেকটু হলেই ধরা পরে যেতাম।
আমার ঐ মূহুর্তে কি যে হলো নির্লজ্জের মত ওঁর ঠোঁটের উপরে ঝাপিয়ে পড়লাম।
ছি্ ছি্ ,মারুফ বুঝতে পারলে হয়তো আমাকে খারাপ মেয়ে মানুষ ভাবতো।
আমি যে কাজেই এমন
করেছি।
আমার ধারা এমন কাজ হলোই কি করে!
আমিতো এমন ছিলাম না।
আর মারুফ যদি আমায় এ অবস্থায় দেখতো তো আজকে আমায় আস্ত রাখতো না।
এরপর জেসিকা মনে মনে এই বলে নিজেকে শাসালো,
জেসিকা এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরেনে।
নাহলে এই জীবনে আর মারুফ কে পাওয়া লাগবে না।
তখন সারাজীবন কুমারী বধু হয়ে পরে থাকিস।
এদিকে মারুফ ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
আজ আরেকটু দেরি হলেই সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতো না।
মারুফ মনে মনে বলছে,বৌ তুমি তো ডাকিনী ।
মনে হচ্ছে আমাকে ঘুমের ভিতরেই শেষ করার ইচ্ছে ছিল তোমার।
আমার মত ভালো মানুষকে পেয়ে কেউ এভাবে এ্যটাক করবে তা স্বপ্নে ভাবতে পারিনি।
এ্যটাক করেও তোমার লাভ হলো না বৌ।
তোমার সাজা এখনো শেষ হয়নি বলে, তুমি আমার এতো কাছে আসার পরেও তোমাকে কিছুতেই আমি এই মুহূর্তে আপন করে নিতে পারছি না।
নাহলে এই মারুফের বুকে আগুন জ্বালিয়ে তুমি এতো সহজে ঠিক থাকতে পারতে না।
সামনে আমারো সময় আসবে তখন ঠিক তোমায় দেখে নিব।
বৌ তোমার মন যে আমাকে আপন করে পেতে চাচ্ছে এবং
আমার সাথে মিশে একাকার হয়ে যেতে চায় তা তোমার কান্ডে দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।
এটাই তো হওয়া উচিত।
একজন বিবাহিত মেয়ে হয়ে স্বামীর ভালবাসা পেতে তৃষ্ণার্ত হওয়াটা তো দোষের কিছু নয়।
তুমি যে স্বামীর আদর ভালবাসার মূল্য বুঝতে পারছো এটাতেই আমি খুশি।
তবে জানো বৌ তোমার থেকে আমার তৃষ্ণা কিন্তু বেশি ছাড়া কম না।
তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করতে হচ্ছে।
সঠিক সময়ের জন্য।
একেই বিছানায় দুজন দুই মেরুতে শুয়ে আছে।
যে কেউ দেখলে ভাববে তাদের সম্পর্ক দুরত্বে ঘেরা।
কিন্তু আদৌও কি তায়!
এদিকে ওদের মনে একে অপরের জন্য কতটা ভালোবাসা রয়েছে
তা ওঁরা ছাড়া কেউ জানেনা।
দুজনে একে অপরকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
আযানের ধ্বনি শুনে মারুফের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মারুফ ওয়াশরুমে থেকে ওযু করে এসে নামায পড়তে মসজিদে যাওয়ার আগে জেসিকা কে নামাযের জন্য ডেকে উঠিয়ে গেল।
মারুফজেসিকা একবার ডেকেছে তাতেই জেসিকা উঠে পড়ায় মারুফের ভালো লাগল।
জেসিকা ঘুম থেকে উঠে ওযু করে নামায পড়ছে।
কিছুক্ষণ পরে
মারুফ নামায পড়ে এসে জেসিকার রুমে গিয়ে দেখে জেসিকা মাত্র নামায শেষ করে উঠলো।
জেসিকা মারুফকে দেখে বলল, আপনার জন্য চা করে আনি?
মারুফ তা শুনে বলে,নাহ্ এখন কিছু লাগবে না। আমি একটু ঘুমাবো।
একথা বলে বিছানায় শুয়ে পরল।
জেসিকা মারুফকে শুয়ে থাকতে দেখে স্বামীর মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো।
জেসিকার এমন কান্ডে মারুফ হতভম্ব হয়ে জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে!
এই মেয়ে এতটা বদলে গেল কি করে মারুফের বিশ্বাস হচ্ছে না!
জেসিকা মারুফকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, আপনি ঘুমান আমি আপনার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।
মারুফ এ কথা শুনে জেসিকাকে বলল, এই সকাল সকাল তোমার ড্রামা বন্ধ কর তো।
আমি এমনিতেই ঘুমাব।
জেসিকা বলে, আমি ড্রামা করলাম কখন!
আমি তো আপনাকে বিরক্ত করছি না শুধু চুলে একটু বিলি কেটে দিতে চাচ্ছি?
মারুফ বলে,শুনো আমাকে কিছুই করতে হবে।
তুমি তোমার কাজ থাকলে তা কর আমাকে ঘুমাতে দাও।
জেসিকা মনে মনে বলল, আপনি এমন কেন?
আমি আপনাকে যতই ভালবাসতে চাচ্ছি , কাছে আসতে চাচ্ছি আপনি আমাকে আপনার থেকে ততই দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন।
এরপর জেসিকা কিছুক্ষণ মারুফের কাছে বসে থেকে রান্না ঘরের দিকে যায় সকালের জন্য নাস্তা বানাতে।
রান্না ঘরে ঢুকে নাস্তা বানানোর আগেই চা বানিয়ে ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলো।
যেন সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠলে সবাইকে সময় মত চা দিতে পারে।
এরপর নাস্তা বানাতে লেগে পড়ল।
এদিকে মারুফকে ঘুম ভাঙল আটটার দিকে।
উঠে ঘড়ি দেখেই তাড়াহুড়ো করে ফ্রেস হতে চলে গেল।
দোকানে যেতে হবে তাই একবারে গোসল করে বের হয়েছে।
এখানে ওঁর কিছু জামা কাপড় থাকায় সেখানে থেকে এক সেট পড়ে নেয়।
মারুফ রেডি হয়ে জেসিকার রুমে থেকে বের হওয়ার সময়ে চাঁদনী বানু দেখে ফেলল।
চাঁদনী বানু মারুফকে জেসিকার রুমে থেকে বের হতে দেখে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে।
এবং মনে মনে বলছে,
চুল তো আমার বাতাসে পাঁকেনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে নাতি আমার গোসল করে ফিটফাট হয়ে রুমের বাহিরে আসছে।
কিন্তু কথা হচ্ছে এটা কেমন করে হলো!
যেখানে কালকে পর্যন্ত তো সব ঠিকঠাকই ছিল।
এক রাতে জুস এমন কি খেল দেখালো যে,
আমার ভোলা ভালা নাতি ওঁর রূপের জালে ফেঁসে যৌবনের জোয়ারে ভেসে এক হয়ে গেল।
এখন আমি কি করবো আলোরে তোর কপাল বুঝি আবারো পুড়লো ছেরি।
মারুফ দূরে থেকে দাদুকে দেখে না দেখার ভান করে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে লাগল।
চাঁদনী বানু এ দৃশ্য দেখে রাগে কাঁপতে কাঁপতে সোজা মারুফের সামনে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বললেন, দাদু তুমি এই রুমে কি করছিলা?
মারুফ দাদুকে সালাম দিয়ে বলল, দাদু দাদা জান তোমার রুমে কি করতো!
আমিও তাই করছিলাম।
চাঁদনী বানু রেগে বলল, ফাজলামি কর আমার সাথে!
তোমার রুম থাকতে তুমি সকাল সকাল জুসের রুমে কেন?
এ কথা শুনে মারুফ বলল, দাদু বিয়ে করেছি সারাজীবন বৌ রেখে আলাদা ঘুমাতে।
তোমাকে একা রেখে আমার দাদা জান কী আলাদা রুমে থাকতো?
একথা শুনে চাঁদনী বানু বলে, আমাদের সাথে তুলনা দিচ্ছ ভালো কথা কিন্তু দাদু ভাই তুমি কী তোমার সাথে এবং আমাদের সাথে হওয়া সকল অপমান ভুলে গেছ?
চাঁদনী বানুর কথা শুনে….