গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৫।
লেখাঃ মেহের।

রাহুল জেসিকার অবস্থা দেখে হাসছে আর বলছে , ওহ্ বেবি
তোমার চিৎকার আমাকে তোমার প্রতি আরও আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বাস করো জান এ পর্যন্ত মত মেয়ের সাথে ফিজিক্যাল সম্পর্ক করেছি তাদের দেখে কখনো এমন ফিলিংস আসেনি।
তোমার ফিগার আমাকে উত্তেজনায় পাগল করে দিচ্ছে কাছে এসো বেবি।
ওহ্ বেবি এসো তো
এসব বলতে বলতে বলতে রাহুল জেসিকার শরীর থেকে চাদর সরাতে জোরাজুরি করছিল।
সে সময় জোরে খট করে রুমের দরজা খুলার শব্দ হয়।
সেই শব্দ শুনে, দরজার দিকে তাকিয়ে জেসিকা যেন আসার আলো খুঁজে পেল।

নিজের মনে শক্তি জুগিয়ে রাহুলকে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপরে থেকে ফেলে দিয়ে।
ঝটপট গায়ে চাদর ভালো করে জড়িয়ে দরজার দিকে দৌড়ে যায়।
সে সময় দরজা খুলে দুজন মহিলা স্টাফ রুমে প্রবেশ করে ।
জেসিকা তাদের দেখে কান্না করতে করতে প্লিজ আমাকে বাঁচান হেল্প মি।
ওঁর হাতে থেকে প্লিজ আমায় বাঁচান এ কথা বলে তাদের পায়ের কাছে বসে পরে।

মহিলা স্টাফগুলো জেসিকাকে বলল,ম্যাম আপনি উঠুন আর প্লিজ ম্যাম আপনি একটু শান্ত হোন আপনার কিছু হবে না।

রাহুল স্টাফদের দেখে রেগে বলে,এই আপনারা এখানে কী চান?
এখানে থেকে যান তো আমাদের ডিস্টার্ব করবেন না।
এটা আমাদের নিজেদের ম্যটার তাই অযথা নাক গলাতে আসবেন না, বাহিরে যান।

সরি স্যার ,এটা আপনাদের পার্সোনাল ব্যাপার হলে ম্যাম আমাদের কাছে হেল্প চাচ্ছেন কেন?
এ কথা শুনে রাহুল ক্ষেপে বলে, সাধারণ স্টাফ হয়ে আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে বিরক্ত করার অভিযোগে আপনাদের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করবো ম্যানেজারের কাছে।

মেয়ে দুটো এ কথা শুনে বলে,স্যার খুশিই হবে আমরা কারো হেল্প করেছি শুনলে এ কথা বলে জেসিকাকে নিয়ে বাহিরে চলে গেল।

জেসিকা ভয়ে তখনও কাঁপছে ।
এতো ভয় পেয়েছে জয়া যে রুমের ভিতরে আছে তাও ভুলে গেছে।

জেসিকা বাহিরে এসে মহিলাগুলোর কাছে পড়ার জন্য কিছু দিতে অনুরোধ করেছে।

ওনারা বলে,ম্যাম আমাদের কাছে তো নতুন জামা কাপড় নেয়।
আমাদের বাসায় পড়ার দুই সেট জামা কাপড় স্টোর রুমে রাখা থাকে যেগুলো পড়ে আমরা বাসায় যায়।
ইক্সটা একসেট রেখে দেয় প্রয়োজনের জন্য সেটাও ব্যবহারিত ও সেই কাপড়ে ন্যাপকিন দিয়ে রাখাতে গন্ধ হয়ে আছে ।
তাতো আর আপনি গায়ে দিতে পারবেন না।
জেসিকা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, বোন সমস্যা নেই তার থেকেই একটি ড্রেস দিন।
আমি এভাবে যে বাহিরে যেতে পারবো না।
দরকার হলে আমি কাল সকালে এসেই আপনার ড্রেস দিয়ে যাব।
যে মানুষ কখনো ব্রান্ড ছাড়া পোশাক পড়তো না।
নতুন জামা কাপড় চার পাঁচ বার ব্যবহার করে পুরাতন হয়ে গেছে বলে ফেলে দিতো।
কখনো কারো ব্যবহারিত পোশাক পরিধান তো দূরের কথা নিজের পোশাক বান্ধবী বা কাজিনেরা পড়লে তা ময়লার ঝুড়িতে জায়গা হতে।
সে মেয়ে কিনা নিজের ইজ্জত ঢাকতে কারো পুরাতন পোশাকের জন্য অনুরোধ করেছে।
এটাও একটা দেখার বিষয় বটে।

এদিকে জেসিকা রাহুলের রুমে থেকে বের হলেই তাড়াহুড়ো করে দুজন লোক রুমে ঢুকে যায়।
এদের মধ্যে একজনকে রাহুল ভালো করেই চেনে কিন্তু আরেকটাকে চিনতে পারছে না।
তারা রুমে ঢুকেই রাহুলকে মারতে শুরু করে।
রাহুল তাদের ফিরাতে চেষ্টা করেও পারছে না।
তাই রাহুল বলল, আঙ্কেল আপনি আমাকে অযথা মারছেন কেন?
আপনার মেয়ে তো সেচ্ছায় আমার সাথে রুমমেটের জন্য এসেছিলো।
মারুফের সামনে মেয়ের কুকর্মের কথা শুনে জামিল তালুকদার লজ্জায় রাহুলকে ছেড়ে দিল।

কিন্তু একথা শুনে মারুফ ক্ষেপে গিয়ে রাহুলের মুখে ঘুষি মেরে বলে , আমার বৌ সেচ্ছায় তোর সাথে রুমমেটে আসলে নিশ্চয়ই চিৎকার চেঁচামেচি করতো না!
তোর সাহস হয় কি করে মিথ্যা বলার!
আরে ওঁর চিৎকার শুনে যে কেউ বলতে পারবে তুই ওঁর সঙ্গে জোর জবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিস।
জানোয়ার আমার বৌকে ছোঁয়ায় সাহস হয় কীভাবে তোর?
তোকে তো আজকে জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে দিবো।
যাতে আর কোন মেয়ের ক্ষতি করতে না পারিস।

মারুফ রাগে লাল হয়ে গেছে রাহুলকে মারছে আর জামিল তালুকদারকে বলছে, আঙ্কেল আমি এদিকে দেখছি ।
যে আপনাকে ফোন করেছিলো দেখেন সে কোথায় আছে।
কারণ জেসিকাকে তো একা বাহিরে নিয়ে গেছে।

ওনাকে খুঁজে দেখুন তো।

একথা শুনে ,জামিল তালুকদার আশেপাশের তাকিয়ে খুঁজতে শুরু করেন।
সামনে রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো রুমের মধ্যে একটি বাহিরে থেকে বন্ধ দেখা যাচ্ছে।
সেই রুমের কাছে যেয়ে দরজা খুলে দিল।
জয়া এতোক্ষণ দরজার কাছে বসে কান্না কাটি করছিল হঠাৎ দরজা খুলে যাওয়ায় বাহিরে তাকিয়ে দেখে জেসিকার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
তাকে দেখে জয়া আরও জোরে কাঁদতে থাকে ।
জামিল তালুকদার জয়াকে সান্তনা দেয় এবং বলে চিন্তার কিছু নেই তারা এসে পরেছে।

জয়া বাহিরে এসে দেখতে পেলো একটা ছেলে ।
রাহুলকে উত্তম মাধ্যম দিচ্ছে।

জয়া অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে জামিল তালুকদার বলেন,এটা জেসিকার হাজবেন্ড।

জয়া মারুফকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে।
সে ভেবেই পেলো না কি কারণে তার বান্ধবী দিনের পর দিন এই লোকটার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।
এমন ছেলেকে তো সব মেয়েরাই হাজব্যান্ড হিসেবে পেতে চায়বে।
মারুফের কোন দিকে নজর নেই সে তো রাহুলকে উত্তম মাধ্যম দিতে ব্যস্ত ।
শুধু যে দিচ্ছে তা ঠিক নয় কম বেশি খাচ্ছে ও।
তবে এবারে মারুফ রাহুলের মেইন পার্টে লাথি দিল।
রাহুল তাতে ব্যথায় চিৎকার করে কাতরাচ্ছে তা দেখে জামিল মারুফকে রাহুলের কাছে থেকে সরিয়ে নেয়।

জামিল তালুকদার মারুফ ও জয়াকে নিয়ে হোটেল রুমে থেকে বাহির আসে।
আসার পরে একজন স্টাফকে দিয়ে রাহুলকে হসপিটালে পাঠান।
উকিল সাহেব চায়নি এগুলো নিয়ে পরে ঝামেলা হোক তাই
এখানে থেকে রাহুলের বিরুদ্ধে প্রামান জোগাড় করে।
এই ঘটনার পরে কোন সমস্যা হলে বা দরকার হলে সেই প্রমান ব্যবহার করতে পারে।

মারুফ বাহিরে এসে জামিল তালুকদারকে বলে, আঙ্কেল জেসিকাকে নিয়ে আপনাদের বাসায় যান।
আমি দোকানে যাব দেরি হয়ে গেছে আমার।
যাওয়ার সময় ওনাকে গাড়িতে তুলে দিয়েন।

জামিল তালুকদার বলেন, মারুফ এমন মেয়ের আমার বাসায় কোন জায়গা নেই।

মারুফ বলে,সব সময় রাগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়না আপনাকে এটা ভালো করে বুঝতে হবে।
তা ছাড়া এই বেশে জেসিকা আমাদের বাসায় গেলে সবাই খারাপ বলবে আর আশেপাশের মানুষজন দেখলে ওঁর চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলবে তাতে নিশ্চয়ই আপনার ও আমার সম্মান কমবে ছাড়া বাড়বে না।
একটু বুঝতে চেষ্টা করুন।

জামিল মারুফের কথা শুনে জেসিকার খোঁজে ম্যানেজারের কাছে গেলে জানতে পারে কিছুক্ষণ আগেই জেসিকা এখানে থেকে চলে যায়

তারা আটকাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

এ কথা শুনে ওঁরা বুঝতে পারছে জেসিকা বাসায় চলে গেছে ।
এখন দেখার বিষয় জেসিকা কোন বাসায় গেল।

জয়াকে টেক্সিতে তুলে দিয়ে
উকিল সাহেব ও মারুফ যার যার নিজেদের কাজের চলে যায়।

উকিল সাহেব গাড়িতে বসে ভাবছে আরেকটু দেরি হলেই হয়তো তার মেয়েকে জানোয়ারটা থেকে বাঁচাতে পারতেন না ।
ফ্লাশব্যক

উকিল সাহেব যখন জয়ার ফোন পেয়েছে সে সময়ে মারুফ তার সামনেই বসে ছিলো।

ওদের তালাকের কাগজ রেডি সেটা এনে শুধু সাইন করা বাকি আছে তা বলতে বলছিলো।

জামিলের ফোনে কথা শুনে মারুফ বুঝতে পারছিল কোন বড় ঝামেলা হয়েছে ।
ঝামেলা বেশি কিনা তা ভেবেই জিজ্ঞেস করলে জামিল তালুকদার মারুফকে জয়ার কাছে শুনা কথাগুলো বলেন।
সব শুনে মারুফ দেরি না করে তাকে জেসিকার কাছে যেতে বলে ।
জামিল তালুকদার মারুফকে পরীক্ষা করতে জেসিকার বিষয়ে তার আগ্রহ নেই তাই সে ওখানে যেতে অস্বীকার করেন।

তখন মারুফ রেগে বলে,যখন মেয়েকে শাসনের দরকার ছিল তখন তো লাই দিয়ে মাথায় তুলেছেন।
আর এখন আপনার উচিত মেয়েকে
বাঁচানো তা না করে উল্টো রাগ হয়ে ওঁর ক্ষতি হতে এখানে বসে থেকে সাহায্য করছেন।
এতকিছুর শুনেও জামিল তালুকদার কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে মারুফ দাঁড়িয়ে বলে আপনি বসে থাকেন এখানে আমি তো বসে বসে আমার বাড়ির বৌয়ের সম্মান নষ্ট হতে দেখতে পারবো না তাই আমিই যাচ্ছি তাকে রক্ষা করতে।
একথা বলে মারুফ যেতে নিলে জেসিকার বাবাও মারুফের পিছনে পিছনে আসে।
আর মারুফের কথা মতই ম্যানেজারকে হুমকি ধামকি দিয়ে দুজন মহিলা স্টাফকে এক্সট্রা চাবি দিয়ে জেসিকাকে বাঁচাতে পাঠায় ওই রুমে ।
মারুফের কথা হচ্ছে জেসিকা কি অবস্থায় আছে তা জানি না আমাদের ওঁর সামনে না যাওয়ায় আপাতত এই পরিস্থিতিতে ভালো মনে হচ্ছে।
উকিল সাহেব এটা ভেবে অবাক হয়েছেন ওরকম মূহূর্তে ও জেসিকা কে তাদের সামনে লজ্জায় ফেলতে চায়নি।
গাড়ির হঠাৎ ঝাঁকুনিতে জামিল তালুকদার ভাবনা থেকে বাহিরে আসলেন।
সে বিরবির করে বলল, মারুফ আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমার মেয়ের এতো অপরাধের পরেও তুমি তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আস কিনা।
তুমি শুধু এগিয়ে আসোনি জেসিকাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছো।
আজকে তোমার আচরণ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
আফসোস শুধু একটাই আমার মেয়ে কি হারাচ্ছে তা সে এই মূহুর্তে বুঝতে পারছে না।
যখন বুঝতে পারবে তখন না দেরি হয়ে যায়।

মারুফ দোকানে এসে শান্তিতে বসে থাকতে পারছে না।
এই মেয়ের বেপর্দা চলাফেরা মারুফের মোটেও পছন্দ ছিল না।
বিয়ের পরে তাকে কয়েকবার বলেছিল ভদ্র বাড়ির বৌ/মেয়েরা ওড়না ছাড়া এমন পোশাক কখনো পরে না যাতে মানুষের চোখ দিয়ে গিলে খাবে। এবং সময়ে অসময়ে বাহিরে যায় না।

কিন্তু এসব বলাতে জেসিকা মারুফকে নিজের নজর আগে ঠিক করতে বলেছে এমনকি মারুফের কথায় নাকি বুঝা যায় তার চরিত্রের ঠিক না।
মারুফকে সেদিন আরও কটু কথা বলেছে ।
এও বলেছে সে নিজের রক্ষা নিজেই করতে জানে ।
তাই মারুফ বা অন্য কেউ তার কাছে আসলেই হাত পা ভেঙ্গে দেবে।
মারুফ বিরবির করে বলছে,
এতো যদি সাহস ছিল তো আজকে নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল কেন?
মুখে শুধু বড় বড় কথা ছাড়া আর কিছুই জানে না এই মেয়ে।

জেসিকার চিৎকার শুনে মারুফের তখন অস্থির লাগছিল মনে হচ্ছিল সবকিছু ধংস করতে কিন্তু কেন ?
যার সাথে কোন হৃদয়ের সম্পর্ক নেই তার কষ্টে আমার কষ্ট হচ্ছে কেন?
আমার কেন রাহুলকে খুন করতে ইচ্ছে করছে?
আচ্ছা একজন মেয়ের বিশ্বাস নিয়ে কিভাবে এমন আচরণ করতে পারে কেউ!
নাহ্ এসব ভাবতে ভাবতে মনে হয় পাগল হয়ে যাব।

এদিকে ওখানে থেকে জেসিকা মারুফের বাসায় এসেছে।

সে সময় বাসার কেউ ওকে এই অবস্থায় দেখতে পায়নি।
জেসিকা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
তারপর ওয়াশ রুমে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে পানির নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করতে থাকে এবং নিজের শরীরে আঘাত করছে।

রাহুলের ছোঁয়া যে সব জায়গায় পরেছে সে সব জায়গা ঘষতে ঘষতে লাল করে ফেলছে।
কতক্ষন ওভাবে বসে ছিলো তার ঠিক নেই।
ওয়াশ রুম থেকে ভেজা কাপড়ে বের হয়ে রুমে এসে দেখে রুম অন্ধকার হয়ে গেছে।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক রাত হয়েছে।
জেসিকা জামাকাপড় পাল্টে বিছানায় হাঁটু গেড়ে মাথা গুঁজে বসে রয়েছে।
ওঁর কাছে সব অসহ্য লাগছে যাকে মন প্রাণ দিয়ে এতো দিন ভালবেসেছে আজকে সেই কিনা ওকে ধর্ষন করতে চেয়েছে।
এমন চরিত্রের মানুষকে কিভাবে ভালবেসেছে সেটা ভাবতেই পারছে না।
আজকে ঐ মহিলাগুলো না এলে তার মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় থাকতো না।
এসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ল সে তো রাহুলের সাথে দেখা….

বিঃদ্রঃ লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
লাইক ও কমেন্ট করে সঙ্গে থাকবেন।
আপনাদের সাপোর্ট আমাকে লেখতে সাহায্য করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here