বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 42
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
……
—- “ যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা।
যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তাই দেখে তীব্র ন্যাকামি করে বলে,
—– ” ওলেলে বাবুটা।এটা আমার না। বাংলা ছবির কমন ডায়লক। ”
—– ” তীব্রররর….. ” কানফাটানি চিৎকার দেয় তুর।
তুরের চিৎকার সহ্য করতে না পেরে বিছানায় ছুঁড়ে মারে তুরকে। তুর নিজের কোমর ধরে চিৎকার করে বলে,
—– ” আপনি কী ঠিক করেই রেখেছেন আমাকে না মেরে ক্ষান্ত হবেন না? ”
নিজের কোমরে হাত দিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাঁড়ে তীব্র। ” বড্ড বেশি বাজে বকো তুমি।”
—- “ তো কী করব? ” রেগে জবাব দেয় তুর।
—- ” অসহ্য তুমি। ”
—- ” জানি আমি… ”
এইটা শুনে তীব্র তেরে তুরের কাছে যায়। ওর ডান পায়ে ব্যাথা তাই বাম পা টান দিয়ে তুরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তুর নিজেকে ছাড়ানের জন্য তীব্রের পিঠে-কাঁধে কিল-ঘুশি, খামচি দিতে শুরু করে। ও পাগলের মত খামচি, কিল-ঘুশি দিতে ব্যস্ত ওদিকে তীব্র বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে তুরের কোমর পেচিয়ে আছে।
—- ” ছাড়ুন আমাকে তীব্র। ”
—- ” আগে নাগিনের মত ফোসফোস করা বন্ধ করো। ”
—- ” করব না। ”
—- ” তাইলে কী করবা? কাঁমরে দিবা? বিষ আছে মারার মত? ”
এইটা শুনে তুর শান্ত হয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে তীব্রের দিকে তাকায়…
—- ” সেটা দিলেই বুঝতে পারবেন… ”
মৃদু হাসে তীব্র। ” তাহলে দেও না। দেখি কতটা লাগে? আফটার অল একটা কিউট স্নেক। বিষের ভয় হলেও কাঁমরের না। দেখি বিষের ঔষুধ আছে কিনা আমার কাছে? ”
—- ” আপনি… ” রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।
—- ” কী আমি? থেমে গেলে কেন? দাঁতে শক্তি নেই নাকি? ”
তুর চুপ…
—- ” বুঝলাম। এ সাপ শুধু ফোসফোস করতে পারে৷ কিন্তু… ( তাচ্ছিল্যে করে ) বিষ ঝারতে পারে না। ”
তুর জিদে মুখ ফিরিয়ে নিলেই তীব্র ওর মুখ ফিরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁটে রাখে। তুর ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তুরের পিঠ ধরে ওর সাথে মিশিয়ে নেয়। তুর চেয়েও ছাড়াতে পারে না। তাই শান্ত হয়ে যায়। তুর শান্ত হয়ে গেলে তীব্র ওকে ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসে। কিছুক্ষন পর তুর চোখ খুলে ফোসফোস করতে করতে অগ্নি-দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্র এখনো ওকে জড়িয়ে আছে।
—– ” ” বিষের স্বাদ শীতল হয় জানতাম। কিন্তু আজ জানলাম তা মিষ্টিও হতে পারে। এমন মিষ্টি বিষে মৃত্যু হলেও হাসতে হাসতে প্রান দিতে রাজি আমি। ”
তুর ধাক্কা দেয় কিন্তু ওকে সরাতে পারে না।
—- ” এমন করছ কেন? একটু থাকলে কী হয়? আমি তো পর নই, বর হই। বাই দ্যা ওয়ে তোমার কী মিষ্টি দিতে ইচ্ছে করছে? ”
—- ” নাগীনের বিষের স্বাদ নিলেন অথচ দংশন নেবেন না। ”
ভ্রু-কুঁচকায় তীব্র, ” মানে? ”
—- ” মানে… ( দাঁত কিড়মিড় করে ) এখনি বুঝবেন… ”
বলেই তীব্রের কাঁধে সজোরে কাঁমর বসায়। ওর বাইটে ” আহহ ” শব্দ করে উঠে তীব্র। কিন্তু তুর আজকে ওর মাংস তুলেই ছাড়বে মনে হচ্ছে তীব্রের। তীব্র দ্রুত ওকে ধাক্কা মেরে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
—– ” এই তুমি কী পাগল -টাগল হয়ে গেছ? নাকি জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে? পুরো জ্বালিয়ে দিলা? ” কাঁধে হাত ঘষতে ঘষতে।
তুর ব্যাথা পায়ে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
—- ” এইটাকে বলে নাগিনের বিষ দেওয়ার প্রক্রিয়া। আপনি যেটা নিয়েছেন সেটা না। ”
অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। ওর কথা শুনে চোখ গুলো বড় বড় করে বলে,
_— ” তাই নাকি? সত্যি অনেক বিষ। সহ্য করা একটু টাফ। এর আগে এরকম প্রক্রিয়া হইনি। তখন নাগিন আমার শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র, ভীতু ছিল। কিন্তু বড় হয়ে এখন বিষেভরা হয়েছে। যাইহোক বিষ যখন বেশি তাহলে বিষ দাঁত ভাঙতে হবে! ”
—– ” মানে কী? ” বিস্মিত হয়ে।
হালকা হেসে জবাব দেয় তীব্র, ” বিষ দাঁত ভাঙব। ওয়েট করো একটু। আসছি।”
তীব্রের কথার আগা মাথা কিছুই খুঁজে পায় না তুর। আর অবস্থা এমন যে উঠতেও পারছেনা। কিছুক্ষন পর তীব্র আসে। ওকে দেখেই তুরের কলিজায় পানি শুকানোর অবস্থা।
—– ” এসব কী! ” বিস্মিত হয়ে।
—– ” দাঁত ভাঙব। ”
—– ” মানে? ”
তীব্র আর কিছু না বলে তুরের গাল চেপে হা করায়। এটা দেখে তুরের চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ও এক জটকায় তীব্রের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
—– ” আপনি কী করতে চাইছেন? তাও আবার প্লাস নিয়ে? ”
—– ” তোমার দাঁত তুলব।যাতে বিষ ঢালতে না পারো। ”
তুরের মাথায় হাত। তীব্র সত্যি সত্যি প্লাস নিয়ে এসেছে দাঁত তোলার জন্য। লোকটা পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি? নাকি নেশা-ভাং কিছু করেছে?
—– ” তীব্র আপনি? ”
—– ” চুপ। সাপ পোষার আগে বিষ দাঁত ভাঙতে হয়। কাঁমরাবা সমস্যা নাই। কিন্তু এবার আর দাঁত দিয়া না। বুড়ির মত দাঁতের মাড়ি দিয়ে। দেখি আগে কোনটা তুলব? ”
আবার তুরের গাল চেপে প্লাসটা দাঁতের মধ্যে ঢুকিয়ে আলত করে একটা টান দিতেই তুর ভ্যা… ভ্যা.. করে কেঁদে দেয়। তীব্র ওকে ছেড়ে ভ্রু- নাচিয়ে বলে, ” কী? ”
–_- ” ওই আপনি আমার দাঁতের পিছনে কেন মরতাছেন?”
—– ” কারন তুমি আমার কথা শুনছ না। কথা ছিল হেরে গেলে আমার কথা শুনবা কিন্তু তুমি? ” প্লাসটা দিয়ে বাতাসে একটা চাপ দিয়ে তুরকে ভয় দেখায়।
—– ” আচ্ছা শুনব। ” ঢোক গিলে।
—– ” গুড। মনে থাকে যেন। ”
তীব্র উঠে খাবার নিয়ে আসে। তুর এমনিতেই কিছু খায়নি। পেটে ক্ষিদেয় চো,চো করছে। তবুও বলল,
—– ” আমি কিন্তু খাব না। ”
ভ্রু-কুঁচকায় তীব্র।
—– ” তোমাকে খেতে কে বলল? আমি তো আমার জন্য এনেছি? ”
—– ” মানে? ” অবাক হয়ে।
—- ” এই সব খাবার আমাকে তুমি খাইয়ে দেবে। এগুলো আমার জন্য তোমার জন্য না।
প্রচন্ড রাগ লাগল তুরের। ও কর্কশ গলায় বলল,
—– ” পারব না। ”
—– ” তাই নাকি? ” প্লাস টা দেখিয়ে।
তুর জানে তীব্র এমন কিছু করবে না। কিন্তু এটাও জানে ও কিছু একটা করবে।
—- হুমম। পারব না। ”
তীব্র খাবার গুলো পাশে রাখল। এই শীতল আবহাওয়ায় ও এমন ভাব করল যেন খুব গরম লাগছে। ” ইসস কী গরম না? মনে করেছিলাম তোমার হাতে খেয়ে শুয়ে পরব। কিন্তু এখন দেখছি তোমার হাতের ভাত নয় অন্যকিছু… ” নিজের শার্ট খুলতে গেল। জাস্ট হয়ে গেল। তুর জানে তীব্র ওর দাঁত না উঠালেও যা বলছে তা করার ট্রাই করলেও করতে পারে।তীব্রের গতিবিধি এমনি ভালো না। শুধু শুধু ঝামেলার মানে নেই। তার উপর নিজেও ক্ষুর্দাত। ও রাগে পানি নিয়ে হাঁত ধুঁয়ে নিল।কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল তীব্রকে না আগে নিজেই খাবে। যা হয় হবে। তাই ও এক লোকমা নিয়ে যেই না মুখে তুলতে যাবে ওমনি তীব্র ধরে ফেলে। তুর বিরক্তির চোখে ওর দিকে তাকালে ও ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে বলে, ” এটা চিটিংবাজি। ” বলেই খাবারটা নিজের মুখে পুরে নেয়। তুর কাঁদো কাঁদো মুখ করে ১০১‘ টা গালি দেয়। তীব্র নাছোড়বান্দা। এক লোকমা যাতে তুর মুখে দিতে না পারে তাই ওর হাতটা ধরে আছে। যা খাবার উঠায় সবই নিজের পেটে চালান করে। ওর খাবার দেখে তুর ঢোগ গিলে। যা দেখে তীব্র ঠোঁট টিপে হাসছে। খেতে খেতে কিছু খাবার যখন বাকি ছিল তখন তীব্র বলে উঠে, এই আমার তো একটা কথাই মনে নেই। আমি আসছি। ( চলে যেতে ধরে আবার থেমে যায়। তুরের দিকে ফিরে বলে) আমি যেন এসে দেখি খাবার এভাবেই আছে। আমি খাব। ” মাথা নাড়ায় তুর। হালকা হেসে চলে যায় তীব্র। তীব্র যাওয়া মাত্রই তুর দ্রুত বাকি খাবার খেতে শুরু করে। যা আছে তা তুরের জন্য যথেষ্ট। তুর কিছুতেই তীব্রকে আর খাওয়াবে না। আর খাবার না থাকলে কী খাওয়াবে হা হা.. আর ওকে খেতে দিবে না
জীদ করেই খেল। এবার কীভাবে পেট থেকে বের করবে। তুর খাবার খেয়ে হাত ধুঁয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরল। যাতে তীব্র ওকে কিছু বলতে না পারে।
এতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে তুরের কান্ড দেখে নিজের মনে হাসছে। কতটা অবাধ্য হলে মানুষ এটা করে ভেবে পায় না তীব্র। যাই হোক ওকে তো খাওয়ানো গেল।
তীব্র বাইরে বেড়িয়ে রিদ্ধকে একটা টেক্সট করে দিল। তারপর আবার রুমে ফিরে গেল।
তীব্র এসে দেখল তুর ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। বিছানার কাছে গিয়ে তুরকে ডাকল কিন্তু কোনো সাঁড়া পেল না। কিছু একটা মনে মনে আওরে নেয়। বুঝতে পারে তুর জেগে আছে শুধু তার ডাকে সাঁড়া দিতে চাইছে না। ও আর কোন কথা না বলে গিয়ে লাইট টা বন্ধ করে দিল। লাইট নিভার শব্দে সচকিত হয়ে চোখ খোলে তুর। পরক্ষনেই নিজের পাশে তীব্রকে অনুভব করতে পারে। এই মুহুর্তে তুরের বুকে অজানা এক ঝড় বইতে শুরু করেছে। তীব্রকে নিজের পাশে যতটা অনুভব করছে ঝড়ের গতি যেন আরো প্রবল আকার ধারণ করেছে। শরীরের রক্তকনিকা প্রচন্ড গতিকে শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। ঝাকিয়ে উঠছে শরীর। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় সে। নিজের সামনে থাকা বালিশটাকে ছিঁড়তে শুরু করেছে। কিন্তু মোলায়েম কাপর তুরের নখের আঘাতে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া করছে না ছেঁড়ার। উল্টে ব্যাথা পাচ্ছে তুর নিজেই। তবুও ঠোঁট কাঁমরে নিজের কাজে ব্যস্ত সে। অনুভুতির রঙ যতটা গাঢ় হচ্ছে ততটাই যেন তুরের খেলা বেড়ে চলেছে।
তীব্র কিছুটা দুরত্ব নিয়েই শুয়ে আছে। বালিশে নখ ঘষার আওয়াজ আসছে। বুঝতেই পারছে তুর ঘুমায়নি। কিন্তু ডেকে যে সাড়া পাওয়া যাবে না তাও স্পষ্ট। ও এক হাঁটু উঁচু করে বুকে দুহাত বেঁধে অন্ধকারে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে অনেক প্রশ্নের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার মাঝে সবার উপরে যে প্রশ্নটি তা হলো, আজ ও তুরের সাথে কেন আছে? সেটা শুধুই কী তাইয়্যানকে তার মা ফিরিয়ে দেবার জন্য? নাকি নিজের অব্যক্ত চাওয়া যা নিজের কাছে স্বীকার করতে নারাজ সে। তুরকে সে ভালোবাসার জন্য নিজের কাছে রাখেনি। নিজের কাছে রেখেছিল বলে ভালোবেসেছে। একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবেসেছে। তুরকে নিজের প্রয়োজনে আঁটকে রেখেছিল। কিন্তু কখন যে মেয়েটার কাছে নিজে আঁটকা পরেছে জানে না। তুরের নষ্ট হওয়ার জন্য ও দ্বায়ী। প্রথমে ব্যবহার করেছিল মেয়েটাকে। কিন্তু পরে… যে ১’টা মাস তুরকে না জানিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সাধারন কাপলের মতই থেকেছে তখন বুঝতে পেরেছিল মেয়েটা ওর সাথে হাসি-খুশি থাকলেও চাঁপা কষ্টে ছিল ওর সাথে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তীব্রের কখনোই প্রয়োজন ছিল না রেজিষ্ট্রির কথা তুরকে জানানোর। অপ্রয়োজনীয় ছিল সেটা। কিন্তু মেয়েটার লোক দেখানো হাসি কেমন জানি ঘৃনার ঝড় বইয়ে দিত ওর মাঝে। মেয়েটা সারাদিন ওর সাথে হেসে-খেলে কাঁটালেও রাতের আঁধারে ঠিকি চোখের জলে বুক ভাসাত। চাপা কান্নার আর্তনাদ ঠিকি কানে আসত ওর। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে যখন ঘুমের ভান করে ওকে বুকে টেনে নিত তখন প্রথমে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও, পরে শান্ত হয়ে খুব শক্তভাবে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে রাখত। যে বিষে যন্ত্রনা পেত, তা দিয়েই নিজের উপশম করত। তীব্রের দেওয়া মানসিক যন্ত্রনা তীব্রের বুকেই মধ্যে কেঁদে মুছে ফেলার চেষ্টা করত। এক দিনের জন্য অভিযোগ করেনি। হয়ত তুর এটা ভাবত তীব্রের থেকে ওর কষ্টগুলো লুকাতে পারছে। কিন্তু জানত না। ওর চোখের ভাষা নয়, নিশ্বাসের ভাষাও বুঝতে পারে তীব্র।
তবুও নিজেকে লুকানোর কত বৃথা চেষ্টাই না ছিল মেয়েটার। আর আজও তাই। তখন আমার কাছে হাসি দিয়ে কষ্টটা লুকাত। আর আজ রাগ,ঘৃনা আর জেদ। আজ যদি ওকে কাছে টেনে নেই হয়ত বাঁধা দেবে কিন্তু ঠিকি মেনে নিবে। বাইরের খোলসটাই পরিবর্তিত ভিতরের ” তুমি ” নয়।
তাই রেজিষ্ট্রির কথা বলতে চায়নি তুর। বরং তোমাকে তোমার নজরে পবিত্রতা দিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে সে সুযোগ দেওনি। সেদিন যদি তুমি পালিয়ে না যেতে তাহলে আমাদের জীবনের মোড় অন্যরকম হত। তোমাকে শুধু ওই ১’মাস নিজের কাছে পেয়েছি। নিজের মত করে পেয়েছি। তারপরে সাড়ে ৬ বছর চলে গেল। তার মাঝে তোমার শান্ত পরশ ও আমি পায়নি। তোমাকে দেওয়া ৩মাসের বদ্ধতা আমাকে সাড়ে ৬ বছর যাবত নরক যন্ত্রনা দিচ্ছে। ভালোবাসার অভাব নেই তোমার মনে শুধু দেওয়ার মত মানুষটার অভাব…
কথাগুলো ভেবেই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে তীব্র। যদিও এভাবে কারোই ঘুম আসবে না। কিন্তু তবুও অজানা এক বাঁধা দুজনের মনে। পিনপতন নিরবতায় দুজনেই অস্থির। তুর ভেবেছিল হয়ত তীব্র ওকে বুকে টেনে ঘুমোতে চাইবে। কিন্তু সেটা হলো না। তীব্র ঘুমায়নি। তাহলে? তুর নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। ঠোঁট কাঁমরে ধরে বালিশটা বুকে নিয়ে শুয়ে থাকে।
তীব্র নিজের অস্থিরতা কাঁটাতে পারছে না। তুর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তুর নিজের পা নাড়াতেই ব্যাথা টনটন করে উঠে। ঠোঁট কাঁমরে সহ্য করে নিশ্চুপ।
কিছুক্ষন পর… চেয়ে আছে তীব্র। ঘুম যে আসবে না। তা জানা। তীব্র তুরের দিকে তাকায়। তুর অনড় ভাবে শুয়ে আছে।কী মনে করে ওর কাছে যায়। তুরের দিকে এগিয়ে বাম কনুইয়ে ভয় দিয়ে ডান হাতে ওর কপাল স্পর্শ করে। তীব্রের আকস্মিক ছোঁয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তবুও কিছু বলে না। তীব্র কিছুটা ভ্রু-কুঁচকে অন্ধকারে তুরের কপালে এমনভাবে স্পর্শ করছে তুরের মনে হলো ও কিছু খুঁজছে। পরক্ষনেই তুরের ঝুঁটি থেকে বেড়িয়ে আসা একগুচ্ছ চুল নিজের আঙুলে পেঁচিয়ে নেয়।কী করছে মাথায় কিছু আসছে না তুরের।
তীব্র তুরের চুল গুলো ছেড়ে নাকে হাত দেয়।কিছুটা ভ্রু কুঁচকায় তুর। নাকের শ্বাস চেক করে কী বুঝতে চাইছে মরে গেছি নাকি বেঁচে আছি। মাথা চুলকাতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু না। সেটা করা যাবে না। তীব্র নাক থেকে নেমে ওর ঠোঁটে বুড়ো স্পর্শ করতেই তুরের চোখ গুলো বেড়িয়ে আসার উপক্রম। পরক্ষনেই তীব্র কানে আলত ফু দিতেই তুরের বুকে অদ্ভুত কিছু অনুভব হয়৷ পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে নিজের শরীরে কোন ভর নেই। হাওয়ায় ভাসছে ও। তবুও ও চুপ। তুরের এমন নিরবতা যেন তীব্রের কাম্য নয়। ও চায় তুর যেকোন পরিস্তিতিতে নিজেকে প্রকাশ করুক। যতক্ষন না পর্যন্ত তুর নিজের চাপা অভিমানটা না দেখাবে ততক্ষন কিছু ঠিক হবে না। কিন্তু তুর জেগেও কোন রিয়েক্ট করছে না।
তীব্র তুরের চুল গুলোকে আবার আঙুলে পেচিয়ে নিল। ওর কানে আলত করে চুমো দিতেই তুর শিওরে উঠে। হালকা হাসল তীব্র। তুরের একদম কাছে গিয়ে তুরের গালে নিজের মাথার ভর দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তুরের দম বন্ধ হবার উপক্রম
লোকটা আবার ওর দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে। তুর কিছুটা নড়ে উঠতেই তীব্র ওকে শক্ত করে জড়িয়ে গালে চুমো দিয়ে আবার মাথা রাখে গালে। তুরের কানের কাছে গিয়ে মাতাল কন্ঠে বলে, ” আজ এতবছর পর তোমাকে নিজের কাছে পেয়েছি তুর। বড্ড ইচ্ছে করছে তোমার থেকে তুমিকে চাইতে। বন্দীনি নয়, সেই তুমিকে, যার হাসির আড়ালে কান্নাটা আমার জন্য লুঁকানো ছিল। অভিমানের আড়ালে যে শুধু ভালোবাসাই প্রকাশ করত। ছোট হলেও তার মনের সবকিছু আমাকে ঘিরেই থাকত। যার আমার দেওয়া কষ্টের চেয়েও বেশি ভয় আমাকে হারানোর ছিল। সেই “তুমিকে ” চাই আমার। তার ভালোবাসায় হারাতে দেবে আমায়। ”
তুর কিছু বলতে পারল না। তীব্র ওকে নিজের প্রতি দূর্বল করতে চাইছে। কিন্তু তুর তো তা কিছুতেই হতে দেবে না। যে করেই হোক তীব্রের কাছে হারতে দেবেনা নিজেকে। কিন্তু কী করে? তীব্র ওর কাছে আসতে চাইলে কীভাবে আটকাবে ওকে? তীব্র কী ওর বারন শুনবে? নিজেই বা কিভাবে তীব্রকে দূরে সরিয়ে দেবে?
তীব্র এখনো তুরের কোন সাড়া পেল না। তীব্র ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে কাঁধে চুমো দিতেই এবার আর তুর সহ্য করতে পারে না। ছিটকে ফেলে দিতে চায় তীব্রকে। কিন্তু তীব্র ব্যাপারটা তীব্রের বোধগম্য ছিল তুর এমনটা করবে। আগে থেকেই ওকে প্রচন্ড শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেছিল। তাই তুরের ধাক্কায় ও তুরকে এক চুল ও ছাড়েনি।
তীব্রকে ছাড়াতে না পেরে ও জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। তখনি তীব্র ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আগের মত নিজের বাহুতে ওকে শুইয়ে শক্ত করে ধরে রাখে। তুর না পেরে এবার বলে উঠে,
—-” তীব্র ছাড়ুন আমাকে। আমি চাই না আপনার সাথে থাকতে। আর না আপনার ছোঁয়া। ”
একহাত তীব্রের পিঠের নিচে। তাই তুর এক হাত দিয়েই ওকে দূরে সরাবার চেষ্টা করে। প্রচন্ড জোরেই কিল, ঘুশি মারতে থাকে। কিন্তু তীব্র কোন রিয়েক্ট করে না। তুর কী বলছে তার কোন খেয়াল ওর নেই। হঠাৎ ওর হাত আটকে নেয় তীব্র। তুর কিছু বলার আগেই তুরকে চুপ করিয়ে দেয়। তীব্রের ছোঁয়ায় শান্ত হয়ে যায় ও। বুঝতে পারে শক্তি দিয়ে পারবে না তীব্রের সাথে। ও যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করবে তীব্র ততটাই ওকে নিজের কাছে পেতে চাইবে।
তুরের শান্ত ভঙ্গিমায় তীব্র ওর ঠোঁট ছেড়ে ওর কপালে চুমো আঁকে। সুযোগ পায় তুর। ও তীব্রের পিঠে নিচে থাকা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ওকে। ধীরে ধীরে তীব্রের বাহু থেকে ওর বুকে নেমে এসে ওর বুকে মুখ গুঁজে। তীব্র তখনো তুরের মাঝেই ছিল। কিন্তু এরকম করাতে ওর হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে। আর তুর সেই সুযোগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে। এতটাই শক্ত করে তীব্র মনে হয় যেন কোন সাপ পেচিয়ে আছে। হুশ ফেরে তীব্রের। তুরের এমন বিহেভের কারন বুঝতে সময় নেয় না।
তীব্র কী করবে বুঝতে পারে না। তুর যে ওকে মানতে পারছে না সেটা বুঝতেই পারছে। রাগ লাগে নিজের উপর। শুধুমাত্র তুরের রাগটা বের করতে চাইছিল। কিন্তু তুর তা করল না। আর তীব্র নিজেও কী ঠিক করতে যাচ্ছিল?
ভেবেই নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিক হয়ে নিল। বড় একটা নিশ্বাস ফেলে খুব শক্ত করেই তুরকে জড়িয়ে ওর মাথায় চুমো দিল। বেশ শান্ত গলায় বলল,
—– ” তুর ছাড় আমাকে। আমি চলে যাচ্ছি। ”
কিন্তু কোন রিয়েকশন পেল না। এটা দেখে ও সোজাভাবে শুয়ে পড়লে তুরের মাথা ওর বুকের উপর উঠে আসে। তবুও তীব্রকে ছাড়ল না।
এভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর তীব্র বুঝতে পারল তুর ঘুমিয়েছে। কিন্তু ওর যে ঘুম আসবে না। আর তুরের কাছেও থাকতে পারছে না। নিজের প্রতি রাগ-ঘৃনা দুটোই লাগছে। তুরকে তো তুরের অনুমতি ছাড়া কখনোই চায়নি। আর আজ…
ও সাবধানে তুরকে শুইয়ে তুরের পাশ থেকে উঠে যায়। রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে একটা বেতের চেয়ারে বসে। ওর মনে এখন একটা ভয় বাসা বেঁধেছে আজকের ব্যাপারটা নিয়ে তুর আবার না নিজের মত কোন ইস্যু ক্রিয়েট করে।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে জানে না তীব্র।
সকালে….…
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন। ]
এতদিন পর কেন দিলাম জানিতে চাহিয়া কষ্ট দিবেন না। মোবাইল দেখিলে মাথা চক্কর মারে। তাই লিখতে গেলে… 😴😴😴
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr